বিএনপি থেকে একাধিকবার বহিষ্কৃত, মুক্তিযোদ্ধা মেজর (অব.) আখতারুজ্জামান সম্প্রতি জামায়াতে যোগ দিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছেন। আলোচনায় কেউ কেউ জুলাই আন্দোলন চলাকালে আখতারুজ্জামানের আন্দোলনকারীদের ‘রাজাকার’ আখ্যা দেওয়া উক্তিও সামনে আনছেন। আবার জামায়াত নিষিদ্ধের পর ‘কাজটি (নিষিদ্ধ করা) ভালো হয়েছে’ বলে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে গণমাধ্যমে দেওয়া বক্তব্যও টেনে আনছেন কেউ কেউ।
সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে টানা আন্দোলন শুরু হয়েছিল ২০২৪ সালের ১ জুলাই থেকে। অহিংস এই আন্দোলন সহিংস রূপ নেয় ১৫ জুলাই। সেদিনই সাংবাদিক সাইফুর রহমানের সাগরের উপস্থাপনায় ইউটিউব চ্যানেল ‘ফেস দ্যা পিপলের’ এক টকশোতে অংশ নেন মেজর (অব.) আখতারুজ্জামান। আলোচনায় আরও উপস্থিত ছিলেন গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ রাশেদ খাঁন ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সৈয়দ মামুন মাহবুব।
আলোচনার এক পর্যায়ে কোটাপ্রথা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারীদের প্রসঙ্গে সঞ্চালকের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘রাজাকারদের আন্দোলনই তো হচ্ছে এটা। রাজাকাররাই আন্দোলনটা করতেছে ভাই। আন্দোলন কি মুক্তিযোদ্ধারা করতেছে? রাজাকারের ফ্যামিলিরা করতেছে। সমস্ত রাজাকার, যুদ্ধাপরাধী, জামায়াত এটাতে ইনভল্ব। এর বাইরে কেউ আছে?’
শিক্ষার্থীদের আন্দোলন প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে আখতারুজ্জামান বলেন, ‘আজকে একটা নতুন ফ্যাশন হয়ে গেছে, যেদিকে বেশি যায়... সেদিকেই দৌড় দাও।’
এক পর্যায়ে সঞ্চালক ‘রাজাকার’ প্রসঙ্গটি আবার টেনে জানতে চান, ‘আজ যে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করছে, তারা সবাই রাজাকারের সন্তান?’ জবাবে আখতারুজ্জামান জোর দিয়ে বলেন, ‘হান্ড্রেড পার্সেন্ট (শতভাগ), তারা মুক্তিযুদ্ধেরবিরোধী।’ সঞ্চালক পাল্টা এর পক্ষে প্রমাণ চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি দায়িত্ব নিয়ে বলছি। আপনি তাদের পারিবারিক ঐতিহ্য দেখেন। তারা রাজাকারের সন্তান তো, আপনি খোঁজ নিয়ে দেখেন না?’
আন্দোলন আরও তীব্র রূপ ধারণ করলে চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানের মাত্র চার দিন আগে ১ আগস্ট সরকারের নির্বাহী আদেশে সন্ত্রাস দমন আইনের ১৮ ধারায় জামায়াতে ইসলামী ও ছাত্রসংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবিরসহ জামায়াতের সব ধরনের সহযোগী সংগঠনকে নিষিদ্ধ করা হয়। এ নিয়ে সেদিন একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে ডয়েচে ভেলে। সেই প্রতিবেদনে জামায়াত নিষিদ্ধ হওয়া প্রসঙ্গে আখতারুজ্জামান বলেন, ‘এই দলটাকে নিষিদ্ধ করার দরকার ছিল অনেক আগেই। এবার তারা যে তাণ্ডব চালিয়েছে, সে কারণে হয়ত সরকার এখন মনে করছে, এটা করা প্রয়োজন। যা-ই হোক, কাজটি ভালো হয়েছে।’
সম্প্রতি জামায়াতে যোগ দেওয়ার পর আখতারুজ্জামানের সেদিনের সেই পুরনো বক্তব্য আবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কেউ কেউ পোস্ট করছেন। সেদিন আলোচনায় অংশ নেওয়া রাশেদ খাঁনও আখতারুজ্জামানের জামায়াতে যোগ দেওয়া নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তিনি পুরনো টকশোর একটি ভিডিও ফুটেজ শেয়ার করে লিখেছেন, ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান চলাকালীন আমাকে রাজাকার বলেছিল এই টকশোতে। আমার ব্যাকগ্রাউন্ড খুঁজলেই নাকি পাওয়া যাবে সবকিছু। শেখ হাসিনা যে কথা বলেছিল, সেই একই কথা বলেছিল এই নব্য জামায়াত নেতা......।’
তিনি প্রশ্ন রাখেন, ‘তাহলে কি শেখ হাসিনাও জামায়াতে জায়গা পাবে? অবাক হইনি, ব্যথিত হয়েছি। আমি মনে করি, জামায়াতের শীর্ষ নেতাদের সিদ্ধান্তে জামায়াত-শিবিরের অনেক নেতাকর্মীও আহত হয়েছে। ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য সমাজের নিকৃষ্ট মানুষদের দলে জায়গা দেওয়া জুলাই গণঅভ্যুত্থানের চেতনা পরিপন্থী! এই গাদ্দারকে জামায়াত দলে রাখে নাকি বাদ দেয়, দেখার অপেক্ষায়!’
গত শনিবার (১৩ ডিসেম্বর) জামায়াতের আমির শফিকুর রহমানের সঙ্গে দেখা করে প্রাথমিক সহযোগী সদস্য ফরম পূরণ করে আনুষ্ঠানিকভাবে দলটিতে যোগ দেন আখতারুজ্জামান। পরে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এক পোস্টে জানানো হয়, এ সময় জামায়াতের আমিরের সঙ্গে দলের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার ও সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আবদুল হালিম উপস্থিত ছিলেন।
ছবিসহ যোগদান অনুষ্ঠান সম্পর্কিত জামায়াতের পোস্টে আরও বলা হয়েছে, মেজর (অব.) আখতারুজ্জামান জামায়াতে ইসলামীর নীতি ও আদর্শ, দেশপ্রেম এবং দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় দলের অবিচল অবস্থানের প্রতি গভীর আস্থা ও সন্তোষ প্রকাশ করেন। এ সময় তিনি সংগঠনের প্রাথমিক সহযোগী সদস্য ফরম পূরণ করে আনুষ্ঠানিকভাবে জামায়াতে যোগদান করেন। ইসলাম ও ইসলামি মূল্যবোধ, দেশের স্বার্থ এবং স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষায় অবশিষ্ট জীবন অতিবাহিত করার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। পাশাপাশি জামায়াতের নিয়মনীতি, আদর্শ, দলীয় শৃঙ্খলা ও আনুগত্যের প্রতি সর্বদা অনুগত থাকার অঙ্গীকার করেন।
আখতারুজ্জামানকে আন্তরিকভাবে আলিঙ্গন করেন জামায়াতের আমির শফিকুর রহমান। পোস্টে জানানো হয়, তিনি তাঁর দীর্ঘ নেক হায়াত কামনা করেন বলে পোস্টে উল্লেখ করা হয়।