স্ট্রিম ডেস্ক
ইসরায়েলের আগ্রাসনে সৃষ্ট দুর্ভিক্ষে মৃত ফিলিস্তিনিদের ছবি দেখে জার্মানদের নিজেদের ইতিহাসের কথাই মনে পড়ে।
গাজায় মাটিতে লুটিয়ে পড়া নারী-পুরুষের ভগ্নদেহ, শিশু ও নবজাতকদের কঙ্কালসার পরিণতি এবং মৃত্যুপথযাত্রীদের শূন্য দৃষ্টি মূলত জার্মানদের নিজেদের ইতিহাসই মনে করিয়ে দেয়। ঔপনিবেশিক জার্মানদের তৈরি করা দুর্ভিক্ষে মৃত নামিবিয়ার না’মা ও হেরেরো জাতিগোষ্ঠী এবং অবরুদ্ধ লেনিনগ্রাদ ও স্তালিনগ্রাদে নাৎসিদের পরিকল্পিত অনাহারনীতি, ওয়ারশ গেটো বা কনসেনট্রেশন ক্যাম্পের সেই দিনগুলোকে মনে করিয়ে দেয়।
খাদ্যসংকট তৈরি করে মানুষদের মৃত্যুর দিকে ঠেল দেওয়া একাধারে উপনিবেশবাদী ও ফ্যাসিবাদী নীতি। জার্মানেরা যেভাবে মানুষের মানবিকতা কেড়ে নিয়ে লাখ লাখ মানুষকে হত্যা করেছিল, গাজা ও সমগ্র ফিলিস্তিনে আজ সেই একই কাজ করছে জায়নবাদীরা।
এই ভয়াবহতার মধ্যেও জার্মানির রাজনৈতিক নেতারা এখনো হত্যাকারীদের সঙ্গে অস্ত্রচুক্তি করছে এবং গাজার গণহত্যাকে তার প্রকৃত নামে ডাকতে অস্বীকৃতি জানাচ্ছে।
গাজার পরিস্থিতিকে প্রথম ‘অসহনীয়’ বলে দাবি করা চ্যান্সেলর ফ্রিডরিশ ম্যারৎস কেবল বিমান দিয়ে সাহায্য সরবরাহে (এয়ারলিফট) অংশ নিচ্ছেন। অথচ চাইলে তিনি ইসরায়েলের সঙ্গে সব সম্পর্ক ছিন্ন করে এই অপরাধ থামাতে ভূমিকা রাখতে পারতেন।
বরং ম্যারৎস এই গণহত্যাকে ‘তুচ্ছ’ করে দেখাচ্ছেন এবং পুরো বিষয়টিকে ‘একটি অস্পষ্ট মানবিক সংকটের’ কাতারে নামিয়ে আনছেন। এতে জায়নবাদীরা হত্যাযজ্ঞ অব্যাহত রাখার সুযোগ পাচ্ছে। এভাবেই জাতিগত নির্মূল ও গণহত্যার ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে থাকা পশ্চিমা আধুনিকতাকে আরও শক্তিশালী করছেন ম্যারৎস।
দীর্ঘ কয়েক দশক ধরে পশ্চিমা বিশ্ব জায়নবাদী উপনিবেশের মাধ্যমে নিওলিবারেল ‘বায়োপলিটিকস’ চালিয়ে আসছে। মানবজাতিকে কতটুকু সীমা পার করা যায় এবং কী কী কৌশল অবলম্বন করা যায়, তার পাশাপশি ভবিষ্যতে নিজেদের জনগণের সঙ্গে আচরণে এ থেকে কী শেখা যায়, তা বোঝার জন্য ফিলিস্তিন ও গাজা হল এক পরীক্ষাগার।
ফরাসি দার্শনিক মিশেল ফুকো ১৯৭৯ সালে তাঁর এক বক্তৃতায় বলেছিলেন, বায়োপলিটিকস আধুনিক রাষ্ট্রে প্রচলিত সার্বভৌমত্বের ধারণাকে প্রতিস্থাপন করেছে। রাজনীতি সর্বদা জীবন ও মৃত্যুর প্রশ্ন, নীতি বা মূল্যবোধ নয়।
বায়োপলিটিকস বলতে বোঝায় রাষ্ট্র বা ক্ষমতাধারীরা যেসব কৌশল ও প্রক্রিয়ার মাধ্যমে মানুষের জীবন ও জনসংখ্যাকে নিয়ন্ত্রণ ও পরিচালনা করে। স্বাস্থ্যব্যবস্থা, জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার, জন্ম-মৃত্যু, রোগব্যাধি, টিকাদান কর্মসূচি কিংবা মানুষের দেহসংক্রান্ত যেকোনো নীতি ও প্রযুক্তিগত ব্যবস্থাকে ভিত্তি করে মানুষের জীবনকে নিয়ন্ত্রণ করার নামই বায়োপলিটিকস।
কে বাঁচবে আর কে মরবে এ সিদ্ধান্ত আগে রাজাদের হাতে ছিল। আধুনিক রাষ্ট্র সেই জায়গায় এনেছে ‘অন্যকে মেরে নিজেরা বাঁচো’ নীতি। রাষ্ট্র মানুষকে সরাসরি হত্যা না করলেও, নীতি ও নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে নির্ধারণ করে দেয়, কে বাঁচবে, কে কষ্ট ভোগ করবে আর কে অবহেলিত হবে।
গাজা ও সমগ্র ফিলিস্তিনের প্রতি পশ্চিমের আচরণ এই নীতিতেই দাঁড়িয়ে আছে। শ্বেতাঙ্গ জায়নবাদীরা বেঁচে থাকুক। কারণ তারা ‘আমাদের’, কিন্তু ফিলিস্তিনিরা মরুক।
রাষ্ট্রীয় বর্ণবাদই এই বায়োপলিটিকসের মূলভিত্তি। ফুকোর ধারণা অনুযায়ী এর শুরুটা উনিশ শতকে হয়নি, বরং পশ্চিমা আধুনিকতার জন্ম থেকেই এর সূত্রপাত। রাজনৈতিক চিন্তাবিদ মাহমুদ মামদানির মতে, ১৪৯২ সালে যখন আরব ও ইহুদিদের বহিষ্কার করে স্পেনে ‘বিশুদ্ধ’ ক্যাথলিক রাষ্ট্র তৈরি করা হয় এবং কলম্বাসকে পাঠানো হয় নতুন ভূমি দখলের জন্য, তখন আধুনিকতা শুরু হয়েছিল। এভাবেই শুরু হয় ভূমি দখল ও গণহত্যার ধারাবাহিকতা।
আজকের ফিলিস্তিন ও গাজা পশ্চিমা জাতি-রাষ্ট্র গড়ার সেই বীভৎস প্রবৃত্তির চূড়ান্ত প্রকাশ।
ইংরেজ ইতিহাসবিদ প্যাট্রিক উলফ বলেছিলেন, প্রতিটি উপনিবেশবাদী রাষ্ট্রই চলে ‘আদিবাসীকে নির্মূলের যুক্তি’তে। আর এই যুক্তিই প্রায়শই গণহত্যার দিকে নিয়ে যায়।
জায়নবাদী উপনিবেশের জন্মলগ্ন থেকেই ফিলিস্তিনি জনগোষ্ঠীকে নির্মূল করার এই যুক্তিই চালু ছিল। ২০০৩ সালে ইসরায়েলি গবেষক বারুখ কিমার্লিং লিখেছিলেন, গাজা ইতিমধ্যে ‘ইতিহাসের সবচেয়ে বড় কনসেনট্রেশন ক্যাম্পে’ পরিণত হয়েছে।
আজ সেই পরীক্ষা-নিরীক্ষা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে খোদ জায়নবাদী নেতারা প্রকাশ্যে গণহত্যার ঘোষণা দিচ্ছে। তারা গাজাকে একটি মৃত্যু শিবিরে রূপান্তর করেছে, যাকে বিদ্রূপাত্মকভাবে নাম দিয়েছে ‘মানবিক শহর’।
কিন্তু এমন ঘোষণাও কনসেনট্রেশন ক্যাম্প বা গণহত্যার প্রসঙ্গে সংবেদনশীল ভঙ্গিতে কথা বলা জার্মান অভিজাতদের নড়াতে পারে না। তাদের এই নির্লিপ্ততা কেবল রাষ্ট্রীয় বর্ণবাদ ও বায়োপলিটিকসের প্রতি অটল সমর্থনই প্রকাশ করছে।
কনসেনট্রেশন ক্যাম্প গড়া, খাবার সরবরাহ বন্ধ করে মানুষকে ক্ষুধার্ত করে মেরে ফেলা এবং গণহত্যা চালানোর কোনো অজুহাত নেই। আর সেই কাজকে সমর্থন করারও কোনো অজুহাত নেই।
জায়নবাদীরা এসব অপরাধ করলেও ম্যারৎস তাদের পক্ষ নেন এবং গণহত্যাকারী রাষ্ট্রকে সমর্থন দিয়ে যান। গত ১৮ জুলাই এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি ঘোষণা দেন, ‘ইসরায়েল এখনো একটি গণতান্ত্রিক দেশ। ইসরায়েল একটি আক্রান্ত রাষ্ট্র এবং নিজেদের আত্মরক্ষার চেষ্টা করছে। যদি তা না করত, তবে হয়তো আজ ইসরায়েল রাষ্ট্র থাকত না। ইসরায়েল বছরের পর বছর হুমকির মুখে আছে, আর ৭ অক্টোবর ২০২৩ থেকে আমরা জানি, হুমকিটা কতটা গুরুতর।’
ইসরায়েলকে শুধুই এক অসহায় আত্মরক্ষাকারী রাষ্ট্র হিসেবে উপস্থাপন করা ম্যারৎসের এই রূপকথার গল্পগুলো কে আর বিশ্বাস করবে!
ঐতিহাসিক সত্য হলো, ফ্যাসিবাদী সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর সন্ত্রাসের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত জায়নবাদী উপনিবেশ শাসন শুরু থেকেই ফিলিস্তিনিদের ওপর অতি মাত্রায় সহিংসতা চালিয়েছে ও মানবিক মর্যাদা হরণ করে এসেছে।
ফিলিস্তিনে উপনিবেশ শাসন ও দখলদারদের বসতি নির্মাণ এমনভাবে বেড়েছে যে, তা পুরো পশ্চিম তীরের ফিলিস্তিনি জীবনের অস্তিত্বকে সংকটে ফেলছে।
‘গ্রেটার ইসরায়েল’ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে লেবানন ও সিরিয়াসহ অন্যান্য দেশকে বারবার আক্রমণ করেছে জায়নবাদীরা। ইরাককে আক্রমণ করেছে এবং ইরানের বিরুদ্ধে বেআইনি আগ্রাসী যুদ্ধ চালিয়েছে। ইসরায়েলের এসব কর্মকাণ্ডে সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘন বা আন্তর্জাতিক আইন ভঙ্গ হিসেবে না দেখে বরং প্রশংসা করে মার্জ বলেছেন, ‘ইসরায়েল আমাদের সবার হয়ে নোংরা কাজটা করছে।’
জায়নবাদী রাষ্ট্রকে সমর্থন করে পশ্চিমা বিশ্ব আসলে তার মূল্যবোধের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করছে না। কারণ পশ্চিমাদের মূল্যবোধ কখনোই সবার জন্য ছিল না। এগুলো সবসময়ই কেবল শ্বেতাঙ্গদের জন্য ছিল। বাকিদের জন্য ছিল কেবল মৃত্যু।
এ কারণে এখনো গাজায় শিশু, নারী, পুরুষদের অনাহারে মেরে ফেলা এবং কনসেনট্রেশন ক্যাম্পকে বিশাল মৃত্যু শিবিরে রূপান্তরিত করতে জায়নবাদীদের সহায়তা করে যাচ্ছে জার্মানি।
(মিডিল ইস্ট আই থেকে নেওয়া। ইংরেজি থেকে অনুবাদ করেছেন তুফায়েল আহমদ)
ইসরায়েলের আগ্রাসনে সৃষ্ট দুর্ভিক্ষে মৃত ফিলিস্তিনিদের ছবি দেখে জার্মানদের নিজেদের ইতিহাসের কথাই মনে পড়ে।
গাজায় মাটিতে লুটিয়ে পড়া নারী-পুরুষের ভগ্নদেহ, শিশু ও নবজাতকদের কঙ্কালসার পরিণতি এবং মৃত্যুপথযাত্রীদের শূন্য দৃষ্টি মূলত জার্মানদের নিজেদের ইতিহাসই মনে করিয়ে দেয়। ঔপনিবেশিক জার্মানদের তৈরি করা দুর্ভিক্ষে মৃত নামিবিয়ার না’মা ও হেরেরো জাতিগোষ্ঠী এবং অবরুদ্ধ লেনিনগ্রাদ ও স্তালিনগ্রাদে নাৎসিদের পরিকল্পিত অনাহারনীতি, ওয়ারশ গেটো বা কনসেনট্রেশন ক্যাম্পের সেই দিনগুলোকে মনে করিয়ে দেয়।
খাদ্যসংকট তৈরি করে মানুষদের মৃত্যুর দিকে ঠেল দেওয়া একাধারে উপনিবেশবাদী ও ফ্যাসিবাদী নীতি। জার্মানেরা যেভাবে মানুষের মানবিকতা কেড়ে নিয়ে লাখ লাখ মানুষকে হত্যা করেছিল, গাজা ও সমগ্র ফিলিস্তিনে আজ সেই একই কাজ করছে জায়নবাদীরা।
এই ভয়াবহতার মধ্যেও জার্মানির রাজনৈতিক নেতারা এখনো হত্যাকারীদের সঙ্গে অস্ত্রচুক্তি করছে এবং গাজার গণহত্যাকে তার প্রকৃত নামে ডাকতে অস্বীকৃতি জানাচ্ছে।
গাজার পরিস্থিতিকে প্রথম ‘অসহনীয়’ বলে দাবি করা চ্যান্সেলর ফ্রিডরিশ ম্যারৎস কেবল বিমান দিয়ে সাহায্য সরবরাহে (এয়ারলিফট) অংশ নিচ্ছেন। অথচ চাইলে তিনি ইসরায়েলের সঙ্গে সব সম্পর্ক ছিন্ন করে এই অপরাধ থামাতে ভূমিকা রাখতে পারতেন।
বরং ম্যারৎস এই গণহত্যাকে ‘তুচ্ছ’ করে দেখাচ্ছেন এবং পুরো বিষয়টিকে ‘একটি অস্পষ্ট মানবিক সংকটের’ কাতারে নামিয়ে আনছেন। এতে জায়নবাদীরা হত্যাযজ্ঞ অব্যাহত রাখার সুযোগ পাচ্ছে। এভাবেই জাতিগত নির্মূল ও গণহত্যার ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে থাকা পশ্চিমা আধুনিকতাকে আরও শক্তিশালী করছেন ম্যারৎস।
দীর্ঘ কয়েক দশক ধরে পশ্চিমা বিশ্ব জায়নবাদী উপনিবেশের মাধ্যমে নিওলিবারেল ‘বায়োপলিটিকস’ চালিয়ে আসছে। মানবজাতিকে কতটুকু সীমা পার করা যায় এবং কী কী কৌশল অবলম্বন করা যায়, তার পাশাপশি ভবিষ্যতে নিজেদের জনগণের সঙ্গে আচরণে এ থেকে কী শেখা যায়, তা বোঝার জন্য ফিলিস্তিন ও গাজা হল এক পরীক্ষাগার।
ফরাসি দার্শনিক মিশেল ফুকো ১৯৭৯ সালে তাঁর এক বক্তৃতায় বলেছিলেন, বায়োপলিটিকস আধুনিক রাষ্ট্রে প্রচলিত সার্বভৌমত্বের ধারণাকে প্রতিস্থাপন করেছে। রাজনীতি সর্বদা জীবন ও মৃত্যুর প্রশ্ন, নীতি বা মূল্যবোধ নয়।
বায়োপলিটিকস বলতে বোঝায় রাষ্ট্র বা ক্ষমতাধারীরা যেসব কৌশল ও প্রক্রিয়ার মাধ্যমে মানুষের জীবন ও জনসংখ্যাকে নিয়ন্ত্রণ ও পরিচালনা করে। স্বাস্থ্যব্যবস্থা, জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার, জন্ম-মৃত্যু, রোগব্যাধি, টিকাদান কর্মসূচি কিংবা মানুষের দেহসংক্রান্ত যেকোনো নীতি ও প্রযুক্তিগত ব্যবস্থাকে ভিত্তি করে মানুষের জীবনকে নিয়ন্ত্রণ করার নামই বায়োপলিটিকস।
কে বাঁচবে আর কে মরবে এ সিদ্ধান্ত আগে রাজাদের হাতে ছিল। আধুনিক রাষ্ট্র সেই জায়গায় এনেছে ‘অন্যকে মেরে নিজেরা বাঁচো’ নীতি। রাষ্ট্র মানুষকে সরাসরি হত্যা না করলেও, নীতি ও নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে নির্ধারণ করে দেয়, কে বাঁচবে, কে কষ্ট ভোগ করবে আর কে অবহেলিত হবে।
গাজা ও সমগ্র ফিলিস্তিনের প্রতি পশ্চিমের আচরণ এই নীতিতেই দাঁড়িয়ে আছে। শ্বেতাঙ্গ জায়নবাদীরা বেঁচে থাকুক। কারণ তারা ‘আমাদের’, কিন্তু ফিলিস্তিনিরা মরুক।
রাষ্ট্রীয় বর্ণবাদই এই বায়োপলিটিকসের মূলভিত্তি। ফুকোর ধারণা অনুযায়ী এর শুরুটা উনিশ শতকে হয়নি, বরং পশ্চিমা আধুনিকতার জন্ম থেকেই এর সূত্রপাত। রাজনৈতিক চিন্তাবিদ মাহমুদ মামদানির মতে, ১৪৯২ সালে যখন আরব ও ইহুদিদের বহিষ্কার করে স্পেনে ‘বিশুদ্ধ’ ক্যাথলিক রাষ্ট্র তৈরি করা হয় এবং কলম্বাসকে পাঠানো হয় নতুন ভূমি দখলের জন্য, তখন আধুনিকতা শুরু হয়েছিল। এভাবেই শুরু হয় ভূমি দখল ও গণহত্যার ধারাবাহিকতা।
আজকের ফিলিস্তিন ও গাজা পশ্চিমা জাতি-রাষ্ট্র গড়ার সেই বীভৎস প্রবৃত্তির চূড়ান্ত প্রকাশ।
ইংরেজ ইতিহাসবিদ প্যাট্রিক উলফ বলেছিলেন, প্রতিটি উপনিবেশবাদী রাষ্ট্রই চলে ‘আদিবাসীকে নির্মূলের যুক্তি’তে। আর এই যুক্তিই প্রায়শই গণহত্যার দিকে নিয়ে যায়।
জায়নবাদী উপনিবেশের জন্মলগ্ন থেকেই ফিলিস্তিনি জনগোষ্ঠীকে নির্মূল করার এই যুক্তিই চালু ছিল। ২০০৩ সালে ইসরায়েলি গবেষক বারুখ কিমার্লিং লিখেছিলেন, গাজা ইতিমধ্যে ‘ইতিহাসের সবচেয়ে বড় কনসেনট্রেশন ক্যাম্পে’ পরিণত হয়েছে।
আজ সেই পরীক্ষা-নিরীক্ষা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে খোদ জায়নবাদী নেতারা প্রকাশ্যে গণহত্যার ঘোষণা দিচ্ছে। তারা গাজাকে একটি মৃত্যু শিবিরে রূপান্তর করেছে, যাকে বিদ্রূপাত্মকভাবে নাম দিয়েছে ‘মানবিক শহর’।
কিন্তু এমন ঘোষণাও কনসেনট্রেশন ক্যাম্প বা গণহত্যার প্রসঙ্গে সংবেদনশীল ভঙ্গিতে কথা বলা জার্মান অভিজাতদের নড়াতে পারে না। তাদের এই নির্লিপ্ততা কেবল রাষ্ট্রীয় বর্ণবাদ ও বায়োপলিটিকসের প্রতি অটল সমর্থনই প্রকাশ করছে।
কনসেনট্রেশন ক্যাম্প গড়া, খাবার সরবরাহ বন্ধ করে মানুষকে ক্ষুধার্ত করে মেরে ফেলা এবং গণহত্যা চালানোর কোনো অজুহাত নেই। আর সেই কাজকে সমর্থন করারও কোনো অজুহাত নেই।
জায়নবাদীরা এসব অপরাধ করলেও ম্যারৎস তাদের পক্ষ নেন এবং গণহত্যাকারী রাষ্ট্রকে সমর্থন দিয়ে যান। গত ১৮ জুলাই এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি ঘোষণা দেন, ‘ইসরায়েল এখনো একটি গণতান্ত্রিক দেশ। ইসরায়েল একটি আক্রান্ত রাষ্ট্র এবং নিজেদের আত্মরক্ষার চেষ্টা করছে। যদি তা না করত, তবে হয়তো আজ ইসরায়েল রাষ্ট্র থাকত না। ইসরায়েল বছরের পর বছর হুমকির মুখে আছে, আর ৭ অক্টোবর ২০২৩ থেকে আমরা জানি, হুমকিটা কতটা গুরুতর।’
ইসরায়েলকে শুধুই এক অসহায় আত্মরক্ষাকারী রাষ্ট্র হিসেবে উপস্থাপন করা ম্যারৎসের এই রূপকথার গল্পগুলো কে আর বিশ্বাস করবে!
ঐতিহাসিক সত্য হলো, ফ্যাসিবাদী সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর সন্ত্রাসের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত জায়নবাদী উপনিবেশ শাসন শুরু থেকেই ফিলিস্তিনিদের ওপর অতি মাত্রায় সহিংসতা চালিয়েছে ও মানবিক মর্যাদা হরণ করে এসেছে।
ফিলিস্তিনে উপনিবেশ শাসন ও দখলদারদের বসতি নির্মাণ এমনভাবে বেড়েছে যে, তা পুরো পশ্চিম তীরের ফিলিস্তিনি জীবনের অস্তিত্বকে সংকটে ফেলছে।
‘গ্রেটার ইসরায়েল’ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে লেবানন ও সিরিয়াসহ অন্যান্য দেশকে বারবার আক্রমণ করেছে জায়নবাদীরা। ইরাককে আক্রমণ করেছে এবং ইরানের বিরুদ্ধে বেআইনি আগ্রাসী যুদ্ধ চালিয়েছে। ইসরায়েলের এসব কর্মকাণ্ডে সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘন বা আন্তর্জাতিক আইন ভঙ্গ হিসেবে না দেখে বরং প্রশংসা করে মার্জ বলেছেন, ‘ইসরায়েল আমাদের সবার হয়ে নোংরা কাজটা করছে।’
জায়নবাদী রাষ্ট্রকে সমর্থন করে পশ্চিমা বিশ্ব আসলে তার মূল্যবোধের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করছে না। কারণ পশ্চিমাদের মূল্যবোধ কখনোই সবার জন্য ছিল না। এগুলো সবসময়ই কেবল শ্বেতাঙ্গদের জন্য ছিল। বাকিদের জন্য ছিল কেবল মৃত্যু।
এ কারণে এখনো গাজায় শিশু, নারী, পুরুষদের অনাহারে মেরে ফেলা এবং কনসেনট্রেশন ক্যাম্পকে বিশাল মৃত্যু শিবিরে রূপান্তরিত করতে জায়নবাদীদের সহায়তা করে যাচ্ছে জার্মানি।
(মিডিল ইস্ট আই থেকে নেওয়া। ইংরেজি থেকে অনুবাদ করেছেন তুফায়েল আহমদ)
প্রতিবছর ২৫ আগস্টকে স্মরণ করা হয় রোহিঙ্গা গণহত্যা স্মরণ দিবস হিসেবে। ২০১৭ সালের এই সময়ে মিয়ানমার থেকে রোহিঙ্গাদের বিতাড়িত হওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়। সে সময়ে মিয়ানমারে অবস্থিত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী রাষ্ট্রের দ্বারা পরিচালিত সহিংসতা ও গণহত্যার শিকার হয়।
১ দিন আগেদ্বৈরথ ভুলে এরইমধ্যে নিজেদের মধ্যে সরাসরি ফ্লাইট চালুর উদ্যোগ নিয়েছে দুই প্রতিবেশী চীন ও ভারত। এছাড়া ভিসা প্রক্রিয়া সহজকরণ এবং সীমান্ত বাণিজ্য বাড়ানোরও ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।
১ দিন আগেজান্তা সরকার দেশের অন্যত্র কিছু অঞ্চল আবারও নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিতে পারলেও রাখাইনের ১৭টি শহরের ১৪টিই নিয়ন্ত্রণ করছে আরাকান আর্মি। পশ্চিম মিয়ানমারের বঙ্গোপসাগরের তীর ঘেঁষা রাখাইন রাজ্য আঞ্চলিক ভূ-রাজনীতির জন্য বেশ গুরুত্বপূর্ণ।
১ দিন আগেদুঃখপ্রকাশের এই ঘটনাগুলোকে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে কখনোই আনুষ্ঠানিক ক্ষমাপ্রার্থনা হিসেবে বিবেচনা করা হয়নি। বাংলাদেশ বহু বছর ধরেই দাবি করে আসছে যে পাকিস্তানের উচিত ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ও তাদের সহযোগীদের হাতে সংঘটিত গণহত্যা, ধর্ষণ এবং অন্যান্য যুদ্ধাপরাধের জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমা চাওয়া।
২ দিন আগে