মুক্তিযুদ্ধের উপসেনাপতি এয়ার ভাইস মার্শাল এ কে খন্দকার বীরউত্তম মারা গেছেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় তাঁর হাত ধরেই যাত্রা শুরু হয় বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর। দেশ স্বাধীনের পর তিনিই বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর প্রথম প্রধান ছিলেন।
স্ট্রিম ডেস্ক

১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর রেসকোর্স ময়দানে পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণের ঐতিহাসিক দলিলে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন যে মানুষটি তিনি এ কে খন্দকার। তিনি ছিলেন বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সমরনায়ক, মুক্তিযুদ্ধের উপসেনাপতি ও স্বাধীন বাংলাদেশের বিমান বাহিনীর প্রধান। বার্ধক্যজনিত নানা জটিলতায় ভুগে আজ তিনি শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
এ কে খন্দকারের পুরো নাম আবদুল করিম খন্দকার। ১৯৩০ সালের ১ জানুয়ারি পাবনা জেলায় তাঁর জন্ম। তাঁর বাবার নাম খন্দকার আব্দুল লতিফ এবং মা আরেফা খাতুন। বাবা সরকারি চাকরিজীবী (সাব-ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট) হওয়ার সুবাদে তার শৈশব ও কৈশোর কেটেছে বগুড়া, নাটোর ও নওগাঁর মতো উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলায়।

এ কে খন্দকারের শিক্ষাজীবন শুরু হয় বগুড়ায়। রাজশাহী কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাস করে ১৯৫১ সালে তিনি পাকিস্তান বিমান বাহিনীতে জিডি পাইলট হিসেবে কমিশন লাভ করেন। ১৯৭১ সাল পর্যন্ত পাকিস্তান বিমান বাহিনীতে অত্যন্ত সুনামের সঙ্গে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেন তিনি।
২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানি বাহিনী ইয়াহিয়া খানের নির্দেশে ‘অপারেশন সার্চলাইট’ নামে নিরস্ত্র বাঙালিদের ওপর সশস্ত্র হামলা শুরু করে। এই ঘটনার মাত্র তিন দিন পর—২৮ মার্চ পাকিস্তান বিমান বাহিনীর গ্রুপ ক্যাপ্টেন এ কে খন্দকার আনুষ্ঠানিকভাবে দুই সপ্তাহের ছুটির আবেদন করেন, যা অনুমোদিত হয়। তবে এই ছুটি ছিল নিছক প্রশাসনিক বিষয় নয়; এর আড়ালে তিনি অত্যন্ত গোপনে বিমান বাহিনীর কয়েকজন জ্যেষ্ঠ বাঙালি কর্মকর্তার সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধে যোগদানের সম্ভাবনা নিয়ে যোগাযোগ ও আলোচনা চালিয়ে যেতে থাকেন।
মার্চ মাসের শেষ দিকে একবার এবং এপ্রিলের মধ্যভাগে আরেকবার সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে যাওয়ার চেষ্টা ব্যর্থ হয়। শেষ পর্যন্ত তৃতীয় চেষ্টায় সফল হন তিনি। ১৫ মে নিজ পরিবার এবং বিমান বাহিনীর কয়েকজন বাঙালি কর্মকর্তাকে সঙ্গে নিয়ে তিনি ভারতের আগরতলায় পৌঁছাতে সক্ষম হন। পরদিন ১৬ মে বিমানে করে কলকাতায় পৌঁছান। সেখানে তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ হয় বাংলাদেশের অস্থায়ী সরকারের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ, সরকারের অন্যান্য শীর্ষ নেতা এবং মুক্তিবাহিনীর প্রধান সেনাপতি কর্নেল এম এ জি ওসমানীর।
পাকিস্তান বিমান বাহিনীর একজন অভিজ্ঞ ও জ্যেষ্ঠ বাঙালি কর্মকর্তা হিসেবে এ কে খন্দকারের ভূমিকা খুব দ্রুতই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। ভারতীয় সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে অংশ নিয়ে তিনি মুক্তিযুদ্ধের সামরিক কৌশল নির্ধারণে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে কার্যকর ভূমিকা পালন করেন।

মুক্তিযুদ্ধে যোগদানের পর থেকে তিনি নিয়মিতভাবে কলকাতায় কর্নেল ওসমানীর সদর দপ্তরে কাজ করতে থাকেন। জুন মাসের প্রথম দিকেই তাঁকে আনুষ্ঠানিকভাবে মুক্তিবাহিনীর ডেপুটি চিফ অব স্টাফের দায়িত্ব দেওয়া হয়। এই দায়িত্বে থেকে মুক্তিযোদ্ধা সংগ্রহ, প্রশিক্ষণ প্রদান, প্রশিক্ষিত যোদ্ধাদের দেশের অভ্যন্তরে পাঠানো, বিভিন্ন সেক্টর গঠন, শত্রুর বিরুদ্ধে গেরিলা যুদ্ধ পরিচালনার পাশাপাশি সম্মুখ যুদ্ধের পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে তিনি সক্রিয় ভূমিকা রাখেন। একই সঙ্গে নৌ-কমান্ডো ইউনিট ও বিমান বাহিনী গঠনের কাজেও তিনি প্রধান সেনাপতি এম এ জি ওসমানীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত ছিলেন। সামগ্রিকভাবে মুক্তিযুদ্ধের সংগঠন ও পরিচালনায় বাংলাদেশ সরকারের অন্যতম প্রধান সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করেন তিনি।
এ কে খন্দকারের উদ্যোগ ও দীর্ঘ প্রচেষ্টার ফলেই সিলেটের নিকটবর্তী ভারতের নাগাল্যান্ড রাজ্যের ডিমাপুরে দুই মাসের প্রশিক্ষণ শেষে ভারতের দেওয়া তিনটি বেসামরিক বিমান নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করে বাংলাদেশ বিমান বাহিনী। এই বাহিনীর প্রাথমিক বৈমানিকদের মধ্যে ছিলেন স্কোয়াড্রন লিডার সুলতান মাহমুদ, ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট শামসুল আলম, ফ্লাইং অফিসার বদরুল আলম, বেসামরিক বৈমানিক ক্যাপ্টেন আবদুল খালেক, ক্যাপ্টেন শরফুদ্দিন, ক্যাপ্টেন আকরাম আহমেদ, ক্যাপ্টেন শাহাবউদ্দীন আহমেদ এবং ক্যাপ্টেন কাজী আবদুস সাত্তার।
সবচেয়ে আইকনিক মুহূর্তটি আসে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর। জেনারেল ওসমানী সেসময় সিলেট সীমান্তে থাকায় আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকতে পারেননি। সেই অনুষ্ঠানে জেনারেল অরোরা এবং জেনারেল নিয়াজির পাশে বসে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন এ কে খন্দকার। তার সেই স্থিরচিত্রটি মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের অন্যতম আইকনিক ছবি।
স্বাধীনতার পর তিনি বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর প্রথম প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত এই পদে বহাল ছিলেন তিনি। যুদ্ধবিধ্বস্ত স্বাধীন দেশের বিমান বাহিনী পুনর্গঠনে এ কে খন্দকারের অবদান অনস্বীকার্য।

সামরিক বাহিনী থেকে অবসরের পর তিনি রাজনীতিতে সক্রিয় হন। সাবেক প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ও এরশাদ সরকারের সময়ে তিনি অস্ট্রেলিয়া ও ভারতে বাংলাদেশের হাই কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এরশাদ সরকারের পরিকল্পনামন্ত্রী হিসেবেও দায়িত্বরত ছিলেন এ কে খন্দকার।
দীর্ঘ বিরতির পর নব্বইয়ের দশকের শেষের দিকে তিনি আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সক্রিয় হন। ২০০৮ সালের নির্বাচনে পাবনা থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এবং মহাজোট সরকারের পরিকল্পনামন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পান। এ সময় ‘সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম’-এর চেয়ারম্যান হিসেবে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে গড়ে ওঠা আন্দোলনে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন তিনি।
কিন্তু তাঁর বর্ণাঢ্য পেশাগত জীবন ও রাজনৈতিক জীবনের মোড় ঘুরে যায় একটি বইয়ের মাধ্যমে। বীরউত্তম খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে এ কে খন্দকার সর্বমহলে শ্রদ্ধেয়। ২০১৪ সালে তাঁর লেখা স্মৃতিচারণামূলক বই ‘১৯৭১: ভেতরে বাইরে’ প্রকাশিত হওয়ার পর আওয়ামী লীগ সরকারের রোষানলে পড়েন তিনি।
এই ঘটনার পর তিনি নিজেকে রাজনীতি থেকে নিজেকে গুটিয়ে নেন। বলা যায়, জনসম্মুখ থেকেও একপ্রকার নির্বাসনে চলে যান মহান মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বে থাকা এই মানুষটি। জীবনের শেষ বছরগুলো তিনি অনেকটাই নিভৃতে ও একাকী কাটিয়েছেন।
রাজনৈতিক বিতর্ক তাকে যতটাই একঘরে করে রাখুক না কেন, ইতিহাস তাকে মনে রাখবে ১৯৭১ সালের সেই অকুতোভয় উপ-সেনাপতি হিসেবে, যিনি শত্রুর মুখোমুখি দাঁড়িয়ে দেশমাতৃকার জন্য লড়াই করেছেন।

১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর রেসকোর্স ময়দানে পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণের ঐতিহাসিক দলিলে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন যে মানুষটি তিনি এ কে খন্দকার। তিনি ছিলেন বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সমরনায়ক, মুক্তিযুদ্ধের উপসেনাপতি ও স্বাধীন বাংলাদেশের বিমান বাহিনীর প্রধান। বার্ধক্যজনিত নানা জটিলতায় ভুগে আজ তিনি শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
এ কে খন্দকারের পুরো নাম আবদুল করিম খন্দকার। ১৯৩০ সালের ১ জানুয়ারি পাবনা জেলায় তাঁর জন্ম। তাঁর বাবার নাম খন্দকার আব্দুল লতিফ এবং মা আরেফা খাতুন। বাবা সরকারি চাকরিজীবী (সাব-ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট) হওয়ার সুবাদে তার শৈশব ও কৈশোর কেটেছে বগুড়া, নাটোর ও নওগাঁর মতো উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলায়।

এ কে খন্দকারের শিক্ষাজীবন শুরু হয় বগুড়ায়। রাজশাহী কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাস করে ১৯৫১ সালে তিনি পাকিস্তান বিমান বাহিনীতে জিডি পাইলট হিসেবে কমিশন লাভ করেন। ১৯৭১ সাল পর্যন্ত পাকিস্তান বিমান বাহিনীতে অত্যন্ত সুনামের সঙ্গে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেন তিনি।
২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানি বাহিনী ইয়াহিয়া খানের নির্দেশে ‘অপারেশন সার্চলাইট’ নামে নিরস্ত্র বাঙালিদের ওপর সশস্ত্র হামলা শুরু করে। এই ঘটনার মাত্র তিন দিন পর—২৮ মার্চ পাকিস্তান বিমান বাহিনীর গ্রুপ ক্যাপ্টেন এ কে খন্দকার আনুষ্ঠানিকভাবে দুই সপ্তাহের ছুটির আবেদন করেন, যা অনুমোদিত হয়। তবে এই ছুটি ছিল নিছক প্রশাসনিক বিষয় নয়; এর আড়ালে তিনি অত্যন্ত গোপনে বিমান বাহিনীর কয়েকজন জ্যেষ্ঠ বাঙালি কর্মকর্তার সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধে যোগদানের সম্ভাবনা নিয়ে যোগাযোগ ও আলোচনা চালিয়ে যেতে থাকেন।
মার্চ মাসের শেষ দিকে একবার এবং এপ্রিলের মধ্যভাগে আরেকবার সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে যাওয়ার চেষ্টা ব্যর্থ হয়। শেষ পর্যন্ত তৃতীয় চেষ্টায় সফল হন তিনি। ১৫ মে নিজ পরিবার এবং বিমান বাহিনীর কয়েকজন বাঙালি কর্মকর্তাকে সঙ্গে নিয়ে তিনি ভারতের আগরতলায় পৌঁছাতে সক্ষম হন। পরদিন ১৬ মে বিমানে করে কলকাতায় পৌঁছান। সেখানে তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ হয় বাংলাদেশের অস্থায়ী সরকারের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ, সরকারের অন্যান্য শীর্ষ নেতা এবং মুক্তিবাহিনীর প্রধান সেনাপতি কর্নেল এম এ জি ওসমানীর।
পাকিস্তান বিমান বাহিনীর একজন অভিজ্ঞ ও জ্যেষ্ঠ বাঙালি কর্মকর্তা হিসেবে এ কে খন্দকারের ভূমিকা খুব দ্রুতই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। ভারতীয় সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে অংশ নিয়ে তিনি মুক্তিযুদ্ধের সামরিক কৌশল নির্ধারণে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে কার্যকর ভূমিকা পালন করেন।

মুক্তিযুদ্ধে যোগদানের পর থেকে তিনি নিয়মিতভাবে কলকাতায় কর্নেল ওসমানীর সদর দপ্তরে কাজ করতে থাকেন। জুন মাসের প্রথম দিকেই তাঁকে আনুষ্ঠানিকভাবে মুক্তিবাহিনীর ডেপুটি চিফ অব স্টাফের দায়িত্ব দেওয়া হয়। এই দায়িত্বে থেকে মুক্তিযোদ্ধা সংগ্রহ, প্রশিক্ষণ প্রদান, প্রশিক্ষিত যোদ্ধাদের দেশের অভ্যন্তরে পাঠানো, বিভিন্ন সেক্টর গঠন, শত্রুর বিরুদ্ধে গেরিলা যুদ্ধ পরিচালনার পাশাপাশি সম্মুখ যুদ্ধের পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে তিনি সক্রিয় ভূমিকা রাখেন। একই সঙ্গে নৌ-কমান্ডো ইউনিট ও বিমান বাহিনী গঠনের কাজেও তিনি প্রধান সেনাপতি এম এ জি ওসমানীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত ছিলেন। সামগ্রিকভাবে মুক্তিযুদ্ধের সংগঠন ও পরিচালনায় বাংলাদেশ সরকারের অন্যতম প্রধান সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করেন তিনি।
এ কে খন্দকারের উদ্যোগ ও দীর্ঘ প্রচেষ্টার ফলেই সিলেটের নিকটবর্তী ভারতের নাগাল্যান্ড রাজ্যের ডিমাপুরে দুই মাসের প্রশিক্ষণ শেষে ভারতের দেওয়া তিনটি বেসামরিক বিমান নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করে বাংলাদেশ বিমান বাহিনী। এই বাহিনীর প্রাথমিক বৈমানিকদের মধ্যে ছিলেন স্কোয়াড্রন লিডার সুলতান মাহমুদ, ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট শামসুল আলম, ফ্লাইং অফিসার বদরুল আলম, বেসামরিক বৈমানিক ক্যাপ্টেন আবদুল খালেক, ক্যাপ্টেন শরফুদ্দিন, ক্যাপ্টেন আকরাম আহমেদ, ক্যাপ্টেন শাহাবউদ্দীন আহমেদ এবং ক্যাপ্টেন কাজী আবদুস সাত্তার।
সবচেয়ে আইকনিক মুহূর্তটি আসে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর। জেনারেল ওসমানী সেসময় সিলেট সীমান্তে থাকায় আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকতে পারেননি। সেই অনুষ্ঠানে জেনারেল অরোরা এবং জেনারেল নিয়াজির পাশে বসে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন এ কে খন্দকার। তার সেই স্থিরচিত্রটি মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের অন্যতম আইকনিক ছবি।
স্বাধীনতার পর তিনি বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর প্রথম প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত এই পদে বহাল ছিলেন তিনি। যুদ্ধবিধ্বস্ত স্বাধীন দেশের বিমান বাহিনী পুনর্গঠনে এ কে খন্দকারের অবদান অনস্বীকার্য।

সামরিক বাহিনী থেকে অবসরের পর তিনি রাজনীতিতে সক্রিয় হন। সাবেক প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ও এরশাদ সরকারের সময়ে তিনি অস্ট্রেলিয়া ও ভারতে বাংলাদেশের হাই কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এরশাদ সরকারের পরিকল্পনামন্ত্রী হিসেবেও দায়িত্বরত ছিলেন এ কে খন্দকার।
দীর্ঘ বিরতির পর নব্বইয়ের দশকের শেষের দিকে তিনি আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সক্রিয় হন। ২০০৮ সালের নির্বাচনে পাবনা থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এবং মহাজোট সরকারের পরিকল্পনামন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পান। এ সময় ‘সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম’-এর চেয়ারম্যান হিসেবে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে গড়ে ওঠা আন্দোলনে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন তিনি।
কিন্তু তাঁর বর্ণাঢ্য পেশাগত জীবন ও রাজনৈতিক জীবনের মোড় ঘুরে যায় একটি বইয়ের মাধ্যমে। বীরউত্তম খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে এ কে খন্দকার সর্বমহলে শ্রদ্ধেয়। ২০১৪ সালে তাঁর লেখা স্মৃতিচারণামূলক বই ‘১৯৭১: ভেতরে বাইরে’ প্রকাশিত হওয়ার পর আওয়ামী লীগ সরকারের রোষানলে পড়েন তিনি।
এই ঘটনার পর তিনি নিজেকে রাজনীতি থেকে নিজেকে গুটিয়ে নেন। বলা যায়, জনসম্মুখ থেকেও একপ্রকার নির্বাসনে চলে যান মহান মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বে থাকা এই মানুষটি। জীবনের শেষ বছরগুলো তিনি অনেকটাই নিভৃতে ও একাকী কাটিয়েছেন।
রাজনৈতিক বিতর্ক তাকে যতটাই একঘরে করে রাখুক না কেন, ইতিহাস তাকে মনে রাখবে ১৯৭১ সালের সেই অকুতোভয় উপ-সেনাপতি হিসেবে, যিনি শত্রুর মুখোমুখি দাঁড়িয়ে দেশমাতৃকার জন্য লড়াই করেছেন।

বাঙালি পাঠক অথচ উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীকে চেনেন না, এমনটা হয় না। এই নামটি বললেই বাংলা শিশুসাহিত্যের অগ্রদূত এক গল্পকারের ছবি ভেসে ওঠে। ছেলেদের রামায়ণ, ছোটদের মহাভারত, গুপী গাইন বাঘা বাইন, টুনটুনির বই—এগুলো তো বটেই, আরও অসংখ্য বই তাঁর হাতে লেখা।
১ ঘণ্টা আগে
মুক্তিযুদ্ধের উপসেনাপতি এয়ার ভাইস মার্শাল এ কে খন্দকার বীরউত্তম শনিবার (২০ ডিসেম্বর) মারা গেছেন। ৯৫ বছরের দীর্ঘ জীবনে মুক্তিযুদ্ধ থেকে শুরু করে স্বাধীন বাংলাদেশের নানা ঘটনার স্বাক্ষী তিনি। ২০১৪ সালে প্রথমা প্রকাশন থেকে ‘১৯৭১: ভেতরে বাইরে’ প্রকাশের পর শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের ভাষণের ওপর লেখা এক
৩ ঘণ্টা আগে
মুক্তিযুদ্ধের উপসেনাপতি এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) আবদুল করিম খন্দকার (এ কে খন্দকার) বীরউত্তম মারা গেছেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় তাঁর হাত ধরেই যাত্রা শুরু হয় বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর। দেশ স্বাধীনের পর তিনিই বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর প্রথম প্রধান ছিলেন। প্রথমা প্রকাশন থেকে প্রকাশিত ‘মুক্তিযুদ্ধের পুর্বাপর কথোপকথ
৬ ঘণ্টা আগে
আমরা শহরে বসবাস করতে গিয়ে ধীরে ধীরে প্রকৃতি থেকে দূরে সরে যাচ্ছি। কংক্রিটের দেয়াল, লোহার গ্রিল আর যান্ত্রিক জীবনের ভিড়ে শ্বাস নেওয়ার জায়গাটুকুও যেন সংকুচিত হয়ে এসেছে। ঠিক এই প্রেক্ষাপটে রাজশাহীর সোনালী ব্যাংকের কর্মকর্তা আহমুদুর রহমান সুজনের ছাদবাগান আমাদের কাছে এক বিকল্প জীবনের প্রস্তাব।
১ দিন আগে