leadT1ad

আড়াই বছর পর বার্ষিক গড় মূল্যস্ফীতি নামল ৯ শতাংশের নিচে

স্ট্রিম প্রতিবেদক
স্ট্রিম প্রতিবেদক
ঢাকা

দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক অগ্রগতি এবং বাজেট ব্যয় নিয়ে প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে আজ একটি উচ্চপর্যায়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। ছবি: প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং

মাসভিত্তিক বা পয়েন্ট-টু-পয়েন্ট মূল্যস্ফীতির পর এবার বার্ষিক গড় মূল্যস্ফীতিও ৯ শতাংশের নিচে নেমে এসেছে। ২০২৩ সালের জুনের পর এই প্রথম বার্ষিক গড় মূল্যস্ফীতি এই স্বস্তিদায়ক অবস্থানে ফিরল।

আজ সোমবার (২২ ডিসেম্বর) রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক অগ্রগতি এবং বাজেট ব‍্যায় বিষয়ক উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে এসব তথ্য উঠে আসে। বৈঠকে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ, পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ ও বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠকে জানানো হয়, গত নভেম্বরে পয়েন্ট-টু-পয়েন্ট মূল্যস্ফীতি কমে দাঁড়িয়েছে ৮ দশমিক ২৯ শতাংশে।

সরকারের সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি ও কৃচ্ছ্রসাধন কর্মসূচির ফলে আগামী বছরের (২০২৬) জুনের মধ্যে মূল্যস্ফীতি ৭ শতাংশের নিচে নামিয়ে আনা সম্ভব হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, দেশের অর্থনীতির প্রধান প্রধান সূচকে ভারসাম্যহীনতা কেটে গিয়ে স্থিতিশীলতা ফিরতে শুরু করেছে। বিশেষ করে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বৃদ্ধি এবং আমদানিতে গতি ফেরার চিত্র তুলে ধরা হয়।

মূল্যস্ফীতি ও মজুরির ব্যবধান কমছে

বৈঠকে উপস্থাপিত তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের মার্চে পয়েন্ট-টু-পয়েন্ট ভিত্তিতে মূল্যস্ফীতি ৯ দশমিক ৩৩ শতাংশে উঠেছিল। তবে চলতি বছরের (২০২৫) জুনে তা ৯ শতাংশের নিচে নামে এবং নভেম্বরে আরও কমে ৮ দশমিক ২৯ শতাংশে স্থিত হয়েছে।

অন্যদিকে গত কয়েক বছরে মূল্যস্ফীতি ও মজুরি প্রবৃদ্ধির হারের মধ্যে বড় ব্যবধান থাকায় মানুষের প্রকৃত আয় কমে গিয়েছিল। তবে চলতি অর্থবছরের সাম্প্রতিক মাসগুলোতে এ ব্যবধান উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে। ২০২২-২৩ অর্থবছরে যেখানে গড় মূল্যস্ফীতি ও মজুরি প্রবৃদ্ধি ছিল যথাক্রমে ৯ দশমিক ০২ ও ৭ দশমিক ০৪ শতাংশ, সেখানে সর্বশেষ নভেম্বর (২০২৫) মাসে তা দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে ৮ দশমিক ২৯ ও ৮ দশমিক ০৪ শতাংশে। অর্থাৎ মূল্যস্ফীতি ও আয়ের প্রবৃদ্ধির হার প্রায় কাছাকাছি চলে এসেছে, যা জনজীবনে স্বস্তি ফেরাবে বলে আশা করা হচ্ছে।

কৃষি উৎপাদনে প্রবৃদ্ধি

মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে বড় ভূমিকা রাখছে কৃষি খাতের সাফল্য। বৈঠকে জানানো হয়, গত বোরো মৌসুমে ধানের ফলন ভালো হয়েছে। চলতি আমন মৌসুমে এখন পর্যন্ত বড় কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হওয়ায় ভালো ফলনের আশা করা হচ্ছে। গত ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত আমন ধানের উৎপাদন ১৬০ দশমিক ৯৫ লাখ মেট্রিক টনে পৌঁছেছে। অবশিষ্ট ফসল কাটা হলে লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এ ছাড়া আউশ ধানের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে কিছুটা কম হলেও গত অর্থবছরের (২০২৪-২৫) তুলনায় তা ৭ দশমিক ২০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। এর ফলে সরকারি খাদ্যশস্য সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে।

রিজার্ভ ও প্রবাস আয়ে প্রবৃদ্ধি

বৈঠকে বৈদেশিক খাতের শক্তিশালী অবস্থানের চিত্র তুলে ধরা হয়। গত ১৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত গ্রস বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ৩২ দশমি ৫৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। অথচ ২০২৪ সালের আগস্টেও এর পরিমাণ ছিল মাত্র ২৫ বিলিয়ন ডলারের ঘরে।

মূলত সুদের হার বৃদ্ধি, মুদ্রা বিনিময় হার স্থিতিশীল হওয়া এবং হুন্ডির পরিবর্তে ব্যাংকিং চ্যানেলে প্রবাস আয় বাড়ার কারণেই রিজার্ভে এই প্রবৃদ্ধি। চলতি অর্থবছরের জুলাই-নভেম্বর সময়ে প্রবাস আয় এসেছে ১৩ দশমিক ০৪ বিলিয়ন ডলার, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৭ দশমিক ১৪ শতাংশ বেশি। একই সময়ে ৫ লাখ কর্মীর বৈদেশিক নিয়োগ নিশ্চিত হয়েছে, যা গত বছর ছিল ৩ লাখ ৯৭ হাজার।

ঘুরে দাঁড়াচ্ছে শিল্প ও আমদানি বাণিজ্য

অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে গতি ফেরাতে আমদানির ওপর আরোপিত কড়াকড়ি তুলে নেয়া হয়েছে। এর ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে মূলধনি যন্ত্রপাতি ও কাঁচামাল আমদানিতে। গত অর্থবছরের জুলাই-নভেম্বর সময়ে আমদানি প্রবৃদ্ধি ছিল ঋণাত্মক (-১ দশমিক ২ শতাংশ), যা চলতি অর্থবছরের একই সময়ে বেড়ে ৬ দশমিক ১ শতাংশ হয়েছে।

সবচেয়ে বড় লাফ দেখা গেছে ঋণপত্র (এলসি) খোলার ক্ষেত্রে। গত অর্থবছরের জুলাই-অক্টোবর সময়ে মূলধনি যন্ত্রপাতির এলসি খোলায় প্রবৃদ্ধি ছিল মাইনাস ৩২.৮ শতাংশ। চলতি অর্থবছরের একই সময়ে তা ২৭.৭ শতাংশ ইতিবাচক প্রবৃদ্ধিতে পৌঁছেছে। এ ছাড়া শিল্পজাত কাঁচামাল আমদানির এলসি খোলার হার ১০ দশমিক ১ শতাংশ থেকে বেড়ে ৪০ দশমিক ৯৮ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। ট্রেড ফিনান্সিং সহজ হওয়া এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দেশের ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধারের ফলে এলসি খোলায় এই গতি ফিরেছে বলে বৈঠকে মতপ্রকাশ করা হয়।

ব্যালান্স অব পেমেন্ট বা চলতি হিসাবে উন্নতি

২০১৬-১৭ অর্থবছর থেকে টানা ঋণাত্মক ধারায় থাকা চলতি হিসাবে উন্নতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। ২০২৪-২৫ অর্থবছর শেষে চলতি হিসাবে ঘাটতি কমে দাঁড়িয়েছিল মাত্র ১৩৯ মিলিয়ন ডলারে, যেখানে বিগত বছরগুলোতে এই ঘাটতি ছিল ৬ থেকে ১৮ বিলিয়ন ডলার পর্যন্ত। অর্থ পাচার রোধ ও আর্থিক খাতে সুব্যবস্থাপনার ফলে চলতি অর্থবছরের জুলাই-অক্টোবর সময়ে এই ঘাটতি ৭৪৯ মিলিয়ন ডলারে সীমাবদ্ধ রাখা সম্ভব হয়েছে।

Ad 300x250
সর্বাধিক পঠিত

সম্পর্কিত