×

বাজেটে ব্যবহৃত শব্দগুলোর অর্থ কী

আজ ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য বাজেট ঘোষণা করা হবে। অনেকের কাছেই বাজেট মানে কঠিন সব অর্থনৈতিক পরিভাষা আর সংখ্যার মারপ্যাঁচ। সংবাদে বাজেট নিয়ে প্রচুর তথ্য আসলেও সাধারণ মানুষ হিসেবে এর কতটা আমরা বুঝি? চলুন আজ সহজভাবে বাজেটকে বোঝার চেষ্টা করা যাক–

বাজেট কী  

সরকার প্রতি বছর একটি আয়-ব্যয়ের হিসাব করে, সেটি-ই বাজেট। অর্থাৎ আগামী বছর সরকার কত টাকা আয় করতে চায়, আর সেই টাকা কোন কোন খাতে খরচ করবে–এই পুরো পরিকল্পনার নামই বাজেট। এখানে সরকার আগে ব্যয়ের হিসাব করে, পরে সে বুঝে আয়ের খাত ঠিক করে। 

সরকার আয় করে কীভাবে  

সরকারের সবচেয়ে বড় আয়ের উৎস হলো কর বা ট্যাক্স। মানুষ যখন বাজারে কিছু কেনে, রেস্টুরেন্টে খাওয়াদাওয়া করে অথবা মোবাইলে রিচার্জ করে–তখন যে অতিরিক্ত টাকা কেটে নেয়া হয়, সেটার একটা বড় অংশ যায় সরকারের কাছে। একে বলে ভ্যাট (মূল্য সংযোজন কর)। আবার কারও আয় নির্দিষ্ট পরিমাণের বেশি হলে, তাঁর আয় থেকে যে অংশ কেটে নেওয়া হয়, সেটিকে বলে আয়কর। এসব কর মিলে যা আসে, তাকেই বলে রাজস্ব আয়। 

সরকার শুধু ভ্যাট আর আয়কর থেকে না, আমদানি-রপ্তানি পণ্যের ওপর শুল্ক, বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানের মুনাফা, এমনকি বিদেশ থেকে পাওয়া ঋণ বা অনুদানের মাধ্যমেও আয় করে।    

সরকার খরচ করে কোথায় 

সরকারের খরচ দুই ধরনের হয়–একটা হলো নিয়মিত খরচ, যেমন–সরকারি কর্মচারীদের বেতন, বিদ্যুৎ-পানি বিল, অফিস চালানোর খরচ ইত্যাদি। আরেকটা হলো উন্নয়নমূলক খরচ, যেমন–নতুন স্কুল, হাসপাতাল, সড়ক, সেতু বানানো ইত্যাদি। এই উন্নয়নমূলক খরচের পরিকল্পনাকেই বলে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি, সংক্ষেপে এডিপি (ADP)।   

কখনো কখনো সরকারের আয় থেকে খরচ বেশি হয়। তখন এটিকে বলে ঘাটতি বাজেট। এই ঘাটতি মেটাতে সরকার ঋণ নেয়–দেশি বা বিদেশি উৎস থেকে।   

বাজেট বক্তৃতায় যে শব্দগুলো বারবার শোনা যায়, সেগুলোর অর্থ কী   

বাজেটের সময় যেসব শব্দ প্রায়ই শোনা যায়, সেগুলোর অর্থ এখানে দেওয়া হলো-  

ভর্তুকি- কোনো জিনিসের প্রকৃত দাম থেকে সরকার কিছু অংশ নিজে দিয়ে দেয়, যেন নাগরিকেরা সস্তায় তা কিনতে পারেন। এটিকেই ভর্তুকি দেওয়া বলে। যেমন, কৃষকের জন্য সারের দাম কম রাখা হয়। কারণ সরকার বাকিটা বহন করে।    

ঘাটতি- এটি হলো আয় ও খরচের মধ্যে পার্থক্য। যদি খরচ বেশি হয় ও আয় কম, তাহলে সেটি ঘাটতি বাজেট।  

উন্নয়ন বাজেট- এটি হলো সেসব খরচ, যা সরাসরি দেশের অবকাঠামো ও জনসেবার মান বাড়ায়–যেমন রাস্তা বানানো, সেতু তৈরি, বিদ্যুৎ প্রকল্প ইত্যাদি।   

রাজস্ব বাজেট- দেশের প্রশাসনিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য গৃহীত বাজেটকে রাজস্ব বাজেট বলে। 

সামাজিক নিরাপত্তা খাত- বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতা, মুক্তিযোদ্ধা ভাতা ইত্যাদি এই খাতের অন্তর্ভুক্ত। সরকারের বাজেটে এ খাতেও বরাদ্দ রাখা হয়। 

মুদ্রাস্ফীতি- একই জিনিসের দাম আগের তুলনায় বেড়ে যাওয়া, ফলে টাকার ক্রয়ক্ষমতা কমে যায়। সাধারণত পণ্যের মজুদ ও সরবরাহকৃত মুদ্রার পরিমাণে ভারসাম্য না থাকলে, অর্থাৎ, অতিরিক্ত মুদ্রা ছাপানো হলে মুদ্রাস্ফীতি দেখা দেয়। বাজেট ঘোষণার পর অনেক সময়ই মুদ্রাস্ফীতির প্রভাব নিয়ে আলোচনা হয়।  

অপর্যাপ্ত বরাদ্দ- কোনো খাতে খুব কম টাকা বরাদ্দ দেওয়া, যেটা দিয়ে কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন সম্ভব নয়।  

উৎস কর- গ্রাহকের আয় বা লেনদেনের সময় সরাসরি কেটে নেওয়া কর। যেমন, অনেক প্রতিষ্ঠানে বেতন প্রদানের সঙ্গেই কর কেটে রাখা হয়। 

আবগারি শুল্ক-  দেশের অভ্যন্তরে উৎপাদিত দ্রব্যের ওপর যখন কর আরোপ করা হয়, তাকে আবগারি শুল্ক বলে। 

এই কন্টেন্টটি শেয়ার করুন:

Post Comment