বাংলা পঞ্জিকা অনুযায়ী পৌষের আজ ৯ তারিখ। ভরপুর এই শীত মৌসুমে প্রকৃতি তার প্রকৃত রূপ দেখিয়ে চলছে। দেশের উত্তরাঞ্চলসহ বিভিন্ন জেলায় ভোরের দিকে ঘন কুয়াশায় আচ্ছন্ন থাকছে। সেইসঙ্গে কনকনে শীতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন। আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, আগামী কয়েকদিন শীতের এই কনকনে ভাব আরও বাড়তে পারে।
আজ বুধবার (২৪ ডিসেম্বর) সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাসে সিনপটিক অবস্থার বিবরণ দিয়ে অধিদপ্তর বলছে, উপমহাদেশীয় উচ্চচাপ বলয়ের বর্ধিতাংশ ভারতের পশ্চিমবঙ্গ এবং তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে। মৌসুমের স্বাভাবিক লঘুচাপ দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে, এর বর্ধিতাংশ উত্তরপূর্ব বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে।
এমন পরিস্থিতি অধিদপ্তর বলছে, শেষরাত থেকে সকাল পর্যন্ত দেশের উত্তরাঞ্চল ও নদী অববাহিকার কোথাও কোথাও মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা এবং দেশের অন্যত্র হালকা থেকে মাঝারি ধরনের কুয়াশা পড়তে পারে। এসময় সারা দেশে রাতের তাপমাত্রা সামান্য কমতে পারে এবং দিনের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবির্তত থাকতে পারে।
অধিদপ্তরের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, সকাল ৯টা পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে চুয়াডাঙ্গায়, ১০ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। একদিনের ব্যবধানে এই জেলায় প্রায় ৩ ডিগ্রি তাপমাত্রার পারদ নিচে নামায় শীতের তীব্রতা বাড়িয়ে তুলেছে দ্বিগুণ।
এছাড়াও গত ২৪ ঘণ্টায় যশোর ও পাবনার ঈশ্বরদীতে সর্বনিম্ন ১১, কুড়িগ্রামের রাজারহাট ও দিনাজপুরে ১১ দশমিক ৫, পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় ১১ দশমিক ৬ এবং নওগাঁর বদলগাছীতে ১১ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে।
শীতের প্রকোপে পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও, দিনাজপুর, নীলফামারী, লালমনিরহাট ও কুড়িগ্রামসহ উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোতে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। এসব জেলায় কমে এসেছে দিনের সর্বনিম্ন ও সর্বোচ্চ তাপমাত্রার ব্যবধানও। দুই দিন ধরে পঞ্চগড়ে সূর্যের দেখাই মিলছে না।
শীত উপেক্ষা করেই কাজ করছেন কৃষকরা। স্ট্রিম ছবিএসব জেলা থেকে স্ট্রিমের সংবাদদাতারা জানিয়েছেন, ভোরের ঘন কুয়াশায় আচ্ছন্ন থাকায় সড়ক ও মাঠে-ঘাটে দৃষ্টিসীমা কমে এসেছে। ফলে যানবাহনগুলোকে হেডলাইট জ্বালিয়ে চলাচল করতে দেখা যাচ্ছে। ঘনকুয়াশা ও কনকনে শীতে সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে পড়েছেন খেটে খাওয়া মানুষ। সকালে অনেকেই কাজে যেতে পারছেন না। শীত নিবারণের জন্য বিভিন্ন স্থানে মানুষকে খড়কুটো জ্বালিয়ে আগুন পোহাতে দেখা গেছে।
এদিকে তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জিতেন্দ্রনাথ রায় বাসসকে জানিয়েছেন, বাতাসে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ বৃদ্ধির কারণে কোথাও কোথাও হালকা থেকে মাঝারি কুয়াশা দেখা যায়। ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে তেঁতুলিয়াসহ উত্তরাঞ্চলের ওপর মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
স্ট্রিমের চুয়াডাঙ্গা সংবাদদাতা জানিয়েছেন, গতকাল মঙ্গলবার এই জেলায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১২ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এদিনও দেখা ছিল না সুর্যের উত্তাপ। আজ সকাল থেকে এখনো পর্যন্ত (সকাল ১০টা) সূর্যের দেখা নেই। এতে উত্তরের দিক থেকে বয়ে চলা হিমশীতল বাতাসে শীতের তীব্রতা বাড়িয়ে তুলেছে। সেই সঙ্গে সকাল থেকে ঘন কুয়াশায় চারপাশে ঢাকা পড়েছে।
সকালের দিকে চুয়াডাঙ্গা শহর ঘুরে দেখা গেছে, ভোর থেকে চারদিকে ঘন কুয়াশা ঢাকা পড়েছে। এতে সড়কে সব ধরনের যানবাহন চলাচল করেছে হেডলাইট জ্বালিয়ে। শীতের দাপটে মানুষের চলাচল সকালের দিকে কমে আসছে। প্রয়োজন ছাড়া কেউ ঘরের বাইরে বেড়াছে না। এতে যাত্রী না পেয়ে দুর্ভোগে পড়েছে ভ্যান ও রিকশা চালকেরা। শীতে দুর্ভোগে পড়েছেন খেটে-খাওয়া ছিন্নমূল মানুষ। শীতের প্রকোপ বাড়তে থাকায় চুয়াডাঙ্গার সদর হাসপাতালে বাড়ছে ঠান্ডাজনিত রোগীর সংখ্যা।
সকাল থেকে এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত (সকাল ১০টা) জেলায় সূর্যের দেখা মেলেনি। যে কারণে হিম বাতাসে সারাদিনই অনেক বেশি শীত অনুভূত হচ্ছে। পথচারী রফিকুল ইসলাম স্ট্রিমকে বলেন, ‘কয়েকদিন ধরে শীত বেশি পড়ছে। সকালে দিকে ঘন কুয়াশা থাকছে। সকাল ১০টা বাজলেও দেখা যাচ্ছে সূর্যের। কিন্তু সারাদিনই ঠান্ডা বাতাসে শীতে কাবু করে তুলেছে। তাই এখন থেকে প্রচন্ড শীত পড়া শুরু হয়েছে।’
রিকশাচালক আবুল কাশেম বলেন, ‘সকাল শহরের লোকজন নেই। শীতের দাপটে বাইরে কেউ বের হচ্ছে না। এতে রিকশায় যাত্রী পাচ্ছি না। এভাবে চলতে থাকলে আমাদের মতো ছিন্নমূল মানুষদের দুর্ভোগ বাড়বে।’
চুয়াডাঙ্গা আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জামিনুর রহমান জানান, তাপমাত্রা এখন কয়েকদিন ১০ থেকে ১২ ডিগ্রির ঘরে উঠা নামা করছে। এমন অবস্থা অব্যাহত থাকতে পারে। সামনের দিনে তাপমাত্রা আরো নিচের দিকে নামা শুরু হবে। তখন চুয়াডাঙ্গার ওপর দিয়ে বয়ে যাবে শৈত্যপ্রবাহ। ফলে শীতের তীব্রতা আরো বাড়িয়ে তুলবে। আর আজ দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা এ জেলায়।