leadT1ad

অধিকাংশ দলকে বাদ রেখেই নির্বাচনে মিয়ানমার, প্রেসিডেন্ট হতে ‘চান না’ জান্তা প্রধান

স্ট্রিম ডেস্ক
স্ট্রিম ডেস্ক

মিয়ানমারে ভোটগ্রহণ শুরু। ছবি: রয়টার্স

গৃহযুদ্ধ, সহিংসতা ও নির্বাচনের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে ব্যাপক সন্দেহের মধ্যেই আজ রোববার (২৮ ডিসেম্বর) মিয়ানমারে সাধারণ নির্বাচনে ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে। আজ ভোর ৬টায় ভোটকেন্দ্র খোলা হয়। সূর্য ওঠার পর থেকেই ভোটকেন্দ্রগুলোতে ভোটারদের আসতে শুরু করেছেন। ২০২১ সালে সামরিক অভ্যুত্থানের পর এটি দেশটির প্রথম জাতীয় নির্বাচন।

মিয়ানমার শাসনকারী সামরিক জান্তা বলছে, এই নির্বাচন রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিকভাবে নতুন করে শুরু করার একটি সুযোগ। তবে দেশটির সামরিক সরকার আয়োজিত এই ভোটকে আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরা ‘প্রহসন’ বলে অভিহিত করছেন। জাতিসংঘ, কয়েকটি পশ্চিমা দেশ ও মানবাধিকার সংগঠনসহ সমালোচকদের মতে, এই নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও বিশ্বাসযোগ্য নয়।

সামরিক সমর্থিত ইউনিয়ন সলিডারিটি অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টিসহ ছয়টি দল সারা দেশে প্রার্থী দিয়েছে। তবে অং সান সু চির ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসিসহ প্রায় ৪০টি দল নিষিদ্ধ। নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী অং সান সু চি ও তার দলের শীর্ষ নেতারা কারাবন্দি বা নির্বাসনে রয়েছেন। ২০২০ সালের নির্বাচনে ভূমিধস জয় পাওয়া তাঁর দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসি (এনএলডি) ভেঙে দেওয়া হয়েছে।

কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রিত নির্বাচনে দেশটির ৩৩০টি টাউনশিপের ২৬৫টিতে ভোট হচ্ছে। চলমান গৃহযুদ্ধের কারণে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশটির বিস্তীর্ণ এলাকা এখনও ভোটগ্রহণের বাইরে রয়ে গেছে, যেখানে সামরিক বাহিনীর সঙ্গে বিভিন্ন বিরোধী সশস্ত্র গোষ্ঠীর তীব্র সংঘর্ষ চলছে। যেসব টাউনশিপে ভোট হবে, সেগুলোকে তিনভাগে ভাগ করা হয়েছে। এরমধ্যে প্রথম ধাপে আজ ভোটগ্রহণের পর আগামী ১১ জানুয়ারি ও ২৫ জানুয়ারি আরও দুই দফা ভোট গ্রহণ হবে। অবশ্য ভোট গণনা ও ফল ঘোষণার তারিখ এখনো জানানো হয়নি।

রোববার সকাল ৬টায় ভোট গ্রহণ শুরুর পর ইয়াঙ্গুন ও মান্দালেসহ বড় শহরের কিছু ভোটকেন্দ্রে ধীরে ধীরে ভোটারদের উপস্থিতি দেখা গেছে বলে প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে।

মিয়ানমারে ভোটের প্রচারণা। ছবি: রয়টার্স
মিয়ানমারে ভোটের প্রচারণা। ছবি: রয়টার্স

বেসামরিক পোশাকে জান্তা প্রধান মিন অং হ্লাইং রাজধানী নেপিদোতে কড়া নিরাপত্তার মধ্যে ভোট দেন। এরপর কালি মাখা আঙুল উঁচু করে হাসিমুখে ছবি তোলেন। জান্তা-সমর্থিত পপুলার নিউজ জার্নালে সেই ছবি প্রকাশিত হয়েছে। ভোট দেওয়ার পর একাধিকবার ভোট ঠেকাতে ভোটারদের আঙুলে অমোচনীয় কালি ব্যবহার করা হচ্ছে।

বিশ্লেষকদের ধারণা, নির্বাচনের পর প্রেসিডেন্ট পদে যাওয়ার উচ্চাকাঙ্ক্ষা রয়েছে জান্তা প্রধানের। ভোট দিতে এসে সেই প্রশ্নের মুখোমুখিও হয়েছিলেন তিনি। সাংবাদিকেরা এ বিষয়ে জানতে চাইলে মিন অং হ্লাইং বলেন, তিনি কোনো রাজনৈতিক দলের নেতা নন। তিনি বলেন, ‘সংসদ বসলে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের একটি প্রক্রিয়া রয়েছে।’

সামরিক-সমর্থিত দলের এগিয়ে থাকার আভাস

সু চির দল উৎখাতের পর ব্যাপক গণবিক্ষোভ শুরু হলেও সেনাবাহিনী তা সহিংসভাবে দমন করে। এরপর অনেক বিক্ষোভকারী অস্ত্র হাতে নেয়, যা পরিণত হয় দেশজুড়ে বিদ্রোহে।

এ নির্বাচনে সামরিক-সমর্থিত ইউনিয়ন সলিডারিটি অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টি (ইউএসডিপি) ক্ষমতায় ফেরার পথে রয়েছে বলে মনে করেন থাইল্যান্ডের কাসেটসার্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভাষক ও মিয়ানমার বিষয়কবিশেষজ্ঞ লালিতা হানওয়ং। তিনি বলেন, ‘জান্তার এই নির্বাচন মানুষের ওপর সামরিক আধিপত্য দীর্ঘায়িত করার জন্যই আয়োজন করা হয়েছে। ইউএসডিপি ও সামরিক-সমর্থিত দলগুলো মিলে পরবর্তী সরকার গঠন করবে।’

জাতিসংঘের মানবাধিকারপ্রধান ভলকার তুর্ক গত সপ্তাহে বলেন, সহিংসতা ও দমন-পীড়নের পরিবেশে এই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে।

ইয়াঙ্গুন ও মান্দালেসহ বড় শহরের বাসিন্দারা জানান, আগের নির্বাচনগুলোর মতো এবার কোনো উৎসাহ–উদ্দীপনা নেই। তবে ভোট দিতে মানুষকে বাধ্য করার ঘটনাও তারা দেখেননি। এই নিস্তেজ প্রচারণার মধ্যে ইউএসডিপিই সবচেয়ে দৃশ্যমান ছিল।

ভোটে ব্যবহার হচ্ছে ইভিএম। ছবি: রয়টার্স
ভোটে ব্যবহার হচ্ছে ইভিএম। ছবি: রয়টার্স

২০১০ সালে প্রতিষ্ঠিত ইউএসডিপি ওই বছর বিরোধীদের বর্জনের মধ্যে হওয়া নির্বাচনে জয়ী হয়ে সামরিক বাহিনীর সঙ্গে মিলেই দেশ শাসন করে। ২০১৫ সালে দলটি অং সান সু চির এনএলডির কাছে পরাজিত হয়।

‘ভালো ভবিষ্যৎ’ দেখছে জান্তা

জান্তা সরকার দাবি করছে, নির্বাচনই সংঘাত থেকে বেরিয়ে আসার পথ। তারা ২০১০ সালের সামরিক-সমর্থিত নির্বাচনের উদাহরণ দিচ্ছে, যার পর একটি আধা-বেসামরিক সরকার গঠিত হয়ে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংস্কার করেছিল।

প্রথমবারের মতো এবার মিয়ানমারে ৫০ হাজারের বেশি ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন ব্যবহার করা হচ্ছে। জান্তা-নিয়ন্ত্রিত নির্বাচন কমিশনের দাবি, এতে ভোট গণনা দ্রুত হবে এবং জালিয়াতির সুযোগ থাকবে না।

রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম জানায়, রাশিয়া, চীন, বেলারুশ, কাজাখস্তান, কম্বোডিয়া, ভিয়েতনাম, নিকারাগুয়া ও ভারত থেকে নির্বাচন পর্যবেক্ষকেরা ভোটের আগে মিয়ানমারে পৌঁছেছেন।

তবে বিস্তৃত সংঘাতের মধ্যে স্থিতিশীল প্রশাসন গড়ার জান্তার চেষ্টা ঝুঁকিপূর্ণ বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা। সামরিক নিয়ন্ত্রণাধীন কোনো সরকারের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পাওয়ার সম্ভাবনাও কম।

ভোট দেওয়ার পর জান্তার মুখপাত্র জ’ মিন তুন বলেন, আন্তর্জাতিক মহলে সমালোচনা থাকবে, এটি তারা জানেন। তবে তাঁর ভাষায়, ‘এই নির্বাচন থেকে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা আসবে। আমরা বিশ্বাস করি, একটি ভালো ভবিষ্যৎ হবে।’

Ad 300x250

সম্পর্কিত