leadT1ad

ভারতে ধর্ম পালনের স্বাধীনতা হুমকির মুখে, বড়দিনে হুঁশিয়ারি শশী থারুরের

স্ট্রিম ডেস্ক
স্ট্রিম ডেস্ক
ঢাকা

বড়দিনে গির্জায় শুভেচ্ছা জানাতে যান শশী থারুর। ছবি: সংগৃহীত।

বড়দিনকে ঘিরে ভারতের বিভিন্ন স্থানে খ্রিস্টানদের ওপর হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন কংগ্রেস নেতা ও সংসদ সদস্য শশী থারুর। তিনি বলেছেন, এসব হামলা শুধু একটি সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে নয়। এতে ভারতের সংবিধানে নিশ্চিত উপাসনার স্বাধীনতাই আক্রান্ত হচ্ছে।

বড়দিনের আগে ও চলাকালে খ্রিস্টানদের ওপর হামলার খবরে প্রতিক্রিয়া জানিয়ে থারুর বলেন, যখন কোনো সম্প্রদায়ের ধর্মীয় ঐতিহ্য আক্রমণের শিকার হয়, তখন আসলে সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাঁর ভাষায়, ‘যখন আমাদের ঐতিহ্য আক্রমণ করা হয়, তখন শুধু খ্রিস্টানদের নয়, পুরো ভারতকেই আঘাত করা হয়।’

তিরুবনন্তপুরমের এই সংসদ সদস্য বিশেষভাবে কেরালার পালাক্কাড়ের একটি ঘটনার কথা উল্লেখ করেন। সেখানে ক্যারল গান গাইছিল এমন একটি শিশুদের দলের ওপর হামলা চালানো হয়। এ ঘটনাকে তিনি ‘ভয়াবহ’ বলে মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, এ সময় খ্রিস্টান ভাইবোনদের পাশে দাঁড়ানো অত্যন্ত জরুরি।

শশী থারুর বলেন, ‘আমরা এমন এক সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি, যখন দেশের বিভিন্ন প্রান্তে খ্রিস্টানদের ওপর হামলা হচ্ছে। কেরালাতেও এমন ঘটনা ঘটেছে, যা সত্যিই হতবাক করার মতো।’ তিনি আরও বলেন, সংবিধানপ্রদত্ত উপাসনার স্বাধীনতা ও বিশ্বাসের অধিকার আজ হুমকির মুখে।

বড়দিনের অভিজ্ঞতার কথাও তুলে ধরেন থারুর। তিনি বলেন, প্রতিবছর বড়দিনের আগের রাতে তিনি এক গির্জা থেকে আরেক গির্জায় যান। তবে এবার দিল্লি থেকে তাঁর ফ্লাইট দেরিতে আসায় তিনি মাত্র চারটি গির্জায় যেতে পেরেছেন। এরপর তিনি সেন্ট জোসেফ ক্যাথেড্রালে মধ্যরাতের প্রার্থনায় অংশ নেন।

তিনি জানান, সেন্ট মেরিজ গির্জায় সিরো-মালানকারা চার্চের প্রধান আর্চবিশপ কার্ডিনাল ক্লিমিস তাঁকে মঞ্চে ডেকে নেন। সেখানে তাঁকে নিজ হাতে এক টুকরো চকলেট কেক খাওয়ান এবং সৌহার্দ্যপূর্ণ কথা বলেন। এই অভিজ্ঞতাকে তিনি ‘বিশেষ’ বলে বর্ণনা করেন।

কেরালার রাজনীতিতে সব সম্প্রদায়ের সংস্কৃতি ও ধর্মীয় ঐতিহ্যের প্রতি সম্মান দেখানো যে খুবই গুরুত্বপূর্ণ, সে কথাও বলেন থারুর। তিনি বলেন, গত ১৭ বছর ধরে তিনি সংসদ সদস্য। তাঁর মতে, নির্বাচনী এলাকার মানুষের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করা যেমন দায়িত্ব, তেমনি সব ধর্ম ও সংস্কৃতির প্রতি শ্রদ্ধা দেখানো কেরালার রাজনৈতিক ঐতিহ্যের অংশ।

এদিকে বড়দিন ঘিরে দেশের অন্য রাজ্যেও উত্তেজনার খবর পাওয়া গেছে। রাজস্থানের নাগৌরে একটি বেসরকারি স্কুলের অধ্যক্ষ অভিযোগ করেছেন, বজরং দলের সদস্য পরিচয় দেওয়া একদল লোক স্কুলে বড়দিন উদ্‌যাপন নিয়ে শিশু ও শিক্ষকদের হুমকি দিয়েছে।

উত্তর প্রদেশের বেরিলিতে বজরং দলের সদস্যরা সেন্ট আলফনসাস ক্যাথেড্রাল চার্চের সামনে বিক্ষোভ করেন। তাঁরা সেখানে হনুমান চালিসা পাঠ করেন। তাদের অভিযোগ, চার্চের বড়দিনের অনুষ্ঠানে হিন্দু ধর্ম ও সমাজকে আপত্তিকরভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে।

এই প্রেক্ষাপটে শশী থারুর কেন্দ্রের ক্ষমতাসীন দলের ‘দায়িত্বশীল নেতৃত্বের’ প্রতি আহ্বান জানান। যদিও তিনি সরাসরি বিজেপির নাম নেননি, তবে হামলার বিরুদ্ধে স্পষ্ট অবস্থান নেওয়ার দাবি জানান। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে তিনি মহাভারতের একটি ঘটনার উদাহরণ টানেন। তিনি বলেন, অন্যায় দেখে নীরব থাকা আরও বড় অন্যায়কে প্রশ্রয় দেয়।

অন্যদিকে একই দিনে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি দিল্লির ক্যাথেড্রাল চার্চ অব দ্য রিডেম্পশনে বড়দিনের সকালের প্রার্থনায় অংশ নেন। সেখানে দিল্লি ও উত্তর ভারতের বিপুলসংখ্যক খ্রিষ্টান উপস্থিত ছিলেন। প্রার্থনায় ক্যারল, স্তোত্র ও শান্তির বার্তা তুলে ধরা হয়। দিল্লির বিশপ আরটি রেভারেন্ড ড. পল স্বরূপ প্রধানমন্ত্রীকে বিশেষ প্রার্থনার মাধ্যমে আশীর্বাদ করেন।

প্রধানমন্ত্রী মোদি পরে এক বার্তায় বলেন, বড়দিনের এই প্রার্থনা ভালোবাসা, শান্তি ও সহমর্মিতার চিরন্তন বার্তা বহন করে। তিনি আশা প্রকাশ করেন, বড়দিনের এই চেতনা সমাজে সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্য বাড়াবে।

Ad 300x250

সম্পর্কিত