leadT1ad

খালেদা জিয়ার জানাজায় জনস্রোত, স্থবির ট্রাফিক ও মেট্রোরেলে উপচেপড়া ভিড়

খালেদা জিয়ার জানাজাকে কেন্দ্র করে রাজধানীতে জনস্রোত। স্ট্রিম ছবি

সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার জানাজাকে কেন্দ্র করে আজ বুধবার সকাল থেকেই রাজধানীর ট্রাফিক চিত্র আমূল বদলে গেছে। দুপুর ২টায় মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে জানাজা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও সকাল থেকেই সংসদ ভবন এলাকায় জনতার ঢল নেমেছে। বিশাল জনসমাগম সামাল দিতে এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) বেশ কিছু সড়ক বন্ধ করে দেওয়ায় আশপাশের এলাকায় তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়েছে, যার প্রভাব পড়েছে পুরো রাজধানীতে। একই সঙ্গে সড়কপথের ভোগান্তি এড়াতে মানুষ মেট্রোরেলমুখী হওয়ায় সেখানেও দেখা গেছে নজিরবিহীন ভিড়।

সরেজমিনে দেখা গেছে, জানাজাকে কেন্দ্র করে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ এবং এর সংলগ্ন ফার্মগেট, বিজয় সরণি ও আসাদগেট সড়কগুলো সাধারণ যান চলাচলের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এর ফলে বিকল্প সড়কগুলোতে গাড়ির চাপ বেড়েছে কয়েক গুণ। বিশেষ করে কারওয়ান বাজার ও পান্থপথ এলাকায় তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়েছে।

ফার্মগেট ও সোনারগাঁও মোড়ের দিকে যান চলাচল সীমিত করায় গাড়িগুলো ঘণ্টার পর ঘণ্টা একই জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে। অন্যদিকে ধানমন্ডি ৩২ ও আসাদগেট এলাকায় ডাইভারশনের কারণে সায়েন্স ল্যাব থেকে নিউমার্কেট এবং কলাবাগানমুখী সড়কে যানবাহনের দীর্ঘ সারি তৈরি হয়েছে। মিরপুর রোডেও যান চলাচল অত্যন্ত ধীরগতির।

জানাজায় অংশ নিতে আসা মানুষেরা চরম ভোগান্তির মধ্যেও হেঁটে বা রিকশায় গন্তব্যে পৌঁছানোর চেষ্টা করছেন। খিলগাঁও থেকে আসা ফরিদুল ইসলাম জানান, তিনি খিলগাঁও থেকে রিকশায় রামপুরা পর্যন্ত এসেছেন, এরপর সেখান থেকে হেঁটেই মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে পৌঁছান। তিনি বলেন, ‘কোনো গাড়ি-ঘোড়া চলছে না, বাধ্য হয়ে হেঁটেই আসতে হলো।’

অন্যদিকে মিরপুর ১০ নম্বর থেকে আসা ইব্রাহিম হোসাইন জানান, তিনি শেওড়াপাড়া পর্যন্ত রিকশায় আসতে পেরেছেন, এরপর বাকি পথ হেঁটেই পাড়ি দিয়েছেন। গণপরিবহন সংকট ও রাস্তা বন্ধ থাকায় এমন অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হতে হয়েছে হাজারো মানুষকে।

সড়কপথে যানজট এড়াতে এবং দ্রুত জানাজার স্থলে পৌঁছাতে মানুষ মেট্রোরেলকে বেছে নেওয়ায় স্টেশনে উপচেপড়া ভিড় লক্ষ করা গেছে। মতিঝিল ও সচিবালয় স্টেশন থেকে ছেড়ে আসা প্রতিটি ট্রেন যাত্রীতে ঠাসা দেখা গেছে। যাত্রীদের একটি বড় অংশ ফার্মগেট ও বিজয় সরণি স্টেশনে নেমে জানাজার স্থলের দিকে যাচ্ছেন। ভিড় সামলাতে স্টেশনের গেটগুলোতে হিমশিম খাচ্ছেন নিরাপত্তাকর্মীরা। যাত্রীদের নজিরবিহীন উপস্থিতি বিবেচনায় মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ শিডিউলের বাইরে অতিরিক্ত ট্রেন চালানোর ঘোষণা দিয়েছে। তবে যাত্রীর চাপে তাতেও পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখা কঠিন হয়ে পড়েছে।

এর আগে ডিএমপি কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী স্বাক্ষরিত এক গণবিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, সুষ্ঠু ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আজ সকাল ৭টা থেকে জানাজা শেষ না হওয়া পর্যন্ত নির্ধারিত এলাকাগুলোতে ডাইভারশন কার্যকর থাকবে। নির্দেশনায় বলা হয়, ফার্মগেট পুলিশ বক্স, ইন্দিরা রোড ক্রসিং, বিজয় সরণি, উড়োজাহাজ ক্রসিং, আসাদগেট, রাপা প্লাজা এবং গণভবন ক্রসিং সংলগ্ন রাস্তাগুলো সাধারণ যানবাহনের জন্য বন্ধ রাখা হয়েছে। এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের ইন্দিরা রোড র‍্যাম্প দিয়ে নামা বন্ধ রাখা হয়েছে এবং এর পরিবর্তে এফডিসি র‍্যাম্প ব্যবহারের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

ডিএমপির নির্দেশনায় আরও বলা হয়েছে, উত্তরা বা বনানী থেকে মতিঝিলগামী গাড়িগুলোকে মহাখালী-জাহাঙ্গীরগেট-বিজয় সরণি এড়িয়ে মহাখালী বাস টার্মিনাল ও মগবাজার ফ্লাইওভার ব্যবহার করতে হবে। মিরপুর থেকে ধানমন্ডি বা মতিঝিলগামী যানবাহনকে মিরপুর রোডের শ্যামলী থেকে বামে টার্ন নিয়ে আগারগাঁও-লিংক রোড হয়ে মহাখালী-তেজগাঁও-মগবাজার ফ্লাইওভার ব্যবহারের অনুরোধ করা হয়েছে। এ ছাড়া সোনারগাঁও মোড় থেকে ফার্মগেট এবং প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে দক্ষিণ দিকে যান চলাচল সীমিত করা হয়েছে।

আগতদের গাড়ি পার্কিংয়ের জন্য শেরেবাংলা নগরের পুরাতন বাণিজ্য মেলার মাঠ নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে ঢাকার বাইরে থেকে আসা বাস ও অন্যান্য বড় যানবাহনের জন্য মতিঝিল বাণিজ্যিক এলাকা, শাহবাগ, উত্তরা ১৭ নম্বর সেক্টর এবং পূর্বাচল ৩০০ ফিট এলাকা ব্যবহারের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এই বিশেষ পরিস্থিতিতে নগরবাসীকে বিকল্প রাস্তা ব্যবহার করে নির্ধারিত গন্তব্যে যাতায়াতের এবং ট্রাফিক পুলিশকে সহযোগিতা করার অনুরোধ জানিয়েছে ডিএমপি।

Ad 300x250

সম্পর্কিত