leadT1ad

ঢাকায় মনোনয়নপ্রত্যাশীদের ঢল, ২০ আসনে ৩২৯ জনের ফরম সংগ্রহ

স্ট্রিম প্রতিবেদক
স্ট্রিম প্রতিবেদক
ঢাকা

প্রকাশ : ২৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ২২: ৪৬
নির্বাচন কমিশন

আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে রাজধানীর ২০টি আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশীদের ঢল নেমেছে। রোববার সকাল পর্যন্ত ঢাকা অঞ্চলের ৩২৯ জন প্রার্থীর মনোনয়নপত্র সংগ্রহের এই বিপুল সংখ্যা নির্বাচন সংশ্লিষ্টদের বিস্মিত করেছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, রাজধানীতে প্রার্থীদের এই আগ্রহ আসন্ন নির্বাচনে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতার ইঙ্গিত দিচ্ছে।

নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, রোববার (২৮ ডিসেম্বর) সকাল পর্যন্ত ঢাকার ২০টি আসনে মোট ৩২৯ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। এর মধ্যে সর্বোচ্চ ৩২টি মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করা হয়েছে ঢাকা-১৭ আসন থেকে, আর সর্বনিম্ন ৬টি ঢাকা-২ আসন থেকে।

মনোনয়নপত্র জমার শেষ দিনের আগের দিন আজ রোববার ঢাকা জেলার তিন রিটার্নিং কর্মকর্তা—জেলা প্রশাসক, বিভাগীয় কমিশনার এবং ঢাকা আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তার কাছ থেকে ৫৫ জন মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। জেলা নির্বাচন কার্যালয়ের সূত্র বলছে, আসনপ্রতি গড়ে ১৬ জনের বেশি প্রার্থী মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন।

আসনভিত্তিক মনোনয়নপত্র সংগ্রহের চিত্র অনুযায়ী—ঢাকা-১ এ ১৩ জন, ঢাকা-২ এ ৬ জন, ঢাকা-৩ এ ১৯ জন, ঢাকা-৪ এ ১৩ জন, ঢাকা-৫ এ ১৮ জন, ঢাকা-৬ এ ১১ জন, ঢাকা-৭ এ ২০ জন, ঢাকা-৮ এ ১৯ জন, ঢাকা-৯ এ ১৯ জন, ঢাকা-১০ এ ২০ জন, ঢাকা-১১ এ ১৪ জন, ঢাকা-১২ এ ২৭ জন, ঢাকা-১৩ এ ১৮ জন, ঢাকা-১৪ এ ১৭ জন, ঢাকা-১৫ এ ১২ জন, ঢাকা-১৬ এ ১৪ জন, ঢাকা-১৭ এ ৩২ জন, ঢাকা-১৮ এ ২১ জন, ঢাকা-১৯ এ ৭ জন এবং ঢাকা-২০ এ ৯ জন মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন।

ঢাকা আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা এবং ঢাকা-১৩ ও ঢাকা-১৫ আসনের রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. ইউনুচ আলী বলেন, ‘ঢাকা-১৫ আসন থেকে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমানসহ ১২ জন এবং ঢাকা-১৩ থেকে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা মুহাম্মাদ মামুনুল হকসহ ১৮ জন মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন।’

মাত্র তিনজন মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন জানিয়ে তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন যে, মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিনে (সোমবার) তাঁদের ওপর অত্যধিক চাপ পড়তে পারে।

এ বিষয়ে ঢাকা জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট (স্টাফ অফিসার টু ডিসি) আনিক সাহা বলেন, ‘আপাতদৃষ্টিতে মনে হচ্ছে, এবারের নির্বাচনে সংখ্যার বিচারে কিছুটা বেশি মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন প্রার্থীরা। তবে এখনো জোটের হিসাব চলছে এবং কোন আসনে কে দাঁড়াবে, তা নিশ্চিত নয়। তাই একই আসন থেকে অনেক শরিক প্রার্থীরাও মনোনয়নপত্র কিনছেন। জমা দেওয়ার পরেই আসলে বোঝা যাবে প্রার্থিতার আসল চিত্র কী।’

তিনি আরও বলেন, ‘অনেক আসনেই বিএনপি থেকে একাধিক প্রার্থী মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। কিন্তু চূড়ান্ত মনোনয়ন তো পাবেন একজন। আবার শরিকরাও কিনেছেন। জোট নিশ্চিত হলে অনেকেই আর মনোনয়নপত্র জমা দেবেন না। তখন আসলে প্রতিদ্বন্দ্বিতার আসল চিত্র বেরিয়ে আসবে।’

এদিকে ঢাকা বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয় থেকেও বিপুলসংখ্যক মনোনয়নপত্র সংগ্রহের বিষয়ে বিস্ময় প্রকাশ করা হয়েছে। সময়মতো মনোনয়নপত্র জমা না দেওয়ার প্রবণতা নিয়েও তাঁরা উদ্বেগ জানিয়েছেন।

থানা নির্বাচন অফিসার হাফিজুর রহমান বলেন, ‘পূর্বের মতোই জমাদানের শেষ দিনে আমরা এবারও অতিরিক্ত চাপের আশঙ্কা করছি। তবে সমস্যা হলো এবার বিপুলসংখ্যক মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করা হয়েছে। আমরা বলে দিয়েছি দুপুর ১২টার মধ্যে মনোনয়নপত্র জমা দিতে। কিন্তু শেষ মুহূর্তে আসার প্রবণতা বাড়তি চাপ তৈরি করবে।’

এদিকে আজ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান ঘোষণা করেছেন, জামায়াতে ইসলামীসহ ৮ দলের জোটের সঙ্গে যোগ দিয়েছে এলডিপি ও জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। তবে এ সময়ে দলগুলোর মধ্যে আসন বিন্যাস কেমন হবে, তা নিশ্চিত করেননি তিনি। আবার বিএনপিও তাদের জোটসঙ্গী এবং নিজ দলের মধ্যেও অনেক প্রার্থী পরিবর্তন করছে। তাই আজ নির্বাচন কমিশনে গুঞ্জন ছিল মনোনয়নপত্র দাখিলের সময় বাড়তে পারে কি না। সূত্র বলছে, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল থেকেও এমন প্রস্তাব আছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে গতকাল বিকেলে মনোনয়নপত্র জমা শেষে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা মুহাম্মাদ মামুনুল হক বলেন, ‘১২ ফেব্রুয়ারি নির্বাচনের তারিখ অপরিবর্তিত রেখে মনোনয়ন দাখিলের তারিখ পরিবর্তন হতেই পারে। এতে কোনো সমস্যা দেখছি না।’

তবে যোগাযোগ করা হলে ইসি সচিবালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব আখতার আহমেদ জানান, মনোনয়নপত্র দাখিলের সময় বাড়ানোর ব্যাপারে কোনো তথ্য তাঁকে দেওয়া হয়নি। যদি বাড়ানো হয়, তবে যথাসময়ে জানানো হবে।

সারা দেশে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন ২,৭৮০ জন
এদিকে জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে এখন পর্যন্ত ২ হাজার ৭৮০ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র নিয়েছেন বলে জানিয়েছে ইসি। এর মধ্যে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন মাত্র ৩১ জন। রোববার বিকেল ৪টা পর্যন্ত হালনাগাদ করা এ পরিসংখ্যান তুলে ধরেছে ইসির কেন্দ্রীয় সমন্বয় কমিটি।

ইসি পরিচালক (জনসংযোগ) রুহুল আমিন মল্লিক জানান, সারা দেশে দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত ২৭৮০ জন মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন এবং ৩১ জন মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।

সমন্বয় কমিটির তথ্য অনুযায়ী, সবচেয়ে বেশি ৫০১টি মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করা হয়েছে ঢাকা অঞ্চল থেকে। এ ছাড়া কুমিল্লা থেকে ৪০৫টি, ময়মনসিংহ থেকে ৩৩৯টি, খুলনা থেকে ৩০২টি, রংপুর থেকে ২৮৩টি, রাজশাহী থেকে ২৬৯টি, চট্টগ্রাম থেকে ২৪০টি, বরিশাল থেকে ১৬১টি, ফরিদপুর থেকে ১৪৫টি এবং সিলেট অঞ্চল থেকে ১২৭টি মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করা হয়েছে।

এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৮টি মনোনয়নপত্র দাখিল করা হয়েছে ফরিদপুরে। এ ছাড়া ময়মনসিংহ ও বরিশাল অঞ্চলে ৭টি করে, রংপুরে ৩টি, ঢাকা ও চট্টগ্রামে ২টি করে এবং খুলনা ও সিলেট অঞ্চলে ১টি করে মনোনয়নপত্র দাখিল করা হয়েছে। রাজশাহী ও কুমিল্লা অঞ্চলে এখনো কোনো মনোনয়নপত্র দাখিল করা হয়নি। তবে দিন শেষে ঢাকায় মনোনয়নপত্র দাখিলের সংখ্যা গিয়ে দাঁড়িয়েছে ১৪টিতে।

মনোনয়নপত্র জমার সময় প্রার্থী বা তাঁর প্রস্তাবক, সমর্থকসহ পাঁচজনের বেশি উপস্থিত থাকায় নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। এ সময় কোনো ধরনের মিছিল বা শোডাউন করলে আচরণবিধি লঙ্ঘন হবে। ঢাকার তিনটি রিটার্নিং কার্যালয়ের কর্মকর্তারাও এই নিয়ম প্রতিপালনের অনুরোধ জানিয়েছেন।

মনোনয়নপত্র বাছাই হবে ৩০ ডিসেম্বর থেকে ২০২৬ সালের ৪ জানুয়ারি পর্যন্ত। রিটার্নিং কর্মকর্তার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল দায়ের ৫ জানুয়ারি থেকে ৯ জানুয়ারি। আপিল নিষ্পত্তি হবে ১০ থেকে ১৮ জানুয়ারি পর্যন্ত। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ২০ জানুয়ারি। রিটার্নিং কর্মকর্তা চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করে প্রতীক বরাদ্দ করবেন ২১ জানুয়ারি। নির্বাচনী প্রচারণা শুরু হবে ২২ জানুয়ারি। প্রচার চালানো যাবে ১০ ফেব্রুয়ারি সকাল সাড়ে সাতটা পর্যন্ত। ভোট হবে ১২ ফেব্রুয়ারি সকাল সাড়ে ৭টা থেকে বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত; একই সঙ্গে চলবে গণভোটও।

Ad 300x250

সম্পর্কিত