leadT1ad

‘আমার সন্তানদের আগুনে রেখে চলে আসি কেমনে!’

স্ট্রিম সংবাদদাতানীলফামারী
প্রকাশ : ২২ জুলাই ২০২৫, ১৮: ৪২
বামে নিহত মাহেরিন চৌধুরী এবং ডানে নিহতের স্বামী মনসুর হেলাল। ছবি: সংগৃহীত

‘ওরাও তো আমার সন্তান। ওদের আগুনের মধ্যে রেখে চলে আসি কেমনে।’ হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসারত অবস্থায় স্বামীকে একথা বলেছিলেন শিক্ষিকা মাহেরিন চৌধুরী। মাঝরাতে বলছিলেন, নিজের দুই সন্তানের জন্য স্কুলের ছোট শিশুদের ছেড়ে আসতে না পারার কথা।

রাতেই মারা গেছেন মাহেরিন। চাপা কান্না নিয়ে তাঁর কথাগুলো বলছিলেন নিহতের স্বামী মনসুর হেলাল। মঙ্গলবার বিকেলে নীলফামারীর জলঢাকা পৌরসভার বগুলাগাড়ী চৌধুরী পাড়ায় সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ওই সময় আমার হাত তাঁর নিজের বুকের সঙ্গে চেপে ধরে বলেছিল ‘তোমার সাথে আর বুঝি দেখা হবে না’। আমি ওর হাতটা ভালো করে ধরতে পারছিলাম না। ওর দুটো হাতই পুড়ে গিয়েছিল।

নিহত মাহেরিন চৌধুরীর মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় নীলফামারীতে গ্রামের বাড়িতে। স্ট্রিম ছবি
নিহত মাহেরিন চৌধুরীর মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় নীলফামারীতে গ্রামের বাড়িতে। স্ট্রিম ছবি

মনসুর হেলাল জানান, পাঠদান শেষ করে শিক্ষার্থীদের নিয়ে বের হওয়ার সময় বিমান দুর্ঘটনাটি ঘটে। মাহেরিন এসময় শ্রেণিকক্ষের বাইরে বেরিয়ে এসেছিলেন। কিন্তু চেখের সামনে দেখতে পান ২০ থেকে ২৫ জন শিক্ষার্থী ভেতরে আটকা পড়ে গেছে। শিশুদের বাঁচাতে দ্রুত তিনি আবারও ভেতরে ঢুকে পড়েন। সন্তানসম শিশুদের উদ্ধার করতে গিয়ে একটা সময় নিজেই অসুস্থ হয়ে পড়লে তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। রাতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়।

নিহত মাহেরিন চৌধুরীর প্রতিবেশী আব্দুস সামাদ জানান, দুই ঈদ ছাড়াও মাঝেমধ্যে গ্রামে আসতেন মাহেরিন। এ সময় এলাকার গরীব মানুষের খোঁজখবর নিতেন। সামর্থ্য অনুযায়ী আর্থিক সহযোগিতা করতেন। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও কালভার্ট নির্মাণেও সহযোগিতা করেছেন। শিক্ষানুরাগী হিসেবে পরিচিতি ছিল তাঁর। বগুলাগাড়ী স্কুল অ্যান্ড কলেজের এডহক কমিটির সভাপতি হিসেবে তাঁকে মনোনীত করে এলাকাবাসী। দুই মাস আগে এ পদে মনোনীত হয়ে দায়িত্বগ্রহণ করেন তিনি।

উত্তরার ১৩ নম্বর সেক্টরের গাউসুল আজম জামে মসজিদে মাহেরিনের প্রথম জানাজার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়েছে। স্ট্রিম ছবি
উত্তরার ১৩ নম্বর সেক্টরের গাউসুল আজম জামে মসজিদে মাহেরিনের প্রথম জানাজার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়েছে। স্ট্রিম ছবি

মাহেরিন চৌধুরী নীলফামারীর জলঢাকার মৃত মহিতুর রহমান চৌধুরীর মেয়ে। তাঁর জন্ম ও বেড়ে ওঠা ঢাকাতেই। ঢাকায় দৈনিক জনকণ্ঠে কাজ করেন মাহেরিনের খালাতো রুমি চৌধুরী। এই সংবাদকর্মী স্ট্রিমকে বলেন, মাহেরিনের বাবা মহিতুর রহমান চৌধুরী ছিলেন শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের আপন খালাতো ভাই। জলঢাকার এ বাড়িতেও বেশ কয়েকবার এসেছিলেন জিয়াউর রহমান।

মাহেরিন চৌধুরীর ভাই মুনাফ চৌধুরী জানিয়েছেন, আজ মঙ্গলবার ভোর সাড়ে ৪টার দিকে উত্তরার ১৩ নম্বর সেক্টরের গাউসুল আজম জামে মসজিদে মাহেরিনের প্রথম জানাজার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়েছে। জানাজার পরেই বোনের মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় নীলফামারীর গ্রামের বাড়িতে। সেখানে বাদ আসর দ্বিতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। পরে পারিবারিক কবরস্থানে মা-বাবার পাশে দাফন করা হয় তাঁকে।

Ad 300x250

সম্পর্কিত