leadT1ad

এনসিপির ‘মার্চ টু গোপালগঞ্জ’ কর্মসূচিতে হামলা: সাংবাদিকসহ অনেকে আহত, ১৪৪ ধারা জারি

সকাল পৌনে ১০টার দিকে সদর উপজেলার উলপুরে ইউএনও ও পুলিশের গাড়িতে হামলার হয়। দুপুরের দিকে শহরের লঞ্চঘাট ও পৌর পার্ক এলাকায় এনসিপির সমাবেশ লক্ষ্য করে আবারও হামলা শুরু করে মুখোশধারী দুর্বৃত্তরা।

স্ট্রিম প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৬ জুলাই ২০২৫, ১৮: ১০
আপডেট : ১৬ জুলাই ২০২৫, ১৮: ১৫
এনসিপির ‘মার্চ টু গোপালগঞ্জ’ কর্মসূচিতে হামলা। স্ট্রিম ছবি

গোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) কর্মসূচিতে সহিংস হামলার ঘটনা ঘটেছে। স্থানীয়দের বরাতে স্ট্রিম প্রতিবেদক জানিয়েছেন, হামলাকারীরা আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। তাদের চালানো অতর্কিত হামলায় ঢাকা স্ট্রিমের সাংবাদিকসহ অনেকে আহত হয়েছেন।

আজ ১৬ জুলাই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে জেলায় ১৪৪ ধারা জারি করেছে জেলা প্রশাসন। বিজিবি ও সেনাবাহিনী মোতায়েনের পরও থামেনি সহিংসতা।

সর্বশেষ পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, জেলা প্রশাসক মো. কামরুজ্জামান দুপুরে কারফিউ জারির সিদ্ধান্ত জানান। তিনি স্ট্রিমকে বলেন, ‘জেলা শহরের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভেঙে পড়েছে, জনগণের নিরাপত্তায় ১৪৪ ধারা জারি করেছি।’ সেনা ও বিজিবি মোতায়েনের পরও স্থানীয় বাসিন্দারা আতঙ্কে ঘরবন্দী হয়ে আছেন।

সাংবাদিকদের ওপরও হামলা

সকাল পৌনে ১০টার দিকে সদর উপজেলার উলপুরে ইউএনও ও পুলিশের গাড়িতে হামলার হয়। দুপুরের দিকে শহরের লঞ্চঘাট ও পৌর পার্ক এলাকায় এনসিপির সমাবেশ লক্ষ্য করে আবারও হামলা শুরু করে মুখোশধারী দুর্বৃত্তরা। পরে শরিয়তপুরের দিকে রওনা করলে সে সময় গাড়িবহরের চারদিক থেকে ইটপাটকেল ছোড়া হয়।

হামলার শিকার হন সংবাদকর্মীরাও। ঢাকা স্ট্রিমের আব্দুল্লাহ কাফির গাড়িতেও হামলা হয়। গোপালগঞ্জ সদর হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, ডিবিসি নিউজের সুব্রত সাহা বাপ্পি গুলিবিদ্ধ হয়েছেন, গুরুতর আহত হন যমুনা টিভির সিনিয়র সাংবাদিক মোজাম্মেল হোসেন মুন্নাসহ কয়েকজন।

আব্দুল্লাহ কাফি বলেন, ‘সেনাবাহিনী স্পট থেকে চলে যাওয়ার পরই ইটপাটকেল ও হামলার তীব্রতা বাড়ে। আমাদের গাড়ির সব কাচ ভেঙে গেছে। কোনো নিরাপত্তা নেই।’ পরে সাংবাদিকেরা গোপালগঞ্জ পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে আশ্রয় নেন।

এনসিপির অভিযোগ

বেলা ২টা ৪৫ মিনিটে ‘দেশ গড়তে জুলাই পদযাত্রা’ কর্মসূচির অংশ হিসেবে এনসিপির কেন্দ্রীয় নেতারা গোপালগঞ্জ ত্যাগের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। ঠিক সেই সময় লঞ্চঘাট এলাকায় চারপাশ থেকে গাড়িবহরের ওপর অতর্কিত হামলা চালানো হয় ।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, হামলাকারীরা ‘নৌকা’ ও আওয়ামী লীগের স্লোগান দিতে দিতে গাড়ি লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেন। হামলায় তাঁরা আগ্নেয়াস্ত্রও ব্যবহার করেন। এসময় একাধিক গাড়ি ভাঙচুর হয়, কয়েকটি গাড়িতে আগুন দেওয়ার চেষ্টাও করা হয়।

সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে শহরের বিভিন্ন এলাকায়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ টিয়ার শেল ও রাবার বুলেট ছোড়ে। পুলিশের সঙ্গে সেনাবাহিনী যোগ দিলেও পরিস্থিতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসেনি। এনসিপির নেতাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সেনাবাহিনী-পুলিশ একযোগে তাঁদের সমাবেশস্থল থেকে সরিয়ে নেয়। তবে এনসিপি অভিযোগ করেছে, হামলার সময় নিরাপত্তা বাহিনীর বড় অংশ নিষ্ক্রিয় ছিল।

এক বিবৃতিতে এনসিপির মুখপাত্র নাসির উদ্দিন পাটোয়ারী বলেন, ‘সরকারি দলের ছত্রচ্ছায়ায় আমাদের কর্মসূচির ওপর পৈশাচিক হামলা হয়েছে। সাংবাদিকেরাও ছাড় পায়নি, যা প্রমাণ করে—এই হামলা পরিকল্পিত এবং রাষ্ট্রীয় প্রশ্রয়ে সংঘটিত।’

প্রশাসনের প্রতিক্রিয়া ও বিজিবি মোতায়েন

বিজিবির জনসংযোগ কর্মকর্তা শরিফুল ইসলাম জানান, পরিস্থিতি মোকাবিলায় চার প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে সেনাবাহিনী ও পুলিশের টহল জোরদার করা হয়েছে।

এদিকে আজ গোপালগঞ্জে সংঘটিত সহিংসতাকে ‘মৌলিক অধিকারের লঙ্ঘন’ এবং সম্পূর্ণভাবে ‘সমর্থনের অযোগ্য’ বলে বিবৃতি দেয় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রেস উইং।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, এই ন্যক্কারজনক হামলার পেছনে যারা রয়েছেন—তাদের মধ্যে নিষিদ্ধ ঘোষিত আওয়ামী লীগ, যুবলীগ এবং ছাত্রলীগের কর্মীরা রয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে—তাদেরকে শাস্তির আওতায় আনা হবে।

সর্বশেষ পাওয়া তথ্যে জানা যায়, দেড় ঘণ্টার মতো এনসিপির নেতারা গোপালগঞ্জ পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে অবস্থান করছিলেন। পরে সেনাবাহিনীর গাড়িতে করে এনসিপির নেতারা বাগেরহাটে যান। বাগেরহাট গিয়ে অন্য একটি গাড়ি নিয়ে পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী শরীয়তপুরের দিকে রওনা করেন তারা।

উল্লেখ্য জাতীয় নাগরিক পার্টি ১ জুলাই থেকে ‘দেশ গড়তে জুলাই পদযাত্রা’ নামে ধারাবাহিক কর্মসূচি পালন করছে। এর অংশ হিসেবে বিভিন্ন জেলা শহরে সমাবেশ ও পথসভা করছেন তারা। সর্বশেষ ‘মার্চ ফর গোপালগঞ্জ’ কর্মসূচির ঘোষণা দেওয়া হয়।

Ad 300x250

সম্পর্কিত