ফাবিহা বিনতে হক

বাংলাদেশের রাজনীতিতে পরিবারতন্ত্রের প্রভাব অনেক বেশি। যেমন—প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পর বিএনপির হাল ধরেন তাঁর স্ত্রী খালেদা জিয়া। তিনবারের প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার পর দলের হাল ধরেছেন পুত্র তারেক রহমান। নেটিজেনদের ধারণা, তারেক রহমানের স্ত্রী ডা. জোবায়দা রহমান ও মেয়ে জাইমা রহমানও পারিবারিক ধারা বজায় রেখে অচিরেই রাজনীতির মাঠে নামবেন।
একই চিত্র ক্ষমতাচ্যুত সরকার আওয়ামী লীগেও দেখা গেছে। শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার পর কন্যা শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের হাল ধরেন। আবার হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের পাশাপাশি রাজনীতির মাঠে সরব ছিলেন স্ত্রী রওশন এরশাদ ও ভাই জিএম কাদের।
এই ‘পরিবারতন্ত্র’ যে কেবল বড় নেতাদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ তা কিন্তু নয়, এর শিকড় ছড়িয়ে আছে তৃণমূল পর্যন্ত। স্থানীয় কোনো এমপি বা চেয়ারম্যান মারা গেলে বা অবসরে গেলে তাঁর স্ত্রী, সন্তান বা ভাইকেই সেই পদে দেখার জন্য কর্মীরা উন্মুখ হয়ে থাকেন। অর্থাৎ রাজনীতিতে কে কতটা দক্ষ বা অভিজ্ঞতাসম্পন্ন, এর চেয়ে ‘রক্তের সম্পর্ক’ বা উত্তরাধিকারের বিষয়টিই বেশি কাজ করে।
মজার ব্যাপার হলো, শুধু বাংলাদেশ নয়, পৃথিবীর অনেক উন্নত দেশেই পরিবারতন্ত্রের রাজনীতি বিদ্যমান। মানুষ কি পরিবারতন্ত্রের রাজনীতি পছন্দ করছে? এর প্রভাবই বা আধুনিক যুগে কতটা?
রাজনীতি থেকে দেশের শাসনক্ষমতা পর্যন্ত পারিবারিক উত্তরাধিকারের ভিত্তিতে যুগ থেকে যুগে সঞ্চারিত হচ্ছে। যেমন—পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী জুলফিকার আলী ভুট্টোর কন্যা বেনজীর ভুট্টো পরবর্তীকালে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন। বেনজীর ভুট্টোর পর তাঁর স্বামী আসিফ আলী জারদারি পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। আসিফ ও বেনজীর দম্পতির পুত্র বিলাওয়াল ভুট্টোও পাকিস্তানের রাজনীতিতে (পাকিস্তান পিপলস পার্টি) ব্যাপক সক্রিয়। আগামী দিনে বিলাওয়াল ভুট্টো পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিলেও অবাক হওয়ার কিছুই থাকবে না।
অন্যদিকে প্রতিবেশী দেশ ভারতের দিকে তাকালে আমরা দেখতে পাই, দেশটির প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুর কন্যা ইন্দিরা গান্ধীও পরে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন। ইন্দিরা গান্ধীর পর তাঁর ছেলে রাজীব গান্ধী প্রধানমন্ত্রী হন। রাজীব গান্ধীর পরে তাঁদের রাজনৈতিক দল কংগ্রেসের হাল ধরেন তাঁর স্ত্রী সোনিয়া গান্ধী এবং বর্তমানে রাজীব-সোনিয়া দম্পতির পুত্র রাহুল গান্ধী ভারতের লোকসভায় বিরোধীদলীয় নেতা হিসেবে দায়িত্বরত আছেন।
ফিলিপাইনের রাজনীতিতে পরিবারতন্ত্রের প্রভাব এত বেশি যে এটিকে বলা হয় ‘পারিবারিক ব্যবসা’। সেখানে সাবেক প্রেসিডেন্ট ফার্দিনান্দ মার্কোসের ছেলে বংবং মার্কোস বর্তমান প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্বরত আছেন।
এশিয়ার গুরুত্বপূর্ণ দেশ জাপানেও পরিবারতন্ত্র অত্যন্ত শক্তিশালী। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবের নানা ছিলেন প্রধানমন্ত্রী এবং বাবা ছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। সিঙ্গাপুরের আধুনিক রূপকার লি কুয়ান ইউয়ের ছেলে লি সিয়েন লুম দীর্ঘ সময় প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে।
তবে শুধু এশিয়াতেই নয়, যুক্তরাষ্ট্রে এখনো ‘কেনেডি’ পরিবারকে রাজপরিবারের মতো সম্মান করা হয়। বুশ পরিবারের বাবা জর্জ এইচ ডব্লিউ বুশ ও ছেলে জর্জ ডব্লিউ বুশ—দুজনই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হয়েছেন। অন্যদিকে ফার্স্ট লেডি হিলারি ক্লিনটনও তাঁর স্বামী বিল ক্লিনটনের জনপ্রিয়তা ও নিজের রাজনৈতিক ক্যারিয়ারকে কাজে লাগিয়ে প্রেসিডেন্ট হতে চেয়েছিলেন। পাশের দেশ কানাডার বর্তমান প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোও তাঁর বাবা জনপ্রিয় প্রধানমন্ত্রী পিয়েরে ট্রুডোর পদাঙ্ক অনুসরণ করেই ক্ষমতায় এসেছেন।
জনগণ যতই পরিবারতন্ত্রের সমালোচনা করুক না কেন, দিনশেষে ভোটের মাঠে পরিবারতন্ত্রই বেশিরভাগ ক্ষেত্রে জয়ী হয়। গণতান্ত্রিক দেশগুলোতে মানুষ বারবার ভোট দিয়ে পরিবারতন্ত্রকে জিতিয়ে দেয় বলেই এখনো রাজনীতিতে পরিবারতন্ত্র শক্তিশালীভাবে টিকে আছে। গণতন্ত্রে জনগণ চাইলেই পরিবারতন্ত্র প্রত্যাখ্যান করতে পারে, কিন্তু বাস্তবে তাঁরা তা করেন না।
কিন্তু কেন? রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ও গবেষকেরা এর পেছনে কিছু জোরালো কারণ খুঁজে পেয়েছেন।
বিখ্যাত রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ড্যানিয়েল বাইম্যানের মতে, সাধারণ ভোটাররা রাজনীতি নিয়ে খুব বেশি গবেষণা করার সময় পান না। তাঁরা সহজ সমাধান খোঁজেন। ভোটের ব্যালটে যখন তাঁরা পরিচিত কোনো পদবি (যেমন: শেখ, জিয়া, গান্ধী বা কেনেডি) দেখেন, তখন তাঁরা ধরে নেন যে এই প্রার্থীর মধ্যে তাঁর পূর্বপুরুষের গুণাবলি আছে। এটি তাঁদের সিদ্ধান্ত নেওয়া সহজ করে দেয়। একে বলা হয় ‘ব্র্যান্ড রিকল’।
নিউ ইয়র্ক ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক কাঞ্চন চন্দ্র তাঁর ‘ডেমোক্রেটিক ডাইনাস্টিস’ বইয়ে উল্লেখ করেছেন, ভোটাররা নতুন ও অপরিচিত কাউকে ভোট দিয়ে ঝুঁকি নিতে চান না। তাঁরা মনে করেন, ‘চেনা বামুন অচেনা বামুনের চেয়ে ভালো।’ প্রতিষ্ঠিত পরিবারের সদস্যদের নির্বাচিত করলে অন্তত তাঁদের আচরণ বা কাজ সম্পর্কে একটি পূর্বানুমান বা ধারণা পাওয়া যায়।
আরেকটি বিষয় উল্লেখ না করলেই নয়। দক্ষিণ এশিয়ার রাজনীতিতে আবেগের স্থান অনেক উঁচুতে। বাবা বা স্বামীর প্রতি জনগণের যে ভালোবাসা থাকে, তাঁর মৃত্যু বা অনুপস্থিতিতে সেই ভালোবাসা স্বয়ংক্রিয়ভাবে স্ত্রী বা সন্তানের ওপর স্থানান্তরিত হয়। গবেষকেরা একে বলেন ‘ইনহেরিটেন্স অব ক্যারিশমা’।
এ ছাড়া রাজনীতিতে একটি সংগঠন টিকিয়ে রাখা খুব কঠিন কাজ। পারিবারিক সূত্রে যাঁরা নেতা হিসেবে নির্বাচিত হন, তাঁরা প্রথমেই একটি শক্তিশালী নেটওয়ার্ক ও অনুগত কর্মীবাহিনী পেয়ে যান। ফলে তাঁরা দলের হাল ধরলে তা ভাঙনের হাত থেকে রক্ষা পায়।
আধুনিক পৃথিবীতে পরিবারতন্ত্রকে নেতিবাচক দৃষ্টিতে দেখা হলেও অনেক রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ও বিশ্লেষক মনে করেন, এর কিছু গঠনমূলক দিকও আছে যা দেশের উন্নয়নে কাজে লাগতে পারে।
অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতিবিদ পল কলিয়ারের মতে, রাজনৈতিক পরিবারগুলো তাদের ‘পারিবারিক সুনাম’ বা লেগ্যাসি নিয়ে খুব সচেতন থাকে। একজন সাধারণ নেতা হয়তো ৫ বছরের জন্য ক্ষমতায় এসে লুটপাট করে চলে যেতে পারেন, কিন্তু একজন পারিবারিক নেতা ভাবেন, ‘আমার পরে আমার সন্তানকে রাজনীতি করতে হবে।’ তাই ভবিষ্যতের কথা ভেবে তাঁরা যতটুকু সম্ভব সমালোচনা এড়িয়ে চলতে চান এবং দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়নকাজে হাত দেন।
হংকং সিটি ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক মার্ক আর টম্পসন এশিয়ার নারী নেতৃত্বের ওপর গবেষণা করে বলেছেন, অনেক সময় রাজনৈতিক দলগুলো যখন দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়ে, তখন পরিবারের সদস্য (স্ত্রী বা কন্যা) দলের ঐক্যের প্রতীক হিসেবে কাজ করেন। তাঁরা ভাঙন রোধ করে দেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সাহায্য করেন।
এই প্রশ্নের উত্তরটি খুব সহজ নয়। পরিবারের পদাঙ্ক অনুসরণ করে ক্ষমতার চূড়ায় বসেছেন এমন অনেক রাজনীতিবিদ যেমন আছেন, ঠিক তেমনি রাজনীতির সঙ্গে পরিবারের যোগসূত্র ছিল না এমন ব্যক্তিও ক্ষমতার স্বাদ পেয়েছেন। যার বাস্তব উদাহরণ হিসেবে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কথা বলা যেতে পারে।
তবে রাজনীতি থেকে পরিবারতন্ত্র বিলুপ্ত হয়ে যাবে—এমন পরিস্থিতি থেকে আমরা এখনো অনেক দূরে আছি। সমসাময়িক বিশ্বের দিকে তাকালে দেখা যায়, পরিবারতন্ত্র এখনো বেশ শক্তিশালী। ভোটাররা নতুন মুখের চেয়ে পরিচিত পরিবারের সদস্যদেরই রাষ্ট্র পরিচালনায় বেশি নিরাপদ মনে করছেন। বিশেষ করে এশিয়ার রাজনীতিতে পরিবারতন্ত্রের প্রভাব এখনো খুব বেশি।
যেমন—বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম গণতান্ত্রিক দেশ ইন্দোনেশিয়ার সর্বশেষ নির্বাচনের দিকে তাকান। অত্যন্ত জনপ্রিয় প্রেসিডেন্ট জোকো উইদোদোর ছেলে জিবরান রাকাবুমিং রাকা মাত্র ৩৬ বছর বয়সে দেশটির ভাইস প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন। তারুণ্য ও বাবার জনপ্রিয়তাকে কাজে লাগিয়ে তিনি বিপুল জনসমর্থন পেয়েছেন। থাইল্যান্ডের সাবেক প্রধানমন্ত্রী পেতংতার্ন সিনাওয়াত্রাও দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী থাকসিন সিনাওয়াত্রার মেয়ে এবং ইংলাক সিনাওয়াত্রার ভাতিজি।
বিশ্ব রাজনীতির সর্বশেষ অবস্থা এটাই প্রমাণ করে যে পরিবারতন্ত্র কোনো পিছুটান নয়, বরং আধুনিক রাজনীতির এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। রাষ্ট্রবিজ্ঞানীরা বলছেন, পরিবারতন্ত্র রাজনীতিতে প্রবেশের একটি সহজ দরজা বা ‘এন্ট্রি পাস’ হতে পারে, কিন্তু দেশ পরিচালনার জন্য এটি কোনো গ্যারান্টি কার্ড নয়। সিঙ্গাপুর বা জাপানের মতো দেশে পরিবারতন্ত্রের সঙ্গে যোগ্যতার সমন্বয় ঘটায় তারা এগিয়ে গেছে। আবার অনেক দেশে অযোগ্য উত্তরাধিকারীকে ক্ষমতার মসনদে বসানোর কারণে দল ও দেশ দুই-ই ডুবেছে। তাই কেবল যোগ্য প্রার্থী ক্ষমতায় বসলেই দেশ ও জাতির উন্নয়ন ঘটতে পারে।

বাংলাদেশের রাজনীতিতে পরিবারতন্ত্রের প্রভাব অনেক বেশি। যেমন—প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পর বিএনপির হাল ধরেন তাঁর স্ত্রী খালেদা জিয়া। তিনবারের প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার পর দলের হাল ধরেছেন পুত্র তারেক রহমান। নেটিজেনদের ধারণা, তারেক রহমানের স্ত্রী ডা. জোবায়দা রহমান ও মেয়ে জাইমা রহমানও পারিবারিক ধারা বজায় রেখে অচিরেই রাজনীতির মাঠে নামবেন।
একই চিত্র ক্ষমতাচ্যুত সরকার আওয়ামী লীগেও দেখা গেছে। শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার পর কন্যা শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের হাল ধরেন। আবার হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের পাশাপাশি রাজনীতির মাঠে সরব ছিলেন স্ত্রী রওশন এরশাদ ও ভাই জিএম কাদের।
এই ‘পরিবারতন্ত্র’ যে কেবল বড় নেতাদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ তা কিন্তু নয়, এর শিকড় ছড়িয়ে আছে তৃণমূল পর্যন্ত। স্থানীয় কোনো এমপি বা চেয়ারম্যান মারা গেলে বা অবসরে গেলে তাঁর স্ত্রী, সন্তান বা ভাইকেই সেই পদে দেখার জন্য কর্মীরা উন্মুখ হয়ে থাকেন। অর্থাৎ রাজনীতিতে কে কতটা দক্ষ বা অভিজ্ঞতাসম্পন্ন, এর চেয়ে ‘রক্তের সম্পর্ক’ বা উত্তরাধিকারের বিষয়টিই বেশি কাজ করে।
মজার ব্যাপার হলো, শুধু বাংলাদেশ নয়, পৃথিবীর অনেক উন্নত দেশেই পরিবারতন্ত্রের রাজনীতি বিদ্যমান। মানুষ কি পরিবারতন্ত্রের রাজনীতি পছন্দ করছে? এর প্রভাবই বা আধুনিক যুগে কতটা?
রাজনীতি থেকে দেশের শাসনক্ষমতা পর্যন্ত পারিবারিক উত্তরাধিকারের ভিত্তিতে যুগ থেকে যুগে সঞ্চারিত হচ্ছে। যেমন—পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী জুলফিকার আলী ভুট্টোর কন্যা বেনজীর ভুট্টো পরবর্তীকালে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন। বেনজীর ভুট্টোর পর তাঁর স্বামী আসিফ আলী জারদারি পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। আসিফ ও বেনজীর দম্পতির পুত্র বিলাওয়াল ভুট্টোও পাকিস্তানের রাজনীতিতে (পাকিস্তান পিপলস পার্টি) ব্যাপক সক্রিয়। আগামী দিনে বিলাওয়াল ভুট্টো পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিলেও অবাক হওয়ার কিছুই থাকবে না।
অন্যদিকে প্রতিবেশী দেশ ভারতের দিকে তাকালে আমরা দেখতে পাই, দেশটির প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুর কন্যা ইন্দিরা গান্ধীও পরে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন। ইন্দিরা গান্ধীর পর তাঁর ছেলে রাজীব গান্ধী প্রধানমন্ত্রী হন। রাজীব গান্ধীর পরে তাঁদের রাজনৈতিক দল কংগ্রেসের হাল ধরেন তাঁর স্ত্রী সোনিয়া গান্ধী এবং বর্তমানে রাজীব-সোনিয়া দম্পতির পুত্র রাহুল গান্ধী ভারতের লোকসভায় বিরোধীদলীয় নেতা হিসেবে দায়িত্বরত আছেন।
ফিলিপাইনের রাজনীতিতে পরিবারতন্ত্রের প্রভাব এত বেশি যে এটিকে বলা হয় ‘পারিবারিক ব্যবসা’। সেখানে সাবেক প্রেসিডেন্ট ফার্দিনান্দ মার্কোসের ছেলে বংবং মার্কোস বর্তমান প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্বরত আছেন।
এশিয়ার গুরুত্বপূর্ণ দেশ জাপানেও পরিবারতন্ত্র অত্যন্ত শক্তিশালী। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবের নানা ছিলেন প্রধানমন্ত্রী এবং বাবা ছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। সিঙ্গাপুরের আধুনিক রূপকার লি কুয়ান ইউয়ের ছেলে লি সিয়েন লুম দীর্ঘ সময় প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে।
তবে শুধু এশিয়াতেই নয়, যুক্তরাষ্ট্রে এখনো ‘কেনেডি’ পরিবারকে রাজপরিবারের মতো সম্মান করা হয়। বুশ পরিবারের বাবা জর্জ এইচ ডব্লিউ বুশ ও ছেলে জর্জ ডব্লিউ বুশ—দুজনই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হয়েছেন। অন্যদিকে ফার্স্ট লেডি হিলারি ক্লিনটনও তাঁর স্বামী বিল ক্লিনটনের জনপ্রিয়তা ও নিজের রাজনৈতিক ক্যারিয়ারকে কাজে লাগিয়ে প্রেসিডেন্ট হতে চেয়েছিলেন। পাশের দেশ কানাডার বর্তমান প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোও তাঁর বাবা জনপ্রিয় প্রধানমন্ত্রী পিয়েরে ট্রুডোর পদাঙ্ক অনুসরণ করেই ক্ষমতায় এসেছেন।
জনগণ যতই পরিবারতন্ত্রের সমালোচনা করুক না কেন, দিনশেষে ভোটের মাঠে পরিবারতন্ত্রই বেশিরভাগ ক্ষেত্রে জয়ী হয়। গণতান্ত্রিক দেশগুলোতে মানুষ বারবার ভোট দিয়ে পরিবারতন্ত্রকে জিতিয়ে দেয় বলেই এখনো রাজনীতিতে পরিবারতন্ত্র শক্তিশালীভাবে টিকে আছে। গণতন্ত্রে জনগণ চাইলেই পরিবারতন্ত্র প্রত্যাখ্যান করতে পারে, কিন্তু বাস্তবে তাঁরা তা করেন না।
কিন্তু কেন? রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ও গবেষকেরা এর পেছনে কিছু জোরালো কারণ খুঁজে পেয়েছেন।
বিখ্যাত রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ড্যানিয়েল বাইম্যানের মতে, সাধারণ ভোটাররা রাজনীতি নিয়ে খুব বেশি গবেষণা করার সময় পান না। তাঁরা সহজ সমাধান খোঁজেন। ভোটের ব্যালটে যখন তাঁরা পরিচিত কোনো পদবি (যেমন: শেখ, জিয়া, গান্ধী বা কেনেডি) দেখেন, তখন তাঁরা ধরে নেন যে এই প্রার্থীর মধ্যে তাঁর পূর্বপুরুষের গুণাবলি আছে। এটি তাঁদের সিদ্ধান্ত নেওয়া সহজ করে দেয়। একে বলা হয় ‘ব্র্যান্ড রিকল’।
নিউ ইয়র্ক ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক কাঞ্চন চন্দ্র তাঁর ‘ডেমোক্রেটিক ডাইনাস্টিস’ বইয়ে উল্লেখ করেছেন, ভোটাররা নতুন ও অপরিচিত কাউকে ভোট দিয়ে ঝুঁকি নিতে চান না। তাঁরা মনে করেন, ‘চেনা বামুন অচেনা বামুনের চেয়ে ভালো।’ প্রতিষ্ঠিত পরিবারের সদস্যদের নির্বাচিত করলে অন্তত তাঁদের আচরণ বা কাজ সম্পর্কে একটি পূর্বানুমান বা ধারণা পাওয়া যায়।
আরেকটি বিষয় উল্লেখ না করলেই নয়। দক্ষিণ এশিয়ার রাজনীতিতে আবেগের স্থান অনেক উঁচুতে। বাবা বা স্বামীর প্রতি জনগণের যে ভালোবাসা থাকে, তাঁর মৃত্যু বা অনুপস্থিতিতে সেই ভালোবাসা স্বয়ংক্রিয়ভাবে স্ত্রী বা সন্তানের ওপর স্থানান্তরিত হয়। গবেষকেরা একে বলেন ‘ইনহেরিটেন্স অব ক্যারিশমা’।
এ ছাড়া রাজনীতিতে একটি সংগঠন টিকিয়ে রাখা খুব কঠিন কাজ। পারিবারিক সূত্রে যাঁরা নেতা হিসেবে নির্বাচিত হন, তাঁরা প্রথমেই একটি শক্তিশালী নেটওয়ার্ক ও অনুগত কর্মীবাহিনী পেয়ে যান। ফলে তাঁরা দলের হাল ধরলে তা ভাঙনের হাত থেকে রক্ষা পায়।
আধুনিক পৃথিবীতে পরিবারতন্ত্রকে নেতিবাচক দৃষ্টিতে দেখা হলেও অনেক রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ও বিশ্লেষক মনে করেন, এর কিছু গঠনমূলক দিকও আছে যা দেশের উন্নয়নে কাজে লাগতে পারে।
অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতিবিদ পল কলিয়ারের মতে, রাজনৈতিক পরিবারগুলো তাদের ‘পারিবারিক সুনাম’ বা লেগ্যাসি নিয়ে খুব সচেতন থাকে। একজন সাধারণ নেতা হয়তো ৫ বছরের জন্য ক্ষমতায় এসে লুটপাট করে চলে যেতে পারেন, কিন্তু একজন পারিবারিক নেতা ভাবেন, ‘আমার পরে আমার সন্তানকে রাজনীতি করতে হবে।’ তাই ভবিষ্যতের কথা ভেবে তাঁরা যতটুকু সম্ভব সমালোচনা এড়িয়ে চলতে চান এবং দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়নকাজে হাত দেন।
হংকং সিটি ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক মার্ক আর টম্পসন এশিয়ার নারী নেতৃত্বের ওপর গবেষণা করে বলেছেন, অনেক সময় রাজনৈতিক দলগুলো যখন দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়ে, তখন পরিবারের সদস্য (স্ত্রী বা কন্যা) দলের ঐক্যের প্রতীক হিসেবে কাজ করেন। তাঁরা ভাঙন রোধ করে দেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সাহায্য করেন।
এই প্রশ্নের উত্তরটি খুব সহজ নয়। পরিবারের পদাঙ্ক অনুসরণ করে ক্ষমতার চূড়ায় বসেছেন এমন অনেক রাজনীতিবিদ যেমন আছেন, ঠিক তেমনি রাজনীতির সঙ্গে পরিবারের যোগসূত্র ছিল না এমন ব্যক্তিও ক্ষমতার স্বাদ পেয়েছেন। যার বাস্তব উদাহরণ হিসেবে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কথা বলা যেতে পারে।
তবে রাজনীতি থেকে পরিবারতন্ত্র বিলুপ্ত হয়ে যাবে—এমন পরিস্থিতি থেকে আমরা এখনো অনেক দূরে আছি। সমসাময়িক বিশ্বের দিকে তাকালে দেখা যায়, পরিবারতন্ত্র এখনো বেশ শক্তিশালী। ভোটাররা নতুন মুখের চেয়ে পরিচিত পরিবারের সদস্যদেরই রাষ্ট্র পরিচালনায় বেশি নিরাপদ মনে করছেন। বিশেষ করে এশিয়ার রাজনীতিতে পরিবারতন্ত্রের প্রভাব এখনো খুব বেশি।
যেমন—বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম গণতান্ত্রিক দেশ ইন্দোনেশিয়ার সর্বশেষ নির্বাচনের দিকে তাকান। অত্যন্ত জনপ্রিয় প্রেসিডেন্ট জোকো উইদোদোর ছেলে জিবরান রাকাবুমিং রাকা মাত্র ৩৬ বছর বয়সে দেশটির ভাইস প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন। তারুণ্য ও বাবার জনপ্রিয়তাকে কাজে লাগিয়ে তিনি বিপুল জনসমর্থন পেয়েছেন। থাইল্যান্ডের সাবেক প্রধানমন্ত্রী পেতংতার্ন সিনাওয়াত্রাও দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী থাকসিন সিনাওয়াত্রার মেয়ে এবং ইংলাক সিনাওয়াত্রার ভাতিজি।
বিশ্ব রাজনীতির সর্বশেষ অবস্থা এটাই প্রমাণ করে যে পরিবারতন্ত্র কোনো পিছুটান নয়, বরং আধুনিক রাজনীতির এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। রাষ্ট্রবিজ্ঞানীরা বলছেন, পরিবারতন্ত্র রাজনীতিতে প্রবেশের একটি সহজ দরজা বা ‘এন্ট্রি পাস’ হতে পারে, কিন্তু দেশ পরিচালনার জন্য এটি কোনো গ্যারান্টি কার্ড নয়। সিঙ্গাপুর বা জাপানের মতো দেশে পরিবারতন্ত্রের সঙ্গে যোগ্যতার সমন্বয় ঘটায় তারা এগিয়ে গেছে। আবার অনেক দেশে অযোগ্য উত্তরাধিকারীকে ক্ষমতার মসনদে বসানোর কারণে দল ও দেশ দুই-ই ডুবেছে। তাই কেবল যোগ্য প্রার্থী ক্ষমতায় বসলেই দেশ ও জাতির উন্নয়ন ঘটতে পারে।

আজ বলিউডের ‘ভাইজান’ সালমান খানের ৬০তম জন্মদিন। তিন দশকের বেশি সময় ধরে পর্দায় রোমান্স আর অ্যাকশনের মাধ্যমে দর্শকদের মন জয় করে চলেছেন এই তারকা।
৬ ঘণ্টা আগে
বিশ্বজুড়ে লাখ লাখ মানুষ ‘হাইপারট্রফিক কার্ডিওমায়োপ্যাথি’ বা ‘এইচসিএম’ নামের হৃৎপিণ্ডের বংশগত রোগে আক্রান্ত। চিকিৎসকদের জন্য ঠিক কোন রোগীর ঝুঁকি বেশি, তা নির্ভুলভাবে নির্ধারণ করা কঠিন ছিল। কিন্তু হার্ভার্ড ও অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা বলছেন, সাধারণ একটি রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে এখন হার্টের এই রো
১০ ঘণ্টা আগে
গতকাল বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দেশে পৌঁছেছে জাইমা রহমানের পোষা বিড়াল ‘জেবু’। ইতিহাসের পাতা ওল্টালে দেখা যায়, বিশ্বের বাঘা বাঘা অনেক নেতাই বিড়াল পুষতেন। চলুন জেনে নেওয়া যাক বিশ্বনেতাদের পোষ্য এমন কিছু বিখ্যাত বিড়ালের গল্প।
১ দিন আগে
স্লিমিং পাউডার কী, আর এতে কী কী উপাদান থাকে? এটা কি স্বাস্থ্যসম্মত? চিকিৎসাবিজ্ঞানে কী বলে?
১ দিন আগে