স্ট্রিম ডেস্ক

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করেছেন, চলতি বছর যুক্তরাষ্ট্র প্রায় ২০ ট্রিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ নিশ্চিত করেছে। তবে তিনি বিভিন্ন সময়ে এই অঙ্ক ভিন্ন ভিন্নভাবে উপস্থাপন করেছেন।
জানুয়ারিতে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই ট্রাম্প বলে আসছেন, তাঁর শাসনামলে যুক্তরাষ্ট্রে বিপুল পরিমাণ বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি এসেছে। তবে তিনি যে অঙ্ক উল্লেখ করেন, তা সময়ের সঙ্গে বদলেছে।
২১ জানুয়ারি, দায়িত্ব নেওয়ার দ্বিতীয় দিনে তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ইতিমধ্যে প্রায় ৩ ট্রিলিয়ন ডলারের নতুন বিনিয়োগ নিশ্চিত করেছে। ৮ মে তিনি সেই অঙ্ক বাড়িয়ে প্রায় ১০ ট্রিলিয়ন ডলার বলেন।
পরে ২৯ অক্টোবর দক্ষিণ কোরিয়ার প্রধানমন্ত্রী কিম মিন-সকের সঙ্গে বৈঠকে তিনি বলেন, তাঁর প্রথম মেয়াদের শেষ নাগাদ যুক্তরাষ্ট্রে ২১ থেকে ২২ ট্রিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ হতে পারে।
এর পরেও তিনি বিভিন্ন সময়ে ভিন্ন অঙ্ক উল্লেখ করেন। ২৭ নভেম্বর ও ২ ডিসেম্বর তিনি বলেন, বিনিয়োগের পরিমাণ প্রায় ২০ ট্রিলিয়ন ডলার।
২ ডিসেম্বর, ৩ ডিসেম্বর, ৪ ডিসেম্বর ও ৯ ডিসেম্বর তিনি প্রায় ১৮ ট্রিলিয়ন ডলারের কথা বলেন। এই অঙ্কটি তিনি প্রথম উল্লেখ করেছিলেন ১০ অক্টোবর।
কখনো তিনি বলেন, বিনিয়োগ প্রায় ওই অঙ্কে পৌঁছেছে। আবার কখনো বলেন, ইতিমধ্যে সেই অঙ্ক নিশ্চিত হয়েছে।
মে মাসে ট্রাম্প যখন প্রায় ১০ ট্রিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগের কথা বলেন, তখন তথ্য যাচাইকারী সংস্থা পলিটিফ্যাক্ট সেই দাবি ‘ভুল’ হিসেবে মূল্যায়ন করে। কারণ, সে সময় হোয়াইট হাউসের নথিতে অন্তত ৪ দশমিক ৯ ট্রিলিয়ন ডলার কম বিনিয়োগের তথ্য পাওয়া যায়।
ট্রাম্পের দাবি অনুযায়ী, সাত মাসে এই অঙ্ক প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। তবে এর পক্ষে কোনো নির্ভরযোগ্য প্রমাণ পাওয়া যায়নি। যদি বিনিয়োগের পরিমাণ ২২ ট্রিলিয়ন ডলার হয়, তবে তা ২০২৪ সালের যুক্তরাষ্ট্রের মোট দেশজ উৎপাদনের প্রায় তিন-চতুর্থাংশের সমান। বিশেষজ্ঞরা একে অত্যন্ত অস্বাভাবিক বলে মনে করছেন।
হোয়াইট হাউসের ওয়েবসাইটে বর্তমানে ৯ দশমিক ৬ ট্রিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগের তথ্য রয়েছে। তবে এর সবটাই ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে নতুন করে প্রতিশ্রুত হয়নি। বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রতিশ্রুত বিনিয়োগের পুরোটা বাস্তবায়িত হবে, এর কোনো নিশ্চয়তা নেই। এর কিছু বিনিয়োগ যেকোনো প্রেসিডেন্টের আমলেই আসতে পারত।
এই বিষয়ে পলিটিফ্যাক্টের প্রশ্নের জবাব দেয়নি হোয়াইট হাউস।
ট্রাম্পের দাবি বনাম হোয়াইট হাউসের ওয়েবসাইট
হোয়াইট হাউসের তথ্যের সঙ্গে ট্রাম্পের বক্তব্যের পার্থক্যও স্পষ্ট। এপ্রিল মাসে হোয়াইট হাউস একটি ওয়েবপেজ চালু করে। সেখানে ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে বিভিন্ন দেশ ও কোম্পানির ঘোষিত বিনিয়োগের তালিকা দেওয়া হয়।
ওয়েব আর্কাইভ ‘ওয়ে-ব্যাক মেশিন’ ব্যবহার করে দেখা গেছে, ট্রাম্প যে অঙ্ক উল্লেখ করেছেন, তা প্রায় সব সময়ই হোয়াইট হাউসের তালিকাভুক্ত অঙ্কের দ্বিগুণ বা তারও বেশি। সাম্প্রতিক সময়ে ট্রাম্প যখন ১৮ থেকে ২২ ট্রিলিয়ন ডলারের কথা বলেছেন, তখন হোয়াইট হাউসের ওয়েবসাইটে ছিল মাত্র ৯ দশমিক ৬ ট্রিলিয়ন ডলারের হিসাব।
ট্রাম্প কি বিদেশী ও কর্পোরেট বিনিয়োগের সঠিক চিত্র তুলে ধরছেন
বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্প যেভাবে বিদেশি ও করপোরেট বিনিয়োগের তথ্য তুলে ধরছেন, তা পুরোপুরি সঠিক নয়। হোয়াইট হাউসের তালিকায় বহু বছরের লক্ষ্য অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এতে ভবিষ্যতে পণ্য কেনার প্রতিশ্রুতিও বিনিয়োগ হিসেবে ধরা হয়েছে, যা মূলধনী বিনিয়োগ নয়।
সংযুক্ত আরব আমিরাত ও কাতারের মতো দেশের প্রতিশ্রুত বিনিয়োগ তাদের বার্ষিক জিডিপির তুলনায় অনেক বেশি। ফলে এসব প্রতিশ্রুতির বাস্তবতা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।
ব্লুমবার্গ ইকোনমিকসের এক বিশ্লেষণে বলা হয়, হোয়াইট হাউসের তালিকাভুক্ত ৯ দশমিক ৬ ট্রিলিয়ন ডলারের মধ্যে প্রায় ৭ ট্রিলিয়ন ডলারকে প্রকৃত বিনিয়োগ প্রতিশ্রুতি বলা যায়। বাকি ২ দশমিক ৬ ট্রিলিয়ন ডলার মূলত প্রাকৃতিক গ্যাস কেনা বা ভবিষ্যৎ বাণিজ্য সম্প্রসারণের চুক্তি।
বিশ্লেষণে আরও বলা হয়, অনেক বিনিয়োগ প্রতিশ্রুতি অস্পষ্ট। বেসরকারি খাতের ৮০ শতাংশের বেশি বিনিয়োগ শুধু কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা খাতে।
ব্লুমবার্গ জানায়, অনেক বিনিয়োগ প্রকল্পে একাধিক কোম্পানি জড়িত। ফলে একই বিনিয়োগ একাধিকবার গণনা হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
হোয়াইট হাউসের তালিকায় থাকা মাত্র ১০টি বড় প্রকল্পই মোট বিনিয়োগের বেশির ভাগ অংশ জুড়ে আছে। কিছু প্রকল্পে নির্দিষ্ট কোম্পানি ও অবকাঠামোর বিস্তারিত তথ্য দেওয়া হয়েছে। আবার কিছু ক্ষেত্রে তথ্য খুবই সাধারণ। কিছু উদ্যোগ সরাসরি বিনিয়োগের সঙ্গে সম্পর্কিত হলেও, কিছু কেবল ভবিষ্যৎ বাণিজ্য বৃদ্ধির পূর্বাভাস মাত্র।
হোয়াইট হাউস যে বিদেশি ও করপোরেট বিনিয়োগের অঙ্গীকারগুলোর কথা উল্লেখ করেছে, সেগুলোর বড় একটি অংশের বাস্তবতা নিয়ে বিশেষজ্ঞরা প্রশ্ন তুলেছেন।
সংযুক্ত আরব আমিরাতের ক্ষেত্রে বিনিয়োগের পরিমাণ ধরা হয়েছে ১ দশমিক ৪ ট্রিলিয়ন ডলার। হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, এই অর্থ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, সেমিকন্ডাক্টর, জ্বালানি, কোয়ান্টাম কম্পিউটিং, জীবপ্রযুক্তি ও উৎপাদন খাতে ব্যবহৃত হবে। তবে এর কতটা নতুন বিনিয়োগ, তা স্পষ্ট নয়। ২০২৪ সালে আমিরাতের মোট জিডিপি ছিল মাত্র ৫৩৭ বিলিয়ন ডলার। ফলে ঘোষিত অঙ্কটি দেশটির তিন বছরের মোট অর্থনীতির সমান।
কাতারের ক্ষেত্রে বলা হয়েছে ১ দশমিক ২ ট্রিলিয়ন ডলারের অঙ্গীকার। হোয়াইট হাউস একে সরাসরি বিনিয়োগ না বলে ‘অর্থনৈতিক বিনিময়’ হিসেবে উল্লেখ করেছে। এতে বাণিজ্য চুক্তি, পণ্য কেনা ও ভবিষ্যৎ বিনিয়োগের ইচ্ছার কথা বলা হয়েছে। বিশ্লেষকদের মতে, এসবের অনেকটাই প্রকৃত মূলধনী বিনিয়োগ নয়। ২০২৪ সালে কাতারের জিডিপি ছিল ২১৮ বিলিয়ন ডলার। ঘোষিত অঙ্কটি প্রায় ছয় বছরের অর্থনীতির সমান।
জাপানের ক্ষেত্রে ১ ট্রিলিয়ন ডলারের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে শুরুতে চুক্তি হয়েছিল ৫৫০ বিলিয়ন ডলারের। জাপান সরকার বলেছে, এটি সরাসরি নগদ অর্থ নয়। এর মধ্যে বিনিয়োগ, ঋণ ও ঋণ নিশ্চয়তা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
মেটা ও অ্যাপল—উভয় প্রতিষ্ঠানই ৬০০ বিলিয়ন ডলারের অঙ্গীকার করেছে। মেটার অর্থ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক অবকাঠামো ও কর্মী সম্প্রসারণে ব্যবহারের কথা বলা হয়েছে। অ্যাপলের ক্ষেত্রে এই অঙ্কের মধ্যে আগের বহু বছরের প্রতিশ্রুতিও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। নতুন করে যোগ হয়েছে প্রায় ১০০ বিলিয়ন ডলার।
সৌদি আরবের ক্ষেত্রে ৬০০ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগের কথা বলা হয়েছে। এটি দেশটির ২০২৪ সালের জিডিপির প্রায় অর্ধেকের সমান। এই অর্থ জ্বালানি, গুরুত্বপূর্ণ খনিজ ও প্রতিরক্ষা খাতে ব্যবহারের কথা বলা হয়েছে।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের কোম্পানিগুলোর ক্ষেত্রেও ৬০০ বিলিয়ন ডলারের কথা বলা হয়েছে। তবে ইউরোপীয় ইউনিয়ন একে একটি প্রত্যাশা হিসেবে উল্লেখ করেছে, কোনো বাধ্যতামূলক অঙ্গীকার হিসেবে নয়।
স্টারগেট নামের একটি কনসোর্টিয়াম ৫০০ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ পরিকল্পনার কথা জানিয়েছে। তবে এর মধ্যে মাত্র ১০০ বিলিয়ন ডলার তাৎক্ষণিক বিনিয়োগের কথা বলা হয়েছে। বাকি অংশ ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা।
এনভিডিয়ার ক্ষেত্রেও ৫০০ বিলিয়ন ডলারের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে এটিও একটি দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্য, তাৎক্ষণিক প্রতিশ্রুতি নয়।
ভারতের সঙ্গে ‘মিশন ৫০০’ মূলত দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য বাড়ানোর লক্ষ্য। এটি বিনিয়োগ অঙ্গীকার নয়। এর সময়সীমাও ট্রাম্পের মেয়াদের পর পর্যন্ত বিস্তৃত।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এসব বড় অঙ্কের ঘোষণা অনেক সময় বাস্তবে পুরোপুরি কার্যকর হয় না। রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে এগুলো অনেকাংশে প্রদর্শনমূলক হয়ে থাকে। যুক্তরাষ্ট্রের আগের প্রেসিডেন্টদের সময়েও এমন অতিরঞ্জনের উদাহরণ রয়েছে।
সব মিলিয়ে, ডোনাল্ড ট্রাম্প যে ১৮ থেকে ২২ ট্রিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগের কথা বলছেন, তা হোয়াইট হাউসের নিজস্ব তথ্যের প্রায় দ্বিগুণ। এমনকি হোয়াইট হাউসের তালিকাভুক্ত ৯ দশমিক ৬ ট্রিলিয়ন ডলারকেও সতর্কতার সঙ্গে দেখার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। কারণ, এর মধ্যে বহু বছরের লক্ষ্য, ভবিষ্যৎ বাণিজ্য ও অনিশ্চিত প্রতিশ্রুতি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
সূত্র: আল-জাজিরা

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করেছেন, চলতি বছর যুক্তরাষ্ট্র প্রায় ২০ ট্রিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ নিশ্চিত করেছে। তবে তিনি বিভিন্ন সময়ে এই অঙ্ক ভিন্ন ভিন্নভাবে উপস্থাপন করেছেন।
জানুয়ারিতে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই ট্রাম্প বলে আসছেন, তাঁর শাসনামলে যুক্তরাষ্ট্রে বিপুল পরিমাণ বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি এসেছে। তবে তিনি যে অঙ্ক উল্লেখ করেন, তা সময়ের সঙ্গে বদলেছে।
২১ জানুয়ারি, দায়িত্ব নেওয়ার দ্বিতীয় দিনে তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ইতিমধ্যে প্রায় ৩ ট্রিলিয়ন ডলারের নতুন বিনিয়োগ নিশ্চিত করেছে। ৮ মে তিনি সেই অঙ্ক বাড়িয়ে প্রায় ১০ ট্রিলিয়ন ডলার বলেন।
পরে ২৯ অক্টোবর দক্ষিণ কোরিয়ার প্রধানমন্ত্রী কিম মিন-সকের সঙ্গে বৈঠকে তিনি বলেন, তাঁর প্রথম মেয়াদের শেষ নাগাদ যুক্তরাষ্ট্রে ২১ থেকে ২২ ট্রিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ হতে পারে।
এর পরেও তিনি বিভিন্ন সময়ে ভিন্ন অঙ্ক উল্লেখ করেন। ২৭ নভেম্বর ও ২ ডিসেম্বর তিনি বলেন, বিনিয়োগের পরিমাণ প্রায় ২০ ট্রিলিয়ন ডলার।
২ ডিসেম্বর, ৩ ডিসেম্বর, ৪ ডিসেম্বর ও ৯ ডিসেম্বর তিনি প্রায় ১৮ ট্রিলিয়ন ডলারের কথা বলেন। এই অঙ্কটি তিনি প্রথম উল্লেখ করেছিলেন ১০ অক্টোবর।
কখনো তিনি বলেন, বিনিয়োগ প্রায় ওই অঙ্কে পৌঁছেছে। আবার কখনো বলেন, ইতিমধ্যে সেই অঙ্ক নিশ্চিত হয়েছে।
মে মাসে ট্রাম্প যখন প্রায় ১০ ট্রিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগের কথা বলেন, তখন তথ্য যাচাইকারী সংস্থা পলিটিফ্যাক্ট সেই দাবি ‘ভুল’ হিসেবে মূল্যায়ন করে। কারণ, সে সময় হোয়াইট হাউসের নথিতে অন্তত ৪ দশমিক ৯ ট্রিলিয়ন ডলার কম বিনিয়োগের তথ্য পাওয়া যায়।
ট্রাম্পের দাবি অনুযায়ী, সাত মাসে এই অঙ্ক প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। তবে এর পক্ষে কোনো নির্ভরযোগ্য প্রমাণ পাওয়া যায়নি। যদি বিনিয়োগের পরিমাণ ২২ ট্রিলিয়ন ডলার হয়, তবে তা ২০২৪ সালের যুক্তরাষ্ট্রের মোট দেশজ উৎপাদনের প্রায় তিন-চতুর্থাংশের সমান। বিশেষজ্ঞরা একে অত্যন্ত অস্বাভাবিক বলে মনে করছেন।
হোয়াইট হাউসের ওয়েবসাইটে বর্তমানে ৯ দশমিক ৬ ট্রিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগের তথ্য রয়েছে। তবে এর সবটাই ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে নতুন করে প্রতিশ্রুত হয়নি। বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রতিশ্রুত বিনিয়োগের পুরোটা বাস্তবায়িত হবে, এর কোনো নিশ্চয়তা নেই। এর কিছু বিনিয়োগ যেকোনো প্রেসিডেন্টের আমলেই আসতে পারত।
এই বিষয়ে পলিটিফ্যাক্টের প্রশ্নের জবাব দেয়নি হোয়াইট হাউস।
ট্রাম্পের দাবি বনাম হোয়াইট হাউসের ওয়েবসাইট
হোয়াইট হাউসের তথ্যের সঙ্গে ট্রাম্পের বক্তব্যের পার্থক্যও স্পষ্ট। এপ্রিল মাসে হোয়াইট হাউস একটি ওয়েবপেজ চালু করে। সেখানে ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে বিভিন্ন দেশ ও কোম্পানির ঘোষিত বিনিয়োগের তালিকা দেওয়া হয়।
ওয়েব আর্কাইভ ‘ওয়ে-ব্যাক মেশিন’ ব্যবহার করে দেখা গেছে, ট্রাম্প যে অঙ্ক উল্লেখ করেছেন, তা প্রায় সব সময়ই হোয়াইট হাউসের তালিকাভুক্ত অঙ্কের দ্বিগুণ বা তারও বেশি। সাম্প্রতিক সময়ে ট্রাম্প যখন ১৮ থেকে ২২ ট্রিলিয়ন ডলারের কথা বলেছেন, তখন হোয়াইট হাউসের ওয়েবসাইটে ছিল মাত্র ৯ দশমিক ৬ ট্রিলিয়ন ডলারের হিসাব।
ট্রাম্প কি বিদেশী ও কর্পোরেট বিনিয়োগের সঠিক চিত্র তুলে ধরছেন
বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্প যেভাবে বিদেশি ও করপোরেট বিনিয়োগের তথ্য তুলে ধরছেন, তা পুরোপুরি সঠিক নয়। হোয়াইট হাউসের তালিকায় বহু বছরের লক্ষ্য অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এতে ভবিষ্যতে পণ্য কেনার প্রতিশ্রুতিও বিনিয়োগ হিসেবে ধরা হয়েছে, যা মূলধনী বিনিয়োগ নয়।
সংযুক্ত আরব আমিরাত ও কাতারের মতো দেশের প্রতিশ্রুত বিনিয়োগ তাদের বার্ষিক জিডিপির তুলনায় অনেক বেশি। ফলে এসব প্রতিশ্রুতির বাস্তবতা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।
ব্লুমবার্গ ইকোনমিকসের এক বিশ্লেষণে বলা হয়, হোয়াইট হাউসের তালিকাভুক্ত ৯ দশমিক ৬ ট্রিলিয়ন ডলারের মধ্যে প্রায় ৭ ট্রিলিয়ন ডলারকে প্রকৃত বিনিয়োগ প্রতিশ্রুতি বলা যায়। বাকি ২ দশমিক ৬ ট্রিলিয়ন ডলার মূলত প্রাকৃতিক গ্যাস কেনা বা ভবিষ্যৎ বাণিজ্য সম্প্রসারণের চুক্তি।
বিশ্লেষণে আরও বলা হয়, অনেক বিনিয়োগ প্রতিশ্রুতি অস্পষ্ট। বেসরকারি খাতের ৮০ শতাংশের বেশি বিনিয়োগ শুধু কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা খাতে।
ব্লুমবার্গ জানায়, অনেক বিনিয়োগ প্রকল্পে একাধিক কোম্পানি জড়িত। ফলে একই বিনিয়োগ একাধিকবার গণনা হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
হোয়াইট হাউসের তালিকায় থাকা মাত্র ১০টি বড় প্রকল্পই মোট বিনিয়োগের বেশির ভাগ অংশ জুড়ে আছে। কিছু প্রকল্পে নির্দিষ্ট কোম্পানি ও অবকাঠামোর বিস্তারিত তথ্য দেওয়া হয়েছে। আবার কিছু ক্ষেত্রে তথ্য খুবই সাধারণ। কিছু উদ্যোগ সরাসরি বিনিয়োগের সঙ্গে সম্পর্কিত হলেও, কিছু কেবল ভবিষ্যৎ বাণিজ্য বৃদ্ধির পূর্বাভাস মাত্র।
হোয়াইট হাউস যে বিদেশি ও করপোরেট বিনিয়োগের অঙ্গীকারগুলোর কথা উল্লেখ করেছে, সেগুলোর বড় একটি অংশের বাস্তবতা নিয়ে বিশেষজ্ঞরা প্রশ্ন তুলেছেন।
সংযুক্ত আরব আমিরাতের ক্ষেত্রে বিনিয়োগের পরিমাণ ধরা হয়েছে ১ দশমিক ৪ ট্রিলিয়ন ডলার। হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, এই অর্থ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, সেমিকন্ডাক্টর, জ্বালানি, কোয়ান্টাম কম্পিউটিং, জীবপ্রযুক্তি ও উৎপাদন খাতে ব্যবহৃত হবে। তবে এর কতটা নতুন বিনিয়োগ, তা স্পষ্ট নয়। ২০২৪ সালে আমিরাতের মোট জিডিপি ছিল মাত্র ৫৩৭ বিলিয়ন ডলার। ফলে ঘোষিত অঙ্কটি দেশটির তিন বছরের মোট অর্থনীতির সমান।
কাতারের ক্ষেত্রে বলা হয়েছে ১ দশমিক ২ ট্রিলিয়ন ডলারের অঙ্গীকার। হোয়াইট হাউস একে সরাসরি বিনিয়োগ না বলে ‘অর্থনৈতিক বিনিময়’ হিসেবে উল্লেখ করেছে। এতে বাণিজ্য চুক্তি, পণ্য কেনা ও ভবিষ্যৎ বিনিয়োগের ইচ্ছার কথা বলা হয়েছে। বিশ্লেষকদের মতে, এসবের অনেকটাই প্রকৃত মূলধনী বিনিয়োগ নয়। ২০২৪ সালে কাতারের জিডিপি ছিল ২১৮ বিলিয়ন ডলার। ঘোষিত অঙ্কটি প্রায় ছয় বছরের অর্থনীতির সমান।
জাপানের ক্ষেত্রে ১ ট্রিলিয়ন ডলারের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে শুরুতে চুক্তি হয়েছিল ৫৫০ বিলিয়ন ডলারের। জাপান সরকার বলেছে, এটি সরাসরি নগদ অর্থ নয়। এর মধ্যে বিনিয়োগ, ঋণ ও ঋণ নিশ্চয়তা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
মেটা ও অ্যাপল—উভয় প্রতিষ্ঠানই ৬০০ বিলিয়ন ডলারের অঙ্গীকার করেছে। মেটার অর্থ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক অবকাঠামো ও কর্মী সম্প্রসারণে ব্যবহারের কথা বলা হয়েছে। অ্যাপলের ক্ষেত্রে এই অঙ্কের মধ্যে আগের বহু বছরের প্রতিশ্রুতিও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। নতুন করে যোগ হয়েছে প্রায় ১০০ বিলিয়ন ডলার।
সৌদি আরবের ক্ষেত্রে ৬০০ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগের কথা বলা হয়েছে। এটি দেশটির ২০২৪ সালের জিডিপির প্রায় অর্ধেকের সমান। এই অর্থ জ্বালানি, গুরুত্বপূর্ণ খনিজ ও প্রতিরক্ষা খাতে ব্যবহারের কথা বলা হয়েছে।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের কোম্পানিগুলোর ক্ষেত্রেও ৬০০ বিলিয়ন ডলারের কথা বলা হয়েছে। তবে ইউরোপীয় ইউনিয়ন একে একটি প্রত্যাশা হিসেবে উল্লেখ করেছে, কোনো বাধ্যতামূলক অঙ্গীকার হিসেবে নয়।
স্টারগেট নামের একটি কনসোর্টিয়াম ৫০০ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ পরিকল্পনার কথা জানিয়েছে। তবে এর মধ্যে মাত্র ১০০ বিলিয়ন ডলার তাৎক্ষণিক বিনিয়োগের কথা বলা হয়েছে। বাকি অংশ ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা।
এনভিডিয়ার ক্ষেত্রেও ৫০০ বিলিয়ন ডলারের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে এটিও একটি দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্য, তাৎক্ষণিক প্রতিশ্রুতি নয়।
ভারতের সঙ্গে ‘মিশন ৫০০’ মূলত দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য বাড়ানোর লক্ষ্য। এটি বিনিয়োগ অঙ্গীকার নয়। এর সময়সীমাও ট্রাম্পের মেয়াদের পর পর্যন্ত বিস্তৃত।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এসব বড় অঙ্কের ঘোষণা অনেক সময় বাস্তবে পুরোপুরি কার্যকর হয় না। রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে এগুলো অনেকাংশে প্রদর্শনমূলক হয়ে থাকে। যুক্তরাষ্ট্রের আগের প্রেসিডেন্টদের সময়েও এমন অতিরঞ্জনের উদাহরণ রয়েছে।
সব মিলিয়ে, ডোনাল্ড ট্রাম্প যে ১৮ থেকে ২২ ট্রিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগের কথা বলছেন, তা হোয়াইট হাউসের নিজস্ব তথ্যের প্রায় দ্বিগুণ। এমনকি হোয়াইট হাউসের তালিকাভুক্ত ৯ দশমিক ৬ ট্রিলিয়ন ডলারকেও সতর্কতার সঙ্গে দেখার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। কারণ, এর মধ্যে বহু বছরের লক্ষ্য, ভবিষ্যৎ বাণিজ্য ও অনিশ্চিত প্রতিশ্রুতি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
সূত্র: আল-জাজিরা

ব্রাউন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভয়াবহ গোলাগুলির ঘটনার পর যুক্তরাষ্ট্র সরকার গ্রিন কার্ড লটারি কর্মসূচি সাময়িকভাবে স্থগিত করেছে। গত সপ্তাহে ওই ঘটনায় দুজন নিহত হন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্দেশে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
৪ ঘণ্টা আগে
ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ও ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী শরিফ ওসমান হাদির মৃত্যুর খবরে উত্তাল বাংলাদেশ। এই মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়ার পর বাংলাদেশজুড়ে ব্যাপক বিক্ষোভ শুরু হয়। প্রথমে বিক্ষোভ হয় ঢাকার শাহবাগ এলাকায়। পরে তা চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন শহরে ছড়িয়ে পড়ে।
৬ ঘণ্টা আগে
কাতারের প্রধানমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ বিন আবদুর রহমান বিন জাসিম আল থানি সতর্ক করেছেন, গাজায় ইসরায়েলের প্রতিদিনের যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন পুরো শান্তিচুক্তি প্রক্রিয়াকে বিপদের মুখে ফেলছে। তিনি দ্রুত চুক্তির দ্বিতীয় ধাপ শুরু করার আহ্বান জানিয়েছেন। তাঁর মতে, এতে গাজায় চলমান ভয়াবহ যুদ্ধের অবসান ঘটানো সম্ভব হবে।
১ দিন আগে
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বাণিজ্যযুদ্ধের মধ্যেও ভারতের রপ্তানি উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। ২০২৫ সালের নভেম্বরে ভারতের রপ্তানি আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ২০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
১ দিন আগে