leadT1ad

বিশ্বজুড়ে বড়দিন উদযাপনের ব্যতিক্রমী সব রীতি

আজ খ্রিষ্টধর্মাবলম্বীদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব ‘বড়দিন’। সারা বিশ্বের খ্রিষ্টধর্মাবলম্বীরা ২৫ ডিসেম্বর যিশুখ্রিষ্টের জন্মদিন হিসেবে ‘ক্রিসমাস ডে’র উৎসব উদ্‌যাপন করে থাকেন। কিন্তু বিশ্বের সব দেশে বড়দিন উদযাপনের রীতি একই রকম নয়। চলুন এক নজরে ঘুরে আসি ভিন্ন সাজের বড়দিনের ভুবন থেকে।

স্ট্রিম ডেস্ক
স্ট্রিম ডেস্ক

প্রকাশ : ২৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ২০: ২০
বিশ্বজুড়ে বড়দিন উদযাপনের ব্যতিক্রমী সব রীতি। ছবি: স্ট্রিম গ্রাফিক

বড়দিন বা ক্রিসমাসের কথা ভাবলেই আমাদের চোখের সামনে ভেসে ওঠে লাল পোশাক পরা সান্তা ক্লজ, ঝিকিমিকি বাতিতে সাজানো ক্রিসমাস ট্রি, আর কেক কাটার উৎসব। কিন্তু বিশ্বের সব দেশে বড়দিন উদযাপনের রীতি একই রকম নয়।

কোথাও সান্তার বদলে উপহার নিয়ে আসে উট, কোথাও আবার মানুষ রোলার স্কেটিং করে গির্জায় যায়! বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে আছে বড়দিনের অদ্ভুত ও মজার সব রীতি। চলুন এক নজরে ঘুরে আসি ভিন্ন সাজের বড়দিনের ভুবন থেকে।

যুক্তরাষ্ট্র

১৯৬৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে নতুন এক রীতি চালু হয়। যাদের বাড়িতে ফায়ারপ্লেস বা আগুন পোহানোর ব্যবস্থা নেই, তাঁদের জন্য টিভি চ্যানেলগুলো সম্প্রচার করতে শুরু করে ‘ইউল লগ’। অর্থাৎ, টিভির পর্দায় দেখা যায় দাউদাউ করে কাঠ জ্বলছে, আর ব্যাকগ্রাউন্ডে বাজছে বড়দিনের গান। এই ‘ভার্চুয়াল আগুন’ পোহানোর রীতি বর্তমান যুগেও বেশ জনপ্রিয়।

সান্তা ক্লজ। সংগৃহীত ছবি
সান্তা ক্লজ। সংগৃহীত ছবি

যুক্তরাষ্ট্রে ইদানীং ‘সান্তাকন’ নামে একটি আনন্দশোভা যাত্রার আয়োজন হতে দেখা যায়। ১৯৯৪ সালে সান ফ্রান্সিসকোতে শুরু হওয়া এই রীতি এখন নিউইয়র্কসহ দেশটির বিভিন্ন শহরে ছড়িয়ে পড়েছে। এখানে শত শত মানুষ (প্রায়শই মদ্যপ অবস্থায়) সান্তা সেজে রাস্তায় মিছিল করে। যদিও এর শুরুটা হয়েছিল ডেনমার্কে ১৯৭৪ সালে, ভোগবাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী পারফরম্যান্স আর্ট হিসেবে। কিন্তু আজকের নিউইয়র্কে এই মিছিলটি দাতব্য কাজের পাশাপাশি উৎসবমুখর আনন্দমেলার রূপ নিয়েছে।

অস্ট্রেলিয়া

দক্ষিণ গোলার্ধের দেশ হওয়ায় আমাদের দেশে যখন হাড়কাঁপানো শীত, অস্ট্রেলিয়ায় তখন কাঠফাটা রোদ। তাই সেখানে বরফের বদলে বড়দিন পালন করা হয় সমুদ্র সৈকতে। রাতে বারবিকিউ পার্টি, সমুদ্রে সাঁতার কাটা আর রোদে পিঠ এলিয়ে দেওয়াই তাঁদের বড়দিনের আসল আনন্দ।

স্পেন

স্পেনের কাতালুনিয়া অঞ্চলের রীতিটি শুনলে আপনি হাসতে হাসতে গড়িয়ে পড়বেন। স্পেনের কাতালুনিয়া অঞ্চলে ‘নেটিভিটি সিন’ বা যিশুর জন্মদৃশ্য সাজানোর সময় প্রচলিত চরিত্রগুলোর সঙ্গে বাড়তি একজন থাকে। তার নাম ‘এল কাগানের’ বা ‘মলত্যাগকারী’। লাল টুপি পরা এই মাটির পুতুলটিকে আক্ষরিক অর্থেই মলত্যাগরত অবস্থায় দেখানো হয়!

বার্সেলোনা সিটি কাউন্সিলের মতে, সপ্তদশ শতক থেকে এই অদ্ভুত রীতির প্রচলন। এটি ছাড়াও তাঁদের আরেকটি ঐতিহ্য হলো ‘টিও দে মাদাল’। ডিসেম্বরে এই কাঠের গুঁড়িটিকে কম্বল দিয়ে ঢেকে রাখা হয় এবং খাবার দেওয়া হয়। বড়দিনের আগের রাতে শিশুরা লাঠি দিয়ে একে পেটায় এবং গান গায়, যাতে সে ক্যান্ডি বা চকলেট ‘মলত্যাগ’ করে দেয়! স্থানীয়দের বিশ্বাস, এটি উর্বরতা ও ধৈর্যের প্রতীক।

ইউক্রেন

আমরা মাকড়সার জাল দেখলে সেটা ঝাড়ু দিই, কিন্তু ইউক্রেনের অনেক অঞ্চলে ক্রিসমাস ট্রিতে মাকড়সা ও তার জাল দিয়ে সাজানো হয়।

ইউক্রেনের অনেক অঞ্চলে ক্রিসমাস ট্রিতে মাকড়সা ও তার জাল দিয়ে সাজানো হয়। সংগৃহীত ছবি
ইউক্রেনের অনেক অঞ্চলে ক্রিসমাস ট্রিতে মাকড়সা ও তার জাল দিয়ে সাজানো হয়। সংগৃহীত ছবি

ইউক্রেনে প্রচলিত একটি রূপকথা আছে যেখানে এক গরিব মা তাঁর ক্রিসমাস ট্রি সাজাতে পারছিলেন না। তখন মাকড়সারা এসে জাল দিয়ে গাছটি সাজিয়ে দেয়, যা পরবর্তীতে সোনায় পরিণত হয়। তাই ইউক্রেনে মাকড়সা হলো সৌভাগ্যের প্রতীক।

ফ্রান্স

ফ্রান্সে বড়দিনের উৎসব শেষ হয় ৬ জানুয়ারি। সেদিন ফরাসিরা ‘গ্যালেট দে রোয়া’ বা একধরনের রাজকীয় কেক খায়। এই কেকের ভেতরে একটি ছোট সিরামিক পুতুল বা ‘ফেভ’ লুকানো থাকে। যার ভাগে ওই পুতুলটি জুটে যায়, তাঁকে সেই দিনের জন্য ‘রাজা’ বা ‘রাণী’ হিসেবে গণ্য করা হয় এবং সে কাগজের মুকুট পরার সুযোগ পায়।

ফিনল্যান্ড

ফিনল্যান্ডে বড়দিনের অন্যতম প্রধান রীতি হলো কবরস্থানে যাওয়া। ক্রিসমাস ইভে প্রায় ৭৫ শতাংশ ফিনিশ পরিবার মৃত স্বজনদের কবরে মোমবাতি জ্বালাতে যায়। তাঁদের বড়দিন উদযাপনের আরেকটি রীতি হলো ‘ক্রিসমাস সাউনা’ (ভাপ স্নান)। সাউনা অর্থ নিয়ন্ত্রিত গরমে বসে ঘাম ঝরানো, তারপর শরীর–মন হালকা করা।

জাপান

জাপানে খ্রিষ্টান কমিউনিটিতে বড়দিন মানে কব্জি ডুবিয়ে কেএফসি খাওয়ার দিন! ১৯৭৪ সালে কেএফসি-র একটি সফল প্রচারণার পর থেকে জাপানিরা বড়দিনের ভোজে কেএফসি-র ফ্রাইড চিকেন খেতে পছন্দ করে। সেদিন কেএফসিতে এতটাই ভিড় থাকে যে, চিকেন বাকেট পেতে মাসখানেক আগে থেকে অর্ডার দিতে হয়।

নরওয়ে

নরওয়েতে বড়দিন অসম্পূর্ণ থেকে যায় ‘ইউল এল’ বা বিশেষ একধরনের বিয়ার ছাড়া। একসময় আইন করে এই বিয়ার বানানো বাধ্যতামূলক ছিল! এছাড়া নরওয়েতে অনেকেই খামারের শয়তান বা ‘নিসে’ নামের এক শয়তানকে বিশ্বাস করে।

বার্সালোনার ‘টিও দে মাদাল’। সংগৃহীত ছবি
বার্সালোনার ‘টিও দে মাদাল’। সংগৃহীত ছবি

প্রচলিত লোককথা অনুযায়ী, ক্রিসমাস ইভে তাদের জন্য একবাটি পায়েস বা নরম ভাত (জাউ ভাত) না রাখলে তারা রেগে গিয়ে খামারের ক্ষতি করতে পারে। এজন্য খামারিরা ক্রিসমাসে তাদের জন্য পায়েস রাখে।

চীন

চীনে প্রাতিষ্ঠানিক কোনো ধর্ম নেই বললেই চলে এবং বড়দিন সেখানে সরকারি ছুটির দিনও নয়। তবে নব্বইয়ের দশক থেকে দিনটির জনপ্রিয়তা বেড়েছে। সেখানে বড়দিন মানে অনেকটা পশ্চিমা উৎসবের চীনা সংস্করণ। তবে চীনা সান্তা ক্লজকে প্রায়ই স্যাক্সোফোন বাজাতে দেখা যায়।

সেখানে বড়দিন পালনের আরেকটি রীতি হলো ‘শান্তির আপেল’ বা ‘পিস অ্যাপল’ উপহার দেওয়া। চীনা ভাষায় আপেলকে বলা হয় ‘পিংগুও’, যা ‘পিং আন ইয়ে’ (শান্তির রাত বা ক্রিসমাস ইভ) শব্দের সঙ্গে মিলে যায়।

ইন্দোনেশিয়া

মুসলিম দেশ হলেও ইন্দোনেশিয়ার খ্রিস্টান সম্প্রদায় বেশ জাঁকজমকের সঙ্গে বড়দিন পালন করে। বালি দ্বীপে খ্রিস্টানরা তাঁদের বাড়ি সাজায় ‘পেনজর’ (নারকেল পাতা দিয়ে সাজানো বাঁশ) দিয়ে। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির নিদর্শন হিসেবে তাঁরা প্রতিবেশী ও স্বজনদের মধ্যে খাবার বিতরণ করে, যাকে বলা হয় ‘নগেজট’। জাকার্তায় অনেকে একে অপরের মুখে পাউডার মেখে ‘রাবো-রাবো’ নামের এক শতবর্ষী রীতি পালন করে।

তথ্যসূত্র: টাইম ডট কম অবলম্বনে

Ad 300x250

সম্পর্কিত