leadT1ad

ক্ষুব্ধ মিত্রদের সঙ্গে আলাদা বৈঠক বিএনপির, আসন সমঝোতা অধরা

স্ট্রিম প্রতিবেদক
স্ট্রিম প্রতিবেদক
ঢাকা

প্রকাশ : ১৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৩: ১১
স্ট্রিম গ্রাফিক

যুগপৎ আন্দোলনের সঙ্গীদের সঙ্গে পৃথকভাবে বসেও আসন সমঝোতায় পৌঁছাতে পারেনি বিএনপি। এ বিষয়ে ক্ষুব্ধ মিত্রদের কাছে আরও দুই-তিন দিন সময় চেয়েছে দলটি। ক্ষোভ প্রশমন ও আসন সমঝোতায় অগ্রগতি বিষয়ে বৈঠকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সঙ্গে রয়েছেন স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু।

গতকাল বুধবার (১৭ ডিসেম্বর) গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে যুগপৎ আন্দোলনের সঙ্গী ১২ দলীয় জোট এবং জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটের সঙ্গে বৈঠক হয়। আজ বৃহস্পতিবার বৈঠক করে গণতন্ত্র মঞ্চের পাঁচটি শরিক দল ছাড়াও গণফোরাম এবং এলডিপি। আগামীকাল শুক্রবার গণঅধিকার পরিষদসহ অন্যদের সঙ্গে বৈঠকের কথা রয়েছে।

বিএনপি ও তার মিত্র দলগুলোর নেতারা জানিয়েছেন, আজ অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন গণফোরামের সঙ্গে বৈঠক করেন বিএনপির তিন প্রতিনিধি। বৈঠকে গণফোরাম ছয়টি আসন চাইলেও বিএনপি কোনো উত্তর দেয়নি। ফলে বৈঠক অনেকটা অসন্তোষ নিয়ে শেষ হয়। অবশ্য বিএনপির পক্ষ থেকে দলটির নেতাদের আশ্বাস দেওয়া হয়েছে, মিত্রদের মধ্যে যাদের আসন ছাড় দেওয়া সম্ভব হবে না, তাদের সংসদের উচ্চকক্ষ এবং নির্বাচনের পরে গঠিত জাতীয় সরকারে জায়গা দেওয়া হবে।

  • আসন না দিলে মূল্যায়ন উচ্চকক্ষ ও জাতীয় সরকারে
  • ১২ দলীয় জোট ও জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটকে দুটি আসনে ছাড়
  • গণতন্ত্র মঞ্চের দুটি আসন নিশ্চিত, বাড়তে পারে আরেকটি
  • ২০ ডিসেম্বর হতে পারে মিত্রদের আসনের চূড়ান্ত ঘোষণা

গণফোরামের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সুব্রত চৌধুরী বলেছেন, আমরা ছয়টি আসন চেয়েছি। কিন্তু তারা এখন পর্যন্ত একটিও নিশ্চিত করেনি। আগের মতোই বলেছে– ‘আমরা দেখছি, দেখব। আমরা তো একসঙ্গেই রয়েছি’। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিএনপির পক্ষ থেকে যারা আসন ছাড় পাবে না, তাদের সংসদের উচ্চকক্ষ ও নির্বাচনের পরে জাতীয় সরকারে রাখার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। আমরা আরেকটু সময় নিচ্ছি, দেখি কি হয়। কিন্তু আমরা রাজনৈতিক দল, অবশ্যই নির্বাচন করব।

গণফোরামের পরে গণতন্ত্র মঞ্চের শরিক– নাগরিক ঐক্য, বিপ্লবী ওয়াকার্স পার্টি, গণসংতি আন্দোলন, জেএসডি ও ভাসানী জনশক্তি পার্টির শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে পৃথকভাবে বৈঠক করে বিএনপি। গণতন্ত্র মঞ্চের নেতারা বলছেন, বৈঠকে একসঙ্গে আন্দোলনের স্মৃতিচারণ করে ভবিষ্যতেও ঐক্যবদ্ধভাবে চলার প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছেন বিএনপির প্রতিনিধিরা। মিত্ররা কোথায়, কোন আসন চায়, তা জেনেছেন তারা। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে আলোচনা করে আগামী দুই-তিন দিনের বিষয়টি সমাধানের কথা জানানো হয়েছে।

জেএসডির সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন তাঁর জন্য ফেনী-৩ আসন চেয়েছেন। এখানে বিএনপি দলের ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টুকে প্রার্থী করেছে। শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন বলেন, ‘বৈঠকে বিএনপির কাছে লক্ষ্মীপুর-৪, ফেনী-৩সহ ৬-৭টি আসন চেয়েছি। তারা কোনো সিদ্ধান্ত জানায়নি।’

ঢাকা-৮ আসন চেয়েছেন বিপ্লবী ওয়ার্কাস পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক। এখানে বিএনপির প্রার্থী দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস। সাইফুল হক জানান, আলোচনায় ছয়টি আসন চাওয়া হয়েছে। ঢাকা-৮ আসন সম্ভব না হলে ঢাকা-১২ দিলেও আমরা ইতিবাচক সাড়া দেব। অবশ্য এই আসনে বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য সাইফুল ইসলাম নীরব দলীয় প্রার্থী হয়েছেন।

গণসংতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৬ আসনে নির্বাচন করবেন। বিএনপি এখানে কোনো প্রার্থী দেয়নি। জোনায়েদ সাকি বলেন, আজ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। বিএনপি ২-৩ দিনের মধ্যে নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানাবে।

ভাসানী জনশক্তি পার্টির চেয়ারম্যান শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু জামালপুর-৫ আসন চেয়েছেন। এখানে বিএনপি দলের নির্বাহী কমিটির সহসাংগঠনিক সম্পাদক শাহ মো. ওয়ারেছ আলী মামুনকে প্রার্থী করেছে। সূত্রের দাবি, ভাসানী জনশক্তিকে কোনো আসন দেবে না বিএনপি। তবে সংসদের উচ্চকক্ষ ও জাতীয় সরকার গঠন করলে, সেখানে তাদের মূল্যায়ন করবে।

শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু বলেন, আসন ছাড়ের বিষয়ে আলোচনা হলেও বিএনপি চূড়ান্ত কিছু জানায়নি। তারা অতীতের মতো ঐক্যবদ্ধ এবং একসঙ্গে সরকার গঠন করতে চায়।

নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বগুড়া-২ আসনে নির্বাচন করছেন। বিএনপি এখানে কোনো প্রার্থী দেয়নি। মান্না বলেছেন, ‘বৈঠকে আসন নিয়ে আলোচনা হলেও কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।’ নাগরিক ঐক্যের এক নেতা বলেছেন, বৈঠকে বিএনপি শুধু বগুড়া-২ আসন ছাড়ের কথা জানায়। তখন মান্না ভাই ২০১৮ সালের নির্বাচনে পাঁচটি আসন ছাড়ের উদাহরণ টেনে বলেন– ‘এখন একটি হলে, আমরা এগিয়ে গেলাম নাকি পিছিয়ে?’ জবাবে বিএনপি নেতারা কিছু বলেননি।

এর আগে গতকাল বুধবার (১৭ ডিসেম্বর) ১২ দলীয় জোট ও জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটের সঙ্গে বৈঠক করেন বিএনপি মহাসচিবসহ তিন নেতা। বৈঠকে অংশ নেওয়া ১২ দলীয় জোটের একটি দলের শীর্ষ নেতা বলেন, এটাকে বৈঠক না বলে নাস্তা খেতে গেছি বলাই ভালো। কোনো আলোচনা হয়নি। আমাদের ডেকেছে, আমরা গিয়েছি। কয়েক রকমের নাস্তা দিয়েছে, খেয়েছি। তিনি আরো বলেন, বিএনপির মহাসচিবের কথা থেকে যতটুকু বুঝেছি, ১২ দলীয় জোট থেকে শুধু জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) চেয়ারম্যান মোস্তাফা জামাল হায়দারের জন্য পিরোজপুর-১ আসনে ছাড় দেওয়া হবে।

মোস্তাফা জামাল হায়দার বলেন, এখন পর্যন্ত আমাকে পিরোজপুর-১ আসনে ছাড় দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে বিএনপি। তবে আমরা ১২ দলীয় জোটের পক্ষ থেকে আরো দুটি আসন চেয়েছি। আশা করি, তারা জোটের জাতীয়তাবাদী দলের চেয়ারম্যান সৈয়দ এহসানুল হুদ ও জাতীয় পার্টির মহাসচিব আহসান হাবীব লিংকনের কথা বিবেচনা করবে।

জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটের নেতারা জানিয়েছেন, তাদের জোটের সমন্বয়ক ও এনপিপি চেয়ারম্যান ফরিদুজ্জামান ফরহাদকে আসন দেওয়ার ব্যাপারে নিশ্চিত করেছে বিএনপির হাইকমান্ড। তাঁকে নড়াইল-২ আসনে ছাড় দেওয়া হবে। বাকিদের উচ্চকক্ষে ও জাতীয় সরকারে মূল্যায়ন করার কথা জানিয়েছে।

ফরিদুজ্জামান ফরহাদ বলেন, ‘আমার আসন নিশ্চিত করেছে। এর বাইরে যাদের সিট দেওয়া সম্ভব হবে না, তাদের অন্যভাবে মূল্যায়ন করার আশ্বাস দিয়েছে বিএনপি।’

গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খাঁন জানান, শুক্রবার বিএনপির সঙ্গে তাদের বৈঠক। তারা বিএনপির কাছে ২৫টি আসন চেয়েছেন।

বিএনপি সূত্র জানায়, যুগপৎ আন্দোলনের সঙ্গীদের যেসব আসন দেওয়া হবে, তা আগামী ২০ ডিসেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করা হতে পারে। জয়ী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে– এমন প্রার্থীদের জন্য আসন ছাড় দেওয়া হবে। অন্যদের বিকল্পভাবে মূল্যায়ন করবে।

এ ব্যাপারে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, শরিকদের সঙ্গে বিএনপির বৈঠকে আসন বণ্টন নিয়ে আলোচনা হয়েছে। সবাই যার যার কথা বলেছেন। আমরা শুনেছি। শিগগির চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানানো হবে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ আজ সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে থাকা মিত্র রাজনৈতিক দলের সঙ্গে শুক্রবার তাদের আসন ভাগাভাগি চূড়ান্ত হবে। চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ে দলীয় মনোনীত ১০০ প্রার্থীর সঙ্গে মতবিনিময় শেষে একথা জানান তিনি।

Ad 300x250

সম্পর্কিত