সালেহ ফুয়াদ

আফগানিস্তানে তালেবানের শীর্ষস্থানীয় নেতা মোল্লা নুর আহমদ নুর ঢাকায়। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ফার্স্ট পলিটিক্যাল ডিভিশনের এই মহাপরিচালক মোল্লা জাওয়ান্দি নামে পরিচিত। এক সপ্তাহ ধরে তিনি ঢাকা ও আশেপাশের বিভিন্ন মাদ্রাসা সফর করছেন, অংশ নিচ্ছেন নানা কর্মসূচিতে।
পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটসহ বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, মোল্লা জাওয়ান্দির সফর সম্পর্কে তাদের আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হয়নি। তবে জাওয়ান্দির কার্যক্রমের ওপর সার্বক্ষণিক নজর রাখছেন তারা। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারাও জানান, সরকারকে জানিয়ে মোল্লা জাওয়ান্দি বাংলাদেশে এসেছেন– এমন তথ্য মন্ত্রণালয়ের কাছে নেই। যোগাযোগ করলে বাংলাদেশের আফগান দূতাবাসও সুনির্দিষ্ট তথ্য দিতে পারেনি।
তালেবান সরকারের এশিয়াবিষয়ক নীতিনির্ধারণে মোল্লা জাওয়ান্দিকে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি বলে মনে করা হয়। সূত্রের দাবি, বাংলাদেশে ‘বিশেষ সফরে’ তিনি খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা মামুনুল হকসহ ঢাকার কয়েকজন রাজনীতিক ও শিক্ষাবিদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। তাঁকে ঘিরে নিষিদ্ধঘোষিত হরকাতুল জিহাদের সন্দেহভাজন একাধিক শীর্ষনেতাকেও দেখা গেছে।
গত ১২ ডিসেম্বর রাজধানীতে ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদিকে গুলি করে সন্ত্রাসীরা। ১৮ ডিসেম্বর সিঙ্গাপুরের হাসপাতালে তাঁর মৃত্যু হয়। এ হত্যাকাণ্ড ঘিরে আন্দোলনমুখর দেশ। নাজুক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির মধ্যে মোল্লা জাওয়ান্দির সফর নিয়ে নিরাপত্তা ঝুঁকির কথা জানিয়েছেন বিশ্লেষক ও কূটনীতিকরা।
মোল্লা জাওয়ান্দির বিষয়ে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন, পররাষ্ট্র সচিব আসাদ আলম সিয়াম ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র এস এম মাহবুবুল আলমকে একাধিকবার কল দিলেও তাঁরা সাড়া দেননি। তবে পররাষ্ট্র উপদেষ্টার দপ্তরের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা স্ট্রিমকে জানিয়েছেন, আফগানিস্তান থেকে কারও সফর সম্পর্কে তাদের কাছে কোনো তথ্য নেই। সফরের ক্ষেত্রে বিদেশি কর্মকর্তারা সাধারণত দুই থেকে তিন সপ্তাহ আগে সৌজন্য সাক্ষাতের অনুরোধ জানান। কিন্তু মোল্লা জাওয়ান্দির বিষয়ে কোনো হালনাগাদ তথ্য নেই।
বাংলাদেশের আফগান দূতাবাসের জনসংযোগ কর্মকর্তা আফনানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি এ ব্যাপারে তথ্য দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন।
নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার সাড়ে ১৫ বছরের কর্তৃত্ববাদী শাসনের পতন ঘটে। পালিয়ে শেখ হাসিনা প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতে অবস্থানের পর থেকে দেশটির সঙ্গে বাংলাদেশের কূটনৈতিক সম্পর্কের টানাপড়েন চলছে। বিপরীতে পাকিস্তানের সঙ্গে বেড়েছে সম্পর্কের পরিসর। সম্প্রতি ময়মনসিংহের ভালুকায় হিন্দু যুবককে পিটিয়ে হত্যার ঘটনাকে কেন্দ্র করে দিল্লি, শিলিগুড়ি, আগরতলা ও গুয়াহাটির বাংলাদেশ হাইকমিশন হিন্দুত্ববাদীদের হাতে আক্রান্ত হয় এবং কনস্যুলার কার্যালয়ে ভিসা কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। এ নিয়ে উভয় দেশ হাইকমিশনারকে তলব করে নিন্দা ও প্রতিবাদে ঢাকা-দিল্লির সম্পর্ক তলানিতে পৌঁছেছে।
অন্যদিকে এখন পাকিস্তানের সঙ্গে আফগানিস্তানের সম্পর্ক স্মরণকালের সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় রয়েছে। সীমান্তে প্রায়ই রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে লিপ্ত হচ্ছে দুই দেশের সেনাবাহিনী। বিপরীতে ভারতের সঙ্গে সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বিরাজ করছে আফগান তালেবানের। তাদের শীর্ষস্থানীয় নেতারা অবাধে দিল্লি সফরে রাষ্ট্রীয় প্রটোকল পাচ্ছেন।
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের অন্যতম নেতা ওসমান হাদির খুনিদের এখনো আইনের আওতায় আনতে পারেনি সরকার। ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনও আসন্ন। তফসিলের পর ভোট ঘিরে রাজনৈতিক পরিস্থিতি ক্ষণে ক্ষণে পরিবর্তন হচ্ছে।
এমন সময়ে মোল্লা জাওয়ান্দির সফর নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন দক্ষিণ এশিয়ার রাজনীতি ও কূটনীতি বিশ্লেষক আলতাফ পারভেজ। স্ট্রিমকে তিনি বলেছেন, যখন সবাই শান্তিপূর্ণ নির্বাচন চাচ্ছে এবং সহিংসতামুক্ত ভবিষ্যতের জন্য আকুল, সেই সময় এ ধরনের ব্যক্তির বাংলাদেশে আসা, অবাধে বিভিন্ন স্থানে বৈঠক করা, কারা অনুমতি দিল, কেন দিল, এটা এই মুহূর্তে জরুরি বিষয় কিনা, সেগুলো নিয়ে তো যথেষ্ট প্রশ্ন রয়েছে।
প্রশ্ন রেখে আলতাফ পারভেজ বলেন, ‘বাংলাদেশের বিদেশনীতিতে কেন নির্বাচনী ডামাডোলের মধ্যে আফগানিস্তান এবং তাদের প্রতিনিধিদের আসা-যাওয়াটা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠল? যেখানে আফগানিস্তানের সঙ্গে রাশিয়া ছাড়া কারও প্রায় পররাষ্ট্র সম্পর্কই নাই, সেখানে এদেশে তারা বিভিন্ন রাজনীতিবিদদের সঙ্গে বৈঠক ও সভা-সমাবেশ করছেন। এটি উদ্বিগ্ন হওয়ার মতো বিষয় আমি বলব।’
তিনি বলেন, ‘আফগান তালেবান সরকারের সঙ্গে পাকিস্তানের যুদ্ধ চলছে। আবার আফগানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বা বিভিন্ন মন্ত্রীর ভারত সফর ঘিরে পাকিস্তান-ভারত সম্পর্ক উত্তপ্ত। সেই সময় বাংলাদেশ আবার ভারতের বন্ধু আফগান মন্ত্রীদের আসতে দিচ্ছে। এটা তো বাংলাদেশ-পাকিস্তান সম্পর্ককেও প্রভাবিত করবে বলে মনে করি।’
জ্যেষ্ঠ এই কূটনৈতিক বিশ্লেষক আরও বলেন, ‘বাংলাদেশ কি ভেবেচিন্তে এসব জটিলতায় ঢুকছে, না এগুলো কোনো পরিকল্পিত ব্যাপার, তাও বড় প্রশ্ন। আবার আফগানিস্তানের এই সরকার নিয়ে বিশ্বের শক্তিধর যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের এক ধরনের অবস্থান রয়েছে। তারা বাংলাদেশের এই মুভকে কীভাবে দেখবে, তাও বিরাট প্রশ্ন।’
ঘুরছেন মাদ্রাসা থেকে মাদ্রাসা
গত ২১ ডিসেম্বর রাত ১১টা ৪৫ মিনিটে মোল্লা জাওয়ান্দি এমিরেটস এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করেন। সেখানে তাঁকে স্বাগত জানান বাংলাদেশ-আফগানিস্তান চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের (বিএসিসিআই) চেয়ারম্যান আবু সায়েম খালেদ।
সফরে বেশ কয়েকটি কওমি মাদ্রাসা সফর করেছেন মোল্লা জাওয়ান্দি। এর মধ্যে আবু সায়েম খালেদের নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার জামিয়া কারামিয়া মাদ্রাসা, রাজধানীর ফরিদাবাদ মাদ্রাসা, মোহাম্মদপুরের জামিয়া রাহমানিয়া আরাবিয়া মাদ্রাসাও রয়েছে।
গত ২৫ ডিসেম্বর মোহাম্মদপুরের জামিয়া রাহমানিয়া আরাবিয়া মাদ্রাসার শিক্ষক ও বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা মামুনুল হকের সঙ্গে বৈঠক করেন মোল্লা জাওয়ান্দি। সেখানে উপস্থিত ছিলেন মাদ্রাসাটির আরেক শিক্ষক ও কওমি মাদ্রাসা শিক্ষাবোর্ড বেফাকের মহাসচিব মাওলানা মাহফুজুল হক।

বৈঠকের ব্যাপারে স্ট্রিমকে মাহফুজুল হক জানান, পূর্বনির্ধারিত কোনো বৈঠক ছিল না। মোল্লা জাওয়ান্দি যে বাংলাদেশে, তাও জানতেন না। তালেবান নেতা মূলত এসেছিলেন তাঁর ছোট ভাই মাওলানা মামুনুল হকের সঙ্গে কথা বলতে। ঘটনাচক্রে উপস্থিত থাকায় মাহফুজুল হকও শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।
মাহফুজুল হক বলেন, ‘এসব বিষয়ে যত কম কথা বলা যায়, ততই ভালো।’ এ ব্যাপারে একাধিকবার কল দিয়েও মামুনুল হক রিসিভ করেননি। বার্তা পাঠালেও সাড়া দেননি তিনি।
গত সেপ্টেম্বরে আফগানিস্তান সফর করে এসেছেন মামুনুল হকসহ বাংলাদেশের সাত আলেম। দেশে ফিরে সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে মামুনুল হক জানান, সফরে আফগান পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোল্লা আমির খান মুত্তাকির সঙ্গে তাঁর দীর্ঘ আলোচনা হয়েছে। আমির খান মুত্তাকি তাদের জানিয়েছেন– ‘তালেবান সরকারের ৪১টি দেশের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক তৈরি হয়েছে। এর মধ্যে ভারত-পাকিস্তান থাকলেও বাংলাদেশ নেই।’ বাংলাদেশে কূটনৈতিক সম্পর্ক তৈরির জন্য আমির খান মুত্তাকি তাঁকে কাজ করতে অনুরোধ করেছেন বলেও জানান মামুনুল হক।
মামুনুল হকসহ সাত আলেম পবিত্র ওমরাহ পালন শেষে দুবাই হয়ে কাবুল গিয়েছিলেন। আবার দুবাই হয়ে তারা বাংলাদেশে আসেন। দুবাই থেকে আফগানিস্তানে যাওয়ার জন্য দেশটির সরকার তাদের বিশেষ ভিসার ব্যবস্থা করে। এজন্য কারও পাসপোর্টে কোনো সিল পড়েনি। এ কারণে ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষের কিছু বলার ছিল না বলেও সাক্ষাৎকারে দাবি করেছিলেন মামুনুল হক।

জাওয়ান্দির সফর ও একজন আবু সায়েম খালেদ
আবু সায়েম খালেদের বিএসিসিআইর সঙ্গে শুরুর পরিকল্পনায় ছিলেন– এমন একজন স্ট্রিমকে জানিয়েছেন, মাসছয়েক আগে সদলবলে আফগানিস্তান ঘুরে এসেছেন আবু সায়েম খালেদ। বাংলাদেশ থেকে দুবাই হয়ে আফগানিস্তানে যান তাঁর নেতৃত্বে পাঁচজন।
সূত্র জানায়, সফরে আফগানিস্তানে উচ্চ পর্যায়ের তালেবান নেতাদের সঙ্গে একাধিক বৈঠক করেন আবু সায়েম খালেদরা। সেখান থেকে পাকিস্তান হয়ে সবাই বাংলাদেশে ফেরেন।
সূত্রের দাবি, আবু সায়েম খালেদ বর্তমানে হুজির নারায়ণগঞ্জ জেলা আমির। তবে আমিরের দায়িত্বের কথা অস্বীকার করেছেন তিনি। শনিবার (২৭ ডিসেম্বর) রাতে আবু সায়েম খালেদ স্ট্রিমকে জানান, মোল্লা জাওয়ান্দি এখনো বাংলাদেশে অবস্থান করছেন। গত শুক্রবার (২৬ ডিসেম্বর) নারায়ণগঞ্জে তাঁর মাদ্রাসায় তিনি এসেছিলেন। তবে মোল্লা জাওয়ান্দিকে তিনি আমন্ত্রণ জানিয়ে আনেননি বলে জানান আবু সায়েম খালেদ। তিনি বলেন, ‘মোল্লা জাওয়ান্দি সরকারের মেহমান।’ তবে সরকারের কার মেহমান জানতে চাইলে, তা বলতে রাজি হননি আবু সায়েম খালেদ।

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, আবু সায়েম খালেদের নারায়ণগঞ্জের ওই মাদ্রাসায় আগেও বিদেশিরা সফর করেছেন। গত আগস্টে আজাদ কাশ্মীরের তথ্যমন্ত্রী পীর মাযহার সাঈদ শাহ ঘুরে গেছেন।
বিএসিসিআইর দপ্তর হিসেবে রাজধানীর ধোলাইপাড়ের মক্কা টাওয়ারের ঠিকানার উল্লেখ রয়েছে। জানা যায়, এই টাওয়ারের মালিক আবু সায়েম খালেদ নিজেই। ‘৩৬নিউজ২৪’ নামের একটি অনলাইন নিউজ পোর্টালের প্রকাশকও তিনি। ফতুল্লার জামিয়া কারামিয়া মাদ্রাসার এই পরিচালকের ‘আসকান ডেভেলপমেন্টস লিমিটেড’ নামে রয়েছে আবাসন ব্যবসা।
রাজধানীতে সমাবেশ ঘিরে নানা প্রশ্ন
শনিবার (২৭ ডিসেম্বর) সকাল ৯টায় রাজধানীর ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে একটি সমাবেশ আয়োজন করে আবু সায়েম খালেদের প্রতিষ্ঠান বিএসিসিআই। ‘ব্লুপ্রিন্ট অব দ্য ইসলামিক এমিরেট’ শীর্ষক সমাবেশে মোল্লা জাওয়ান্দির উপস্থিত থাকার কথা থাকলেও, শেষ পর্যন্ত তিনি আসেননি।
সমাবেশ সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, আয়োজক হিসেবে ব্যবসায়ী সংগঠনের নাম থাকলেও সমাবেশে যাদের দেখা গেছে, তারা হুজির কার্যক্রমে জড়িত। সমাবেশে প্রতিষ্ঠিত কোনো ব্যবসায়ীকে দেখা যায়নি। তবে হুজির সাবেক আমির রহমতুল্লাহ ওরফে শেখ ফরিদের ভাইদের দেখা গেছে।

২০১১ সালের এপ্রিলে রহমতুল্লাহ ওরফে শেখ ফরিদকে র্যাব গ্রেপ্তার করে জানিয়েছিল, তিনি হুজির তৎকালীন আমির। র্যাব এও জানিয়েছিল, শেখ ফরিদ একজন আফগান ফেরত মুজাহিদ। তিনি ১৯৯৯ সালে আফগান প্রেসিডেন্ট বোরহান উদ্দিন রাব্বানির সঙ্গে দেখা করে সংগঠনের কর্মকাণ্ড নিয়ে আলোচনা ছাড়াও বাংলাদেশে হুজিকে কীভাবে জোরালো করা যায়– তা নিয়ে আলোচনা করেন। মার্কিন বাহিনীর হাতে নিহত ওসামা বিন লাদেনের সঙ্গেও তাঁর কথা হয়েছিল। তবে তালেবানপ্রধান মোল্লা ওমরের দেখা পাননি শেখ ফরিদ।
নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, শেখ ফরিদের ৯ ভাইয়ের আটজনই হুজির সঙ্গে জড়িত। শনিবার ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটের সমাবেশে শেখ ফরিদের এক ভাইকে দেখা গেছে। রাজধানীসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে সমাবেশে অন্তত ৬৫০ জন অংশ নেন, যাদের অনেকের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার সুনির্দিষ্ট অভিযোগে মামলা রয়েছে।
আবু সায়েম খালেদ স্ট্রিমকে জানিয়েছেন, বাংলাদেশ-আফগানিস্তান চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের চেয়ারম্যান হিসেবে তিনিই সমাবেশের আয়োজক। কর্মসূচিতে মোল্লা জাওয়ান্দির অনুপস্থিত থাকার বিষয়ে আবু সায়েম খালেদ বলেন, ‘উনার ব্যস্ততা থাকতে পারে। কেন আসেননি, তাঁকে জিজ্ঞেস করতে পারিনি।’
সমাবেশে হুজির অনেকে ছিলেন– এমন প্রশ্নে আবু সায়েম খালেদ বলেন, ‘ওপেন প্রোগ্রাম। অনেকে আসতে পারেন।’ ব্যবসায়ীক সংগঠনের সমাবেশে ‘ব্লুপ্রিন্ট অব দ্য ইসলামিক এমিরেট’ শিরোনাম বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমি বুঝতে পারছি, আপনার অনেক সময় লাগবে। ১৫-২০ মিনিট পরে আমিই আপনাকে কল করছি।’ এরপর আধা-ঘণ্টা পরেও আবু সায়েম খালেদ প্রতিবেদককে ফোন করেননি। এমনকি তাঁকে বেশ কয়েকবার কল দিলেও আর ফোন রিসিভ হয়নি।
সমাবেশে আল-মারকাজুল ইসলামীর বিরানি
সমাবেশে বিরিয়ানি সরবরাহ করে আল-মারকাজুল ইসলামী (এএমআই)। সংগঠনটির বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময় এনজিও কার্যক্রমের আড়ালে ‘জঙ্গি অর্থায়নের’ অভিযোগ রয়েছে। ১৯৮৮ সালে এএমআই প্রতিষ্ঠা করেন মুফতি শহিদুল ইসলাম। তাঁর বিরুদ্ধেও হুজির সঙ্গে সম্পর্ক রক্ষার অভিযোগ রয়েছে। বর্তমানে এএমআইয়ের চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলামের ছেলে হামযাহ বিন শহিদুল ইসলাম।

বিরানি সরবরাহের ব্যাপারে হামযাহ বিন শহিদুল ইসলামের নম্বরে কল দিলে রিসিভ করেন প্রতিষ্ঠানটির গেস্ট অ্যাফেয়ার্সের দায়িত্বে থাকা মাসুম বিল্লাহ। মোল্লা জাওয়ান্দির সফর সম্পর্কে অবগত জানিয়ে মাসুম বিল্লাহ বলেন, ‘উনি (মোল্লা জাওয়ান্দি) আসছেন আমি জানি। বিভিন্ন জায়গায় প্রোগ্রাম করছেন তাও জানি। তবে তিনি আমাদের আমন্ত্রণে আসেননি। আরও চার-পাঁচ দিন থাকতে পারেন।’
আল-মারকাজুল ইসলামীর পক্ষ থেকে সমাবেশে ছয় শতাধিক প্যাকেট বিরানি সরবরাহ করা হয়েছে উল্লেখ করে মাসুম বিল্লাহ বলেন, ‘প্রস্তাব আসার পরে বৈঠক করে সিদ্ধান্তের মাধ্যমে খাবার দেওয়া হয়েছে। শুক্রবার (২৬ ডিসেম্বর) রাত সাড়ে ১০টায় এ সিদ্ধান্ত হয়। দ্বীনি মাহফিল হলে অনেক সময় আমরা খাবার সরবরাহ করে থাকি।’
হুজি প্রসঙ্গ আসতেই তিনি বলেন, ‘এসবের অস্তিত্ব আছে বলে আমার কাছে মনে হয় না। আপনারা জানেন, বিগত ১৬ বছরে দেশে কী হয়েছে।’ তবে মাসুম বিল্লাহ এও বলেন, ‘হুজি থেকে থাকলেও, তাদের সঙ্গে আল-মারকাজুল ইসলামীর ন্যূনতম সম্পর্ক নেই।’
এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘শনিবারের সমাবেশের আয়োজক হিসেবে আল-মারকাজুল ইসলামীর সঙ্গে যোগাযোগ করেন আবু সায়েম খালেদ। মোল্লা জাওয়ান্দিকে ২১ ডিসেম্বর বিমানবন্দরে তিনিই স্বাগত জানিয়েছেন।’

আফগানিস্তানে তালেবানের শীর্ষস্থানীয় নেতা মোল্লা নুর আহমদ নুর ঢাকায়। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ফার্স্ট পলিটিক্যাল ডিভিশনের এই মহাপরিচালক মোল্লা জাওয়ান্দি নামে পরিচিত। এক সপ্তাহ ধরে তিনি ঢাকা ও আশেপাশের বিভিন্ন মাদ্রাসা সফর করছেন, অংশ নিচ্ছেন নানা কর্মসূচিতে।
পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটসহ বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, মোল্লা জাওয়ান্দির সফর সম্পর্কে তাদের আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হয়নি। তবে জাওয়ান্দির কার্যক্রমের ওপর সার্বক্ষণিক নজর রাখছেন তারা। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারাও জানান, সরকারকে জানিয়ে মোল্লা জাওয়ান্দি বাংলাদেশে এসেছেন– এমন তথ্য মন্ত্রণালয়ের কাছে নেই। যোগাযোগ করলে বাংলাদেশের আফগান দূতাবাসও সুনির্দিষ্ট তথ্য দিতে পারেনি।
তালেবান সরকারের এশিয়াবিষয়ক নীতিনির্ধারণে মোল্লা জাওয়ান্দিকে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি বলে মনে করা হয়। সূত্রের দাবি, বাংলাদেশে ‘বিশেষ সফরে’ তিনি খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা মামুনুল হকসহ ঢাকার কয়েকজন রাজনীতিক ও শিক্ষাবিদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। তাঁকে ঘিরে নিষিদ্ধঘোষিত হরকাতুল জিহাদের সন্দেহভাজন একাধিক শীর্ষনেতাকেও দেখা গেছে।
গত ১২ ডিসেম্বর রাজধানীতে ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদিকে গুলি করে সন্ত্রাসীরা। ১৮ ডিসেম্বর সিঙ্গাপুরের হাসপাতালে তাঁর মৃত্যু হয়। এ হত্যাকাণ্ড ঘিরে আন্দোলনমুখর দেশ। নাজুক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির মধ্যে মোল্লা জাওয়ান্দির সফর নিয়ে নিরাপত্তা ঝুঁকির কথা জানিয়েছেন বিশ্লেষক ও কূটনীতিকরা।
মোল্লা জাওয়ান্দির বিষয়ে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন, পররাষ্ট্র সচিব আসাদ আলম সিয়াম ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র এস এম মাহবুবুল আলমকে একাধিকবার কল দিলেও তাঁরা সাড়া দেননি। তবে পররাষ্ট্র উপদেষ্টার দপ্তরের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা স্ট্রিমকে জানিয়েছেন, আফগানিস্তান থেকে কারও সফর সম্পর্কে তাদের কাছে কোনো তথ্য নেই। সফরের ক্ষেত্রে বিদেশি কর্মকর্তারা সাধারণত দুই থেকে তিন সপ্তাহ আগে সৌজন্য সাক্ষাতের অনুরোধ জানান। কিন্তু মোল্লা জাওয়ান্দির বিষয়ে কোনো হালনাগাদ তথ্য নেই।
বাংলাদেশের আফগান দূতাবাসের জনসংযোগ কর্মকর্তা আফনানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি এ ব্যাপারে তথ্য দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন।
নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার সাড়ে ১৫ বছরের কর্তৃত্ববাদী শাসনের পতন ঘটে। পালিয়ে শেখ হাসিনা প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতে অবস্থানের পর থেকে দেশটির সঙ্গে বাংলাদেশের কূটনৈতিক সম্পর্কের টানাপড়েন চলছে। বিপরীতে পাকিস্তানের সঙ্গে বেড়েছে সম্পর্কের পরিসর। সম্প্রতি ময়মনসিংহের ভালুকায় হিন্দু যুবককে পিটিয়ে হত্যার ঘটনাকে কেন্দ্র করে দিল্লি, শিলিগুড়ি, আগরতলা ও গুয়াহাটির বাংলাদেশ হাইকমিশন হিন্দুত্ববাদীদের হাতে আক্রান্ত হয় এবং কনস্যুলার কার্যালয়ে ভিসা কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। এ নিয়ে উভয় দেশ হাইকমিশনারকে তলব করে নিন্দা ও প্রতিবাদে ঢাকা-দিল্লির সম্পর্ক তলানিতে পৌঁছেছে।
অন্যদিকে এখন পাকিস্তানের সঙ্গে আফগানিস্তানের সম্পর্ক স্মরণকালের সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় রয়েছে। সীমান্তে প্রায়ই রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে লিপ্ত হচ্ছে দুই দেশের সেনাবাহিনী। বিপরীতে ভারতের সঙ্গে সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বিরাজ করছে আফগান তালেবানের। তাদের শীর্ষস্থানীয় নেতারা অবাধে দিল্লি সফরে রাষ্ট্রীয় প্রটোকল পাচ্ছেন।
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের অন্যতম নেতা ওসমান হাদির খুনিদের এখনো আইনের আওতায় আনতে পারেনি সরকার। ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনও আসন্ন। তফসিলের পর ভোট ঘিরে রাজনৈতিক পরিস্থিতি ক্ষণে ক্ষণে পরিবর্তন হচ্ছে।
এমন সময়ে মোল্লা জাওয়ান্দির সফর নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন দক্ষিণ এশিয়ার রাজনীতি ও কূটনীতি বিশ্লেষক আলতাফ পারভেজ। স্ট্রিমকে তিনি বলেছেন, যখন সবাই শান্তিপূর্ণ নির্বাচন চাচ্ছে এবং সহিংসতামুক্ত ভবিষ্যতের জন্য আকুল, সেই সময় এ ধরনের ব্যক্তির বাংলাদেশে আসা, অবাধে বিভিন্ন স্থানে বৈঠক করা, কারা অনুমতি দিল, কেন দিল, এটা এই মুহূর্তে জরুরি বিষয় কিনা, সেগুলো নিয়ে তো যথেষ্ট প্রশ্ন রয়েছে।
প্রশ্ন রেখে আলতাফ পারভেজ বলেন, ‘বাংলাদেশের বিদেশনীতিতে কেন নির্বাচনী ডামাডোলের মধ্যে আফগানিস্তান এবং তাদের প্রতিনিধিদের আসা-যাওয়াটা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠল? যেখানে আফগানিস্তানের সঙ্গে রাশিয়া ছাড়া কারও প্রায় পররাষ্ট্র সম্পর্কই নাই, সেখানে এদেশে তারা বিভিন্ন রাজনীতিবিদদের সঙ্গে বৈঠক ও সভা-সমাবেশ করছেন। এটি উদ্বিগ্ন হওয়ার মতো বিষয় আমি বলব।’
তিনি বলেন, ‘আফগান তালেবান সরকারের সঙ্গে পাকিস্তানের যুদ্ধ চলছে। আবার আফগানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বা বিভিন্ন মন্ত্রীর ভারত সফর ঘিরে পাকিস্তান-ভারত সম্পর্ক উত্তপ্ত। সেই সময় বাংলাদেশ আবার ভারতের বন্ধু আফগান মন্ত্রীদের আসতে দিচ্ছে। এটা তো বাংলাদেশ-পাকিস্তান সম্পর্ককেও প্রভাবিত করবে বলে মনে করি।’
জ্যেষ্ঠ এই কূটনৈতিক বিশ্লেষক আরও বলেন, ‘বাংলাদেশ কি ভেবেচিন্তে এসব জটিলতায় ঢুকছে, না এগুলো কোনো পরিকল্পিত ব্যাপার, তাও বড় প্রশ্ন। আবার আফগানিস্তানের এই সরকার নিয়ে বিশ্বের শক্তিধর যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের এক ধরনের অবস্থান রয়েছে। তারা বাংলাদেশের এই মুভকে কীভাবে দেখবে, তাও বিরাট প্রশ্ন।’
ঘুরছেন মাদ্রাসা থেকে মাদ্রাসা
গত ২১ ডিসেম্বর রাত ১১টা ৪৫ মিনিটে মোল্লা জাওয়ান্দি এমিরেটস এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করেন। সেখানে তাঁকে স্বাগত জানান বাংলাদেশ-আফগানিস্তান চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের (বিএসিসিআই) চেয়ারম্যান আবু সায়েম খালেদ।
সফরে বেশ কয়েকটি কওমি মাদ্রাসা সফর করেছেন মোল্লা জাওয়ান্দি। এর মধ্যে আবু সায়েম খালেদের নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার জামিয়া কারামিয়া মাদ্রাসা, রাজধানীর ফরিদাবাদ মাদ্রাসা, মোহাম্মদপুরের জামিয়া রাহমানিয়া আরাবিয়া মাদ্রাসাও রয়েছে।
গত ২৫ ডিসেম্বর মোহাম্মদপুরের জামিয়া রাহমানিয়া আরাবিয়া মাদ্রাসার শিক্ষক ও বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা মামুনুল হকের সঙ্গে বৈঠক করেন মোল্লা জাওয়ান্দি। সেখানে উপস্থিত ছিলেন মাদ্রাসাটির আরেক শিক্ষক ও কওমি মাদ্রাসা শিক্ষাবোর্ড বেফাকের মহাসচিব মাওলানা মাহফুজুল হক।

বৈঠকের ব্যাপারে স্ট্রিমকে মাহফুজুল হক জানান, পূর্বনির্ধারিত কোনো বৈঠক ছিল না। মোল্লা জাওয়ান্দি যে বাংলাদেশে, তাও জানতেন না। তালেবান নেতা মূলত এসেছিলেন তাঁর ছোট ভাই মাওলানা মামুনুল হকের সঙ্গে কথা বলতে। ঘটনাচক্রে উপস্থিত থাকায় মাহফুজুল হকও শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।
মাহফুজুল হক বলেন, ‘এসব বিষয়ে যত কম কথা বলা যায়, ততই ভালো।’ এ ব্যাপারে একাধিকবার কল দিয়েও মামুনুল হক রিসিভ করেননি। বার্তা পাঠালেও সাড়া দেননি তিনি।
গত সেপ্টেম্বরে আফগানিস্তান সফর করে এসেছেন মামুনুল হকসহ বাংলাদেশের সাত আলেম। দেশে ফিরে সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে মামুনুল হক জানান, সফরে আফগান পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোল্লা আমির খান মুত্তাকির সঙ্গে তাঁর দীর্ঘ আলোচনা হয়েছে। আমির খান মুত্তাকি তাদের জানিয়েছেন– ‘তালেবান সরকারের ৪১টি দেশের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক তৈরি হয়েছে। এর মধ্যে ভারত-পাকিস্তান থাকলেও বাংলাদেশ নেই।’ বাংলাদেশে কূটনৈতিক সম্পর্ক তৈরির জন্য আমির খান মুত্তাকি তাঁকে কাজ করতে অনুরোধ করেছেন বলেও জানান মামুনুল হক।
মামুনুল হকসহ সাত আলেম পবিত্র ওমরাহ পালন শেষে দুবাই হয়ে কাবুল গিয়েছিলেন। আবার দুবাই হয়ে তারা বাংলাদেশে আসেন। দুবাই থেকে আফগানিস্তানে যাওয়ার জন্য দেশটির সরকার তাদের বিশেষ ভিসার ব্যবস্থা করে। এজন্য কারও পাসপোর্টে কোনো সিল পড়েনি। এ কারণে ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষের কিছু বলার ছিল না বলেও সাক্ষাৎকারে দাবি করেছিলেন মামুনুল হক।

জাওয়ান্দির সফর ও একজন আবু সায়েম খালেদ
আবু সায়েম খালেদের বিএসিসিআইর সঙ্গে শুরুর পরিকল্পনায় ছিলেন– এমন একজন স্ট্রিমকে জানিয়েছেন, মাসছয়েক আগে সদলবলে আফগানিস্তান ঘুরে এসেছেন আবু সায়েম খালেদ। বাংলাদেশ থেকে দুবাই হয়ে আফগানিস্তানে যান তাঁর নেতৃত্বে পাঁচজন।
সূত্র জানায়, সফরে আফগানিস্তানে উচ্চ পর্যায়ের তালেবান নেতাদের সঙ্গে একাধিক বৈঠক করেন আবু সায়েম খালেদরা। সেখান থেকে পাকিস্তান হয়ে সবাই বাংলাদেশে ফেরেন।
সূত্রের দাবি, আবু সায়েম খালেদ বর্তমানে হুজির নারায়ণগঞ্জ জেলা আমির। তবে আমিরের দায়িত্বের কথা অস্বীকার করেছেন তিনি। শনিবার (২৭ ডিসেম্বর) রাতে আবু সায়েম খালেদ স্ট্রিমকে জানান, মোল্লা জাওয়ান্দি এখনো বাংলাদেশে অবস্থান করছেন। গত শুক্রবার (২৬ ডিসেম্বর) নারায়ণগঞ্জে তাঁর মাদ্রাসায় তিনি এসেছিলেন। তবে মোল্লা জাওয়ান্দিকে তিনি আমন্ত্রণ জানিয়ে আনেননি বলে জানান আবু সায়েম খালেদ। তিনি বলেন, ‘মোল্লা জাওয়ান্দি সরকারের মেহমান।’ তবে সরকারের কার মেহমান জানতে চাইলে, তা বলতে রাজি হননি আবু সায়েম খালেদ।

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, আবু সায়েম খালেদের নারায়ণগঞ্জের ওই মাদ্রাসায় আগেও বিদেশিরা সফর করেছেন। গত আগস্টে আজাদ কাশ্মীরের তথ্যমন্ত্রী পীর মাযহার সাঈদ শাহ ঘুরে গেছেন।
বিএসিসিআইর দপ্তর হিসেবে রাজধানীর ধোলাইপাড়ের মক্কা টাওয়ারের ঠিকানার উল্লেখ রয়েছে। জানা যায়, এই টাওয়ারের মালিক আবু সায়েম খালেদ নিজেই। ‘৩৬নিউজ২৪’ নামের একটি অনলাইন নিউজ পোর্টালের প্রকাশকও তিনি। ফতুল্লার জামিয়া কারামিয়া মাদ্রাসার এই পরিচালকের ‘আসকান ডেভেলপমেন্টস লিমিটেড’ নামে রয়েছে আবাসন ব্যবসা।
রাজধানীতে সমাবেশ ঘিরে নানা প্রশ্ন
শনিবার (২৭ ডিসেম্বর) সকাল ৯টায় রাজধানীর ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে একটি সমাবেশ আয়োজন করে আবু সায়েম খালেদের প্রতিষ্ঠান বিএসিসিআই। ‘ব্লুপ্রিন্ট অব দ্য ইসলামিক এমিরেট’ শীর্ষক সমাবেশে মোল্লা জাওয়ান্দির উপস্থিত থাকার কথা থাকলেও, শেষ পর্যন্ত তিনি আসেননি।
সমাবেশ সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, আয়োজক হিসেবে ব্যবসায়ী সংগঠনের নাম থাকলেও সমাবেশে যাদের দেখা গেছে, তারা হুজির কার্যক্রমে জড়িত। সমাবেশে প্রতিষ্ঠিত কোনো ব্যবসায়ীকে দেখা যায়নি। তবে হুজির সাবেক আমির রহমতুল্লাহ ওরফে শেখ ফরিদের ভাইদের দেখা গেছে।

২০১১ সালের এপ্রিলে রহমতুল্লাহ ওরফে শেখ ফরিদকে র্যাব গ্রেপ্তার করে জানিয়েছিল, তিনি হুজির তৎকালীন আমির। র্যাব এও জানিয়েছিল, শেখ ফরিদ একজন আফগান ফেরত মুজাহিদ। তিনি ১৯৯৯ সালে আফগান প্রেসিডেন্ট বোরহান উদ্দিন রাব্বানির সঙ্গে দেখা করে সংগঠনের কর্মকাণ্ড নিয়ে আলোচনা ছাড়াও বাংলাদেশে হুজিকে কীভাবে জোরালো করা যায়– তা নিয়ে আলোচনা করেন। মার্কিন বাহিনীর হাতে নিহত ওসামা বিন লাদেনের সঙ্গেও তাঁর কথা হয়েছিল। তবে তালেবানপ্রধান মোল্লা ওমরের দেখা পাননি শেখ ফরিদ।
নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, শেখ ফরিদের ৯ ভাইয়ের আটজনই হুজির সঙ্গে জড়িত। শনিবার ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটের সমাবেশে শেখ ফরিদের এক ভাইকে দেখা গেছে। রাজধানীসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে সমাবেশে অন্তত ৬৫০ জন অংশ নেন, যাদের অনেকের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার সুনির্দিষ্ট অভিযোগে মামলা রয়েছে।
আবু সায়েম খালেদ স্ট্রিমকে জানিয়েছেন, বাংলাদেশ-আফগানিস্তান চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের চেয়ারম্যান হিসেবে তিনিই সমাবেশের আয়োজক। কর্মসূচিতে মোল্লা জাওয়ান্দির অনুপস্থিত থাকার বিষয়ে আবু সায়েম খালেদ বলেন, ‘উনার ব্যস্ততা থাকতে পারে। কেন আসেননি, তাঁকে জিজ্ঞেস করতে পারিনি।’
সমাবেশে হুজির অনেকে ছিলেন– এমন প্রশ্নে আবু সায়েম খালেদ বলেন, ‘ওপেন প্রোগ্রাম। অনেকে আসতে পারেন।’ ব্যবসায়ীক সংগঠনের সমাবেশে ‘ব্লুপ্রিন্ট অব দ্য ইসলামিক এমিরেট’ শিরোনাম বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমি বুঝতে পারছি, আপনার অনেক সময় লাগবে। ১৫-২০ মিনিট পরে আমিই আপনাকে কল করছি।’ এরপর আধা-ঘণ্টা পরেও আবু সায়েম খালেদ প্রতিবেদককে ফোন করেননি। এমনকি তাঁকে বেশ কয়েকবার কল দিলেও আর ফোন রিসিভ হয়নি।
সমাবেশে আল-মারকাজুল ইসলামীর বিরানি
সমাবেশে বিরিয়ানি সরবরাহ করে আল-মারকাজুল ইসলামী (এএমআই)। সংগঠনটির বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময় এনজিও কার্যক্রমের আড়ালে ‘জঙ্গি অর্থায়নের’ অভিযোগ রয়েছে। ১৯৮৮ সালে এএমআই প্রতিষ্ঠা করেন মুফতি শহিদুল ইসলাম। তাঁর বিরুদ্ধেও হুজির সঙ্গে সম্পর্ক রক্ষার অভিযোগ রয়েছে। বর্তমানে এএমআইয়ের চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলামের ছেলে হামযাহ বিন শহিদুল ইসলাম।

বিরানি সরবরাহের ব্যাপারে হামযাহ বিন শহিদুল ইসলামের নম্বরে কল দিলে রিসিভ করেন প্রতিষ্ঠানটির গেস্ট অ্যাফেয়ার্সের দায়িত্বে থাকা মাসুম বিল্লাহ। মোল্লা জাওয়ান্দির সফর সম্পর্কে অবগত জানিয়ে মাসুম বিল্লাহ বলেন, ‘উনি (মোল্লা জাওয়ান্দি) আসছেন আমি জানি। বিভিন্ন জায়গায় প্রোগ্রাম করছেন তাও জানি। তবে তিনি আমাদের আমন্ত্রণে আসেননি। আরও চার-পাঁচ দিন থাকতে পারেন।’
আল-মারকাজুল ইসলামীর পক্ষ থেকে সমাবেশে ছয় শতাধিক প্যাকেট বিরানি সরবরাহ করা হয়েছে উল্লেখ করে মাসুম বিল্লাহ বলেন, ‘প্রস্তাব আসার পরে বৈঠক করে সিদ্ধান্তের মাধ্যমে খাবার দেওয়া হয়েছে। শুক্রবার (২৬ ডিসেম্বর) রাত সাড়ে ১০টায় এ সিদ্ধান্ত হয়। দ্বীনি মাহফিল হলে অনেক সময় আমরা খাবার সরবরাহ করে থাকি।’
হুজি প্রসঙ্গ আসতেই তিনি বলেন, ‘এসবের অস্তিত্ব আছে বলে আমার কাছে মনে হয় না। আপনারা জানেন, বিগত ১৬ বছরে দেশে কী হয়েছে।’ তবে মাসুম বিল্লাহ এও বলেন, ‘হুজি থেকে থাকলেও, তাদের সঙ্গে আল-মারকাজুল ইসলামীর ন্যূনতম সম্পর্ক নেই।’
এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘শনিবারের সমাবেশের আয়োজক হিসেবে আল-মারকাজুল ইসলামীর সঙ্গে যোগাযোগ করেন আবু সায়েম খালেদ। মোল্লা জাওয়ান্দিকে ২১ ডিসেম্বর বিমানবন্দরে তিনিই স্বাগত জানিয়েছেন।’

ঢাকায় বসে ‘নামি’ বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মানসূচক পিএইচডি নিয়েছেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সাবেক জ্যেষ্ঠ সচিব মোখলেস উর রহমান। বর্তমানে তিনি পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য। শুধু মোখলেস নন, রাজধানীর সীমান্ত স্কয়ার মার্কেটের ‘ইগনাইটেড ব্রেইন্স’ থেকে অন্তত ৩৬ জন ভুয়া পিএইচডি নিয়েছেন।
১০ দিন আগে
আমেরিকান ইস্ট কোস্ট ইউনিভার্সিটি, রয়েল আমেরিকান ইউনিভার্সিটিসহ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের নামে পিএইচডি দিয়ে থাকে ইগনাইটেড ব্রেইন্স। ইতোমধ্যে তাদের কাছ থেকে অন্তত ২০ জনের পিএইচডি নেওয়ার তথ্য পেয়েছে স্ট্রিম।
১০ দিন আগে
সাতক্ষীরার আশাশুনি ডিগ্রি কলেজের শিক্ষক বজলুর রহমান। ২০১৮ সালে দীর্ঘ কর্মজীবনের ইতি টানেন। অবসরের টাকা পেতে ২০২২ সালের জুনে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষক ও কর্মচারী অবসর সুবিধা বোর্ডে আবেদন করেন। পরের মাসে কল্যাণ ট্রাস্টের টাকার জন্যও আবেদন করেছিলেন।
১৩ দিন আগে
ঢাকার রাস্তায় অটোরিকশায় গ্লোবাল পজিশনিং সিস্টেম (জিপিএস) বসানো হবে, যাতে নির্ধারিত গতিসীমা অতিক্রম করে চলাচল করতে না পারে ‘বাংলার টেসলা’-খ্যাত এই বাহন। এছাড়া অটোরিকশার এলাকা ভাগ করে দেওয়া হবে; এতে এক এলাকার রিকশা অন্য এলাকায় গিয়ে চলাচল করতে পারবে না।
২২ দিন আগে