leadT1ad

ওয়াহিদুজ্জামান ও মারুফ মল্লিকের বিরুদ্ধে মামলার আবেদন মাহমুদুর রহমানের, বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিবাদ

প্রকাশ : ২৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৯: ৫৯
এ কে এম ওয়াহিদুজ্জামান এবং এফ এম রাশেদুল হক মল্লিক। ছবি: সংগৃহীত

ফেসবুকে ‘মানহানিকর’ তথ্য প্রচারের অভিযোগে বিএনপির তথ্য ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক এ কে এম ওয়াহিদুজ্জামান (এপোলো) ও লেখক মারুফ মল্লিকের বিরুদ্ধে মামলার আবেদন করেছেন আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমান। প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার কার্যালয়ে হামলার ঘটনার সঙ্গে আমার দেশ পত্রিকাকে জড়িয়ে ফেসবুকে পোস্ট দেওয়ার অভিযোগে আদালতে এই আবেদন করা হয়।

রোববার (২৮ ডিসেম্বর) ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. জুয়েল রানার আদালতে এই মামলার আবেদন করেন মাহমুদুর রহমান। বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ শেষে বিচারক আদেশ অপেক্ষমাণ রেখেছেন।

মামলার আর্জিতে অভিযোগ করা হয়, গত ১৮ ও ১৯ ডিসেম্বর প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার কার্যালয়ে হামলার ঘটনার সঙ্গে ‘আমার দেশ’ কর্তৃপক্ষকে জড়িয়ে আসামিরা ফেসবুকে মিথ্যা, বানোয়াট ও মানহানিকর তথ্য প্রচার করেছেন। এটি জনমনে বিভ্রান্তি ও বিদ্বেষ সৃষ্টি করেছে।

মামলার এজাহারে বলা হয়, ‘মারুফ মল্লিকের সাথে যোগসাজশে ওয়াহিদুজ্জামান (এপোলো) লেখা সমর্থন করে যৌক্তিক প্রশ্ন উল্লেখ করে ফেসবুকে ছড়িয়ে দেন। কাওরান বাজারে আমার দেশ পত্রিকার প্রধান কার্যালয়ে অবস্থানকালে বাদী (মাহমুদুর রহমান) আসামিদের ফেসবুক পোস্ট দুটি সম্পর্কে জানতে পেরে হতবিহ্বল হয়ে পড়েন।’

এতে আরও অভিযোগ করা হয়, আসামিদের এই জঘন্য মিথ্যাচারের কারণে বাদী ও তাঁর দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার ভাবমূর্তি চরমভাবে ক্ষুণ্ন হয়েছে। পাশাপাশি পত্রিকাটির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সব সাংবাদিক, কর্মকর্তা-কর্মচারী ও কলাকুশলীর মানহানি হয়েছে। তাঁদের ব্যাপারে জনমনে শত্রুতা, ঘৃণা, অসন্তোষ ও বিদ্বেষ সৃষ্টি হয়েছে।

নিন্দা জানিয়ে ইউট্যাবের বিবৃতি

মামলার ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে ইউনিভার্সিটি টিচার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ইউট্যাব)। রোববার এক যৌথ বিবৃতিতে সংগঠনের প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক এ বি এম ওবায়দুল ইসলাম ও মহাসচিব অধ্যাপক মোর্শেদ হাসান খান বলেন, যে দুজনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে, তাঁরা দুজনেই ফ্যাসিস্ট আমলে চরম নির্যাতিত ছিলেন। চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থান-পরবর্তী বাংলাদেশেও তাঁদের বিরুদ্ধে এমন দমনমূলক মামলা অনাকাঙ্ক্ষিত।

বিবৃতিতে ইউট্যাবের শীর্ষ দুই নেতা বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি, গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থায় মতপ্রকাশের স্বাধীনতা রয়েছে। এর জবাব হওয়া উচিত তথ্য, যুক্তি ও রাজনৈতিক আলোচনার মাধ্যমে, মামলা দিয়ে নয়।’ বিবৃতিতে তাঁরা উল্লেখ করেন, ‘ফ্যাসিবাদ আমলের মতো দমনমূলক মামলা ও ভীতির সংস্কৃতি নয়, বরং স্বাধীন মতপ্রকাশ হোক ২০২৪-এর গণ-অভ্যুত্থান-পরবর্তী বাংলাদেশের মূলনীতি।’

নাগরিক সমাজের নিন্দা ও শঙ্কা

এ ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও শঙ্কা প্রকাশ করেছে নাগরিক সমাজ। গণমাধ্যমে পাঠানো এক যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়েছে, আওয়ামী লীগের দমনমূলক শাসনের সময়ে মানুষ তার মত প্রকাশ করতে পারত না। শুধু মতপ্রকাশের কারণে সাংবাদিক ও সংবাদমাধ্যমও আক্রান্ত হওয়ার একাধিক নজির আছে। ওয়াহিদুজ্জামান ও মারুফ মল্লিকের বিরুদ্ধে একটি পত্রিকার সম্পাদকের মামলার আবেদন সেই সংস্কৃতিকে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ বলে মনে হচ্ছে, যা নিয়ে তারা শঙ্কিত। বিবৃতিতে বেদনা প্রকাশ করে বলা হয়, স্বৈরাচার আওয়ামী লীগের দমন-পীড়নের শিকার হয়েছেন এই তিন ব্যক্তিই। গণ-অভ্যুত্থানেও তাঁদের অংশগ্রহণ ছিল। অভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে নিজেদের মধ্যে বিভাজন কোথায় গিয়ে পৌঁছেছে, এই মামলার আবেদন তার একটি উদাহরণ।

উদ্বেগ জানিয়েছে জাবিসাস

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির (জাবিসাস) সাবেক সাধারণ সম্পাদক মারুফ মল্লিকের বিরুদ্ধে মামলার ঘটনায় উদ্বেগ জানিয়েছে সংগঠনটি। জাবিসাসের সভাপতি মেহেদী মামুন ও সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল মামুন এক বিবৃতিতে বলেন, ব্যক্তিগত মতপ্রকাশের কারণে উদ্ভূত ক্ষোভ আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সমাধান হওয়া বাঞ্ছনীয়। তাঁরা অবিলম্বে এই মামলা প্রত্যাহারের আহ্বান জানান। এ ছাড়া জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদল এবং প্রাক্তন জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল ফোরামও পৃথক বিবৃতিতে এই ঘটনার নিন্দা জানিয়েছে।

Ad 300x250
সর্বাধিক পঠিত

সম্পর্কিত