বাংলাদেশের ২৬তম প্রধান বিচারপতি হিসেবে শপথ নিয়েছেন জুবায়ের রহমান চৌধুরী। আজ রোববার (২৮ ডিসেম্বর) সকাল ১০টা ৩৬ মিনিটে বঙ্গভবনে তাকে শপথ পড়ান রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন।
এ সময় অন্তবর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও সদ্যবিদায়ী ২৫তম প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা, বিচারপতি, তিন বাহিনীর প্রধান এবং সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবীরাও উপস্থিত ছিলেন।
আজ সকাল ১০টা ৩৫ মিনিটের দিকে শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান শুরু হয়। অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব ড. শেখ আব্দুর রশীদ। অনুষ্ঠানের শুরুর আগেই অতিথিরা তাঁদের আসন গ্রহণ করেন। পরে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস একসঙ্গে অনুষ্ঠানস্থলে প্রবেশ করেন।
অনুষ্ঠানটি বাংলাদেশ টেলিভিশন (বিটিভি) ও বাংলাদেশ বেতার সরাসরি সম্প্রচার করে।
এর আগে রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে গত ২৩ ডিসেম্বর আইন মন্ত্রণালয় থেকে জারি করা প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, সংবিধানের ৯৫ (১) অনুচ্ছেদে দেওয়া ক্ষমতাবলে রাষ্ট্রপতি আপিল বিভাগের বিচারপতি জুবায়ের রহমান চৌধুরীকে বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন। এই নিয়োগ শপথের তারিখ থেকে কার্যকর হবে।
অনুষ্ঠানে অতিথিরা। ছবি: প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইংএদিকে বিদায়ী প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ গতকাল শনিবার অবসরে গেছেন। এদিন তাঁর চাকরির মেয়াদ ৬৭ বছর পূর্ণ হয়।
বিচারপতি জুবায়ের রহমান চৌধুরী বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে দীর্ঘদিন হাইকোর্ট বিভাগে দায়িত্ব পালন করলেও আপিল বিভাগে নিয়োগবঞ্চিত ছিলেন। তবে ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সরকার পরিবর্তনের পর বিচার অঙ্গনের দৃশ্যপট পাল্টায়। তৎকালীন প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের পদত্যাগের পর গত ১২ আগস্ট তাকে হাইকোর্ট বিভাগ থেকে সরাসরি আপিল বিভাগে নিয়োগ দেওয়া হয় এবং ১৩ আগস্ট তিনি শপথ গ্রহণ করেন।
বিচারিক জীবনে তিনি বেশ কিছু যুগান্তকারী রায় প্রদান করেছেন। এর মধ্যে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিলের রায় অবৈধ ঘোষণা, সরকারি কর্মকর্তাদের ১৫০ দিনের বেশি অফিসার অন স্পেশাল ডিউটি (ওএসডি) রাখা অবৈধ ঘোষণা এবং সরকারি কর্মচারীদের পেনশন সুবিধা প্রদান সংক্রান্ত রায় উল্লেখযোগ্য। এছাড়া ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স ও নারী নিকাহ রেজিস্ট্রার হওয়ার অধিকার নিয়েও তিনি গুরুত্বপূর্ণ রায় দিয়েছেন।
জুবায়ের রহমান চৌধুরী ১৯৬১ সালের ১৮ মে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা প্রয়াত বিচারপতি এ এফ এম আবদুর রহমান চৌধুরীও সুপ্রিম কোর্টের বিচারক ছিলেন। তবে তার বাবার পরিচয় কেবল বিচারক হিসেবেই সীমাবদ্ধ ছিল না; তিনি ছিলেন ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের অন্যতম অগ্রনায়ক। ১৯৪৮ সালের মার্চে পাকিস্তানের তৎকালীন গভর্নর জেনারেল মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর সঙ্গে ছাত্রনেতাদের যে বৈঠক হয়েছিল, সেখানে সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের ভিপি হিসেবে আবদুর রহমান চৌধুরী রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবি জোরালোভাবে তুলে ধরেছিলেন। এমন এক পারিবারিক আবহে বেড়ে ওঠা জুবায়ের রহমান চৌধুরী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এলএলবি ও এলএলএম ডিগ্রি অর্জনের পর যুক্তরাজ্যে আন্তর্জাতিক আইনের ওপর আরেকটি মাস্টার্স ডিগ্রি সম্পন্ন করেন।
জুবায়ের রহমান চৌধুরী ১৯৮৫ সালে জজ কোর্টে এবং ১৯৮৭ সালে সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে আইনজীবী হিসেবে তালিকাভুক্ত হন। পরে ২০০৩ সালের ২৭ আগস্ট তিনি হাইকোর্ট বিভাগের অতিরিক্ত বিচারক হিসেবে নিয়োগ পান।
সংবিধান অনুযায়ী বিচারকদের অবসরের বয়সসীমা ৬৭ বছর। সেই হিসেবে তিনি ২০২৮ সালের ১৮ মে পর্যন্ত, অর্থাৎ প্রায় আড়াই বছর প্রধান বিচারপতি হিসেবে দায়িত্ব পালনের সুযোগ পাবেন।
বর্তমানে আপিল বিভাগে তার সহকর্মী হিসেবে রয়েছেন বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলাম, বিচারপতি মো. রেজাউল হক, বিচারপতি এস এম এমদাদুল হক, বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান এবং বিচারপতি ফারাহ মাহবুব।