প্রথমবারের মতো ডাকযোগে ভোট দেওয়ার সুযোগ আনুষ্ঠানিকভাবে চালু করতে আজ মঙ্গলবার (১৮ নভেম্বর) উদ্বোধন হচ্ছে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) উদ্ভাবিত ‘পোস্টাল ভোট বিডি’ অ্যাপ। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, নতুন এই ব্যবস্থার আওতায় পোস্টাল ব্যালটে বিদেশে অবস্থানরত নিবন্ধিত বাংলাদেশি ভোটার, দেশে নির্বাচনি দায়িত্বে নিয়োজিত কর্মকর্তা-কর্মচারী, নিজ এলাকার বাইরে কর্মরত সরকারি চাকরিজীবীরা এবং আইনি হেফাজতে থাকা ভোটাররা ভোট দিতে পারবেন।
আজ সন্ধ্যা ৬টায় রাজধানীর আগারগাঁও নির্বাচন ভবনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এএমএম নাসির উদ্দিন এই অ্যাপটির উন্মোচন করবেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরাও উপস্থিত থাকবেন।
নিবন্ধন সম্পন্ন হলে সংশ্লিষ্ট ভোটারদের কাছে ডাক বিভাগের মাধ্যমে পাঠানো হবে প্রতীক সম্বলিত (সিম্বল) ব্যালট পেপার, যাতে টিক বা ক্রস চিহ্ন দিয়ে ভোট দেওয়া যাবে বলে জানান নির্বাচন সংশ্লিষ্টরা। অ্যাপ উদ্বোধনের পরই নিবন্ধনের সময়সীমা ঘোষণা করবে ইসি। অঞ্চলভিত্তিক নিবন্ধিত প্রবাসী ভোটারদের কাছে ব্যালট পাঠানো হবে পরে, যা ১৬ থেকে ২৮ দিনের মধ্যে রিটার্নিং কর্মকর্তার হাতে পৌঁছাতে হবে।
ইসির পরিকল্পনা অনুযায়ী, তফসিল ঘোষণার পর থেকে আগামী জানুয়ারির তৃতীয় সপ্তাহের মধ্যেই সব প্রবাসী ব্যালট দেশে পৌঁছানোর সময়সীমা নির্ধারণ করা হবে।
নির্বাচনসংশ্লিষ্টরা জানান, ব্যালট আনা–নেওয়ার সময় বিবেচনা করেই নিবন্ধনের শেষ তারিখ ঘোষণা করা হবে। উদ্বোধনের পর প্রচার ও বিস্তারিত কর্মসূচিও জানানো হবে।
সোমবার প্রস্তুতি পর্যালোচনা করতে গিয়ে সিইসি নাসির উদ্দিন বলেন, ‘এই নির্বাচন কমিশন দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই বড় বড় কাজ হাতে নিতে হয়েছে। নতুন মানদণ্ডে ভোটার তালিকা হালনাগাদ থেকে শুরু করে। অনেক কাজই আমরা করেছি, যা আগের কমিশনগুলো সাহস করে করতে পারেনি। প্রবাসীদের জন্য ভোট প্রক্রিয়া চালু করা তার অন্যতম। আমরা চাই সর্বোচ্চ সংখ্যক প্রবাসী এবার ভোট দেবেন।’
তিনি জানান, প্রথমবারের মতো জেলে বন্দি নাগরিক ও সরকারি কর্মকর্তাদের জন্যও পোস্টাল ভোটের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
অ্যাপ উদ্বোধনে রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিদের উপস্থিতির পাশাপাশি ভোটারদের উদ্বুদ্ধ করতে তাদের সহযোগিতাও চেয়েছেন ইসি।
সোমবার রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপে নির্বাচন কমিশনার আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ জানান, ‘এ ধরনের ব্যবস্থা চালু করার আগে সাধারণত ৫ মাসের ট্রায়াল দেওয়া হয়। কিন্তু আমাদের হাতে ৫ সপ্তাহও ছিল না। তবুও সব প্রস্তুতি আমরা শেষ করেছি, আগামীকাল অ্যাপ চালু হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘প্রবাসী ভোটারদের কাছে শুধু প্রতীক সম্বলিত ব্যালট পাঠানো হবে। তবে ভোট কাস্ট করতে হবে প্রতীক বরাদ্দ ও প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত হওয়ার পর। অ্যাপে নিবন্ধন করার পর ভোটারকে জানিয়ে দেওয়া হবে কখন প্রতীক বরাদ্দ হচ্ছে—সাধারণত ভোটের প্রায় তিন সপ্তাহ আগে। তখনই তিনি জানবেন তাঁর আসনে কারা প্রতিদ্বন্দ্বী এবং তাদের প্রতীক কী।’
কমিশনার জানান, পুরো প্রক্রিয়া পরিচালনা করবে ডাক বিভাগ। এটি দীর্ঘ প্রতীক্ষিত একটি উদ্যোগ, যা সময়ের সঙ্গে আরও সুসংহত হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
তিনি বলেন, ‘আমরা দেখেছি প্রায় ৭ থেকে ৮ শতাংশ ভোটার এই পদ্ধতির আওতায় আসেন। আমরা চাই না তারা ভোট থেকে বঞ্চিত হোক। আগে ব্যালট ছাপা ও ভোটগ্রহণের মধ্যে সময় থাকত মাত্র ৭ থেকে ৮ দিন, ফলে প্রবাসীদের ভোট দেশে আনা অসম্ভব হতো। এবারই প্রথম আমরা প্রতীকসম্বলিত ব্যালট আগে থেকেই ছাপানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’
একজন ভোটারের ব্যালট প্রিন্ট, পরিবহন ও প্রসেসিংয়ে প্রায় ৭০০ টাকা ব্যয় হয় বলে জানান সানাউল্লাহ। তিনি প্রত্যেক ভোট যেন নষ্ট না হয়, সে বিষয়ে সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানান।
তবে একটি সীমাবদ্ধতার কথাও উল্লেখ করেন তিনি বলেন, কোনো প্রার্থী বাতিলের পর আদালতের রায়ে প্রার্থিতা ফিরে পেলে সেই প্রার্থীর পক্ষে দেওয়া পোস্টাল ভোট বাতিল হয়ে যাবে।
প্রবাসী ভোটের গোপনীয়তা রক্ষায় সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘গোপনীয়তা ভঙ্গ করা যাবে না। ঘোষণাপত্রেও গোপনীয়তা রক্ষার কথা বলা আছে। লঙ্ঘন করলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’