সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দেশে পেঁয়াজ উৎপাদন উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। তবে উৎপাদন বাড়লেও বাজার ব্যবস্থাপনায় নানা চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে। সংগ্রহের পর ৩০ থেকে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত পেঁয়াজ নষ্ট হয়ে যায়। এর প্রধান কারণ অপর্যাপ্ত সংরক্ষণ ব্যবস্থা। জলবায়ুর বিরূপ প্রভাব এবং সরবরাহ ব্যবস্থার দুর্বলতাও বাজারে অস্থিরতা তৈরি করে।
স্ট্রিম ডেস্ক

বিশ্বের পেঁয়াজ উৎপাদনকারী দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে রয়েছে। তবে হেক্টরপ্রতি উৎপাদন এখনো বৈশ্বিক গড়ের তুলনায় কম। বাংলাদেশে গড় উৎপাদন প্রায় প্রতি হেক্টরে ১১ টন । বিশ্ব গড় উৎপাদন প্রায় ১৯ টন প্রতি হেক্টর। পাবনা, ফরিদপুর, রাজবাড়ী ও মেহেরপুর জেলায় পেঁয়াজ চাষ বেশি হয়। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দেশে পেঁয়াজ উৎপাদন উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে।
তবে উৎপাদন বাড়লেও বাজার ব্যবস্থাপনায় নানা চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে। সংগ্রহের পর ৩০ থেকে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত পেঁয়াজ নষ্ট হয়ে যায়। এর প্রধান কারণ অপর্যাপ্ত সংরক্ষণ ব্যবস্থা। জলবায়ুর বিরূপ প্রভাব এবং সরবরাহ ব্যবস্থার দুর্বলতাও বাজারে অস্থিরতা তৈরি করে।
দেশে পেঁয়াজ উৎপাদনের চিত্র
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৩৪ লাখ ১৭ হাজার টন, ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে ৩৭ লাখ ৯০ হাজার টন, ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে ৪২ লাখ ৫০ হাজার টন এবং ২০২৫-২৬ অর্থবছর শেষ না হতেই ৪২ লাখ ৬৪ হাজার টন পেঁয়াজ উৎপাদিত হয়েছে। দেশে বছরে পেঁয়াজের চাহিদা ২৫ থেকে ৩০ লাখ টন।
বাংলাদেশে বছরে উৎপাদিত পেঁয়াজের মাধ্যমে দেশের মোট চাহিদার প্রায় ৬৫ থেকে ৮০ শতাংশ পূরণ হয়। বাকি অংশ আমদানির মাধ্যমে মেটানো হয়। আমদানির প্রায় ৯৯ শতাংশ আসে ভারত থেকে। কৃষকেরা মোট উৎপাদনের প্রায় ৮৬ শতাংশ বাজারে বিক্রি করেন। ফলে পেঁয়াজ নিঃসন্দেহে অর্থনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণে একটি ফসল।
পেঁয়াজ চাষে বড় সমস্যা হলো সংগ্রহ পরবর্তী ক্ষতি। যথাযথভাবে শুকানো, সংরক্ষণ ও পরিবহনের অভাবে পেঁয়াজ নষ্ট হয়। আর্দ্র আবহাওয়ায় এই সমস্যা আরও তীব্র হয়। অতীতে এই ক্ষতি প্রায় ৫০ শতাংশ পর্যন্ত ছিল।
বর্তমানে উন্নত সংরক্ষণ পদ্ধতি চালু করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ‘ইমপ্যাক্ট ক্লাস্টার’সহ বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে ক্ষতি কমানোর চেষ্টা চলছে।
পেঁয়াজ তোলার মৌসুম
বাংলাদেশে পেঁয়াজ সংগ্রহ মূলত দুই মৌসুমে হয়ে থাকে। এগুলো হলো শীতকালীন (রবি) এবং গ্রীষ্মকালীন (খরিফ) মৌসুম।
দেশে প্রধানত রবি মৌসুমে পেঁয়াজ চাষ হয়। অক্টোবর থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে বীজ বপন করা হয়।
খরিফ মৌসুমে পেঁয়াজ চাষ ধীরে ধীরে বাড়ছে। এই মৌসুমকে দুটি ভাগে ভাগ করা হয়। খরিফ–১ চলে ১৫ মার্চ থেকে ১৫ জুন পর্যন্ত। খরিফ–২ চলে ১৬ জুন থেকে ১৫ অক্টোবর পর্যন্ত।
বাংলাদেশে পেঁয়াজের প্রধান শীতকালীন জাতগুলোর মধ্যে বারি পেঁয়াজ–১, বারি পেঁয়াজ–২ ও বারি পেঁয়াজ–৩ উল্লেখযোগ্য। গ্রীষ্মকালীন জাতের মধ্যে তাহেরপুরি ও বারি পেঁয়াজ–৪ চাষ হয়।
রবি মৌসুমই প্রধান সংগ্রহকাল। আগাম জাতের পেঁয়াজ, যেমন ‘মুড়িকাটা’ বা ‘আগামি’, ডিসেম্বরের দ্বিতীয়ার্ধ থেকে উঠতে শুরু করে। ফেব্রুয়ারির শেষ দিক থেকে এপ্রিল পর্যন্ত সংগ্রহ সর্বোচ্চ পর্যায়ে থাকে। অনেক ক্ষেত্রে মে মাস পর্যন্ত পেঁয়াজ বাজারে আসে।
সাধারণত ডিসেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহের পর নতুন পেঁয়াজ বাজারে প্রবেশ করে। এতে সরবরাহ কিছুটা স্থিতিশীল হয়। তবে ২০২৫ সালে কিছু এলাকায় পূর্ণাঙ্গ রবি সংগ্রহে বিলম্ব দেখা গেছে।
খরিফ মৌসুমে পেঁয়াজ চাষ তুলনামূলকভাবে কম। খরিফ–১ মৌসুমে জুলাই–আগস্টে এবং খরিফ–২ মৌসুমে অক্টোবর–নভেম্বরে পেঁয়াজ ওঠে। এই পেঁয়াজ মূলত শীতকালীন মজুত শেষ হওয়ার সময় বাজারে ঘাটতি পূরণে সহায়তা করে।
এই উৎপাদন চক্রের কারণে অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত একটি সংকটকাল তৈরি হয়। আগের মৌসুমের মজুত কমে যায়। নতুন পেঁয়াজ পুরোপুরি বাজারে আসার আগ পর্যন্ত সরবরাহ ঘাটতি থাকে।
নভেম্বর–ডিসেম্বরে পেঁয়াজের দাম বাড়ার কারণ
বাংলাদেশে প্রতি বছর নভেম্বর ও ডিসেম্বর মাসে পেঁয়াজের দাম হঠাৎ বেড়ে যায়। কখনো কখনো এই সময়ে দাম প্রায় দ্বিগুণ হয়ে ওঠে। এর পেছনে মৌসুমি ও কাঠামোগত কয়েকটি কারণ একসঙ্গে কাজ করে।
নভেম্বর–ডিসেম্বর হলো আগের মৌসুমের পেঁয়াজ সরবরাহের শেষ সময়। এই সময়ে সংরক্ষিত মজুত প্রায় শেষ হয়ে আসে। ফলে বাজারে সরবরাহ সংকট তৈরি হয়। ২০২৫ সালে অক্টোবর মাসে কেজিপ্রতি পেঁয়াজের দাম ছিল ৬০ থেকে ৭৫ টাকা। নভেম্বর মাসে তা বেড়ে ১০০ টাকার বেশি হয়ে যায়।
দেশে পর্যাপ্ত সরকারি বা আধুনিক সংরক্ষণাগারের অভাব রয়েছে। অধিকাংশ কৃষক জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত বাড়িতেই পেঁয়াজ মজুত করেন। এতে দীর্ঘমেয়াদে সংরক্ষণ সম্ভব হয় না। শুকানো থেকে শুরু করে পরিবহন ও সংরক্ষণের বিভিন্ন পর্যায়ে সংগ্রহ করা পেঁয়াজের বড় অংশ নষ্ট হয়ে যায়। এর ফলে অফ-সিজনে বাজারে ঘাটতি আরও বেড়ে যায়।
আবহাওয়া পরিস্থিতিও দামের ওপর প্রভাব ফেলে। ২০২৫ সালের অক্টোবরে বৃষ্টির কারণে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ জেলায় আগাম পেঁয়াজের ক্ষতি হয়। একই বছরে কিছু এলাকায় পেঁয়াজ তোলার সময়সূচি পিছিয়ে যায়। এতে বাজারে সরবরাহ আরও সংকুচিত হয়।
দেশীয় ঘাটতি পূরণে বাংলাদেশ প্রতিবছর গড়ে ৪ লাখ ৮০ হাজার থেকে ৬ লাখ টন পেঁয়াজ আমদানি করে। সর্বশেষ অর্থবছরে আমদানির পরিমাণ ছিল প্রায় ৪ লাখ ৮৩ হাজার টন। তবে আমদানিতে দেরি বা নীতিগত সিদ্ধান্ত বাজারে বড় প্রভাব ফেলে।
২০২৫ সালে ৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি কার্যত বন্ধ ছিল। বছরের শুরুতে কোনো আমদানিই হয়নি। এতে বাজারে সংকট আরও তীব্র হয় এবং দাম দ্রুত বেড়ে যায়।
বাজার ব্যবস্থাপনায় মধ্যস্বত্বভোগীদের আধিপত্যও একটি বড় কারণ। সরবরাহ শৃঙ্খলের একাধিক ধাপে অতিরিক্ত মুনাফা যোগ হয়। দুর্বল নজরদারির সুযোগে কিছু ব্যবসায়ী মজুতদারি করে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে। এই দামের ঊর্ধ্বগতি মূলত সিন্ডিকেটকে লাভবান করে, কৃষককে নয়।
পেঁয়াজের বাজার কাঠামো: ভোগ, আমদানি ও সরবরাহ
বাংলাদেশে দৈনিক পেঁয়াজের গড় ভোগ প্রায় ৭ হাজার টন। বছরে মোট ভোগ দাঁড়ায় প্রায় ২৫ থেকে ৩৫ লাখ টনে।
পেঁয়াজের সাপ্লাই চেইনে কৃষক, পাইকার ও খুচরা বিক্রেতারা যুক্ত। বোয়ালমারী, খাতুনগঞ্জের মতো পাইকারি বাজার এবং ঢাকার কারওয়ান বাজার গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র হিসেবে কাজ করে। ঘাটতির সময় আমদানির মাধ্যমে বাজার সামাল দেওয়া হয়। আমদানির ওপর বর্তমানে ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপিত। পেঁয়াজ রপ্তানি প্রায় নেই বললেই চলে।
বাজারে সরবরাহ বেশি হলে কৃষকেরা কম দাম পান। যেমন, মার্চ–এপ্রিল মাসে অনেক সময় কেজিপ্রতি দাম ৪০–৫০ টাকায় নেমে আসে। আবার সংকট হলে ভোক্তাদের অতিরিক্ত দাম দিতে হয়।
দাম নিয়ন্ত্রণে সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়। ২০২৫ সালের ৭ ডিসেম্বরের পর ৫০টি আমদানি অনুমতিপত্র দেওয়া হয়। পাশাপাশি সংরক্ষণ উন্নয়ন ও সিন্ডিকেট দমনের সুপারিশ করা হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা নমনীয় আমদানি নীতি ও কঠোর বাজার তদারকির ওপর জোর দিয়েছেন।
বর্তমানে পেঁয়াজের বাজার পরিস্থিতি
২০২৫ সালে পেঁয়াজের বাজারে ব্যাপক অস্থিরতা দেখা গেছে। নভেম্বরের শুরুতে কেজিপ্রতি দাম বেড়ে ১১০–১২০ টাকায় ওঠে। মৌসুমের শেষ দিকের সরবরাহ সংকট এর প্রধান কারণ ছিল।
ডিসেম্বরের শুরুতে দাম আরও বেড়ে ১৪০–১৫০ টাকায় পৌঁছায়। সে সময় দেশে কার্যত কোনো আমদানি হচ্ছিল না। সরকার দাবি করলেও বাজারে পর্যাপ্ত সরবরাহ নেই। ফলে দাম ১১০–১২০ টাকার নিচে নামেনি।
৭ ডিসেম্বরের পর আমদানি শুরু হলেও পেঁয়াজের দাম এখনো তুলনামূলকভাবে বেশি রয়েছে। ঢাকায় পুরোনো পেঁয়াজের খুচরা দাম কেজিপ্রতি ১৪০ থেকে ১৫০ টাকা। নতুন পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ১২০ টাকায়।
আমদানির পর পাইকারি বাজারে দাম কিছুটা কমেছে। কেজিপ্রতি দাম নেমে এসেছে ৮০ থেকে ৯০ টাকায়। এতে প্রায় ২০ থেকে ৩০ টাকা কমেছে। ডিসেম্বরের শুরুতে সরবরাহ সংকটের কারণে দাম ১৫০ থেকে ১৬০ টাকায় পৌঁছেছিল।
নতুন ফসল বাজারে আসা এবং আমদানি বাড়ায় এখন ধীরে ধীরে চাপ কমছে। ব্যবসায়ীরা আশা করছেন, সরবরাহ বাড়লে দাম ৭০ থেকে ৮০ টাকার মধ্যে নেমে আসবে।
সার্বিকভাবে দেশে পেঁয়াজ উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতার অগ্রগতি হলেও আমদানিনির্ভরতা ও কাঠামোগত সমস্যা এখনো রয়ে গেছে।

বিশ্বের পেঁয়াজ উৎপাদনকারী দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে রয়েছে। তবে হেক্টরপ্রতি উৎপাদন এখনো বৈশ্বিক গড়ের তুলনায় কম। বাংলাদেশে গড় উৎপাদন প্রায় প্রতি হেক্টরে ১১ টন । বিশ্ব গড় উৎপাদন প্রায় ১৯ টন প্রতি হেক্টর। পাবনা, ফরিদপুর, রাজবাড়ী ও মেহেরপুর জেলায় পেঁয়াজ চাষ বেশি হয়। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দেশে পেঁয়াজ উৎপাদন উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে।
তবে উৎপাদন বাড়লেও বাজার ব্যবস্থাপনায় নানা চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে। সংগ্রহের পর ৩০ থেকে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত পেঁয়াজ নষ্ট হয়ে যায়। এর প্রধান কারণ অপর্যাপ্ত সংরক্ষণ ব্যবস্থা। জলবায়ুর বিরূপ প্রভাব এবং সরবরাহ ব্যবস্থার দুর্বলতাও বাজারে অস্থিরতা তৈরি করে।
দেশে পেঁয়াজ উৎপাদনের চিত্র
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৩৪ লাখ ১৭ হাজার টন, ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে ৩৭ লাখ ৯০ হাজার টন, ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে ৪২ লাখ ৫০ হাজার টন এবং ২০২৫-২৬ অর্থবছর শেষ না হতেই ৪২ লাখ ৬৪ হাজার টন পেঁয়াজ উৎপাদিত হয়েছে। দেশে বছরে পেঁয়াজের চাহিদা ২৫ থেকে ৩০ লাখ টন।
বাংলাদেশে বছরে উৎপাদিত পেঁয়াজের মাধ্যমে দেশের মোট চাহিদার প্রায় ৬৫ থেকে ৮০ শতাংশ পূরণ হয়। বাকি অংশ আমদানির মাধ্যমে মেটানো হয়। আমদানির প্রায় ৯৯ শতাংশ আসে ভারত থেকে। কৃষকেরা মোট উৎপাদনের প্রায় ৮৬ শতাংশ বাজারে বিক্রি করেন। ফলে পেঁয়াজ নিঃসন্দেহে অর্থনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণে একটি ফসল।
পেঁয়াজ চাষে বড় সমস্যা হলো সংগ্রহ পরবর্তী ক্ষতি। যথাযথভাবে শুকানো, সংরক্ষণ ও পরিবহনের অভাবে পেঁয়াজ নষ্ট হয়। আর্দ্র আবহাওয়ায় এই সমস্যা আরও তীব্র হয়। অতীতে এই ক্ষতি প্রায় ৫০ শতাংশ পর্যন্ত ছিল।
বর্তমানে উন্নত সংরক্ষণ পদ্ধতি চালু করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ‘ইমপ্যাক্ট ক্লাস্টার’সহ বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে ক্ষতি কমানোর চেষ্টা চলছে।
পেঁয়াজ তোলার মৌসুম
বাংলাদেশে পেঁয়াজ সংগ্রহ মূলত দুই মৌসুমে হয়ে থাকে। এগুলো হলো শীতকালীন (রবি) এবং গ্রীষ্মকালীন (খরিফ) মৌসুম।
দেশে প্রধানত রবি মৌসুমে পেঁয়াজ চাষ হয়। অক্টোবর থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে বীজ বপন করা হয়।
খরিফ মৌসুমে পেঁয়াজ চাষ ধীরে ধীরে বাড়ছে। এই মৌসুমকে দুটি ভাগে ভাগ করা হয়। খরিফ–১ চলে ১৫ মার্চ থেকে ১৫ জুন পর্যন্ত। খরিফ–২ চলে ১৬ জুন থেকে ১৫ অক্টোবর পর্যন্ত।
বাংলাদেশে পেঁয়াজের প্রধান শীতকালীন জাতগুলোর মধ্যে বারি পেঁয়াজ–১, বারি পেঁয়াজ–২ ও বারি পেঁয়াজ–৩ উল্লেখযোগ্য। গ্রীষ্মকালীন জাতের মধ্যে তাহেরপুরি ও বারি পেঁয়াজ–৪ চাষ হয়।
রবি মৌসুমই প্রধান সংগ্রহকাল। আগাম জাতের পেঁয়াজ, যেমন ‘মুড়িকাটা’ বা ‘আগামি’, ডিসেম্বরের দ্বিতীয়ার্ধ থেকে উঠতে শুরু করে। ফেব্রুয়ারির শেষ দিক থেকে এপ্রিল পর্যন্ত সংগ্রহ সর্বোচ্চ পর্যায়ে থাকে। অনেক ক্ষেত্রে মে মাস পর্যন্ত পেঁয়াজ বাজারে আসে।
সাধারণত ডিসেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহের পর নতুন পেঁয়াজ বাজারে প্রবেশ করে। এতে সরবরাহ কিছুটা স্থিতিশীল হয়। তবে ২০২৫ সালে কিছু এলাকায় পূর্ণাঙ্গ রবি সংগ্রহে বিলম্ব দেখা গেছে।
খরিফ মৌসুমে পেঁয়াজ চাষ তুলনামূলকভাবে কম। খরিফ–১ মৌসুমে জুলাই–আগস্টে এবং খরিফ–২ মৌসুমে অক্টোবর–নভেম্বরে পেঁয়াজ ওঠে। এই পেঁয়াজ মূলত শীতকালীন মজুত শেষ হওয়ার সময় বাজারে ঘাটতি পূরণে সহায়তা করে।
এই উৎপাদন চক্রের কারণে অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত একটি সংকটকাল তৈরি হয়। আগের মৌসুমের মজুত কমে যায়। নতুন পেঁয়াজ পুরোপুরি বাজারে আসার আগ পর্যন্ত সরবরাহ ঘাটতি থাকে।
নভেম্বর–ডিসেম্বরে পেঁয়াজের দাম বাড়ার কারণ
বাংলাদেশে প্রতি বছর নভেম্বর ও ডিসেম্বর মাসে পেঁয়াজের দাম হঠাৎ বেড়ে যায়। কখনো কখনো এই সময়ে দাম প্রায় দ্বিগুণ হয়ে ওঠে। এর পেছনে মৌসুমি ও কাঠামোগত কয়েকটি কারণ একসঙ্গে কাজ করে।
নভেম্বর–ডিসেম্বর হলো আগের মৌসুমের পেঁয়াজ সরবরাহের শেষ সময়। এই সময়ে সংরক্ষিত মজুত প্রায় শেষ হয়ে আসে। ফলে বাজারে সরবরাহ সংকট তৈরি হয়। ২০২৫ সালে অক্টোবর মাসে কেজিপ্রতি পেঁয়াজের দাম ছিল ৬০ থেকে ৭৫ টাকা। নভেম্বর মাসে তা বেড়ে ১০০ টাকার বেশি হয়ে যায়।
দেশে পর্যাপ্ত সরকারি বা আধুনিক সংরক্ষণাগারের অভাব রয়েছে। অধিকাংশ কৃষক জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত বাড়িতেই পেঁয়াজ মজুত করেন। এতে দীর্ঘমেয়াদে সংরক্ষণ সম্ভব হয় না। শুকানো থেকে শুরু করে পরিবহন ও সংরক্ষণের বিভিন্ন পর্যায়ে সংগ্রহ করা পেঁয়াজের বড় অংশ নষ্ট হয়ে যায়। এর ফলে অফ-সিজনে বাজারে ঘাটতি আরও বেড়ে যায়।
আবহাওয়া পরিস্থিতিও দামের ওপর প্রভাব ফেলে। ২০২৫ সালের অক্টোবরে বৃষ্টির কারণে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ জেলায় আগাম পেঁয়াজের ক্ষতি হয়। একই বছরে কিছু এলাকায় পেঁয়াজ তোলার সময়সূচি পিছিয়ে যায়। এতে বাজারে সরবরাহ আরও সংকুচিত হয়।
দেশীয় ঘাটতি পূরণে বাংলাদেশ প্রতিবছর গড়ে ৪ লাখ ৮০ হাজার থেকে ৬ লাখ টন পেঁয়াজ আমদানি করে। সর্বশেষ অর্থবছরে আমদানির পরিমাণ ছিল প্রায় ৪ লাখ ৮৩ হাজার টন। তবে আমদানিতে দেরি বা নীতিগত সিদ্ধান্ত বাজারে বড় প্রভাব ফেলে।
২০২৫ সালে ৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি কার্যত বন্ধ ছিল। বছরের শুরুতে কোনো আমদানিই হয়নি। এতে বাজারে সংকট আরও তীব্র হয় এবং দাম দ্রুত বেড়ে যায়।
বাজার ব্যবস্থাপনায় মধ্যস্বত্বভোগীদের আধিপত্যও একটি বড় কারণ। সরবরাহ শৃঙ্খলের একাধিক ধাপে অতিরিক্ত মুনাফা যোগ হয়। দুর্বল নজরদারির সুযোগে কিছু ব্যবসায়ী মজুতদারি করে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে। এই দামের ঊর্ধ্বগতি মূলত সিন্ডিকেটকে লাভবান করে, কৃষককে নয়।
পেঁয়াজের বাজার কাঠামো: ভোগ, আমদানি ও সরবরাহ
বাংলাদেশে দৈনিক পেঁয়াজের গড় ভোগ প্রায় ৭ হাজার টন। বছরে মোট ভোগ দাঁড়ায় প্রায় ২৫ থেকে ৩৫ লাখ টনে।
পেঁয়াজের সাপ্লাই চেইনে কৃষক, পাইকার ও খুচরা বিক্রেতারা যুক্ত। বোয়ালমারী, খাতুনগঞ্জের মতো পাইকারি বাজার এবং ঢাকার কারওয়ান বাজার গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র হিসেবে কাজ করে। ঘাটতির সময় আমদানির মাধ্যমে বাজার সামাল দেওয়া হয়। আমদানির ওপর বর্তমানে ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপিত। পেঁয়াজ রপ্তানি প্রায় নেই বললেই চলে।
বাজারে সরবরাহ বেশি হলে কৃষকেরা কম দাম পান। যেমন, মার্চ–এপ্রিল মাসে অনেক সময় কেজিপ্রতি দাম ৪০–৫০ টাকায় নেমে আসে। আবার সংকট হলে ভোক্তাদের অতিরিক্ত দাম দিতে হয়।
দাম নিয়ন্ত্রণে সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়। ২০২৫ সালের ৭ ডিসেম্বরের পর ৫০টি আমদানি অনুমতিপত্র দেওয়া হয়। পাশাপাশি সংরক্ষণ উন্নয়ন ও সিন্ডিকেট দমনের সুপারিশ করা হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা নমনীয় আমদানি নীতি ও কঠোর বাজার তদারকির ওপর জোর দিয়েছেন।
বর্তমানে পেঁয়াজের বাজার পরিস্থিতি
২০২৫ সালে পেঁয়াজের বাজারে ব্যাপক অস্থিরতা দেখা গেছে। নভেম্বরের শুরুতে কেজিপ্রতি দাম বেড়ে ১১০–১২০ টাকায় ওঠে। মৌসুমের শেষ দিকের সরবরাহ সংকট এর প্রধান কারণ ছিল।
ডিসেম্বরের শুরুতে দাম আরও বেড়ে ১৪০–১৫০ টাকায় পৌঁছায়। সে সময় দেশে কার্যত কোনো আমদানি হচ্ছিল না। সরকার দাবি করলেও বাজারে পর্যাপ্ত সরবরাহ নেই। ফলে দাম ১১০–১২০ টাকার নিচে নামেনি।
৭ ডিসেম্বরের পর আমদানি শুরু হলেও পেঁয়াজের দাম এখনো তুলনামূলকভাবে বেশি রয়েছে। ঢাকায় পুরোনো পেঁয়াজের খুচরা দাম কেজিপ্রতি ১৪০ থেকে ১৫০ টাকা। নতুন পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ১২০ টাকায়।
আমদানির পর পাইকারি বাজারে দাম কিছুটা কমেছে। কেজিপ্রতি দাম নেমে এসেছে ৮০ থেকে ৯০ টাকায়। এতে প্রায় ২০ থেকে ৩০ টাকা কমেছে। ডিসেম্বরের শুরুতে সরবরাহ সংকটের কারণে দাম ১৫০ থেকে ১৬০ টাকায় পৌঁছেছিল।
নতুন ফসল বাজারে আসা এবং আমদানি বাড়ায় এখন ধীরে ধীরে চাপ কমছে। ব্যবসায়ীরা আশা করছেন, সরবরাহ বাড়লে দাম ৭০ থেকে ৮০ টাকার মধ্যে নেমে আসবে।
সার্বিকভাবে দেশে পেঁয়াজ উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতার অগ্রগতি হলেও আমদানিনির্ভরতা ও কাঠামোগত সমস্যা এখনো রয়ে গেছে।

অপরাধবিজ্ঞানে একটি তত্ত্ব আছে—‘মিউচুয়াল রিক্রিমিনেশন’ বা পারস্পরিক দোষারোপ। যখন কোনো অপরাধী চক্রের সদস্যরা নিজেদের বাঁচানোর জন্য একে অপরের ঘাড়ে দোষ চাপাতে শুরু করে, তখন তাদের জবানবন্দি থেকেই বেরিয়ে আসে আসল সত্য। একাত্তরে পরাজয়ের পর পাকিস্তানি জেনারেলরা ঠিক এই কাজটিই করেছেন।
১ দিন আগে
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও জুলাই জাতীয় সনদ নিয়ে গণভোটের তফসিল ঘোষণা হয়েছে বৃহস্পতিবার। নির্বাচন কমিশন এখন রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীদের আচরণবিধি মেনে চলার বিষয়ে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে এ বিষয়ে আরও কঠোর অবস্থান নিয়েছে।
২ দিন আগে
বর্তমানে বিশ্ব ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দু ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে স্থানান্তরিত হয়েছে, আর ভারত মহাসাগর অঞ্চল হয়ে উঠেছে বৈশ্বিক প্রতিদ্বন্দ্বিতার কেন্দ্রস্থল। এ অঞ্চলে চীন তার ‘স্ট্রিং অব পার্লস’ কৌশল ও ‘ব্লু ওয়াটার নেভি’ নিয়ে প্রভাব বিস্তার করছে, যা দিল্লির জন্য সরাসরি নিরাপত্তা উদ্বেগ তৈরি করেছে।
৩ দিন আগে
বিশ্ব রাজনীতির দ্রুত পরিবর্তনশীল প্রেক্ষাপটে ইউরোপের ভূ-রাজনৈতিক অবস্থান নিয়ে প্রশ্ন আরও তীব্র হয়েছে। বিশেষ করে সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নতুন জাতীয় নিরাপত্তা কৌশল প্রকাশের পর এ আলোচনা আরও জোরালো হয়।
৩ দিন আগে