স্ট্রিম ডেস্ক

ইরানে মূল্যস্ফীতি ও মুদ্রার অবমূল্যায়নের প্রতিবাদে টানা চতুর্থ দিনের মতো বিক্ষোভ ও ধর্মঘট চলছে। রাজধানী তেহরান ছাড়াও দেশের বিভিন্ন শহরে এই বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। এর ফলে গত তিন বছরে ইরান সবচেয়ে বড় গণবিক্ষোভের মুখে পড়েছে।
প্রথমে এই বিক্ষোভ সীমিত ছিল তেহরানের ব্যবসায়ী ও দোকানিদের মধ্যে। এখন এটি সাধারণ মানুষের অর্থনৈতিক ক্ষোভের প্রকাশে রূপ নিয়েছে। কোথাও কোথাও এটি সরাসরি সরকারবিরোধী আন্দোলনের চেহারা নিয়েছে।
এই আন্দোলন উচ্চ মূল্যস্ফীতি, ক্রমাগত ক্রয়ক্ষমতা হ্রাস এবং অর্থনীতি স্থিতিশীল করতে সরকারের ব্যর্থতার বিরুদ্ধে জনঅসন্তোষের গভীরতা তুলে ধরছে।
রোববার বিক্ষোভের সূচনা হয়। ওই দিন তেহরানের ঐতিহ্যবাহী গ্র্যান্ড বাজারের দোকানিরা ধর্মঘট পালন করেন। কারণ, খোলা বাজারে ইরানের মুদ্রা রিয়াল মার্কিন ডলারের বিপরীতে রেকর্ড সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে যায়।
ওই দিন খোলা বাজারে এক ডলারের বিপরীতে ইরানি রিয়ালের দাম প্রায় ১৪ লাখ ২০ হাজারে নেমে আসে। এটিই ছিল ইতিহাসের সর্বনিম্ন হার। ক্ষুব্ধ দোকানিরা দোকান বন্ধ করে রাস্তায় নামেন। তাঁরা সরকারবিরোধী স্লোগান দেন। বিভিন্ন সড়কে পথচারীরাও বিক্ষোভে যোগ দেন।
সোমবার বিক্ষোভ আরও তীব্র হয়। তেহরানের বাইরে অন্যান্য শহরেও আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে। রাজধানীর লালেজার সড়ক, ইমাম খোমেনি স্কয়ার অভিমুখী এলাকা এবং ইস্তাম্বুল মোড়ে সংঘর্ষের খবর পাওয়া যায়। নিরাপত্তা বাহিনী বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে টিয়ার গ্যাস ব্যবহার করে।
একই দিনে ইসফাহান, শিরাজ, মাশহাদ, হামেদান, মালার্দ এবং পারস্য উপসাগরের কেশম দ্বীপেও বিক্ষোভ হয়। কিছু এলাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও আন্দোলনে যোগ দেন। তাঁরা ‘স্বৈরশাসকের মৃত্যু হোক’ স্লোগান দেন। এই স্লোগানটি সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনিকে লক্ষ্য করে দেওয়া বলে ধারণা করা হয়।
মঙ্গলবার পেরিয়ে বুধবার বিক্ষোভ চতুর্থ দিনে গড়ায়। বিভিন্ন শহরের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন জোরালো হয়। কিছু স্থানে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নিরাপত্তা বাহিনীর সংঘর্ষ ঘটে। কোথাও কোথাও স্বাধীনতা ও সরকার পরিবর্তনের দাবিতে স্লোগান শোনা যায়।
একই সঙ্গে বাণিজ্যিক এলাকাগুলোতে ধর্মঘট অব্যাহত থাকে। তেহরানের শুশ ও মোলাভি এলাকায় বহু দোকান বন্ধ থাকে। ইসফাহানের নকশে জাহান স্কয়ারের আশপাশেও দোকানপাট বন্ধ দেখা যায়।
এ পরিস্থিতিতে সরকার বুধবার একটি ঘোষণা দেয়। এতে বলা হয়, দেশের ৩১টি প্রদেশের মধ্যে ১৮টি প্রদেশে বিশ্ববিদ্যালয়, সরকারি দপ্তর ও বাণিজ্যিক কেন্দ্র বন্ধ থাকবে। সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে এর কারণ হিসেবে জ্বালানি সাশ্রয় ও শীতের কথা উল্লেখ করে। তবে বিশ্লেষকদের মতে, বড় জমায়েত ঠেকানোই এর মূল উদ্দেশ্য।
বিবিসি, সিএনএন, এপি ও নিউইয়র্ক টাইমসসহ আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো এই বিক্ষোভকে ২০২২–২৩ সালের ‘নারী, জীবন, স্বাধীনতা’ আন্দোলনের পর সবচেয়ে বড় গণবিক্ষোভ হিসেবে বর্ণনা করেছে।
ওই আন্দোলন শুরু হয়েছিল মাহসা আমিনির হেফাজতে মৃত্যুর পর। সে সময় ইরানজুড়ে ব্যাপক দমন-পীড়ন চালানো হয়। শতাধিক মানুষ নিহত হন এবং হাজারো মানুষ গ্রেপ্তার হন।
বর্তমান বিক্ষোভ সেই সময়ের ক্ষোভ ও অসন্তোষের ধারাবাহিকতা বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।
অর্থনৈতিক কারণ
ইরানে মুদ্রার অবমূল্যায়ন অত্যন্ত বেশি। ২৮ ডিসেম্বর খোলা বাজারে এক মার্কিন ডলারের দাম প্রায় ১৪ লাখ ২০ হাজার রিয়ালে পৌঁছায়। এটি ছিল ইতিহাসের সর্বনিম্ন হার। পরদিন, ২৯ ডিসেম্বর, ডলারের দর প্রায় ১৩ লাখ ৮০ হাজার রিয়ালে লেনদেন হয়।
বর্তমান কেন্দ্রীয় ব্যাংক গভর্নর ২০২২ সালে দায়িত্ব নেওয়ার সময় ডলারের দাম ছিল প্রায় ৪ লাখ ৩০ হাজার রিয়াল। এই দ্রুত পতন মূল্যস্ফীতিকে আরও তীব্র করেছে।
ইরানের রাষ্ট্রীয় পরিসংখ্যান কেন্দ্রের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালের ডিসেম্বরে বার্ষিক মূল্যস্ফীতি দাঁড়ায় ৪২ দশমিক ২ শতাংশে। এটি নভেম্বরের তুলনায় ১ দশমিক ৮ শতাংশ বেশি।
এর প্রভাব পড়েছে নিত্যপণ্যে। খাদ্যপণ্যের দাম বছরে ৭২ শতাংশ বেড়েছে। স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা সামগ্রীর দাম বেড়েছে প্রায় ৫০ শতাংশ। সাধারণ মানুষের মধ্যে অতি-মুদ্রাস্ফীতির আশঙ্কা ছড়িয়ে পড়েছে।
এই সংকটের পেছনে একাধিক কারণ রয়েছে। এর মধ্যে আছে যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘমেয়াদি নিষেধাজ্ঞা। ট্রাম্প প্রশাসনের ‘সর্বোচ্চ চাপ’ নীতিতে এসব নিষেধাজ্ঞা আরও কঠোর হয়।
২০২৫ সালের জুনে ইসরায়েলের সঙ্গে ১২ দিনের যুদ্ধ পরিস্থিতি আরও জটিল করে তোলে। ওই যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালায়।
সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘের ‘স্ন্যাপব্যাক’ নিষেধাজ্ঞাও কার্যকর হয়। তেল রপ্তানি থেকে আয় কমে যায়। অতিরিক্ত নোট ছাপানো ও অভ্যন্তরীণ অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনাও সংকট বাড়িয়েছে।
এর মধ্যে সরকার সম্প্রতি জ্বালানির দাম সমন্বয় করেছে। আগামী ২১ মার্চ, ইরানি নববর্ষ থেকে কর বাড়ানোর পরিকল্পনাও ঘোষণা করা হয়েছে। এসব সিদ্ধান্ত জনঅসন্তোষ আরও বাড়িয়েছে।
সরকারের প্রতিক্রিয়া
এবার সরকার আগের তুলনায় তুলনামূলক সংযত অবস্থান নিয়েছে। প্রেসিডেন্ট মাসউদ পেজেশকিয়ান বিক্ষোভের বিষয়টি স্বীকার করেছেন। তিনি কর্মকর্তাদের জনগণের ‘ন্যায্য দাবি’ শোনার আহ্বান জানান। তিনি জীবিকা সুরক্ষার প্রতিশ্রুতিও দেন।
তিনি শ্রমিক নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে বিক্ষোভকারীদের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনার নির্দেশ দেন। সরকার জানায়, কঠোর ভাষা ব্যবহার হলেও তারা ধৈর্যের সঙ্গে কথা শুনবে।
একটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত হিসেবে ২৯ ডিসেম্বর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর মোহাম্মদ রেজা ফারজিনের পদত্যাগ গ্রহণ করা হয়। তাঁর স্থলে সাবেক অর্থমন্ত্রী আবদোলনাসের হেম্মাতিকে নিয়োগ দেওয়া হয়।
নিরাপত্তা বাহিনী কিছু স্থানে টিয়ার গ্যাস ব্যবহার করেছে। কিছু বিক্ষোভকারীকে আটকও করা হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত ব্যাপক প্রাণঘাতী দমন-পীড়নের খবর পাওয়া যায়নি।
সম্ভাব্য ভবিষ্যৎ পরিস্থিতি
শুরুতে এই বিক্ষোভ ছিল মূলত অর্থনৈতিক। এতে নেতৃত্ব দেন বাজারের ব্যবসায়ী ও দোকানিরা। তবে দ্রুতই এতে রাজনৈতিক স্লোগান যুক্ত হয়। অনেক জায়গায় সর্বোচ্চ নেতা ও ধর্মীয় শাসনব্যবস্থার বিরুদ্ধে স্লোগান শোনা যায়। কোথাও কোথাও সরকার পরিবর্তনের দাবিও ওঠে।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, ইরানে অর্থনৈতিক ক্ষোভ প্রায়ই রাজনৈতিক দাবিতে রূপ নেয়। ২০১৭–১৯ এবং ২০২২–২৩ সালের আন্দোলনেও এমনটি দেখা গেছে।
এবার শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ পরিস্থিতিকে আরও সংবেদনশীল করে তুলেছে। বাজারের ব্যবসায়ী শ্রেণিও ইরানের রাজনীতিতে ঐতিহাসিকভাবে প্রভাবশালী। এই দুটি গোষ্ঠীর সক্রিয়তা আন্দোলনকে বড় আকার দিতে পারে।
সরকার আপাতত আলোচনার পথ বেছে নিতে চাইছে। তবে মূল সংকটের দ্রুত সমাধান দেখা যাচ্ছে না। নিষেধাজ্ঞা, আঞ্চলিক উত্তেজনা ও আন্তর্জাতিক বিচ্ছিন্নতা অর্থনীতিকে দুর্বল রেখেছে।
আগামী কয়েক দিন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। হয়তো কিছু ছাড় ও প্রশাসনিক বন্ধের মাধ্যমে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা হবে। আবার বিক্ষোভ আরও বিস্তৃতও হতে পারে।
পরিস্থিতি এখনো অনিশ্চিত রয়ে গেছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিক্ষোভের ভিডিও ছড়িয়ে পড়ছে। ভবিষ্যৎ গতিপথ এখনো স্পষ্ট নয়।
তথ্যসূত্র: বিবিসি, আল-জাজিরা, সিএনএন, রয়টার্স, এপি, দ্য গার্ডিয়ান, নিউইয়র্ক টাইমস

ইরানে মূল্যস্ফীতি ও মুদ্রার অবমূল্যায়নের প্রতিবাদে টানা চতুর্থ দিনের মতো বিক্ষোভ ও ধর্মঘট চলছে। রাজধানী তেহরান ছাড়াও দেশের বিভিন্ন শহরে এই বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। এর ফলে গত তিন বছরে ইরান সবচেয়ে বড় গণবিক্ষোভের মুখে পড়েছে।
প্রথমে এই বিক্ষোভ সীমিত ছিল তেহরানের ব্যবসায়ী ও দোকানিদের মধ্যে। এখন এটি সাধারণ মানুষের অর্থনৈতিক ক্ষোভের প্রকাশে রূপ নিয়েছে। কোথাও কোথাও এটি সরাসরি সরকারবিরোধী আন্দোলনের চেহারা নিয়েছে।
এই আন্দোলন উচ্চ মূল্যস্ফীতি, ক্রমাগত ক্রয়ক্ষমতা হ্রাস এবং অর্থনীতি স্থিতিশীল করতে সরকারের ব্যর্থতার বিরুদ্ধে জনঅসন্তোষের গভীরতা তুলে ধরছে।
রোববার বিক্ষোভের সূচনা হয়। ওই দিন তেহরানের ঐতিহ্যবাহী গ্র্যান্ড বাজারের দোকানিরা ধর্মঘট পালন করেন। কারণ, খোলা বাজারে ইরানের মুদ্রা রিয়াল মার্কিন ডলারের বিপরীতে রেকর্ড সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে যায়।
ওই দিন খোলা বাজারে এক ডলারের বিপরীতে ইরানি রিয়ালের দাম প্রায় ১৪ লাখ ২০ হাজারে নেমে আসে। এটিই ছিল ইতিহাসের সর্বনিম্ন হার। ক্ষুব্ধ দোকানিরা দোকান বন্ধ করে রাস্তায় নামেন। তাঁরা সরকারবিরোধী স্লোগান দেন। বিভিন্ন সড়কে পথচারীরাও বিক্ষোভে যোগ দেন।
সোমবার বিক্ষোভ আরও তীব্র হয়। তেহরানের বাইরে অন্যান্য শহরেও আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে। রাজধানীর লালেজার সড়ক, ইমাম খোমেনি স্কয়ার অভিমুখী এলাকা এবং ইস্তাম্বুল মোড়ে সংঘর্ষের খবর পাওয়া যায়। নিরাপত্তা বাহিনী বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে টিয়ার গ্যাস ব্যবহার করে।
একই দিনে ইসফাহান, শিরাজ, মাশহাদ, হামেদান, মালার্দ এবং পারস্য উপসাগরের কেশম দ্বীপেও বিক্ষোভ হয়। কিছু এলাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও আন্দোলনে যোগ দেন। তাঁরা ‘স্বৈরশাসকের মৃত্যু হোক’ স্লোগান দেন। এই স্লোগানটি সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনিকে লক্ষ্য করে দেওয়া বলে ধারণা করা হয়।
মঙ্গলবার পেরিয়ে বুধবার বিক্ষোভ চতুর্থ দিনে গড়ায়। বিভিন্ন শহরের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন জোরালো হয়। কিছু স্থানে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নিরাপত্তা বাহিনীর সংঘর্ষ ঘটে। কোথাও কোথাও স্বাধীনতা ও সরকার পরিবর্তনের দাবিতে স্লোগান শোনা যায়।
একই সঙ্গে বাণিজ্যিক এলাকাগুলোতে ধর্মঘট অব্যাহত থাকে। তেহরানের শুশ ও মোলাভি এলাকায় বহু দোকান বন্ধ থাকে। ইসফাহানের নকশে জাহান স্কয়ারের আশপাশেও দোকানপাট বন্ধ দেখা যায়।
এ পরিস্থিতিতে সরকার বুধবার একটি ঘোষণা দেয়। এতে বলা হয়, দেশের ৩১টি প্রদেশের মধ্যে ১৮টি প্রদেশে বিশ্ববিদ্যালয়, সরকারি দপ্তর ও বাণিজ্যিক কেন্দ্র বন্ধ থাকবে। সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে এর কারণ হিসেবে জ্বালানি সাশ্রয় ও শীতের কথা উল্লেখ করে। তবে বিশ্লেষকদের মতে, বড় জমায়েত ঠেকানোই এর মূল উদ্দেশ্য।
বিবিসি, সিএনএন, এপি ও নিউইয়র্ক টাইমসসহ আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো এই বিক্ষোভকে ২০২২–২৩ সালের ‘নারী, জীবন, স্বাধীনতা’ আন্দোলনের পর সবচেয়ে বড় গণবিক্ষোভ হিসেবে বর্ণনা করেছে।
ওই আন্দোলন শুরু হয়েছিল মাহসা আমিনির হেফাজতে মৃত্যুর পর। সে সময় ইরানজুড়ে ব্যাপক দমন-পীড়ন চালানো হয়। শতাধিক মানুষ নিহত হন এবং হাজারো মানুষ গ্রেপ্তার হন।
বর্তমান বিক্ষোভ সেই সময়ের ক্ষোভ ও অসন্তোষের ধারাবাহিকতা বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।
অর্থনৈতিক কারণ
ইরানে মুদ্রার অবমূল্যায়ন অত্যন্ত বেশি। ২৮ ডিসেম্বর খোলা বাজারে এক মার্কিন ডলারের দাম প্রায় ১৪ লাখ ২০ হাজার রিয়ালে পৌঁছায়। এটি ছিল ইতিহাসের সর্বনিম্ন হার। পরদিন, ২৯ ডিসেম্বর, ডলারের দর প্রায় ১৩ লাখ ৮০ হাজার রিয়ালে লেনদেন হয়।
বর্তমান কেন্দ্রীয় ব্যাংক গভর্নর ২০২২ সালে দায়িত্ব নেওয়ার সময় ডলারের দাম ছিল প্রায় ৪ লাখ ৩০ হাজার রিয়াল। এই দ্রুত পতন মূল্যস্ফীতিকে আরও তীব্র করেছে।
ইরানের রাষ্ট্রীয় পরিসংখ্যান কেন্দ্রের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালের ডিসেম্বরে বার্ষিক মূল্যস্ফীতি দাঁড়ায় ৪২ দশমিক ২ শতাংশে। এটি নভেম্বরের তুলনায় ১ দশমিক ৮ শতাংশ বেশি।
এর প্রভাব পড়েছে নিত্যপণ্যে। খাদ্যপণ্যের দাম বছরে ৭২ শতাংশ বেড়েছে। স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা সামগ্রীর দাম বেড়েছে প্রায় ৫০ শতাংশ। সাধারণ মানুষের মধ্যে অতি-মুদ্রাস্ফীতির আশঙ্কা ছড়িয়ে পড়েছে।
এই সংকটের পেছনে একাধিক কারণ রয়েছে। এর মধ্যে আছে যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘমেয়াদি নিষেধাজ্ঞা। ট্রাম্প প্রশাসনের ‘সর্বোচ্চ চাপ’ নীতিতে এসব নিষেধাজ্ঞা আরও কঠোর হয়।
২০২৫ সালের জুনে ইসরায়েলের সঙ্গে ১২ দিনের যুদ্ধ পরিস্থিতি আরও জটিল করে তোলে। ওই যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালায়।
সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘের ‘স্ন্যাপব্যাক’ নিষেধাজ্ঞাও কার্যকর হয়। তেল রপ্তানি থেকে আয় কমে যায়। অতিরিক্ত নোট ছাপানো ও অভ্যন্তরীণ অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনাও সংকট বাড়িয়েছে।
এর মধ্যে সরকার সম্প্রতি জ্বালানির দাম সমন্বয় করেছে। আগামী ২১ মার্চ, ইরানি নববর্ষ থেকে কর বাড়ানোর পরিকল্পনাও ঘোষণা করা হয়েছে। এসব সিদ্ধান্ত জনঅসন্তোষ আরও বাড়িয়েছে।
সরকারের প্রতিক্রিয়া
এবার সরকার আগের তুলনায় তুলনামূলক সংযত অবস্থান নিয়েছে। প্রেসিডেন্ট মাসউদ পেজেশকিয়ান বিক্ষোভের বিষয়টি স্বীকার করেছেন। তিনি কর্মকর্তাদের জনগণের ‘ন্যায্য দাবি’ শোনার আহ্বান জানান। তিনি জীবিকা সুরক্ষার প্রতিশ্রুতিও দেন।
তিনি শ্রমিক নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে বিক্ষোভকারীদের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনার নির্দেশ দেন। সরকার জানায়, কঠোর ভাষা ব্যবহার হলেও তারা ধৈর্যের সঙ্গে কথা শুনবে।
একটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত হিসেবে ২৯ ডিসেম্বর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর মোহাম্মদ রেজা ফারজিনের পদত্যাগ গ্রহণ করা হয়। তাঁর স্থলে সাবেক অর্থমন্ত্রী আবদোলনাসের হেম্মাতিকে নিয়োগ দেওয়া হয়।
নিরাপত্তা বাহিনী কিছু স্থানে টিয়ার গ্যাস ব্যবহার করেছে। কিছু বিক্ষোভকারীকে আটকও করা হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত ব্যাপক প্রাণঘাতী দমন-পীড়নের খবর পাওয়া যায়নি।
সম্ভাব্য ভবিষ্যৎ পরিস্থিতি
শুরুতে এই বিক্ষোভ ছিল মূলত অর্থনৈতিক। এতে নেতৃত্ব দেন বাজারের ব্যবসায়ী ও দোকানিরা। তবে দ্রুতই এতে রাজনৈতিক স্লোগান যুক্ত হয়। অনেক জায়গায় সর্বোচ্চ নেতা ও ধর্মীয় শাসনব্যবস্থার বিরুদ্ধে স্লোগান শোনা যায়। কোথাও কোথাও সরকার পরিবর্তনের দাবিও ওঠে।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, ইরানে অর্থনৈতিক ক্ষোভ প্রায়ই রাজনৈতিক দাবিতে রূপ নেয়। ২০১৭–১৯ এবং ২০২২–২৩ সালের আন্দোলনেও এমনটি দেখা গেছে।
এবার শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ পরিস্থিতিকে আরও সংবেদনশীল করে তুলেছে। বাজারের ব্যবসায়ী শ্রেণিও ইরানের রাজনীতিতে ঐতিহাসিকভাবে প্রভাবশালী। এই দুটি গোষ্ঠীর সক্রিয়তা আন্দোলনকে বড় আকার দিতে পারে।
সরকার আপাতত আলোচনার পথ বেছে নিতে চাইছে। তবে মূল সংকটের দ্রুত সমাধান দেখা যাচ্ছে না। নিষেধাজ্ঞা, আঞ্চলিক উত্তেজনা ও আন্তর্জাতিক বিচ্ছিন্নতা অর্থনীতিকে দুর্বল রেখেছে।
আগামী কয়েক দিন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। হয়তো কিছু ছাড় ও প্রশাসনিক বন্ধের মাধ্যমে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা হবে। আবার বিক্ষোভ আরও বিস্তৃতও হতে পারে।
পরিস্থিতি এখনো অনিশ্চিত রয়ে গেছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিক্ষোভের ভিডিও ছড়িয়ে পড়ছে। ভবিষ্যৎ গতিপথ এখনো স্পষ্ট নয়।
তথ্যসূত্র: বিবিসি, আল-জাজিরা, সিএনএন, রয়টার্স, এপি, দ্য গার্ডিয়ান, নিউইয়র্ক টাইমস

সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার বাসভবনে পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদের স্পিকার আয়াজ সাদিকের সঙ্গে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের সাক্ষাৎ হয়েছে।
৪ ঘণ্টা আগে
ভেনেজুয়েলার ভূখণ্ডে প্রথমবারের মতো হামলা চালিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। সোমবার এই হামলা চালানো হয় বলে জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। টি ভেনেজুয়েলার বিরুদ্ধে ওয়াশিংটনের সামরিক তৎপরতার একটি বড় ধরনের উত্তেজনাপূর্ণ পদক্ষেপ। এর আগে এমন স্থল হামলা হয়নি।
৯ ঘণ্টা আগে
ভ্লাদিমির পুতিনের বাসভবনে ড্রোন হামলার কোনো বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ রাশিয়া দিতে পারে নি বলে মন্তব্য করেছেন ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আন্দ্রি সিবিকা। তিনি এই ঘটনাকে শান্তি আলোচনা বাধাগ্রস্ত করার জন্য ক্রেমলিনের ‘সাজানো মিথ্যা’ বলে অভিহিত করেছেন।
১ দিন আগে
বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও দেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন মালদ্বীপের প্রধানমন্ত্রী। এক্সে এক শোকবার্তায় তিনি বাংলাদেশ সরকার ও জনগণের প্রতি আন্তরিক সমবেদনা জানান।
১ দিন আগে