leadT1ad

২০ কোটি টাকার বেশি সব ঋণ যাচাই করা হবে: গভর্নর

স্ট্রিম প্রতিবেদক
স্ট্রিম প্রতিবেদক
ঢাকা

প্রকাশ : ১৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ২১: ১৪
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর। সংগৃহীত ছবি

ব্যাংকিং খাতে সুশাসন ফেরাতে ২০ কোটি টাকার বেশি পরিমাণের সব ঋণ যাচাইয়ের উদ্যোগ নেওয়ার কথা জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর।

বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) রাজধানীর পল্টনে ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরামের (ইআরএফ) কার্যালয়ে আয়োজিত এক সেমিনারে তিনি এ কথা বলেন।

গভর্নর আরও বলেন, ‘দুঃসময় থেকে কিছুটা উন্নতির দিকে যাচ্ছে ব্যাংক খাত। ব্যাংকিং খাতে মানুষের আস্থা ধরে রাখতে পেরেছি। পুরো বিশ্ব অবাক—বাংলাদেশের ব্যাংক ব্যবস্থা রান (সচল) করছে। ব্যাংকিং খাতে সুশাসন আনতে, গ্রাহকদের আস্থা ফেরাতে ঋণগুলো সঠিক ‘লেন্ডিং’ (বিতরণ) হয়েছে কি না, তা রেগুলারভাবে দেখা হবে। এ জন্য ৫০০ জনের একটি টিম গঠন করা হয়েছে, যার মধ্যে ফরেনসিক অডিট করতে পারে—এমন ৫০ জনকে ট্রেনিং দেওয়া হচ্ছে। ব্যাংকিং খাতে বাংলাদেশে ফরেনসিক অডিট নেই। ফরেনসিক অডিটের সক্ষমতা না থাকলে চুরি-চামারি ধরা যাবে না।’

ঋণের বিপরীতে প্রয়োজনীয় জামানত রাখা হয়েছে কি না, তা এই দল দেখবে জানিয়ে গভর্নর বলেন, ‘২০ কোটি টাকার বেশি সব ঋণ নতুন করে যাচাই করা হবে। এসব ঋণের জামানত ঠিক আছে কি না, তা দেখা হবে। না থাকলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও ব্যাংক পরিচালকদের জবাবদিহি করতে হবে। ব্রাঞ্চ ছাড়া হেড অফিস ঋণ দিতে পারে না; তাদেরও দায় নিতে হবে। ব্যাংকের বেতনে তার (শাখার কর্মকর্তাদের) ঘর-সংসার চলবে; আর সেই ব্যাংকের সমস্যা সে দেখবে না, তা হবে না। তিনি তো অনিয়ম দেখলে হুইসেল ব্লোয়ার হতে পারেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক তা জানবে।’

গভর্নর বলেন, “বাংলাদেশ ব্যাংকের স্বাধীনতা দরকার। ভালো নেতা দরকার। এ জন্য সরকারের কাছে আইন প্রস্তাব করা হয়েছে। এই সরকার এই আইন পাস করে দিলে সব করা যাবে।”

আর্থিক সংকটে জেরবার শরিয়াহভিত্তিক এক্সিম ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক ও সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক একীভূত করার প্রক্রিয়ায় গত ৩০ নভেম্বর ‘সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংক’র লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে।

নতুন করে আর কোনো ব্যাংক একীভূত করা হবে না জানিয়ে আহসান এইচ মনসুর বলেছেন, সমস্যায় থাকা ৯টি আর্থিক প্রতিষ্ঠান অবসায়ন করা হবে।

সরকারের তরফে এসব প্রতিষ্ঠানের সব সাধারণ আমানতকারীকে পুরো টাকা ফেরত দেওয়া হবে জানিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রধান বলেন, ‘পরিচালকদের শেয়ার শূন্য করে দেওয়া হবে। তাদের বিষয়ে আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী (পদক্ষেপ নেওয়া) হবে। আমানতকারীদের বেলায় সরকার বেশি উদার থাকবে। আর প্রাতিষ্ঠানিক আমানতকারীরা পরবর্তীতে দায়-দেনা শোধের পর টাকা পাবে।’

দেশের সামগ্রিক অর্থনীতি বিশেষ করে রিজার্ভ বৃদ্ধি, ব্যালেন্স অব পেমেন্ট, রেমিট্যান্স প্রবাহ ও আমদানি-রপ্তানিতে স্থিতিশীলতা ফেরানো গেছে মন্তব্য করে আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘স্থিতিশীলতা ফেরানোর ক্ষেত্রে আমরা বহুলাংশে সফল হয়েছি। আমাদের একটি চ্যালেঞ্জ ছিল যে—ব্যাংক খাতের ওপর এক ধরনের আস্থা ধরে রাখা; সেক্ষেত্রে আমরা আংশিকভাবে হয়তো সফল হয়েছি।’

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ), বিশ্বব্যাংকসহ যেকোনো দাতা সংস্থার ধারের অর্থ ছাড়াই চলতি বছর নাগাদ বিদেশি মুদ্রার সঞ্চিতি বা রিজার্ভ ৩৫ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছানোর লক্ষ্য ঠিক করার কথা জানিয়েছেন তিনি।

দেশে খেলাপি ঋণের বর্তমান হার বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে বেশি উল্লেখ করে গভর্নর বলেন, ‘অনেক ব্যাংকে মূলধন ঘাটতি রয়েছে এবং খেলাপি ঋণের হার উদ্বেগজনকভাবে বেড়েছে। আমার ধারণা ছিল, খেলাপি ঋণ ২৫ থেকে ২৭ শতাংশ হবে, কিন্তু বাস্তবে তা প্রায় ৩৬ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। আমরা কোনো তথ্য লুকাব না; যা সত্য, সেটাই প্রকাশ করা হবে। অনেকে বলেছেন, এতে ক্রেডিট রেটিং কমে যাবে। তার পরও আমি বলেছি, যা হওয়ার হোক সত্যটা প্রকাশ হোক।’

বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন বলেন, ‘রাজনৈতিক দলগুলোকে তাদের নির্বাচনী ইশতেহারে ব্যাংকিং খাতকে কীভাবে সুশৃঙ্খল ও শক্তিশালী করা হবে, সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ ও সুনির্দিষ্ট প্রতিশ্রুতি থাকতে হবে।’

সেমিনারে অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) সাবেক চেয়ারম্যান ও বেসরকারি মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘২০১৭ সালে ইসলামী ব্যাংক দখলের মাধ্যমে ব্যাংক খাত ভঙ্গুর হয়ে পড়ে। এ জন্য এখন খেলাপি ঋণ ৩৬ শতাংশে পৌঁছে গেছে। এখন যে সংস্কার হচ্ছে, তা রাজনৈতিক সরকার কতটা এগিয়ে নেবে—তা গুরুত্বপূর্ণ।’

পল্টনে ইআরএফ কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনটির সভাপতি দৌলত আকতার মালা; সঞ্চালনা করেন সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম।

Ad 300x250

সম্পর্কিত