leadT1ad

রয়টার্সের এক্সক্লুসিভ

সু চি কি মারা গেছেন?

স্ট্রিম ডেস্ক
স্ট্রিম ডেস্ক

মিয়ানমারের সাবেক নেত্রী অং সাং সু চি। সংগৃহীত ছবি

স্বাস্থ্যের অবনতি এবং তথ্যের শূন্যতার কারণে মিয়ানমারের কারাবন্দি নেত্রী অং সাং সু চির বেঁচে থাকা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন তাঁর ছেলে। এমনকি ছেলের দাবি, সূ চি হয়তো ইতোমধ্যে মারা গিয়ে থাকতে পারেন।

আজ সোমবার (১৫ ডিসেম্বর) বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রকাশিত এক সাক্ষাৎকারে এমন কথাই বলেছেন সু চির ছেলে কিম অরিস।

টোকিও থেকে রয়টার্সকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে কিম অরিস সু চির ব্যাপারে উদ্বেগ প্রকাশ করে জানান, সু চি মারা গেছেন কি না হয়তো তিনি তা জানতেও পারবেন না।

কিম জানান, কয়েক বছর ধরে তিনি তার ৮০ বছর বয়সী মায়ের কোনো খবর পাচ্ছেন না। ২০১১ সালের পর সু চির হার্ট, হাড় ও মাড়ির সমস্যার ব্যাপারে তিনি কিছু বিক্ষিপ্ত, অন্যের মাধ্যমে পাওয়া তথ্য জানেন। ওই বছর সামরিক অভ্যুত্থানে সু চির সরকারের পতন হয়।

চলতি মাসের শেষের দিকে মিয়ানমারে নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়টিও সু চির ছেলে উড়িয়ে দিয়েছেন। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সরকারও সামরিক শাসনকে বৈধতা দেওয়ার জন্য এ নির্বাচন বলে উল্লেখ করেছে। সু চির ছেলে আশা, এটি তার মায়ের দুর্দশা লাঘবে কাজ আসতে পারে।

কিম অরিস বলেন, ‘তাঁর কিছু স্বাস্থ্যগত সমস্যা চলছিল। দুই বছরের বেশি সময় ধরে তাঁকে কেউ দেখেনি। তাঁকে তাঁর আইনি পরামর্শকদের সঙ্গেও যোগাযোগ করতে দেওয়া হয়নি। পরিবারের সঙ্গেও না। যতদূর আমি জানি, তিনি মারা গিয়ে থাকতে পারেন। ’

তিনি আরও বলেন, ধারণা করি আমার মায়ের ক্ষেত্র মিন অং হ্লাইং-এর (মিয়ানমার জান্তাপ্রধান) নিজস্ব এজেন্ডা আছে। নির্বাচনের আগে বা পরে তাঁকে মুক্তি বা জেল থেকে গৃহবন্দির মাধ্যমে যদি তিনি (জান্তাপ্রধান) তাঁকে ব্যবহার করে সাধারণ জনগণকে শান্ত করার চেষ্টা করেন। তাও অন্তত পক্ষে কিছু একটা হবে।

সু চির ছেলের এই বক্তব্যের ব্যাপারে রয়টার্সের পক্ষ থেকে জান্তা সরকারের মুখপাত্রের সঙ্গে যোগাযোগ করে বক্তব্য চাওয়া হয়। তবে তিনি কোনো মন্তব্য করেননি।

গুরুত্বপূর্ণ কোনো ঘটনার দিন বা ছুটির দিন উপলক্ষে বন্দিদের মুক্তি দেওয়ার ইতিহাস আছে মিয়ানমারের জান্তা সরকারের।

২০১০ সালের নির্বাচনের পরদিন নোবেল জয়ী সু চিকে মুক্তি দেওয়া হয়েছিল। ওই মুক্তির মধ্য দিয়ে ইয়াঙ্গুনের ইনিয়া লেকে ঔপনিবেশিক ধাঁচের তাঁর পারিবারিক বাড়িতে দীর্ঘ গৃহবন্দির অবসান ঘটেছিল।

পরবর্তীতে ২০১৫ সালে ২৫ বছরের মধ্যে প্রথমবার সরাসরি ভোটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে মিয়ানমারের সরকারপ্রধান হন। যদিও পরে দেশটিতে রোহিঙ্গা মুসলিমদের ওপর গণহত্যা চালানোর অভিযোগ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তাঁর ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হয়।

নির্বাচনের এই সুযোগ কাজে লাগাতে চান সু চির ছেলে

২০২১ সালের অভ্যুত্থানের পর থেকেই মিয়ানমারে অস্থিরতা চলছে। জান্তা সরকার ক্ষমতা নেওয়ার পর সশস্ত্র বিদ্রোহের সূত্রপাত হয়। ইতোমধ্যে দেশের বেশকিছু অঞ্চল তাঁরা দখল করে নিয়েছে।

এদিকে, সু চি উসকানি, দুর্নীতি এবং নির্বাচনে কারচুপিসহ একাধিক অভিযোগে ২৭ বছরের সাজা খাটছেন। যদিও তিনি এসব অভিযোগ বরাবরই অস্বীকার করে আসছেন।

কিম অরিসের বিশ্বাস, তাঁর মাকে রাজধানী নেপিদোতে রাখা হয়েছে। মায়ের কাছ থেকে দুই বছর আগে তিনি সর্বশেষ চিঠি পেয়েছেন। সেই চিঠিতে সু চি গ্রীষ্ম ও শীতের মাসগুলোতে তাঁকে রাখা সেলে অতিরিক্ত তাপমাত্রা নিয়ে অভিযোগ করেছিলেন। সারা পৃথিবীজুড়ে এখন সংঘাত ছড়িয়ে পড়েছে। তাই কিম অরিস চিন্তিত যে, মিয়ানমারের বিষয়টি মানুষ ভুলতে বসেছে।

তারপরও তিনি আসন্ন নির্বাচনকে কাজে লাগাতে চান। আগামী ২৮ ডিসেম্বর এ ভোট হওয়ার কথা রয়েছে। এই নির্বাচনকে তিনি জাপানের মতো বিদেশি সরকারগুলোকে তাঁর মায়ের মুক্তির বিষয়ে বাড়তি চাপ তৈরির আহ্বান জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, সামরিক বাহিনীর নির্বাচন মঞ্চস্থ করার চেষ্টা করছে। আমরা সবাই জানি এটি সম্পূর্ণ পক্ষপাতদুষ্ট হবে। বরং তেমনটা না হলেই হাস্যকর হবে। তবে আমি এই ছোট সুযোগটি ব্যবহার করতে চাই।

কিম অরিস আরও বলেন, অতীতে যখন আমার মাকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় খুব সম্মানের চোখে দেখত, তখন বার্মায় কি ঘটছে তা উপেক্ষা করা মানুষের পক্ষে কঠিন ছিল। কিন্তু রাখাইনে রোহিঙ্গা সংকটের কারণে তাঁর অবস্থান বদলে যাওয়ার পর থেকে বিষয়টি আর তেমন নেই।

Ad 300x250
সর্বাধিক পঠিত

সম্পর্কিত