leadT1ad

তারেক রহমানের বক্তব্যে ৫ বিষয়ে গুরুত্ব

স্ট্রিম প্রতিবেদক
স্ট্রিম প্রতিবেদক

সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন তারেক রহমান। ছবি: সংগৃহীত

দীর্ঘ ১৭ বছর পর দেশে ফিরেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। বৃহস্পতিবার (২৫ ডিসেম্বর) সকালে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নামেন। জনস্রোত ঠেলে বিকেলে পৌঁছান রাজধানীর ৩৬ জুলাই এক্সপ্রেসওয়ে (৩০০ ফিট) সড়কের সংবর্ধনা মঞ্চে।

সেখানে বেলা ৩টা ৫৭ থেকে কোনো ধরনের ক্রিপ্ট ছাড়াই ১৬ মিনিট বক্তৃতা করেন তারেক রহমান। কালো প্যান্টের সঙ্গে সাদ শার্ট পরা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের বক্তব্যে উঠে এসেছে গুরুত্বপূর্ণ পাঁচ দিক…

ভাগ্য বদলের রূপরেখা

বিশাল জনসমুদ্রে দাঁড়িয়ে তারেক রহমান নিজের রাজনৈতিক দর্শন ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা তুলে ধরেন। যুক্তরাষ্ট্রের বর্ণবাদবিরোধী নেতা মার্টিন লুথারের ‘আই হ্যাভ এ ড্রিম’ উক্তি উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আই হ্যাভ অ্যা প্ল্যান, ফর দ্য পিপল অব বাংলাদেশ অ্যান্ড ফর মাই কান্ট্রি’।

সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে জনতার সামনে বক্তৃতা করেন তারেক রহমান। ছবি: সংগৃহীত
সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে জনতার সামনে বক্তৃতা করেন তারেক রহমান। ছবি: সংগৃহীত

এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে প্রত্যেক মানুষের সহযোগিতা চান তারেক রহমান। তিনি বলেন, আপনারা পাশে থাকেন এবং সহযোগিতা করেন, এই প্ল্যান আমরা বাস্তবায়ন করতে সক্ষম হব। যদিও বক্তৃতা শেষ করে আবার ফিরে গিয়ে মাইকে তারেক রহমান তাঁর বক্তব্য সংশোধন করে বলেন, ‘উই হ্যাভ অ্যা প্ল্যান’।

তিনি বলেন, ‘আজ এই বাংলাদেশের মাটিতে দাঁড়িয়ে আমি বলতে চাই– এদেশের মানুষের স্বার্থে, উন্নয়নের জন্য এবং ভাগ্যের পরিবর্তনের জন্য আমার একটি পরিকল্পনা আছে। এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে আমি দেশের প্রতিটি মানুষের সহযোগিতা চাই।’

উসকানি পরিহার, ষড়যন্ত্র মোকাবিলায় ধৈর্য

দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে নেতাকর্মীর ধৈর্য ধরার নির্দেশ দিয়ে তারেক রহমান বলেন, আধিপত্যবাদী শক্তির গুপ্তচররা এখনো ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। আমাদের অত্যন্ত শান্ত ও ধীরস্থির থাকতে হবে। কোনো উসকানির মুখে শান্তিশৃঙ্খলা নষ্ট করা যাবে না। বিশেষ করে তরুণদের এই দেশ গড়ার দায়িত্ব নিতে হবে।

উপস্থিত জনতাকে হাত নেড়ে অভিনন্দন জানান তারেক রহমান। ছবি: সংগৃহীত
উপস্থিত জনতাকে হাত নেড়ে অভিনন্দন জানান তারেক রহমান। ছবি: সংগৃহীত

তারেক রহমান বলেন, আমরা যে দল ও ধর্মের হই না কেন, যেকোনো মূল্যে শান্তিশৃঙ্খলা ধরে রাখতে হবে। যেকোনো মূল্যে নিরাপত্তা ধরে রাখতে হবে। সব বয়সী ও ধর্মের মানুষ যাতে নিরাপদ থাকে, সে প্রতিজ্ঞা করতে হবে। আসুন প্রতিজ্ঞা করি– সবাই মিলে করব কাজ। গড়ব আমরা বাংলাদেশ। যেকোনো উসকানির মুখে শান্ত থাকতে হবে। এ সময় তিনি সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

একাত্তর ও চব্বিশের চেতনার সেতুবন্ধন

তারেক রহমান বক্তব্যের শুরুতে ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধ, ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বরের সিপাহি-জনতার বিপ্লব এবং নব্বইয়ের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের কথা স্মরণ করেন। তিনি ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানকে স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের অনুসঙ্গ উল্লেখ করে বলেন, ‘৭১ এ দেশের মানুষ যেমন স্বাধীনতা অর্জন করেছিল ২০২৪ সালে তেমন সর্বস্তরের মানুষ, সবাই মিলে এ দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে রক্ষা করেছিল। আজ বাংলাদেশের মানুষ কথা বলার অধিকার ফিরে পেতে চায়। তারা তাদের গণতন্ত্রের অধিকার ফিরে পেতে চায়। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতা, কৃষক-শ্রমিক ও সাধারণ মানুষ ঐক্যবদ্ধ হয়ে দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা করেছে।

তারেক রহমান সন্ত্রাসীদের গুলিতে শহীদ ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদি এবং বিগত সাড়ে ১৫ বছরে শেখ হাসিনার কর্তৃত্ববাদী শাসনামলে গুম-খুনের শিকার সবার রক্তের ঋণ শোধ করার আহ্বান জানান।

আল্লাহর সাহায্য কামনা, ন্যায়পরায়ণের শাসন

আগামী দিনে দেশ পরিচালনার দায়িত্ব পেলে মহানবী হযরত মুহাম্মদের (সা.) প্রদর্শিত ন্যায়পরায়ণতার আলোকে রাষ্ট্র পরিচালনা করার প্রতিজ্ঞা করেন তারেক রহমান। তিনি বলেন, আসুন আমরা আল্লাহর কাছে হাত তুলে দোয়া করি– হে সর্বশক্তিমান, সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী, আপনি আপমাদের সাহায্য করুন। আপনি রহমত করলে আমরা জনগণের প্রত্যাশিত বাংলাদেশ গড়তে সক্ষম হব। আমরা পরিশ্রম ও ঐক্যের মাধ্যমে শহীদদের প্রত্যাশিত বাংলাদেশ গড়ে তুলব, ইনশাআল্লাহ।

বক্তব্যে তারেক রহমান মা বিএনপির চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার সুস্থতার জন্য সবার কাছে দোয়া চান।

তিনি বলেন, এখান থেকে আমি মায়ের কাছে যাব। যিনি এদেশের মাটি ও মানুষকে নিজের জীবনের চেয়ে বেশি ভালোবেসেছেন। সন্তান হিসেবে আমি আপনাদের কাছে দোয়া চাই– তিনি (খালেদা জিয়া) যেন সম্পূর্ণ সুস্থ হতে পারেন।

রাজধানীর ৩০০ ফিটে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে তারেক রহমান। ছবি: সংগৃহীত
রাজধানীর ৩০০ ফিটে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে তারেক রহমান। ছবি: সংগৃহীত

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, সন্তান হিসেবে আমার মন মায়ের শয্যাপাশে পড়ে রয়েছে। কিন্তু আপনারা যারা গণতন্ত্রের জন্য নিবেদিত। তাদের ফেলে আমি হাসপাতালে যেতে পারি না। আপনাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাতেই আমি আগে এখানে এসেছি।

নিরাপদ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক বাংলাদেশ

তারেক রহমান বক্তৃতায় একটি নিরাপদ বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন তুলে ধরেন। তিনি বলেন, আমরা এমন একটি দেশ গড়তে চাই যেখানে একজন মা তাঁর সন্তানের নিরাপত্তা নিয়ে নিশ্চিত থাকবেন। হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান কিংবা পাহাড়-সমতলের মানুষ– সবাই সমান অধিকারে বসবাস করবেন। নারী, শিশু, প্রতিবন্ধী এবং চার কোটির বেশি তরুণ প্রজন্মের কর্মসংস্থান ও মর্যাদা নিশ্চিত করাই আমাদের লক্ষ্য।

তরুণ প্রজন্মই আগামীতে দেশ গড়ে তুলবে উল্লেখ করে তারেক রহমান গণতান্ত্রিক, শক্তিশালী অর্থনৈতিক ভিত্তির ওপর দেশকে গড়ে তোলার ওপর জোর দেন। তিনি পরপর তিনবার বলেন আমরা দেশের শান্তি চাই।

মঞ্চে উপস্থিত বিভিন্ন দলের নেতা ও বাইরে থাকা নেতাদের উদ্দেশে তারেক রহমান স্পষ্ট করে দেন, তাঁর পরিকল্পনা কেবল ক্ষমতার জন্য নয়। দেশের গণমানুষের অর্থনৈতিক ও গণতান্ত্রিক মুক্তির জন্য।

তারেক রহমান বলেন, এখানে যারা আছেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা; বাইরেও যারা আছেন, আমরা সবাই মিলে নিরাপদ বাংলাদেশ গড়ে তুলব।

Ad 300x250

সম্পর্কিত