leadT1ad

মগবাজারে সিয়াম হত্যার ঘটনায় মামলা, সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করছে পুলিশ

স্ট্রিম প্রতিবেদক
স্ট্রিম প্রতিবেদক
ঢাকা

প্রকাশ : ২৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ০০: ০৫
মগবাজারে ককটেল বিস্ফোরণে নিহত যুবক। ছবি: সংগৃহীত

রাজধানীর মগবাজারে ককটেল বিস্ফোরণে সিয়াম মজুমদার (২১) নিহতের ঘটনায় হাতিরঝিল থানায় হত্যা মামলা হয়েছে। নিহতের বাবা আলী আকবর মজুমদার বাদী হয়ে বৃহস্পতিবার (২৫ ডিসেম্বর) অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে এই মামলা করেন।

গতকাল বুধবার সন্ধ্যা ৭টা ১০ মিনিটের দিকে মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভার থেকে দুর্বৃত্তদের ছোড়া একটি ককটেল বিস্ফোরণে সিয়াম নিহত হন। তিনি মগবাজার এলাকার ‘জাহিদ কার ডেকোরেশন’ নামে একটি দোকানে কাজ করতেন। ঘটনার সময় তিনি মগবাজার মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কেন্দ্রীয় কমান্ড সংলগ্ন একটি চায়ের দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে ছিলেন। ফ্লাইওভার থেকে ছোড়া ককটেলটি সরাসরি সিয়ামের মাথায় পড়ে বিস্ফোরিত হলে ঘটনাস্থলেই তাঁর মৃত্যু হয়।

আজ বৃহস্পতিবার ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে ময়নাতদন্ত শেষে সিয়ামের মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এরপর সন্ধ্যায় দাফনের জন্য মরদেহ খুলনার দিঘলিয়া উপজেলার দেয়াড়া দেবনগর গ্রামে নেওয়া হয়।

তদন্তসংশ্লিষ্ট পুলিশ ও গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানান, সিয়াম হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় হাতিরঝিল থানা পুলিশের পাশাপাশি বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার একাধিক দল ছায়া তদন্ত শুরু করেছে। হামলাকারীদের পরিচয় শনাক্ত করতে ঘটনাস্থল ও আশপাশের সড়ক এবং বিভিন্ন স্থাপনায় থাকা সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ করা হচ্ছে। পুলিশ প্রাথমিকভাবে ধারণা করছে, এই ককটেল বিস্ফোরণ ও হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় কার্যক্রম নিষিদ্ধ সংগঠনগুলোর নেতা-কর্মীরা জড়িত থাকতে পারে।

এদিকে সিয়ামকে হারিয়ে মাতম করছেন পরিবারের সদস্যরা। সিয়ামের মা সেজু বেগম ছেলের মরদেহের পাশে বিলাপ করে বলছিলেন, ‘সিয়াম আমার কোলে ফিরে আয় বাবা; আমার বুক খালি হয়ে গেল রে বাবা।’ বিলাপ করতে করতে তিনি বারবার মূর্ছা যাচ্ছিলেন। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘আমার মানিক তো কোনো অপরাধ করেনি, কেন মারল ওরা?’

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সাংবাদিকদের কাছে নিহতের বাবা আলী আকবর বলেন, ‘আমি কোনো রাজনীতি করি না। আমি গরিব মানুষ। আমার ছেলে তো কোনো অপরাধ করেনি। আমার ছেলেকে সন্ত্রাসীরা কেন মারল? রাস্তায় কি চলা যাবে না? আমার ছেলে হত্যার বিচার চাই।’

নিহত সিয়ামের ছোট ভাই সেজান মজুমদার স্ট্রিমকে বলেন, ‘জীবিকার জন্যই তাঁরা দুই ভাই বাবা-মাকে নিয়ে ঢাকায় আসেন। এখন আর ঢাকায় থাকবেন না তাঁরা। ভাইয়ের মৃত্যুতে তাঁদের পরিবারে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।’ তিনি জানান, বাবা-মা আর দুই ভাইয়ের উপার্জনে তাঁদের সংসার চলত। সিয়ামকে বিদেশে পাঠানোর পরিকল্পনা ছিল। তাঁদের বাবা রিকশা চালান এবং মা বিভিন্ন বাসাবাড়িতে কাজ করেন।

হাতিরঝিল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গোলাম মর্তুজা স্ট্রিমকে বলেন, বৃহস্পতিবার রাত ৯টা পর্যন্ত সিয়াম হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় জড়িত কাউকে শনাক্ত কিংবা গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা হাতিরঝিল থানার এসআই সাইদুর রহমান স্ট্রিমকে বলেন, ‘সিয়াম হত্যায় জড়িতদের গ্রেপ্তারে পুলিশের একাধিক টিম কাজ করছে। আসামিদের শনাক্ত করতে পুলিশের পাশাপাশি ডিবি ও অন্যান্য সংস্থা কাজ করছে।’ তিনি জানান, প্রাথমিকভাবে ঘটনাস্থলের আশপাশের সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়েছে। সেসব ফুটেজ বিশ্লেষণ করে আসামি শনাক্তের কাজ চলছে।

ঘটনার পর ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) ও রমনা বিভাগের ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। সিটিটিসির বোম ডিসপোজাল ইউনিট এবং সিআইডির ফরেনসিক ইউনিট আলামত সংগ্রহ করেছে।

গতকাল বুধবার রাতে ডিএমপির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, মগবাজার ফ্লাইওভার থেকে অজ্ঞাতনামা দুষ্কৃতকারীদের ছোড়া বিস্ফোরক দ্রব্যের আঘাতে সিয়াম নিহত হন। এই হামলায় কার্যক্রম নিষিদ্ধ সংগঠনগুলো জড়িত থাকতে পারে বলে বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে।

Ad 300x250

সম্পর্কিত