নির্বাচন কমিশনের সব সদস্য সম্মতি দিলে আগামীকাল রোববার (২৮ ডিসেম্বর) বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্তি হতে পারেন বলে জানিয়েছেন ইসির সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ। আজ শনিবার দুপুর পৌনে ২টায় নির্বাচন ভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের এই তথ্য জানান তিনি।
তিনি বলেন, ‘ভোটার তালিকায় নাম তুলতে আনুষ্ঠানিকতা সারলেও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে এ তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার সিদ্ধান্ত পেতে সময় লাগবে একদিন।’
তিনি জানান, তারেক রহমান এবং তাঁর মেয়ে জাইমা রহমান, দুজনই আজ ভোটার নিবন্ধন ফর্ম জমা দিয়ে নিবন্ধন কার্যক্রম সম্পন্ন করেছেন।
ভোটার তালিকা আইন-২০০৯ এর ১৫ ধারা অনুযায়ী, কমিশনের এখতিয়ার আছে যে কোনো প্রাপ্তবয়স্ক বা ভোটার হওয়ার সক্ষম ব্যক্তিকে ভোটার করতে পারেন বলেও উল্লেখ করেন ইসি সচিব।
আজ নিবন্ধন প্রক্রিয়ায় তারেক রহমান ও তাঁর কন্যা জাইমা রহমান ‘ফরম-২’ পূরণ করেছেন। ওই ফরম পূরণের পর তাঁদের ছবি তোলা হয়েছে, সেইসঙ্গে বায়োমেট্রিক্স নেওয়া হয়েছে। সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ বলেন, ‘ওনারা আবেদন করেছেন যে ওনাদের যেন ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এখন আগামীকাল কমিশনে এটা পেশ করা হবে। কমিশনের সিদ্ধান্তের পরে ওনাদের ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্তি হবে।’
সেজন্য পূর্ণ কমিশন (সব সদস্য) বৈঠকে বসবে কিনা জানতে চাইলে ইসি সচিব বলেন, ‘নিবন্ধনটা চলমান প্রক্রিয়া। নিবন্ধন কমপ্লিট করেছেন তিনি। ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্তি যেটা আগামী আপনার ১২ ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের সঙ্গে সম্পর্কিত। সেক্ষেত্রে কমিশনের সিদ্ধান্ত লাগবে। কমিশন তো আছেন সবাই এখানে। আপনারা জানেন কমিশনের সিদ্ধান্ত কমিশনের অনুমতি দুইভাবে পাওয়া যায়। একটা হচ্ছে আনুষ্ঠানিক সভা করে, আরেকটা হচ্ছে নথির মাধ্যমে। এখন কমিশন যেটা যে পদ্ধতিতে অনুমোদন করবেন সেটা।’
তিনি বলেন, ‘আমরা নথি উপস্থাপন করব নিষ্পত্তির জন্যে। কমিশন যদি বলেন যে সভা করবেন তাহলে সভা করবেন আর যদি মনে হয় যে নথিতে প্রক্রিয়াজাত করে দিবেন দিবেন। এটা তো কমিশনের এখতিয়ার। আমার দায়িত্বটা হচ্ছে কমিশন পর্যন্ত পৌঁছানো। এটা আগামীকাল করব।’
নিবন্ধন শেষ হতে কত সময় লাগতে পারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এখন নিবন্ধন কমপ্লিট করে গেলেও এখানে আমাদের প্রসেসের জন্যে সময় লাগে। কারণ এটা আপলোড করে ওনাদের ফিঙ্গারপ্রিন্ট এবং সিগনেচার ম্যাচিং, ফেস-আইরিশ এগুলোকে ম্যাচিং করতে হয়। ম্যাচিং করার পরে কনফার্ম হলে তখন আরকি ওনাদের একটা ভোটার আমরা এনআইডি নম্বর যেটা বলি, সেই নম্বরটা দেওয়া হয়।’
তিনি আশা প্রকাশ করেন, এসব প্রক্রিয়া আজকের ভেতরে কমপ্লিট হয়ে যাবে।
এর আগে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এদিন দুপুর ১টায় আগারগাঁওয়ে নির্বাচনী প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট (ইটিআই) ভবনে গিয়ে তিনি আঙুলের ছাপ, আইরিশের প্রতিচ্ছবি আর বায়োমেট্রিক তথ্য দেন। এসময় ইসি সচিব আখতার আহমেদ উপস্থিত ছিলেন।
এরপর ১টা ১৭ মিনিটে ছোটভাই আরাফাত রহমান কোকোর কবর জিয়ারতের উদ্দেশে বনানী কবরস্থানের উদ্দেশে রওনা হন বিএনপি নেতা।
সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে ভোটার হওয়ার বাধ্যবাধকতা রয়েছে; এ শর্ত পূরণে দেশের যেকোনো নির্বাচনি এলাকার ভোটার হলেই চলে।
আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠেয় নির্বাচনে অংশ নিতে আগ্রহীদের মনোনয়নপত্র সংগ্রহ ও জমার শেষ সময় হচ্ছে ২৯ ডিসেম্বর।
ইতোমধ্যে বগুড়া-৬ আসনে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের তরফে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করা হয়েছে। মনোনয়নপত্র জমার সময় প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিতে হবে।
২০০৭-২০০৮ সালে বাংলাদেশে প্রথমবারের মত ছবিসহ ভোটার তালিকা প্রণয়ন করা হয়। তারেক রহমান তখন ছিলেন কারাগারে। ২০০৮ সালে কারামুক্তির পর তিনি চিকিৎসার জন্য লন্ডনে যান। এরপর আর দেশে না ফেরায় এনআইডিও পাননি। তবে চব্বিশের অভ্যুত্থানে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর তার স্ত্রী ডা. জুবাইদা রহমানে দেশে এসে ভোটার হয়েছেন।
বিএনপি নেতা তারেক রহমান নির্বাচন ভবনে যাওয়ার আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে জাতীয় কবির সমাধিসৌধ প্রাঙ্গণে যান। সেখানে তিনি ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক ওসমান হাদি এবং কাজী নজরুল ইসলামের কবরে শ্রদ্ধা জানানোর পাশাপাশি মোনাজাত করেন।
এরপর বেলা ১১টা ৪০ মিনিটে তার গাড়ি বহর জাতীয় কবির সমাধিসৌধ প্রাঙ্গণ এলাকা ছেড়ে নির্বাচন ভবনের পথে রওনা হয়। ভোটার হওয়ার আনুষ্ঠানিকতা সেরে ছোটভাই আরাফাত রহমান কোকোর কবর জিয়ারতের উদ্দেশে তিনি বনানী কবরস্থানের উদ্দেশে রওনা হয়েছেন।
যুক্তরাজ্যে দেড় দশকের নির্বাসিত জীবন কাটিয়ে বৃহস্পতিবার দেশে ফেরা তারেক রহমান সেদিন সংবর্ধনা, বক্তৃতা শেষে মা খালেদা জিয়াকে দেখতে এভারকেয়ার হাসপাতালে যান। পরদিন বিকালে তিনি তার বাবা, বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের কবর জিয়ারত করে সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।