leadT1ad

নির্বাচন ঘিরে নিরাপত্তা শঙ্কায় রাজনীতিবিদ থেকে নারী—স্বস্তিতে নেই কেউই

স্ট্রিম প্রতিবেদক
স্ট্রিম প্রতিবেদক
ঢাকা

প্রকাশ : ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৩: ০৮
চীন-মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে ‘বাংলাদেশ রিফর্ম ট্র্যাকার’ উদ্বোধন অনুষ্ঠান। ছবি: সংগৃহীত

আসন্ন নির্বাচনকে সামনে রেখে দেশের সার্বিক নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বিশিষ্ট নাগরিক, রাজনীতিবিদ ও সাংবাদিকরা। তাঁরা বলছেন, শুধু সাধারণ ভোটার বা বিপন্ন জনগোষ্ঠীই নয়, রাজনীতিবিদ, সাংবাদিক এবং নারীরাও এখন চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।

আজ রোববার (১৪ ডিসেম্বর) রাজধানীর আগারগাঁওয়ের চীন-মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে ‘বাংলাদেশ রিফর্ম ট্র্যাকার’ উদ্বোধন অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন তাঁরা। বাংলাদেশ নাগরিক প্ল্যাটফর্ম এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।

বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের (সিপিডি) সম্মানীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন শ্রম ও কর্মসংস্থান এবং নৌপরিবহন উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন।

আলোচনার সূচনা করে ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, ‘নাগরিকদের প্রত্যাশা নিয়ে কাজ করতে গিয়ে নিরাপত্তার বিষয়টিই সবচেয়ে বড় হয়ে দেখা দিয়েছে। নির্বাচনের আগে রাজনীতিবিদরা সহিংসতা বা আক্রমণের শিকার হবেন কি না এবং নির্বাচন কমিশন ও সরকার তাঁদের জন্য সুষ্ঠু পরিবেশ গড়ে তুলতে পারবে কি না—তা নিয়ে বড় ধরনের আশঙ্কা রয়েছে।’

সম্প্রতি ইনকিলাব মঞ্চের নেতার ওপর হামলার প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ‘আপনারা দেখেছেন সাম্প্রতিক কালে ইনকিলাব মঞ্চের নেতার ওপর কীভাবে সুনির্দিষ্টভাবে আক্রমণ হয়েছে। এই আক্রমণ যে শেষ আক্রমণ, এটাও কেউ মনে করছেন না। সেহেতু নিরাপত্তার বিষয়টি আজ খুবই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। শুধু ভোটার বা বিপন্ন জনগোষ্ঠীই নয়, রাজনীতিবিদরাও এই বিপন্নতার ভেতরে আছেন।’

বিডিজবস-এর প্রতিষ্ঠাতা ফাহিম মাশরুর বলেন, ‘সামনের নির্বাচন নিয়ে সবারই প্রধান উদ্বেগ আসলে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি। নাগরিকরা ভালো করে ভোট দিতে পারবে কি না, এমনকি প্রার্থীরাও আসলে কতটুকু নিরাপদ থাকবেন, তা নিয়েও সংশয় রয়েছে।’ নির্বাচনী বুথে সিসিটিভি ক্যামেরা বাধ্যতামূলক করার দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশন এই বিষয়ে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার না দিয়ে বাজেটের অজুহাত দেখাচ্ছে, যা দুঃখজনক।

গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের প্রধান ও জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক কামাল আহমেদ বলেন, ‘সাংবাদিকদের আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দিকেও নজর দেওয়া হয়নি। সাংবাদিকরা আশঙ্কা করছেন, এই নির্বাচনে তাঁদের নিরাপত্তা প্রচণ্ডভাবে হুমকির মুখে। সেটা শারীরিক এবং ভার্চ্যুয়াল উভয় ক্ষেত্রেই। অনলাইনে তাঁরা যে পরিমাণে নারীবিদ্বেষী আচরণ ও যৌন হয়রানির শিকার হন, তা ভয়াবহ।’

সিপিবির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স দেশের বর্তমান পরিস্থিতিকে ‘ভয়ের রাজত্ব’ হিসেবে অভিহিত করেন। তিনি বলেন, ‘ভয়ের রাজত্ব বা মব কালচার প্রথম দিন থেকেই শুরু হয়েছে, এখন তা আরও বেড়েছে। নির্বাচন ঘিরেও একই অবস্থা বিরাজ করছে।’

জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য মো. সাইফুল আলম খান মিলন বলেন, ‘আমরা যারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছি, চলাফেরার ক্ষেত্রে আমরা খুব নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। ফজরের নামাজ পড়তে যেতে হলেও সঙ্গে সুরক্ষা নিয়ে যেতে হয়। ওসমান হাদি বেশ কিছুদিন যাবৎ ফেসবুকে হুমকির কথা বলে আসছিলেন, কিন্তু তারপরেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।’

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রাশেদা কে. চৌধূরী নারীদের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, আমি কি নিরাপদে ভোট দিতে যেতে পারব?

নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে নিজের শঙ্কার কথা জানিয়ে আলোকচিত্রী শহিদুল আলম বলেন, ‘নিরাপত্তা নিয়ে আমারও চিন্তা বাড়ছে। নিরাপত্তা নিশ্চিত করাই এখন প্রধান বিষয়।’

অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন সিপিডির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. রেহমান সোবহান, সম্মানীয় ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান, মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এমসিসিআই) সভাপতি কামরান তানভিরুর রহমান, টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান, দুদক চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আবদুল মোমেন, নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ প্রমুখ।

Ad 300x250
সর্বাধিক পঠিত

সম্পর্কিত