রাজনীতি মানেই হলো গুরুগম্ভীর আলোচনা, ক্ষমতার মারপ্যাঁচ কিংবা সভা-সমাবেশ, মিটিং-মিছিল। রাজনীতিবিদদের এই ইস্পাত কঠিন ব্যক্তিত্বের আড়ালেও যে অন্য একটি ভূবন থাকে, তার প্রমাণ মেলে তাঁদের পোষা প্রাণীদের দেখলে।
গতকাল লন্ডন থেকে স্ত্রী জোবাইদা রহমান ও মেয়ে জাইমা রহমানকে নিয়ে দেশে ফিরেছেন তারেক রহমান। তাঁদের সঙ্গে জাইমা রহমানের পোষা বিড়াল 'জেবু'ও ঢাকায় পৌঁছেছে। এরপর জেবুর ছবি ভাইরাল হওয়ার পর থেকে সাইবেরিয়ান জাতের লোমশ এই বিড়ালকে নিয়ে স্যোশাল মিডিয়ায় চলছে আলোচনা।
এদিকে ইতিহাসের পাতা ওল্টালে দেখা যায়, বিশ্বের বাঘা বাঘা সব নেতা দিনশেষে তাঁদের পোষা বিড়ালের কাছে ছিলেন নিতান্তই এক সাধারণ মানুষ। চলুন জেনে নেওয়া যাক বিশ্বনেতাদের পোষ্য এমন কিছু বিখ্যাত বিড়ালের গল্প।
ডাউনিং স্ট্রিটের স্থায়ী বাসিন্দা ‘ল্যারি’
যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন ১০ নম্বর ডাউনিং স্ট্রিট। এই বাড়ির স্থায়ী বাসিন্দার নাম ‘ল্যারি’। না, সে মানুষ নয়, একটি বিড়াল।
মজার ব্যাপার হলো, ল্যারির একটি আনুষ্ঠানিকভাবে ব্যবহৃত সরকারি প্রতীকী পদবিও আছে। ‘চিফ মাউজার টু দ্য ক্যাবিনেট অফিস’, অর্থাৎ প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে ইঁদুর শিকার করাই তার কাজ।
ডাউনিং স্ট্রিটের স্থায়ী বাসিন্দা ‘ল্যারি’। সংগৃহীত ছবিল্যারি ২০১১ সাল থেকে এই মহান দায়িত্ব পালন করে আসছে। ডেভিড ক্যামেরন, থেরেসা মে, বরিস জনসন, ঋষি সুনাক থেকে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার; ডাউনিং স্ট্রিটের এই বাড়িটিতে একের পর এক প্রধানমন্ত্রী এসেছেন এবং বিদায় নিয়েছেন, কিন্তু ল্যারি তার জায়গায় অটল। ব্রিটেনের রাজনীতিতে ল্যারি এতটাই জনপ্রিয় যে, তাকে নিয়ে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমগুলোতে প্রায় নিয়মিত খবর প্রকাশিত হয়।
আব্রাহাম লিংকনের দুইটি বেড়াল
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিংকন ছিলেন একজন পুরোদস্তুর ‘ক্যাট লাভার’। হোয়াইট হাউসে তিনি ‘ট্যাবি’ ও ‘ডিক্সি’ নামের দুইটি বিড়াল পালতেন। লিংকন তাঁর বিড়ালদের এতটাই ভালোবাসতেন যে, তিনি একবার মজা করে বলেছিলেন, 'আমার বিড়াল ডিক্সি আমার পুরো মন্ত্রীসভার চেয়েও বেশি বুদ্ধিমান!'
শোনা যায়, তিনি নাকি হোয়াইট হাউসের ডিনার টেবিলে বসে নিজের সোনার চামচ দিয়ে বিড়ালকে খাবার খাওয়াতেন, যা নিয়ে তাঁর স্ত্রী মেরি টড বেশ বিরক্ত হতেন।
তবে ইতিহাসবিদদের মতে, এসব গল্প মূলত লিংকনের বিড়ালপ্রেমের প্রতীকী বর্ননা।
উইনস্টন চার্চিলের কমলা বিড়াল
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী উইনস্টন চার্চিল ছিলেন দারুণ ক্ষমতাধর, শক্ত ধাতের মানুষ। তখন ‘জক’ নামে কমলা রঙের একটি বিড়ালের (মারমালেড প্রজাতির বিড়াল) তিনি পুষতেন। কথিত আছে, চার্চিল খেতে বসলে জককেও টেবিলে বসতে হতো, নইলে তিনি খেতেন না।
সবচেয়ে চমকপ্রদ তথ্য হলো, চার্চিল মারা যাওয়ার আগে তাঁর উইলে বলে গিয়েছিলেন, মৃত্যুর পরেও তাঁর চার্টওয়েলের বাড়িতে যেন সবসময় একটি কমলা রঙের বিড়াল রাখা হয়। আর বিড়ালের নাম যেন অবশ্যই ‘জক’ হয়। সেই ঐতিহ্য মেনে আজও চার্চিলের পুরোনো বাড়িতে ‘জক’ নামের বিড়াল বসবাস করে। বর্তমানে সেখানে ‘জক-৭’ নামের বিড়ালটি আছে।
বিল ক্লিনটন ও তাঁর ‘সকস’
নব্বইয়ের দশকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনের বিড়াল ‘সকস’ ছিল বিশ্বজুড়ে তুমুল জনপ্রিয়। সাদা-কালো রঙের এই বিড়ালটি ছিল ক্লিনটন পরিবারের অত্যন্ত আদরের।
বিল ক্লিনটন ও তাঁর ‘সকস’। সংগৃহীত ছবিসেই সময়ে ইন্টারনেটের প্রসারের কারণে ‘সকস’ সম্ভবত বিশ্বের প্রথম ‘সাইবার ক্যাট’ হয়ে ওঠে যার নিজস্ব ফ্যান ক্লাব ও ওয়েবসাইট ছিল। সকস এতটাই জনপ্রিয় ছিল যে, হোয়াইট হাউসের লনে হাঁটাহাঁটি করা এই বিড়ালটির ছবি তখন পত্রিকার পাতায় নিয়মিত দেখা যেত।
জাসিন্ডা আরডার্ন ও ‘প্যাডলস’
নিউজিল্যান্ডের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী জাসিন্ডা আরডার্ন যেমন জনপ্রিয় ছিলেন, তেমনি জনপ্রিয় ছিল তাঁর বিড়াল ‘প্যাডলস’। এই বিড়ালটির পায়ের আঙুল সাধারণ বিড়ালের চেয়ে বেশি ছিল। সোশ্যাল মিডিয়ায় ‘ফার্স্ট ক্যাট অফ নিউজিল্যান্ড’ হিসেবে প্যাডলস ছিল দারুণ জনপ্রিয়। দুঃখজনকভাবে, গাড়ি চাপায় বিড়ালটির মৃত্যু হলে জাসিন্ডা মানসিকভাবে বেশ ভেঙে পড়েছিলেন বলে শোনা যায়।