leadT1ad

ফাঁকা ২৮ আসনের ১৩টিতে লড়বে বিএনপি, চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত চলতি সপ্তাহে

বিএনপির লোগো

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে এখন পর্যন্ত ২৭২টি আসনে প্রার্থী দিয়েছে বিএনপি। এখনো ফাঁকা রাখা হয়েছে ২৮টি আসন। এসব আসনের কিছু যুগপৎ আন্দোলনের মিত্রদের ছাড় দেবে এবং বাকি আসনগুলো নিজের ঘরেই রাখছে দলটি। বিএনপি সূত্র বলছে, ফাঁকা আসনের অন্তত ১৩টি বিএনপি নিজের ঘরেই রাখতে যাচ্ছে। সে ক্ষেত্রে মিত্রদের ভাগ্যে থাকতে পারে ১৫টি আসনে বিএনপির সমর্থন। আজ বুধবার ও আগামীকাল বৃহস্পতিবার মিত্র দল ও ফাঁকা আসনের প্রার্থীদের সঙ্গে বিএনপির হাইকমান্ডের বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। এ বৈঠকে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসতে পারে বলে জানিয়েছে সূত্রটি।

বিএনপি সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) সংশোধনীর কারণে জোটবদ্ধ দলগুলোর অভিন্ন মার্কায় নির্বাচন করার সুযোগ নেই। বিএনপি মনে করে, ছোট দলগুলোর বেশিরভাগ নেতাই নিজ মার্কায় ভোটে জিতে আসতে পারবেন না। তবে যুগপৎ আন্দোলনের মিত্রদের মূল্যায়ন করতে চায় বিএনপি। এ জন্য কিছু আসনে প্রার্থী দেবে না বিএনপি, মিত্রদের সমর্থন দিয়ে আসন সমঝোতা করবে দলটি। সে ক্ষেত্রে বিএনপি অন্তত ১৩টি আসন নিজেদের ঘরেই রাখছে। ইতোমধ্যেই সংশ্লিষ্ট আসনের প্রার্থীদের ঢাকায় ডাকা হয়েছে।

বিএনপির আরেকটি নির্ভরযোগ্য সূত্র বলছে, অভ্যন্তরীণ কোন্দলের আশঙ্কায় ও দলের অভ্যন্তরে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতার কারণে বেশ কিছু আসন ফাঁকা রাখা হয়েছে। লালমনিরহাট-২, ঝিনাইদহ-১, ঝিনাইদহ-৪, নরসিংদী-৩ এবং চট্টগ্রাম-১১ আসনে একাধিক শক্তিশালী প্রার্থী রয়েছে। সূত্রটি বলছে, এসব আসনের প্রার্থীদের সঙ্গে সমঝোতা করে প্রার্থী ঘোষণা করবে দলটি।

সূত্রটি আরও জানায়, নীলফামারী-২, পাবনা-১ এবং ময়মনসিংহ-১০ আসন শক্তিশালী প্রার্থীর অভাবে ফাঁকা রাখা হয়েছে। এসব আসনে বিএনপির বিদ্যমান নেতা-কর্মীদের বাইরেও বুদ্ধিজীবী বা পেশাজীবীদের ভাবা হচ্ছে।

বিএনপির একাধিক কেন্দ্রীয় নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মিত্র ও শরিকদের সঙ্গে আলোচনা শেষ না হওয়ায় ফাঁকা আসনে প্রার্থী ঘোষণা করা হচ্ছে না। এ আলোচনা শেষ হলে বাকি সব আসনের প্রার্থী একসঙ্গে ঘোষণা করা হবে। যেহেতু হাতে সময় কম, সে ক্ষেত্রে তারেক রহমান দেশে ফেরার আগেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসার সম্ভাবনা দেখছেন নেতারা।

বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশারফ হোসেন স্ট্রিমকে বলেন, ‘জোটের ব্যাপারে বিএনপির ভেতরে আলোচনা চলছে। কোনো একক সিদ্ধান্ত এখন পর্যন্ত বিএনপি নেয়নি।’

বিএনপির স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য স্ট্রিমকে বলেন, ‘এবার আমরা জোট করছি না। তবে কিছু আসন মিত্রদের ছেড়ে দেওয়া হবে। বাকিটা বিএনপি তাদের দলের প্রার্থীদের মধ্যে যাচাই-বাছাই করে ঘোষণা করবে। কবে নাগাদ ঘোষণা হবে—এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এখনো আলোচনা শেষ হয়নি। শেষ হলে বোঝা যাবে।’

বাগেরহাট জেলার একাধিক মনোনয়নপ্রত্যাশী স্ট্রিমকে জানান, জেলায় মনোনয়নপ্রত্যাশীদের অধিকাংশ বর্তমানে ঢাকায় অবস্থান করছেন। বুধবার তাঁদের সঙ্গে বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে হাইকমান্ডের। এ সময় আগামীকাল প্রার্থিতা ঘোষণা হওয়ার আশা প্রকাশ করেন তাঁরা।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য স্ট্রিমকে বলেন, ‘এবার আমরা জোট করছি না। তবে কিছু আসন মিত্রদের ছেড়ে দেওয়া হবে। বাকিটা বিএনপি তাদের দলের প্রার্থীদের মধ্যে যাচাই-বাছাই করে ঘোষণা করবে। কবে নাগাদ ঘোষণা হবে—এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এখনো আলোচনা শেষ হয়নি। শেষ হলে বোঝা যাবে।’

ফাঁকা আসনে আলোচনায় যারা
ঢাকা-১৩ এবং ঢাকা-১৭ আসনে মিত্রদের ছাড় দেওয়া হলেও ঢাকা-২০ আসন নিজেদের ঘরেই রাখছে বিএনপি। এ আসনে সর্বশেষ ২০১৮ সালের নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী ছিলেন ধামরাই উপজেলা বিএনপির সভাপতি তমিজ উদ্দিন। আগামী নির্বাচনেও তিনি মনোনয়নপ্রত্যাশী। এ ছাড়া মনোনয়নের প্রত্যাশায় রয়েছেন জেলা যুবদলের সভাপতি ইয়াসিন ফেরদৌস মুরাদ, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক নাজমুল হাসান অভি এবং জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আহমেদ।

বাগেরহাট জেলায় এখনো প্রার্থী ঘোষণা করেনি বিএনপি। আসন বিন্যাস সংক্রান্ত জটিলতার কারণে প্রার্থী ঘোষণা না করা হলেও গত ৪ ডিসেম্বর বাগেরহাট জেলার চারটি আসন পুনর্বহাল করে পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করেছে হাইকোর্ট। এ আসনে মিত্র দলগুলোর কোনো শক্ত প্রার্থী নেই। চারটি আসন বিএনপি নিজের ঘরেই রাখবে। নির্বাচনী মাঠে রয়েছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় ও তৃণমূলের একাধিক নেতা।

বাগেরহাট-১ আসনে বিএনপির মনোনয়ন পেতে পারেন কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও সাবেক সংসদ সদস্য শেখ মুজিবুর রহমান কিংবা কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য শেখ ওহিদুজ্জামান দিপু। বাগেরহাট-২ আসনে বিএনপির মনোনয়ন পেতে পারেন জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি এম. এ. সালাম অথবা তাঁর বড় ভাই জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা এম. এ. এইচ. সেলিম। তবে এ পরিবারের হাতে ধানের শীষ না উঠলে মনোনয়ন পেতে পারেন জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ইঞ্জিনিয়ার এটিএম আকরাম হোসেন তালিম।

বাগেরহাট-৩ আসনে বিএনপির মনোনয়ন পেতে পারেন কেন্দ্রীয় কমিটির গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক কৃষিবিদ শামীমুর রহমান শামীম অথবা জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ড. শেখ ফরিদুল ইসলাম। বাগেরহাট-৪ আসনে বিএনপির মনোনয়ন পেতে পারেন কেন্দ্রীয় শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক প্রফেসর ড. এ. বি. এম. ওবায়দুল ইসলাম।

নরসিংদী-৩ আসনে আলোচনায় রয়েছেন জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মনজুর এলাহি এবং ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য আকরামুল হাসান মিন্টু। আরও একাধিক প্রার্থী থাকলেও শেষ পর্যন্ত এই দু’জনের একজনকে ধানের শীষের প্রার্থী করা হতে পারে।

ঝিনাইদহ জেলার চারটি আসনের তিনটি ফাঁকা রেখেছে বিএনপি। ঝিনাইদহ-১ আসনে ধানের শীষের প্রার্থী হতে পারেন বর্তমান অ্যাটর্নি জেনারেল ও বিএনপির সাবেক মানবাধিকার বিষয়ক সম্পাদক মো. আসাদুজ্জামান।

ঝিনাইদহ জেলার চারটি আসনের তিনটি ফাঁকা রেখেছে বিএনপি। ঝিনাইদহ-১ আসনে ধানের শীষের প্রার্থী হতে পারেন বর্তমান অ্যাটর্নি জেনারেল ও বিএনপির সাবেক মানবাধিকার বিষয়ক সম্পাদক মো. আসাদুজ্জামান। ইতোমধ্যেই তিনি নির্বাচনে লড়ার ঘোষণা দিয়েছেন এবং নির্বাচনী এলাকায় তিনি বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করছেন। তবে এ আসনে বিএনপির কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক জৈন্ত কুমার কুণ্ডু দীর্ঘদিন ধরে মনোনয়ন দৌড়ে রয়েছেন।

ঝিনাইদহ-২ আসনে বিএনপির প্রার্থী হতে চান জেলা বিএনপির সভাপতি এম এ মজিদ। গত ২৬ নভেম্বর মজিদকে মনোনয়ন না দিলে ঝিনাইদহ ও হরিণাকুন্ডু এলাকার ৫৭ হাজার সনাতনী ভোটার ভোটকেন্দ্রে না যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। সাবেক সংসদ সদস্য (এমপি) মশিউর রহমানের ছেলে ড্যাব নেতা ইব্রাহীম রহমান বাবুও রয়েছেন মনোনয়নপ্রত্যাশীদের তালিকায়। তবে এই আসনে গণঅধিকার পরিষদের হয়ে লড়বেন কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান। বিএনপির সঙ্গে সমঝোতা হলে তিনিই হতে পারেন এ আসনে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী।

ঝিনাইদহ-৪ আসনে বিএনপির প্রার্থী হওয়ার দৌড়ে আছেন স্বেচ্ছাসেবক দলের সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম ফিরোজ, প্রয়াত সংসদ সদস্য শহীদুজ্জামান বিল্টুর স্ত্রী মুরশিদা জামান এবং কালীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সাবেক সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক হামিদুল ইসলাম হামিদ।

ব্যবসা-বাণিজ্য ও দেশের অর্থনৈতিক দিক থেকে চট্টগ্রাম-১১ (বন্দর-পতেঙ্গা) আসন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দেশের বৃহৎ রাজস্ব আহরণকারী প্রতিষ্ঠান চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের অবস্থানও এই আসনে। রাজনৈতিক গুরুত্বের পাশাপাশি ব্যবসায়ীদেরও আলাদা নজর থাকে এই আসনে। এ আসনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরীর ছেলে ইসরাফিল মাহমুদ চৌধুরী খসরু মনোনয়নপ্রত্যাশী। পাশাপাশি মহানগর বিএনপির সদস্যসচিব নাজিমুর রহমানও এই আসন থেকে মনোনয়ন পেতে আগ্রহী। এই আসনে এই দুইজনের বাইরে সাবেক মন্ত্রী প্রয়াত আব্দুল্লাহ আল নোমানের ছেলে সাঈদ আল নোমানও মনোনয়নপ্রত্যাশী। সাঈদ আল নোমান জাতীয়তাবাদী পাট শ্রমিক দলের কেন্দ্রীয় সভাপতি।

এদিকে, লক্ষ্মীপুর-১ আসনে সদ্য বিএনপিতে যোগ দেওয়া শাহাদাত হোসেন সেলিম মনোনয়ন পেতে পারেন।

তা ছাড়া পাবনা-১, নীলফামারী-২ এবং ময়মনসিংহ-১০ আসনে চমক দেখাতে পারে বিএনপি। শক্তিশালী প্রার্থী না থাকায় বর্তমান মনোনয়নপ্রত্যাশীদের বাইরে কাউকে প্রার্থী করতে পারে দলটি।

Ad 300x250
সর্বাধিক পঠিত

সম্পর্কিত