স্ট্রিম ডেস্ক

জাতীয় সঞ্চয়পত্র হলো সরকারের একটি ঋণ নেওয়ার মাধ্যম। সরকার সাধারণ মানুষের কাছ থেকে টাকা নেয়। এর বিপরীতে নির্দিষ্ট হারে মুনাফা দেয়। এই মুনাফার হার স্থায়ী নয়। সময় ও পরিস্থিতি অনুযায়ী তা বাড়ে বা কমে। ডাকঘর ও ব্যাংকের মাধ্যমে এসব সঞ্চয়পত্র বিক্রি করা হয়। এতে মুনাফা নিশ্চিত থাকে। এই কারণে মধ্যবিত্ত, অবসরপ্রাপ্ত মানুষ ও নির্দিষ্ট আয়ের ব্যক্তিদের কাছে এটি জনপ্রিয়।
ব্যাংকের আমানতের তুলনায় সঞ্চয়পত্রে সাধারণত মুনাফা কিছুটা বেশি থাকে। সরকার প্রতি ছয় মাস পরপর সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার পর্যালোচনা করে। সাধারণত নতুন হার কার্যকর হয় ১ জানুয়ারি ও ১ জুলাই থেকে। ২০২৫ সালের শেষ দিকে অর্থ মন্ত্রণালয় নতুন একটি প্রস্তাব তৈরি করেছে। এই প্রস্তাব অনুযায়ী ২০২৬ সালের ১ জানুয়ারি থেকে মুনাফার হার আবার কমতে পারে। এর আগে চলতি বছরের মাঝামাঝিও এক দফা মুনাফার হার কমানো হয়েছিল।
জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি ২০২৫–২৬ অর্থবছরের প্রথম চার মাসে (জুলাই-অক্টোবরে) সঞ্চয়পত্র বিক্রি থেকে নিট ২ হাজার ৩৬৯ কোটি টাকার ঋণ নিয়েছে সরকার। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে নিট ঋণ ঋণাত্মক ছিল প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকা। গত অক্টোবর শেষে সঞ্চয়পত্রে সরকারের ঋণের স্থিতি ছিল ৩ লাখ ৪১ হাজার কোটি টাকা।
বর্তমান পদ্ধতি: বাজারভিত্তিক মুনাফা হার
২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে সঞ্চয়পত্রের মুনাফা নির্ধারণে নতুন ব্যবস্থা চালু হয়েছে। এখন বেশির ভাগ সঞ্চয়পত্রের হার বাজারের সঙ্গে যুক্ত।
এই হার নির্ধারিত হয়, সরকারি ট্রেজারি বন্ডের গড় সুদের হারের ভিত্তিতে। বিশেষ করে ২ বছর ও ৫ বছর মেয়াদি বন্ডের হার বিবেচনায় নেওয়া হয়। এর সঙ্গে সর্বোচ্চ শূন্য দশমিক পাঁচ শতাংশ পর্যন্ত অতিরিক্ত মুনাফা যোগ করা হয়।
এই ব্যবস্থায় সঞ্চয়পত্রের হার সরাসরি বাজার পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করে। সরকার যখন বাজার থেকে বেশি সুদে ঋণ নেয়, তখন মুনাফা বাড়ে।
আবার ট্রেজারি বন্ডের সুদ কমলে সঞ্চয়পত্রের হারও কমে। ২০২৬ সালের জানুয়ারিতে সম্ভাব্য কাটছাঁটের কারণও ট্রেজারি বিলের সুদ কমে যাওয়া।
সার্বিক অর্থনৈতিক ও নীতিগত কারণ
সঞ্চয়পত্রের হার পরিবর্তন শুধু হিসাবের বিষয় নয়। এর পেছনে সরকারের অর্থনৈতিক অগ্রাধিকার কাজ করে।
সরকারের ঋণ খরচ নিয়ন্ত্রণ: সঞ্চয়পত্র সরকারের জন্য একটি বড় ঋণের উৎস। এটি ব্যাংকের বাইরে থেকে নেওয়া ঋণ। মুনাফার হার বেশি হলে সরকারের পরিশোধ ব্যয় বাড়ে। এতে বাজেটের ওপর চাপ সৃষ্টি হয়। হার কমালে এই চাপ কিছুটা কমে।
রাজস্ব আদায় কম হলে বা বাজেট ঘাটতি বাড়লেও মুনাফা কমানো হয়। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলও সঞ্চয়পত্রের ওপর নির্ভরতা কমানোর পরামর্শ দিয়েছে।
বিনিয়োগ প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ: সরকার যখন বেশি ঋণ নিতে চায়, তখন মুনাফা বাড়ানো হয়। এতে মানুষ সঞ্চয়পত্রে বেশি বিনিয়োগ করে। আবার ঋণের চাপ কমাতে চাইলে বা বিক্রি বেশি হয়ে গেলে মুনাফার হার কমানো হয়। এতে সরকারের দায় কমে এবং টাকা অন্য খাতে যেতে পারে।
ব্যাংক খাতের সঙ্গে সমন্বয়: সঞ্চয়পত্রের মুনাফা বেশি হলে মানুষ আর ব্যাংকে টাকা রাখতে চায় না। এতে ব্যাংকে আমানত কমে যায় এবং ব্যাংক ঋণ দিতে সমস্যায় পড়ে। মুনাফার হার কমালে মানুষ ব্যাংকে টাকা রাখতে আগ্রহী হয়।
আবার ব্যাংকের আমানতের সুদের হার বাড়লে সঞ্চয়পত্রের মুনাফা বাড়ানোরও চাপ আসে। ব্যাংকে সুদ কমলে সঞ্চয়পত্রের হারও কমানো হয়। কারণ দুই জায়গার সুদের মধ্যে বড় পার্থক্য রাখতে চায় না সরকার। এটা ব্যবসা ও বেসরকারি খাতের জন্য সহায়ক।
মূল্যস্ফীতি ও সামষ্টিক অর্থনীতি: মুনাফা বেশি হলে মানুষ খরচ কমায়। এতে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সাহায্য হয়। মুনাফা বেশি হলে বাজারে টাকা আটকে যায়। মুনাফা কমালে মানুষ অন্য খাতে বিনিয়োগে আগ্রহী হয়। বাজারে অর্থপ্রবাহ বাড়ে। পরিস্থিতি অনুযায়ী সরকার এই সমন্বয় করে।
স্বল্প আয়ের মানুষের সুরক্ষা: সঞ্চয়পত্রে স্তরভিত্তিক মুনাফা ব্যবস্থা আছে। ছোট অঙ্কের বিনিয়োগে তুলনামূলক বেশি সুবিধা দেওয়া হয়। এর উদ্দেশ্য কম আয়ের সঞ্চয়কারীদের সহায়তা করা।
আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি: বিশ্ববাজারে সুদের হার, ডলার সংকট বা বৈদেশিক ঋণের চাপও প্রভাব ফেলে। এই পরিস্থিতিতে সরকার নীতি সমন্বয় করে।
সাম্প্রতিক প্রবণতা
২০২৫ সালের জানুয়ারিতে মুনাফা বাড়ানো হয়েছিল। সে সময় ৫ বছর মেয়াদি সঞ্চয়পত্রের হার ছিল প্রায় ১২ দশমিক ৪ শতাংশ।
জুলাই থেকে বাজারভিত্তিক সংস্কারের অংশ হিসেবে হার কমানো হয়। বর্তমানে সঞ্চয়পত্রের সর্বোচ্চ মুনাফার হার ১১ দশমিক ৯৮ শতাংশ। আর সর্বনিম্ন মুনাফার হার ৯ দশমিক ৭২ শতাংশ।
এখন ২০২৬ সালের জানুয়ারিতে আরেক দফা কমানোর প্রস্তুতি চলছে। নতুন প্রস্তাবে এ হার গড়ে দশমিক ৫ শতাংশ করে কমতে পারে।
তবে কম বিনিয়োগের ক্ষেত্রে মুনাফার হার বর্তমান হারের মতোই তুলনামূলকভাবে বেশি থাকবে। আর বেশি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে মুনাফার হার হবে কম। ৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা বা এর কম হলে মুনাফার হার হবে বেশি। আর ৭ লাখ ৫০ হাজার টাকার বেশি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে মুনাফার হার হবে কম।
দেশে জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের আওতায় বিভিন্ন ধরনের সঞ্চয়পত্র চালু রয়েছে। এর মধ্যে পরিবার সঞ্চয়পত্র সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়।
বর্তমানে পরিবার সঞ্চয়পত্রে সাড়ে ৭ লাখ টাকার কম বিনিয়োগে পাঁচ বছর শেষে মুনাফার হার ১১ দশমিক ৯৩ শতাংশ। সাড়ে ৭ লাখ টাকার বেশি বিনিয়োগে এই হার ১১ দশমিক ৮০ শতাংশ। গত ১ জুলাইয়ের আগে এই মুনাফার হার ১২ শতাংশের বেশি ছিল।
পেনশনার সঞ্চয়পত্রে সাড়ে ৭ লাখ টাকার কম বিনিয়োগে মেয়াদ শেষে মুনাফার হার ১১ দশমিক ৯৮ শতাংশ। সাড়ে ৭ লাখ টাকার বেশি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে মুনাফার হার ১১ দশমিক ৮০ শতাংশ।
পাঁচ বছর মেয়াদি বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্রে সাড়ে ৭ লাখ টাকার কম বিনিয়োগে মেয়াদ শেষে মুনাফার হার ১১ দশমিক ৮৩ শতাংশ। সাড়ে ৭ লাখ টাকার বেশি বিনিয়োগে এই হার ১১ দশমিক ৮০ শতাংশ।
তিন মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্রে সাড়ে ৭ লাখ টাকার কম বিনিয়োগে মেয়াদ শেষে মুনাফার হার ১১ দশমিক ৮২ শতাংশ। সাড়ে ৭ লাখ টাকার বেশি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে মুনাফার হার ১১ দশমিক ৭৭ শতাংশ।
এ ছাড়া ডাকঘর সঞ্চয় ব্যাংকের মেয়াদি হিসাবে তিন বছর মেয়াদ পূর্তিতে সাড়ে ৭ লাখ টাকার কম বিনিয়োগে মুনাফার হার ১১ দশমিক ৮২ শতাংশ। সাড়ে ৭ লাখ টাকার বেশি বিনিয়োগে এই হার ১১ দশমিক ৭৭ শতাংশ।
ওয়েজ আর্নার ডেভেলপমেন্ট বন্ড, ইউএস ডলার প্রিমিয়াম বন্ড, ইউএস ডলার ইনভেস্টমেন্ট বন্ড এবং ডাকঘর সঞ্চয় ব্যাংকের সাধারণ হিসাবের মুনাফার হারে কোনো পরিবর্তন আনার পরিকল্পনা নেই বলে জানা গেছে।
সংক্ষেপে, সঞ্চয়পত্রের মুনাফা বাড়ে বা কমে—বাজারের সুদ, সরকারের আর্থিক অবস্থা, বাজেট চাপ, মুদ্রাস্ফীতি এবং ব্যাংক খাতের স্বার্থ বিবেচনায়। তাই প্রতি ছয় মাস পরপর হার পর্যালোচনা করা হয়। পরিস্থিতি অনুযায়ী নতুন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সঞ্চয়পত্রের মুনাফা নির্ধারণে ভারসাম্য রাখা হয়। সঞ্চয়কারীর স্বার্থ, সরকারের ব্যয় এবং বাজার পরিস্থিতি, সবই বিবেচনায় থাকে।

জাতীয় সঞ্চয়পত্র হলো সরকারের একটি ঋণ নেওয়ার মাধ্যম। সরকার সাধারণ মানুষের কাছ থেকে টাকা নেয়। এর বিপরীতে নির্দিষ্ট হারে মুনাফা দেয়। এই মুনাফার হার স্থায়ী নয়। সময় ও পরিস্থিতি অনুযায়ী তা বাড়ে বা কমে। ডাকঘর ও ব্যাংকের মাধ্যমে এসব সঞ্চয়পত্র বিক্রি করা হয়। এতে মুনাফা নিশ্চিত থাকে। এই কারণে মধ্যবিত্ত, অবসরপ্রাপ্ত মানুষ ও নির্দিষ্ট আয়ের ব্যক্তিদের কাছে এটি জনপ্রিয়।
ব্যাংকের আমানতের তুলনায় সঞ্চয়পত্রে সাধারণত মুনাফা কিছুটা বেশি থাকে। সরকার প্রতি ছয় মাস পরপর সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার পর্যালোচনা করে। সাধারণত নতুন হার কার্যকর হয় ১ জানুয়ারি ও ১ জুলাই থেকে। ২০২৫ সালের শেষ দিকে অর্থ মন্ত্রণালয় নতুন একটি প্রস্তাব তৈরি করেছে। এই প্রস্তাব অনুযায়ী ২০২৬ সালের ১ জানুয়ারি থেকে মুনাফার হার আবার কমতে পারে। এর আগে চলতি বছরের মাঝামাঝিও এক দফা মুনাফার হার কমানো হয়েছিল।
জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি ২০২৫–২৬ অর্থবছরের প্রথম চার মাসে (জুলাই-অক্টোবরে) সঞ্চয়পত্র বিক্রি থেকে নিট ২ হাজার ৩৬৯ কোটি টাকার ঋণ নিয়েছে সরকার। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে নিট ঋণ ঋণাত্মক ছিল প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকা। গত অক্টোবর শেষে সঞ্চয়পত্রে সরকারের ঋণের স্থিতি ছিল ৩ লাখ ৪১ হাজার কোটি টাকা।
বর্তমান পদ্ধতি: বাজারভিত্তিক মুনাফা হার
২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে সঞ্চয়পত্রের মুনাফা নির্ধারণে নতুন ব্যবস্থা চালু হয়েছে। এখন বেশির ভাগ সঞ্চয়পত্রের হার বাজারের সঙ্গে যুক্ত।
এই হার নির্ধারিত হয়, সরকারি ট্রেজারি বন্ডের গড় সুদের হারের ভিত্তিতে। বিশেষ করে ২ বছর ও ৫ বছর মেয়াদি বন্ডের হার বিবেচনায় নেওয়া হয়। এর সঙ্গে সর্বোচ্চ শূন্য দশমিক পাঁচ শতাংশ পর্যন্ত অতিরিক্ত মুনাফা যোগ করা হয়।
এই ব্যবস্থায় সঞ্চয়পত্রের হার সরাসরি বাজার পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করে। সরকার যখন বাজার থেকে বেশি সুদে ঋণ নেয়, তখন মুনাফা বাড়ে।
আবার ট্রেজারি বন্ডের সুদ কমলে সঞ্চয়পত্রের হারও কমে। ২০২৬ সালের জানুয়ারিতে সম্ভাব্য কাটছাঁটের কারণও ট্রেজারি বিলের সুদ কমে যাওয়া।
সার্বিক অর্থনৈতিক ও নীতিগত কারণ
সঞ্চয়পত্রের হার পরিবর্তন শুধু হিসাবের বিষয় নয়। এর পেছনে সরকারের অর্থনৈতিক অগ্রাধিকার কাজ করে।
সরকারের ঋণ খরচ নিয়ন্ত্রণ: সঞ্চয়পত্র সরকারের জন্য একটি বড় ঋণের উৎস। এটি ব্যাংকের বাইরে থেকে নেওয়া ঋণ। মুনাফার হার বেশি হলে সরকারের পরিশোধ ব্যয় বাড়ে। এতে বাজেটের ওপর চাপ সৃষ্টি হয়। হার কমালে এই চাপ কিছুটা কমে।
রাজস্ব আদায় কম হলে বা বাজেট ঘাটতি বাড়লেও মুনাফা কমানো হয়। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলও সঞ্চয়পত্রের ওপর নির্ভরতা কমানোর পরামর্শ দিয়েছে।
বিনিয়োগ প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ: সরকার যখন বেশি ঋণ নিতে চায়, তখন মুনাফা বাড়ানো হয়। এতে মানুষ সঞ্চয়পত্রে বেশি বিনিয়োগ করে। আবার ঋণের চাপ কমাতে চাইলে বা বিক্রি বেশি হয়ে গেলে মুনাফার হার কমানো হয়। এতে সরকারের দায় কমে এবং টাকা অন্য খাতে যেতে পারে।
ব্যাংক খাতের সঙ্গে সমন্বয়: সঞ্চয়পত্রের মুনাফা বেশি হলে মানুষ আর ব্যাংকে টাকা রাখতে চায় না। এতে ব্যাংকে আমানত কমে যায় এবং ব্যাংক ঋণ দিতে সমস্যায় পড়ে। মুনাফার হার কমালে মানুষ ব্যাংকে টাকা রাখতে আগ্রহী হয়।
আবার ব্যাংকের আমানতের সুদের হার বাড়লে সঞ্চয়পত্রের মুনাফা বাড়ানোরও চাপ আসে। ব্যাংকে সুদ কমলে সঞ্চয়পত্রের হারও কমানো হয়। কারণ দুই জায়গার সুদের মধ্যে বড় পার্থক্য রাখতে চায় না সরকার। এটা ব্যবসা ও বেসরকারি খাতের জন্য সহায়ক।
মূল্যস্ফীতি ও সামষ্টিক অর্থনীতি: মুনাফা বেশি হলে মানুষ খরচ কমায়। এতে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সাহায্য হয়। মুনাফা বেশি হলে বাজারে টাকা আটকে যায়। মুনাফা কমালে মানুষ অন্য খাতে বিনিয়োগে আগ্রহী হয়। বাজারে অর্থপ্রবাহ বাড়ে। পরিস্থিতি অনুযায়ী সরকার এই সমন্বয় করে।
স্বল্প আয়ের মানুষের সুরক্ষা: সঞ্চয়পত্রে স্তরভিত্তিক মুনাফা ব্যবস্থা আছে। ছোট অঙ্কের বিনিয়োগে তুলনামূলক বেশি সুবিধা দেওয়া হয়। এর উদ্দেশ্য কম আয়ের সঞ্চয়কারীদের সহায়তা করা।
আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি: বিশ্ববাজারে সুদের হার, ডলার সংকট বা বৈদেশিক ঋণের চাপও প্রভাব ফেলে। এই পরিস্থিতিতে সরকার নীতি সমন্বয় করে।
সাম্প্রতিক প্রবণতা
২০২৫ সালের জানুয়ারিতে মুনাফা বাড়ানো হয়েছিল। সে সময় ৫ বছর মেয়াদি সঞ্চয়পত্রের হার ছিল প্রায় ১২ দশমিক ৪ শতাংশ।
জুলাই থেকে বাজারভিত্তিক সংস্কারের অংশ হিসেবে হার কমানো হয়। বর্তমানে সঞ্চয়পত্রের সর্বোচ্চ মুনাফার হার ১১ দশমিক ৯৮ শতাংশ। আর সর্বনিম্ন মুনাফার হার ৯ দশমিক ৭২ শতাংশ।
এখন ২০২৬ সালের জানুয়ারিতে আরেক দফা কমানোর প্রস্তুতি চলছে। নতুন প্রস্তাবে এ হার গড়ে দশমিক ৫ শতাংশ করে কমতে পারে।
তবে কম বিনিয়োগের ক্ষেত্রে মুনাফার হার বর্তমান হারের মতোই তুলনামূলকভাবে বেশি থাকবে। আর বেশি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে মুনাফার হার হবে কম। ৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা বা এর কম হলে মুনাফার হার হবে বেশি। আর ৭ লাখ ৫০ হাজার টাকার বেশি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে মুনাফার হার হবে কম।
দেশে জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের আওতায় বিভিন্ন ধরনের সঞ্চয়পত্র চালু রয়েছে। এর মধ্যে পরিবার সঞ্চয়পত্র সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়।
বর্তমানে পরিবার সঞ্চয়পত্রে সাড়ে ৭ লাখ টাকার কম বিনিয়োগে পাঁচ বছর শেষে মুনাফার হার ১১ দশমিক ৯৩ শতাংশ। সাড়ে ৭ লাখ টাকার বেশি বিনিয়োগে এই হার ১১ দশমিক ৮০ শতাংশ। গত ১ জুলাইয়ের আগে এই মুনাফার হার ১২ শতাংশের বেশি ছিল।
পেনশনার সঞ্চয়পত্রে সাড়ে ৭ লাখ টাকার কম বিনিয়োগে মেয়াদ শেষে মুনাফার হার ১১ দশমিক ৯৮ শতাংশ। সাড়ে ৭ লাখ টাকার বেশি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে মুনাফার হার ১১ দশমিক ৮০ শতাংশ।
পাঁচ বছর মেয়াদি বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্রে সাড়ে ৭ লাখ টাকার কম বিনিয়োগে মেয়াদ শেষে মুনাফার হার ১১ দশমিক ৮৩ শতাংশ। সাড়ে ৭ লাখ টাকার বেশি বিনিয়োগে এই হার ১১ দশমিক ৮০ শতাংশ।
তিন মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্রে সাড়ে ৭ লাখ টাকার কম বিনিয়োগে মেয়াদ শেষে মুনাফার হার ১১ দশমিক ৮২ শতাংশ। সাড়ে ৭ লাখ টাকার বেশি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে মুনাফার হার ১১ দশমিক ৭৭ শতাংশ।
এ ছাড়া ডাকঘর সঞ্চয় ব্যাংকের মেয়াদি হিসাবে তিন বছর মেয়াদ পূর্তিতে সাড়ে ৭ লাখ টাকার কম বিনিয়োগে মুনাফার হার ১১ দশমিক ৮২ শতাংশ। সাড়ে ৭ লাখ টাকার বেশি বিনিয়োগে এই হার ১১ দশমিক ৭৭ শতাংশ।
ওয়েজ আর্নার ডেভেলপমেন্ট বন্ড, ইউএস ডলার প্রিমিয়াম বন্ড, ইউএস ডলার ইনভেস্টমেন্ট বন্ড এবং ডাকঘর সঞ্চয় ব্যাংকের সাধারণ হিসাবের মুনাফার হারে কোনো পরিবর্তন আনার পরিকল্পনা নেই বলে জানা গেছে।
সংক্ষেপে, সঞ্চয়পত্রের মুনাফা বাড়ে বা কমে—বাজারের সুদ, সরকারের আর্থিক অবস্থা, বাজেট চাপ, মুদ্রাস্ফীতি এবং ব্যাংক খাতের স্বার্থ বিবেচনায়। তাই প্রতি ছয় মাস পরপর হার পর্যালোচনা করা হয়। পরিস্থিতি অনুযায়ী নতুন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সঞ্চয়পত্রের মুনাফা নির্ধারণে ভারসাম্য রাখা হয়। সঞ্চয়কারীর স্বার্থ, সরকারের ব্যয় এবং বাজার পরিস্থিতি, সবই বিবেচনায় থাকে।

সম্পাদক পরিষদ ও নোয়াব আয়োজিত ‘মব ভায়োলেন্সে আক্রান্ত বাংলাদেশ’ শীর্ষক প্রতিবাদ সভাটি বাংলাদেশের সমকালীন সমাজ-রাজনৈতিক পরিস্থিতির একটি গুরুত্বপূর্ণ দলিল।
৫ ঘণ্টা আগে
সম্প্রতি বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার গুম বা এনফোর্সড ডিসঅ্যাপিয়ারেন্স প্রতিরোধে যুগান্তকারী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। গত বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে উপদেষ্টা পরিষদের এক বৈঠকে ‘গুম প্রতিরোধ ও প্রতিকার অধ্যাদেশ, ২০২৫’-এর নীতিগত ও চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
২ দিন আগে
গত কয়েক দিন বাংলাদেশ ও ভারতের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক ছিল ঘটনাবহুল ও উত্তেজনাকর। কূটনীতির শান্ত জল হঠাৎ করেই অস্থির হয়ে উঠেছে পাল্টাপাল্টি তলব ও কড়া বার্তা আদান-প্রদানের মধ্য দিয়ে। গত রোববার (১৪ ডিসেম্বর) ঢাকায় নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মাকে তলব করে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
২ দিন আগে
পারমাণবিক শক্তি নিয়ে ভারতের পার্লামেন্ট লোকসভায় একটি নতুন বিল পাশ হয়েছে। বিলটির শিরোনাম ‘সাস্টেইনেবল হার্নেসিং অ্যান্ড এডভান্সমেন্ট অফ নিউক্লিয়ার এনার্জি ফর ট্রান্সফর্মিং ইন্ডিয়া (শান্তি) বিল, ২০২৫’ । এই বিল ভারতের জ্বালানি নীতিতে বড় পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছে। ১৯৯১ সালের অর্থনৈতিক সংস্কারের পর এটিই..
৫ দিন আগে