ভারতের পররাষ্ট্রবিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটি বলেছে, শেখ হাসিনা ‘মানবিক কারণে’ ভারতে অবস্থান করছেন। কংগ্রেসের সংসদ সদস্য শশী থারুরের নেতৃত্বাধীন এই প্যানেল সতর্ক করে বলেছে, আওয়ামী লীগের ওপর চলমান নিষেধাজ্ঞা ভবিষ্যতে বাংলাদেশের যেকোনো নির্বাচনের অন্তর্ভুক্তিমূলক চরিত্রকে প্রশ্নবিদ্ধ করবে। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের পর বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি ভারতের জন্য ‘সবচেয়ে বড় কৌশলগত চ্যালেঞ্জ’ তৈরি করেছে বলেও বলছে তারা।
‘ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের ভবিষ্যৎ’ শীর্ষক এক প্রতিবেদনে ভারতের পররাষ্ট্রবিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটি বলেছে, ‘গুরুতর সংকট বা অস্তিত্বের হুমকিতে থাকা ব্যক্তিদের আশ্রয় দেওয়ার ক্ষেত্রে ভারত তার সভ্যতাগত নীতি ও মানবিক ঐতিহ্য’ দ্বারাই পরিচালিত হচ্ছে।
বাংলাদেশ বিষয়ে কমিটি ভারতের ‘নীরব কূটনীতির’ প্রশংসা করে বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও সুশীল সমাজের সব পক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ অব্যাহত রাখার সুপারিশ করেছে। একইসঙ্গে আওয়ামী লীগের ওপর চলমান নিষেধাজ্ঞা ভবিষ্যতে বাংলাদেশের যেকোনো নির্বাচনের অন্তর্ভুক্তিমূলক চরিত্রকে প্রশ্নবিদ্ধ করবে বলেও উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। প্রতিবেদনে বাংলাদেশে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর হামলা, উপাসনালয় ও সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানে ভাঙচুরের বিষয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করা হয় এবং বাংলাদেশি মিডিয়ার একাংশে ভারতবিরোধী প্রচারণার কথা উল্লেখ করা হয়।
সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তার বিষয়টি বাংলাদেশের কাছে তুলে ধরার জন্য এবং ভুল তথ্য মোকাবিলায় ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে বিশেষ ইউনিট স্থাপনেরও সুপারিশ করা হয়েছে।
বাংলাদেশে গত বছর জুলাই-আগস্ট মাসে গণ-আন্দোলনের সময় ১ হাজার ৪ শর বেশি বিক্ষোভকারী নিহত হওয়ার পর ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা পালিয়ে যান। যদিও তিনি নয়াদিল্লিতে আশ্রয় নেওয়ার পর থেকে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলে ‘উত্তেজনা ছড়াচ্ছেন’ বলে অভিযোগ আছে। তবে কমিটি বলেছে, ভারতীয় ভূখণ্ড থেকে হাসিনাকে কোনো রাজনৈতিক কার্যকলাপের অনুমতি দেওয়া হয়নি। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ‘ভারত সরকার তাঁকে (হাসিনা) সে দেশের ভূখণ্ডে থেকে রাজনৈতিক কার্যকলাপ পরিচালনার জন্য কোনো রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম বা সুযোগ দেয় না। মানবিক বিবেচনার পাশাপাশি ভারত কঠোরভাবে এই নীতি মেনে চলে যে ‘আমাদের ভূখণ্ড থেকে অন্য কোনো দেশের বিরুদ্ধে কোনো রাজনৈতিক কার্যকলাপ পরিচালিত হবে না।’
জুলাই অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য বাংলাদেশে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণের অনুরোধ সম্পর্কে সংসদকে অবহিত রাখতেও সরকারকে বলেছে এই প্যানেল।
ভারতের জন্য ‘সবচেয়ে বড় কৌশলগত চ্যালেঞ্জ’
কমিটি বলেছে, বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি ভারতের জন্য জটিল, দীর্ঘস্থায়ী ও সম্ভাব্য ক্ষতিকর চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে। এই চ্যালেঞ্জ সামরিক বা অস্তিত্বের সংকটের চেয়েও গভীর। প্রতিবেদনে বাংলাদেশে ‘অস্থিরতা’ সৃষ্টির কারণ হিসেবে ‘ইসলামপন্থী উগ্রবাদীদের উত্থান, ক্রমবর্ধমান চীনা ও পাকিস্তানি প্রভাব’ এবং ‘হাসিনার আওয়ামী লীগের আধিপত্যের পতন’-কে চিহ্নিত করা হয়েছে। প্যানেল সতর্ক করে বলেছে, ‘ভারত যদি এই মুহূর্তে তার নীতি বদলাতে ব্যর্থ হয়, তবে ঢাকায় ভারত অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়ার ঝুঁকিতে পড়বে।’
কমিটি ভারত সরকারকে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে চীনের মতো বিদেশি শক্তির সামরিক উপস্থিতি রোধে কঠোর নজরদারির সুপারিশ করেছে।
এছাড়া ২০২৬ সালে ‘স্বল্পোন্নত দেশ’ থেকে বাংলাদেশের উত্তরণের আগেই বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে আলোচনা ত্বরান্বিত করা এবং বিলম্বিত কানেক্টিভিটি প্রকল্পগুলো সম্পন্ন করার জন্য সরকারের প্রতি সুপারিশ করেছে কমিটি।
প্রতিবেদনে ২০২৬ সালে মেয়াদোত্তীর্ণ হতে যাওয়া গঙ্গার পানি চুক্তি নবায়ন এবং তিস্তার পানিবণ্টন ইস্যুতে উদ্যোগেরও আহ্বান জানানো হয়।