leadT1ad

হাইকোর্টের আদেশ ও সিআইবি তালিকা স্থগিত

আইনি জট কাটিয়ে নির্বাচনে মান্না

নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না

অবশেষে আইনি লড়াইয়ের শেষ ধাপে এসে নির্বাচনে লড়াইয়ের সুযোগ পেলেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না। ঋণখেলাপির দায়ে হাইকোর্টে প্রার্থিতা আটকে গেলেও দেশের সর্বোচ্চ আদালত সেই বাধা অপসারণ করেছেন।

আজ সোমবার (২৯ ডিসেম্বর) আপিল বিভাগের চেম্বার আদালত হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত করার পাশাপাশি ক্রেডিট ইনফরমেশন ব্যুরোর (সিআইবি) ঋণখেলাপির তালিকায় মান্নার নামও স্থগিত করেছেন।

এর ফলে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মান্নার অংশগ্রহণের পথে আইনগত আর কোনো প্রতিবন্ধকতা রইল না। চেম্বার বিচারপতি মো. রেজাউল হক শুনানি শেষে এই আদেশ দেন।

গতকাল রোববার শুনানি অসমাপ্ত থাকার পর আজ চেম্বার আদালতে বিষয়টি পুনরায় ওঠে। এদিন মান্নার আইনজীবীরা আদালতকে জানান, সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের সঙ্গে ঋণ পুনঃতফসিল বা নিয়মিতকরণের প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে।

শুনানি শেষে আদালত হাইকোর্টের খারিজ আদেশটি স্থগিত করেন। একই সঙ্গে সিআইবি তালিকায় মান্নাকে যে ঋণখেলাপি হিসেবে দেখানো হয়েছিল, সেই কার্যকারিতাও স্থগিত করা হয়।

মান্নার আইনজীবী ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া আদেশের তাৎপর্য ব্যাখ্যা করে বলেন, হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত হয়েছে এবং সিআইবি রিপোর্টও স্থগিত করা হয়েছে। যেহেতু ঋণটি নিয়মিত হয়েছে এবং খেলাপি তালিকার ওপর আদালতের স্থগিতাদেশ এসেছে, তাই মান্নার নির্বাচন করতে এখন আর কোনো বাধা নেই।

ইসলামী ব্যাংকের আইনজীবী এম আব্দুল কাইয়ুম সাংবাদিকদের নিশ্চিত করেছেন যে, মান্নার স্বার্থসংশ্লিষ্ট কোম্পানির ঋণটি বর্তমানে পুনঃতফসিল করা হয়েছে এবং এ সংক্রান্ত নথিপত্র আদালতে জমা দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, অন্য কোনো ব্যাংকে যদি তিনি খেলাপি না থাকেন বা অন্য কোনো অযোগ্যতা না থাকে, তবে ইসলামী ব্যাংকের ঋণের কারণে তার নির্বাচনে অংশ নিতে বাধা থাকার কথা নয়।

এর আগে গত বুধবার (২৪ ডিসেম্বর) বিচারপতি মো. বজলুর রহমান ও বিচারপতি মো. মনজুর আলমের হাইকোর্ট বেঞ্চ মান্নার রিট আবেদনটি সরাসরি খারিজ করে দিয়েছিলেন। ওই আদেশের ফলে এবং জাতীয় সংসদ নির্বাচন পরিচালনা ম্যানুয়েলের ১২-এর দফা (১) ও উপ-দফা (ঠ) অনুযায়ী মনোনয়নপত্র দাখিলের আগের দিন পর্যন্ত ঋণখেলাপি থাকায় মান্নার নির্বাচনে অংশগ্রহণ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছিল।

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা রবিবার শুনানিতে যুক্তি দেখিয়েছিলেন, ম্যানুয়েল অনুযায়ী নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ঋণ না শোধ করায় তিনি অযোগ্য। কিন্তু সোমবার চেম্বার আদালতের স্থগিতাদেশের ফলে হাইকোর্টের সেই রায় এবং নির্বাচন কমিশনের ম্যানুয়েলের সংশ্লিষ্ট ধারার প্রতিবন্ধকতা—উভয়ই মান্নার ক্ষেত্রে অকার্যকর হয়ে গেল।

আইনি নথিপত্র অনুযায়ী, মাহমুদুর রহমান মান্নার মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান আফাকু কোল্ড স্টোরেজ লিমিটেডের কাছে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডের বগুড়া বড়গোলা শাখার পাওনা দাঁড়িয়েছিল ৩৮ কোটি ৪ লাখ ৭৬ হাজার টাকা। এই ঋণের কারণে গত ১০ ডিসেম্বর ব্যাংকটি কল ব্যাক নোটিশ জারি করে এবং তাকে খেলাপি হিসেবে চিহ্নিত করে। প্রতিষ্ঠানটিতে মান্নার ৫০ শতাংশ শেয়ার রয়েছে।

তবে শুরু থেকেই মাহমুদুর রহমান মান্না অভিযোগ করে আসছিলেন, এটি কেবল আইনি প্রক্রিয়া নয়, বরং তাকে নির্বাচন থেকে দূরে রাখতে রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে।

শনিবার এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি অভিযোগ করেছিলেন, তার সংসদীয় আসন বগুড়া-২-এর স্থানীয় বিএনপি নেতারা তাকে নির্বাচনের বাইরে রাখতে কলকাঠি নাড়ছেন এবং বিচারিক প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করছেন।

তিনি দাবি করেছিলেন, ৫ আগস্টের পটপরিবর্তনের পর ওই ঋণের মূল স্বাক্ষরকারী ও তার ব্যবসায়িক অংশীদার দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন, যার ভুক্তভোগী হচ্ছেন তিনি।

Ad 300x250

সম্পর্কিত