স্ট্রিম ডেস্ক

বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মৃত্যুর পেছনে ‘ফ্যাসিস্ট প্রধানমন্ত্রী’ শেখ হাসিনা এবং তাঁর সরকারের অবশ্যই দায় রয়েছে বলে মনে করেন আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল। মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকের পর সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এমন মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, ‘একটা প্রহসনমূলক রায়ে উনাকে জেলখানায় পাঠিয়ে অকথ্য নির্যাতন করা হয়েছে। বেগম খালেদা জিয়াকে যে মামলায় দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে, এটা যে প্রহসনের একটা রায় ছিল। এটা একটা সম্পূর্ণ সাজানো রায় ছিল। এটা আমাদের সর্বোচ্চ আদালতের আপিল এবং রিভিউ এর মধ্যে দিয়ে প্রমাণিত। সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্টের আপিলের ডিভিশনের রায়ের মধ্যে বারবার বলা হয়েছে যে বেগম জিয়াকে যেই মামলায় সাজা দেওয়া হয়েছে সেটা সম্পূর্ণ রংলি (ভুলভাবে), উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে, জিজ্ঞাংসা-প্রসূতভাবে তাঁকে সাজা দেওয়া হয়েছিল।
‘খালেদা জিয়াকে জেলখানায় বিভিন্ন সময় যেভাবে নির্যাতন করা হয়েছিল, না হলে হয়তো এত তাড়াতাড়ি তাঁকে আমরা হারাতাম না’, বলেও মন্তব্য করেন আসিফ নজরুল।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে তাঁর স্বামী সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের কবরের পাশে দাফন করা হবে বলে জানিয়েছেন আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল।
আসিফ নজরুল জানান, আজ যে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে, সেখানে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি খালেদা জিয়ার পরিবার ও তাঁর দলের পক্ষে উপদেষ্টা পরিষদকে জানিয়েছেন, তাঁকে আগামীকাল বুধবার (৩১ ডিসেম্বর) জোহরের নামাজের পর জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় মানিক মিয়া এভিনিউতে অনুষ্ঠিত হবে।
আইন উপদেষ্টা জানান, প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ব্যক্তিগতভাবে সবসময় খোঁজখবর রেখেছেন, যা দরকার ছিল। তাঁকে যদি আবার বিদেশে পাঠানোর মত অবস্থা থাকতো, অবশ্যই আমাদের সরকারের পক্ষ থেকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করা হতো। প্রধান উপদেষ্টা ব্যক্তিগতভাবে এই জিনিসগুলা খোঁজখবর নিয়েছেন।
আসিফ নজরুল বলেন, ‘আমাদের দুর্ভাগ্য, বেগম খালেদা জিয়াকে বছরখানেক বা বছর দুয়েক আগে যদি আমরা পেতাম, হয়তো আমাদের পক্ষে কিছু একটা করা সম্ভব ছিল। আল্লাহর ইচ্ছা, উনি চলে গেছেন। তবে আমাদের জন্য সবচেয়ে বড় আনন্দের ব্যাপার হচ্ছে উনিও সারা দেশের মানুষের সম্মান, শ্রদ্ধা এবং ভালোবাসা নিয়ে বিদায় নিয়েছেন।

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার নামাজে জানাজা আগামীকাল বুধবার অনুষ্ঠিত হবে বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) সাড়ে ১২টার দিকে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে তিনি একথা জানান। একইসঙ্গে জানাজার দিনে সাধারণ ছুটি এবং আগামী তিনদিন রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
খালেদা জিয়ার নামাজে জানাজাসহ সব ধরনের শোক পালনে শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য সবার প্রতি বিনীত আহ্বান জানান প্রধান উপদেষ্টা।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে আগামীকাল বুধবার (৩১ ডিসেম্বর) সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। এছাড়া আগামী তিন দিন রাষ্ট্রীয় শোকের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। মন্ত্রিপরিষদ সচিব ড. শেখ আব্দুর রশীদ এ তথ্য জানিয়েছেন।

বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্রসংসদ (ডাকসু)। মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) সকালে গণমাধ্যমে পাঠানো এক শোকবার্তায় ডাকসু বলেছে, ‘শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের শাহাদাতের পর দেশের এক অন্ধকার সময়ে বেগম খালেদা জিয়া দৃঢ় প্রতিজ্ঞায় উঠে দাঁড়িয়েছিলেন। স্বৈরাচারের দমন-পীড়ন ও রাজনৈতিক প্রতিহিংসাকে মোকাবেলা করে তিনি হয়ে উঠেছিলেন গণতান্ত্রিক আন্দোলনের প্রধান মুখ, জনপ্রত্যাশার কেন্দ্রবিন্দু।’
ডাকসু মনে করে, ‘বাংলাদেশের আলেম-ওলামাসহ আধিপত্যবাদ বিরোধী শক্তির প্রতি যখন অপবাদ, ষড়যন্ত্র ও বিভাজনকে হাতিয়ার করে দেশপ্রেমিক শক্তিগুলোকে ধ্বংসের চেষ্টা চালিয়েছিল ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগ, তখন বেগম খালেদা জিয়া ছিলেন সত্য, ন্যায় ও সার্বভৌমত্বের পক্ষে অবিচল। তিনি কখনো বিদেশি তোষামোদ বা চাপের কাছে নতি স্বীকার করেননি; বাংলাদেশকে নিয়ে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকতে চেয়েছিলেন তিনি। স্বৈরতন্ত্র, ভিনদেশি আধিপত্যবাদ এবং ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে তাঁর নেতৃত্বে হওয়া গণআন্দোলন এ দেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে অনন্য অধ্যায় হিসেবে স্মরণীয় হয়ে থাকবে।’
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছে আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টি। দলটির নেতারা তাকে ‘গণতন্ত্র ও দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব প্রশ্নে আপসহীন দেশনেত্রী’ হিসেবে অভিহিত করে তার বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করেছেন।
এক যৌথ শোকবার্তায় এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু ও সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ বলেন, ‘বেগম খালেদা জিয়া বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক রাজনীতির এক অনন্য ব্যক্তিত্ব। বাংলাদেশের মুক্তির সংগ্রাম ও অন্তর্ভুক্তিমূলক রাজনীতির ইতিহাসে তিনি এক অবিচ্ছেদ্য অধ্যায়।’
তিনবারের সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর অবদানের কথা স্মরণ করে এই দুই নেতা বলেন, ‘দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে গণতন্ত্র, জাতীয় স্বার্থ ও মানুষের অধিকার রক্ষায় তিনি অবিস্মরণীয় ভূমিকা রেখেছেন। স্বৈরাচার ও ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে তার আপসহীন নেতৃত্ব বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে চির সমুজ্জ্বল হয়ে থাকবে।’
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে উপদেষ্টা পরিষদের বিশেষ বৈঠকে যোগ দিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সেখান থেকে বেরিয়ে সাংবাদিকদের তিনি জানান, বৈঠক প্রসঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব বিস্তারিত জানাবেন এবং প্রধান উপদেষ্টা জাতির উদ্দেশে ঘোষণা দেবেন।
এসময় তিনি জানান, খালেদা জিয়ার জানাজা ও তাঁর দাফন সংক্রান্ত কাজগুলো সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে সমন্বয় করার জন্য উপদেষ্টা পরিষদের বিশেষ সভায় আজকে তাঁকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। ক্যাবিনেট থেকে সেটা আলোচনা হয়েছে। একটু পরেই আপনারা সেগুলো জানতে পারবেন। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সেক্রেটারি আপনাদের জানাবেন।
এসময় তিনি আরও বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টা বোধহয় জাতির উদ্দেশে একটা ঘোষণা দেবেন। যেহেতু তাদের মিটিং, তারাই জানাবেন এবং সেটাই ভালো হবে। আমাদের বিষয়গুলো আমরা আপনাদের সকালে জানিয়েছি। আর আমাদের দুপুর সাড়ে ১২টায় জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে আমাদের সমস্ত সিদ্ধান্তগুলো চূড়ান্ত করে আমরা আপনাদের আবারো জানাবো।
বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, ‘স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে তাঁর সাহসী নেতৃত্ব গণতান্ত্রিক অধিকার আদায়ে এদেশের মানুষকে পথ দেখিয়েছে। নব্বইয়ের গণ-অভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশে সংসদীয় শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা এবং গণতান্ত্রিক পরিবেশ পুনরুদ্ধারে রেখেছেন অসামান্য ভূমিকা।’
মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) সকালে নিজের ভেরিফায়েড আইডি থেকে দেওয়া এক পোস্টে তিনি লেখেন, ‘দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে তিনি বহুবার কারাবরণ করেছেন এবং চড়াই-উৎরাই পার করেছেন, কিন্তু নিজের রাজনৈতিক আদর্শ ও জনগণের অধিকারের প্রশ্নে তিনি ছিলেন অবিচল। দেশ ও জাতির সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে ছিলেন আপসহীন।’
বাংলাদেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে বেগম খালেদা জিয়ার অবদান এবং সংগ্রামের স্মৃতি নিশ্চয়ই সংরক্ষিত থাকবে উল্লেখ করে নাহিদ ইসলাম লিখেছেন, ‘দেশ ও জনগণের কল্যাণে নিয়োজিত তার দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবন ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে থাকবে অনুপ্রেরণা হয়ে। আজ তাঁর প্রয়াণে বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের একটি দীর্ঘ ও ঘটনাবহুল অধ্যায়ের সমাপ্তি ঘটলো। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন।‘

খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করছে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন। আজ মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) এক শোকবার্তায় বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন জানায়, বেগম খালেদা জিয়া বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে একজন প্রভাবশালী ও গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি ছিলেন। তিনি ১৯৯১ সালে সংসদীয় গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার পর দেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন এবং ১৯৯৬ ও ২০০১ সালে আরো দুই দফা প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন।
রাজনৈতিক জীবনে তিনি বহুদলীয় গণতন্ত্র, সাংবিধানিক শাসনব্যবস্থা ও রাজনৈতিক অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেন উল্লেখ করে কমিশন বলছে, তিনি দীর্ঘদিন বিরোধীদলীয় নেতা হিসেবেও সংসদীয় রাজনীতিতে সক্রিয় থেকে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠায় আপসহীন ভূমিকা পালন করেন। নির্বাচনি প্রক্রিয়া ও গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানসমূহের বিকাশে তাঁর রাজনৈতিক ভূমিকা দেশের ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে থাকবে।
নির্বাচন কমিশন মরহুমার বিদেহ আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন এবং তাঁর শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যসহ সহকর্মীদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানিয়েছে।

সাবেক প্রধানমন্ত্রী, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছে জামায়াতে ইসলামী। আজ মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমান শোক জানিয়ে বিবৃতি দেন।
বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘সাবেক প্রধানমন্ত্রী, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক আন্দোলন-সংগ্রামে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে। বহুদলীয় গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা, জনগণের ভোটাধিকার এবং স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে তাঁর ভূমিকা ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে থাকবে। বলিষ্ঠ নেতৃত্ব ও দৃঢ় রাজনৈতিক অবস্থানের জন্য তিনি দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে একটি স্বতন্ত্র পরিচয় রেখে গেছেন। আধিপত্যবাদ বিরোধী আন্দোলন-সংগ্রামে খালেদা জিয়ার অবদান জাতি শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করবে।
খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে গভীর শোক ও সমবেদনা প্রকাশ করে জামায়াতের আমির বলেন, ‘আল্লাহ তাআলা তাঁর ভুল-ত্রুটিগুলো ক্ষমা করে দিয়ে জান্নাতুল ফেরদৌস নসিব করুন এবং তাঁর শোকসন্তপ্ত পরিবার-পরিজন, আত্মীয়স্বজন ও সহকর্মীদের এই কঠিন সময়ে ধৈর্য ধারণ করার তৌফিক দান করুন।’
বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার কাছে চিঠি দিয়ে শোক প্রকাশ করেছেন চীনের প্রধানমন্ত্রী লি কিয়াং।
চিঠিতে চীনা প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, চীনা সরকারের পক্ষ থেকে বাংলাদেশ সরকার ও বেগম খালেদা জিয়ার পরিবারের প্রতি গভীর শোক ও আন্তরিক সমবেদনা জানাচ্ছি।
বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করছে ফ্রান্স।
আজ মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) সকালে ঢাকাস্থ ফরাসি দূতাবাস এক বার্তায় বলেছে, খালেদা জিয়া বাংলাদেশের জাতীয় জীবন গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। তাঁর অবদান ও উত্তরাধিকার স্মরণীয় হয়ে থাকবে।
বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করছে জার্মানি।
আজ মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) সকালে ঢাকাস্থ জার্মান দূতাবাস এক শোক বার্তায় বলেছে, বেগম জিয়া বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিমণ্ডল গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। এই শোকের মুহূর্তে জার্মানি জাতীয় জীবনে তাঁর অবদানকে সম্মান জানায় এবং তাঁর পরিবার, তাঁর দল এবং বাংলাদেশের জনগণের প্রতি গভীর সমবেদনা প্রকাশ করছে।
বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করছে যুক্তরাষ্ট্র।
আজ মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) সকালে ঢাকাস্থ যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস এক বার্তায় বলা হয়, খালেদা জিয়া তাঁর দেশের আধুনিক ইতিহাস গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন। তাঁর নেতৃত্ব বাংলাদেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতিতে বিশেষ অবদান রেখেছে।

বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুর খবরে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালের সামনে দলটির নেতাকর্মী ও সমর্থকদের ভিড় বাড়তে থাকে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে হাসপাতাল ও আশপাশের এলাকায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।
মঙ্গলবার সকালে সরেজমিনে দেখা যায়, এভারকেয়ার হাসপাতালের সামনে সেনাবাহিনী মোতায়েন রয়েছে। এর পাশাপাশি অতিরিক্ত পুলিশ ও বিজিবি সদস্যরা দায়িত্ব পালন করছেন। হাসপাতালের মূল ফটক ও আশপাশের এলাকায় ব্যারিকেড বসিয়ে যান চলাচল ও মানুষের প্রবেশ নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে।
খালেদা জিয়ার মৃত্যুসংবাদ ছড়িয়ে পড়ার পর অনেক বিএনপি নেতাকর্মী হাসপাতালে প্রবেশের চেষ্টা করেন। তবে নিরাপত্তাজনিত কারণে পুলিশ কাউকে ভেতরে ঢুকতে দেয়নি। এতে হাসপাতালের সামনে এক আবেগঘন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। অনেককে সেখানে কান্নায় ভেঙে পড়তে দেখা গেছে।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মৃত্যুর পর স্থায়ী কমিটির বৈঠক ডেকেছে তাঁর দল। আজ মঙ্গলবার দুপুর ১২টায় গুলশানে বিএনপি চেয়ারপার্সনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে বৈঠকটি হবে বলে জানান দলের মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান।
তিনি জানান, জরুরিভাবে স্থায়ী কমিটির বৈঠকটি হবে।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ ও হল সংসদ নির্বাচন স্থগিত করা হয়েছে। আজ মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটের সভা শেষে এ তথ্য জানান উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো রেজাউল করিম।
আজ সকাল সাড়ে ৮টায় জকসু নির্বাচনের ভোটগ্রহণ হওয়ার কথা ছিল। তবে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মৃত্যুর খবরে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে সিন্ডিকেট সভা আহ্বান করা হয়। পরে নির্বাচন স্থগিতের কথা জানানো হয়।
শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে গত ২৮ অক্টোবর জকসু নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়। গত ৫ ডিসেম্বর জকসু নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়। ভোটগ্রহণের জন্য ২২ ডিসেম্বর দিন নির্ধারণ করা হয়। তবে ভূমিকম্পে ক্যাম্পাস বন্ধ থাকায় ৮ দিন পিছিয়ে তা ৩০ ডিসেম্বর করা হয়।
মঙ্গলবার ভোট শুরুর আগে নির্বাচন স্থগিতের ঘোষণায় বিক্ষোভ দেখিয়েছে ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেল ‘ঐক্যবদ্ধ নির্ভীক জবিয়ান’ ও ছাত্রশিবির সমর্থিত প্যানেল ‘অদম্য জবিয়ান ঐক্য। কয়েকজন স্বতন্ত্র প্রার্থীও ক্ষোভ জানিয়েছেন।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে পোস্ট করা এক শোকবার্তায় তিনি বলেন, তিনি খালেদা জিয়ার মৃত্যুসংবাদে গভীরভাবে শোকাহত।
নরেন্দ্র মোদি শোকবার্তায় বেগম খালেদা জিয়ার পরিবারের সদস্যদের এবং বাংলাদেশের জনগণের প্রতি আন্তরিক সমবেদনা জানান। তিনি বলেন, এই শোকজনক ক্ষতি সহ্য করার জন্য মহান আল্লাহ যেন তাঁর পরিবারকে শক্তি দেন।
Deeply saddened to learn about the passing away of former Prime Minister and BNP Chairperson Begum Khaleda Zia in Dhaka.
— Narendra Modi (@narendramodi) December 30, 2025
Our sincerest condolences to her family and all the people of Bangladesh. May the Almighty grant her family the fortitude to bear this tragic loss.
As the… pic.twitter.com/BLg6K52vak
ভারতের প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে বেগম খালেদা জিয়া বাংলাদেশের উন্নয়ন এবং ভারত–বাংলাদেশ সম্পর্ক জোরদারে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন, যা সব সময় স্মরণীয় হয়ে থাকবে।
শোকবার্তায় নরেন্দ্র মোদি ২০১৫ সালে ঢাকায় বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে তাঁর উষ্ণ সাক্ষাতের কথা স্মরণ করেন। তিনি আশা প্রকাশ করেন, তাঁর ভাবনা ও উত্তরাধিকার দুই দেশের অংশীদারত্বকে ভবিষ্যতেও পথ দেখাবে।
শেষে নরেন্দ্র মোদি মরহুমার আত্মার শান্তি কামনা করেন।

খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক বার্তায় তিনি খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক অবদান ও বাংলাদেশের উন্নয়নে তাঁর ভূমিকার কথা স্মরণ করেন।
শোকবার্তায় শাহবাজ শরিফ বলেন, বেগম খালেদা জিয়া বাংলাদেশের জন্য আজীবন যে সেবা দিয়ে গেছেন, তা দেশটির ইতিহাসে একটি স্থায়ী উত্তরাধিকার হয়ে থাকবে। তিনি উল্লেখ করেন, খালেদা জিয়া পাকিস্তানের একজন প্রতিশ্রুতিশীল বন্ধু ছিলেন।
Deeply saddened by the passing of Begum Khaleda Zia, Chairperson of the BNP and former Prime Minister of Bangladesh. Her lifelong service to Bangladesh and its growth and development leaves a lasting legacy.
— Shehbaz Sharif (@CMShehbaz) December 30, 2025
Begum Zia was a committed friend of Pakistan. My Government and the…
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, এই শোকের মুহূর্তে পাকিস্তান সরকার ও সে দেশের জনগণ বাংলাদেশের জনগণের পাশে রয়েছে। একই সঙ্গে তিনি খালেদা জিয়ার পরিবার, স্বজন এবং শুভানুধ্যায়ীদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।
বার্তার শেষাংশে শাহবাজ শরিফ খালেদা জিয়ার রুহের মাগফিরাত কামনা করে বলেন, আল্লাহ তায়ালা যেন তাঁকে জান্নাত নসিব করেন।

প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস আজ আনুমানিক দুপুর ১২টায় জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেবেন। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে এ তথ্য জানানো হয়েছে। প্রেস উইং জানিয়েছে, প্রধান উপদেষ্টার এই ভাষণ বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বাংলাদেশ বেতারে একযোগে প্রচার করা হবে।

বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে জিয়া উদ্যানে তাঁর স্বামী এবং সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের কবরের পাশে দাফন করা হতে পারে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ গণমাধ্যমে এ তথ্য জানিয়েছেন।
তিনি আরও জানান, খালেদা জিয়ার জানাজা আগামীকাল বুধবার রাজধানীর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে অনুষ্ঠিত হতে পারে।

তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী, গণতান্ত্রিক আন্দোলনের প্রতীক এবং বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস।
মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) সকালে প্রেস উইং থেকে পাঠানো এক শোকবার্তায় প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘বেগম খালেদা জিয়ার ইন্তেকালে জাতি তার এক মহান অভিভাবককে হারাল। তাঁর মৃত্যুতে আমি গভীরভাবে শোকাহত ও মর্মাহত।’
প্রফেসর ইউনূস বলেন, ‘বেগম খালেদা জিয়া শুধু একটি রাজনৈতিক দলের নেত্রীই ছিলেন না; তিনি ছিলেন বাংলাদেশের ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। তাঁর অবদান, তাঁর দীর্ঘ সংগ্রাম এবং তাঁর প্রতি জনগণের আবেগ বিবেচনায় নিয়ে সরকার চলতি মাসে তাঁকে রাষ্ট্রের অতিগুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হিসেবে ঘোষণা করে।’
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘বাংলাদেশে গণতন্ত্র, বহুদলীয় রাজনৈতিক সংস্কৃতি এবং জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে তাঁর ভূমিকা স্মরণীয় হয়ে থাকবে। তাঁর আপসহীন নেতৃত্বের ফলে গণতন্ত্রহীন অবস্থা থেকে জাতি বারবার মুক্ত হয়েছে, মুক্তির অনুপ্রেরণা পেয়েছে। দেশ ও জাতির প্রতি তাঁর অবদান জাতি শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করবে।’
‘রাজনৈতিক মতপার্থক্য সত্ত্বেও জাতির কল্যাণে তাঁর দীর্ঘ রাজনৈতিক যাত্রা, গণমুখী নেতৃত্ব এবং দৃঢ় মনোবল সব সময় পথ দেখিয়েছে। তাঁর মৃত্যুতে দেশ একজন অভিজ্ঞ ও পরীক্ষিত রাজনীতিককে হারাল’, উল্লেখ করেন প্রধান উপদেষ্টা।
তিনি বলেন, তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া ছিলেন বাংলাদেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী এবং বিএনপি’র চেয়ারপারসন, যিনি স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে গণতন্ত্রে ফিরে পাওয়ার লড়াইয়ে নেতৃত্ব দেন। তাঁর স্বামী সাবেক রাষ্ট্রপতি ও সেনাপ্রধান ও বীর মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পর ১৯৮২ সালে গৃহবধূ থেকে রাজনীতির মাঠে আসা বেগম খালেদা জিয়ার বলিষ্ঠ নেতৃত্ব স্বৈরশাসক এরশাদের দীর্ঘ ৯ বছরের দুঃশাসনের পতন ঘটাতে প্রধান ভূমিকা রাখে।
খালেদা জিয়ার বহু কর্ম ও সিদ্ধান্ত দেশকে অনেক দূর এগিয়ে নিয়েছে উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘তিনি মেয়েদের জন্য অবৈতনিক শিক্ষা ও উপবৃত্তি চালু করেন, যা বাংলাদেশের নারী শিক্ষার অগ্রগতির ক্ষেত্রে একটি মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হয়। রাজনৈতিক জীবনে বেগম খালেদা জিয়া ভীষণভাবে সফল ছিলেন। তিনি কখনো কোনো নির্বাচনে পরাজিত হননি। ১৯৯১ থেকে ২০০১ সালের সাধারণ নির্বাচনগুলোতে তিনি পাঁচটি পৃথক সংসদীয় আসন থেকে নির্বাচিত হয়েছিলেন। ২০০৮ সালে তিনি যে তিনটি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন, সেখানেই তিনি জয়লাভ করেছিলেন।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ১৯৯১ সালে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হওয়ার পর অর্থনৈতিক উদারীকরণের মাধ্যমে তিনি দেশের অর্থনীতির একটি মজবুত ভিত্তি স্থাপন করেন।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদী শাসনামলে বেগম খালেদা জিয়া ছিলেন সংগ্রাম ও প্রতিরোধের এক অনন্য প্রতীক। তাঁর আপসহীন ভূমিকা দীর্ঘ লড়াই-সংগ্রামে জাতিকে দারুণভাবে অনুপ্রাণিত করেছে।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, রাজনৈতিক সাফল্যের কারণেই বেগম খালেদা জিয়া চরম রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হয়েছিলেন। মিথ্যা ও বানোয়াট মামলায় তাঁকে ১৭ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয় এবং দীর্ঘদিন কারাবাস করতে হয়েছিল।
বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে প্রধান উপদেষ্টা তাঁর শোকসন্তপ্ত পরিবার ও দলের নেতাকর্মীদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানিয়েছেন। জাতির এই অপূরণীয় ক্ষতির দিনে তিনি দেশবাসীকে শান্ত থাকার ও ধৈর্য ধারণের আহ্বান জানিয়েছেন এবং যার যার অবস্থান থেকে বেগম খালেদা জিয়ার জন্য দোয়া ও প্রার্থনা করার অনুরোধ করেছেন।

বিএনপির চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে আগামী সাত দিনব্যাপী শোক পালন করবে তাঁর দল। আজ মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) সকাল ৯টার দিকে রাজধানীর এভার কেয়ার হাসপাতালের সামনে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ এই কর্মসূচি ঘোষণা করেন।
আগামী সাত দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করে তিনি জানান, আগামী সাতদিন শোক পালনকালে দেশের সব দলীয় কার্যালয়ে কালো পতাকা টানানো থাকবে। বিএনপির সব নেতা-কর্মী কালো ব্যাজ ধারণ করবেন। এছাড়া সব দলীয় কার্যালয়ে কোরআন খতম ও দোয়া অনুষ্ঠিত হবে।
খালেদা জিয়ার নামাজের জানাজার সময় ও স্থান পরে জানানো হবে বলেও উল্লেখ করেন রুহুল কবির রিজভী।

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মৃত্যুর সংবাদ জানিয়ে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘সরকার প্রধান ড. ইউনূস আমাদের ফোন করেছিলেন। ইতিমধ্যেই তারা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন সকাল ১০টায় বিশেষ উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠক বসবে। বৈঠকে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার জানাজা, রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন করা, তাঁকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদা দেওয়া; এই বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা হবে।’ সরকারের সিদ্ধান্তের পর পুরো কর্মসূচি সমন্বয় করে জাতিকে জানানো হবে বলেও জানান বিএনপির এই নেতা।
আজ মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) সকাল ৯টার দিকে রাজধানীর এভার কেয়ার হাসপাতালে তিনি সাংবাদিকদের ব্রিফিং করেন। এরপর কর্মসূচি ঘোষণা করেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এই সংবাদটি নিয়ে আপনাদের সামনে দাঁড়াতে হবে, তা কিন্তু আমরা কখনো ভাবিনি। আমরা এবারও আশা করছিলাম ঠিক আগের মতই আবারও তিনি সুস্থ হয়ে ফিরে আসবেন। আমরা ভারাক্রান্ত। ইতিমধ্যে আপনারা শুনেছেন, আজ ৬টায় আমাদের গণতন্ত্রের মা, আমাদের অভিভাবক আমাদের জাতির অভিভাবক আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন। ইন্নালিল্লাহি ওয়ালিল্লাহি রাজিউন।’
তিনি বলেন, ‘এই শোক, এই ক্ষতি অপূরণীয়। এই জাতি কোনোদিন এটা পূরণ করতে পারবে না। যে নেত্রী তার সারাজীবন জনগণের অধিকারের জন্য কল্যাণের জন্য উৎসর্গ করেছিলেন। সেই নেত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া আমাদের মাঝে নেই। এটা আমরা তাঁর সহকর্মী এবং রাজনৈতিক কর্মীরা ভাবতে পারি না। বাংলাদেশের রাজনীতি একটা বিশাল শূন্যতা সৃষ্টি হল। তাই নয়, গণতান্ত্রিক পৃথিবীর গণতান্ত্রিক আন্দোলনে একটা বিশাল শূন্যতা সৃষ্টি হল।
তিনি বলেন, ‘আমরা দলের পক্ষ থেকে আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের অনুমতিক্রমে দলের কিছু কর্মসূচি নিয়েছি। সেই কর্মসূচিগুলো আমাদের দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ আপনাদের সামনে তুলে ধরবেন।’
পরে দলের সাত দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেন রুহুল কবির রিজভী। তিনি জানান, খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে আগামী সাত দিনব্যাপী শোক পালন করবে বিএনপি। এই সাতদিন দেশের সব দলীয় কার্যালয়ে কালো পতাকা টানানো থাকবে। বিএনপির সব নেতা-কর্মী কালো ব্যাজ ধারণ করবেন। এছাড়া সব দলীয় কার্যালয়ে কোরআন খতম ও দোয়া অনুষ্ঠিত হবে।
বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া আর নেই (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। আজ মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) ভোর ৬টায় রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি ইন্তেকাল করেন।
খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য অধ্যাপক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন মৃত্যুসংবাদটি নিশ্চিত করেছেন।
মৃত্যুর সময় হাসপাতালে খালেদা জিয়ার পাশে উপস্থিত ছিলেন তাঁর জ্যেষ্ঠ ছেলে ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, ছেলের বউ ডা. জুবাইদা রহমান, নাতনি জাইমা রহমান, ছোট ছেলের বউ সৈয়দা শামিলা রহমান, ছোট ভাই শামীম এসকান্দার, ছোট ভাইয়ের স্ত্রী এবং বড় বোন সেলিনা ইসলামসহ আত্মীয়স্বজনরা। এ ছাড়া বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এবং খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় গঠিত মেডিকেল বোর্ডের চিকিৎসকরাও সেখানে উপস্থিত ছিলেন।
খালেদা জিয়ার জানাজার সময়সূচি পরে জানানো হবে।

এর আগে গতকাল দিবাগত রাত ২টার পরে এভার কেয়ার হাসপাতালের সামনে খালেদা জিয়ার সর্বশেষ শারীরিক নিয়ে তাঁর ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন জানিয়েছিলেন, খালেদা জিয়া সবচেয়ে সংকটময় সময় অতিক্রম করছেন। তিনি বলেন, ‘আমি গত পরশুদিন বলেছিলাম, উনি উনার সবচেয়ে সংকটময় সময় অতিক্রম করছেন এবং সময় বলে দেবেন তিনি কতটুকু সেই সংকট কাটিয়ে উঠতে পারবেন।’
গতকাল রাতেই খালেদা জিয়াকে দেখতে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, তাঁর স্ত্রী ডা. জুবাইদা রহমান, ছোট ভাই প্রয়াত আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী সৈয়দা শামিলা রহমান, খালেদা জিয়ার ছোট ভাইসহ সব আত্মীয়-স্বজন হাসপাতালে যান।
সরকার খালেদা জিয়াকে ‘ভিভিআইপি’ ঘোষণা করার পর সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তার দায়িত্ব নেয় এসএসএফ ও পিজিআর। এভারকেয়ার হাসপাতালের চতুর্থ তলার একটি কেবিনে রয়েছেন খালেদা জিয়া। নিরাপত্তাজনিত কারণে ওই তলার বাকি কেবিন খালি করে দেওয়া হয়েছে।
এরমধ্যে বিএনপি চেয়ারপারসনকে যুক্তরাজ্যের হাসপাতালে নেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হলেও তাঁর শারীরিক অবস্থা উপযোগী না হওয়ায় তা সম্ভব হয়নি।
৭৯ বছর বয়সী সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া দীর্ঘ দিন ধরে আর্থরাইটিস, ডায়াবেটিসের পাশাপাশি কিডনি, লিভার, ফুসফুস, হৃদ্যন্ত্র, চোখের সমস্যাসহ নানা জটিলতায় ভুগছিলেন।
গত ২৩ নভেম্বর খালেদা জিয়াকে শেষবারের মতো রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। এক মাসের কিছু বেশি সময় তিনি সেখানেই চিকিৎসাধীন ছিলেন। অবশেষে জীবনাবসান হলো।