leadT1ad

তারেক রহমানের প্রত্যাবর্তন: ভোর হতে হতেই জনাকীর্ণ সভাস্থল

স্ট্রিম প্রতিবেদক
স্ট্রিম প্রতিবেদক
ঢাকা

ভোর হতে হতেই জনাকীর্ণ ৩০০ ফিট এলাকা। সংগৃহীত ছবি

২০০৮ সালে দেশত্যাগের ১৭ বছর পর স্বদেশে ফিরছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। প্রিয় নেতাকে একনজর দেখার অপেক্ষায় তীব্র শীত উপেক্ষা করে রাত থেকেই অপেক্ষা করছেন দলের নেতাকর্মীরা। রাস্তায় পাটি বিছিয়ে, কম্বল জড়িয়ে অবস্থান করছেন তারা। ভোর হতে হতেই তাদের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা দলটির নেতাকর্মীরা। এতে রাজধানীর রাজধানীর ৩০০ ফিট এলাকায় বসানো মঞ্চস্থল।

বুধবার (২৪ ডিসেম্বর) দিবাগত রাত থেকে আজ ভোর পর্যন্ত মঞ্চ ও এর আশপাশে অবস্থান করে দেখা গেছে, তারেক রহমানকে এক নজর দেখার অপেক্ষায় কেউ কেউ রাস্তায়, কেউ বিভাজকে পাটি বিছিয়ে শুয়ে-বসে রাত পার করছেন। এসময় রাস্তায় পাটি বা পলিথিন বিছিয়ে কম্বল গায়ে জড়িয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায় তাদের। কোথাও কোথাও খড়কুটো দিয়ে আগুন জ্বালিয়ে চেষ্টা চলছে নিজেদের উষ্ণ রাখার।

এসব নেতাকর্মীরা এসেছেন ঢাকার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে। তাঁদেরই একজন দিনাজপুরের আসাদুল। কথা হলে তিনি এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘অনেক দূর থেকে এসেছি, শুধু প্রিয় নেতাকে দেখার জন্য। এটা তো শুধু এই রাতের ব্যাপার না। তাঁকে দেখতে আসলে কত বছরের অপেক্ষায় ছিলাম আমরা।’

তিনি বলেন, ‘আগামী দিনে তিনি দেশের নেতৃত্ব দেবেন। তাঁর অসুস্থ মায়ের কাছে যাবেন। নিজের মাতৃভূমিকে স্পর্শ করতে পারবেন। এই সময়টা আসলে ঐতিহাসিক। সেই ঐতিহাসিক মুহূর্তের সাক্ষী হতেই এই তীব্র শীতে আমরা এখানে অবস্থান করছি।’

মাদারীপুর থেকে গত রাতে রাজধানীতে এসেছেন জলিল ফকির। তিনি স্ট্রিমকে বলেন, ‘১৭ বছর তারেক রহমান দেশে আসতে পারেন নাই। একটা মানুষ এতদিন পরে দেশে ফিরছে, এটাই আনন্দের বিষয়’

তিনি স্ট্রিমকে বলেন, ‘আমার বাড়ি মাদারীপুর। কিন্তু জুলাই অভ্যুত্থানের আগ পর্যন্ত যশোরে থাকতাম। কারণ আমার জায়গা জমি দখল করে রেখেছিল অন্যরা। আমাকে আমার বাড়িতে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। গত বছর ৫ আগস্ট নিজের বাড়িতে ঢুকে বুঝতে পেরেছি, ঘরে ফেরা কী আনন্দের!’

রাজশাহীর পবা থেকে এসেছেন সেলিম রেজা। মাথায় ধানের শীষ দিয়ে বিশেষভাবে বানানো টুপি পরে ঘুরতে দেখা যায় তাঁকে। তিনি স্ট্রিমকে বলেন, ‘আমাদের মহান নেতা একটু পরে আমাদের সামনে আসবেন। এরচেয়ে আনন্দের কিছু হতে পারে না।’

শীতে যাতায়াতে কষ্ট হয়েছে কিনা জানতে চাইলে সেলিম রেজা বলেন, ‘নেতাকে দেখার আনন্দে আছি। কষ্টকে কষ্ট মনে হচ্ছে না।’

চট্টগ্রাম থেকে আসা মামুন নামে একজন বলেন, ‘তারেক রহমান আসবেন। আগামী জাতীয় নির্বাচনে তিনি জয়যুক্ত হয়ে সোনার দেশ গড়ে তুলবেন, সেই প্রত্যাশা নিয়ে অসুস্থ্য শরীরে এখানে এসেছি।’

মঞ্চস্থলে ভোর থেকেই বিভিন্ন গ্রুপে জটলা পাকিয়ে স্লোগান চলছে। এসব জটলা থেকে ‘তারেক রহমানের আগমন, শুভেচ্ছা স্বাগতম’; ‘আজকের এই দিনে, জিয়া তোমায় পড়ে মনে’; ‘তারেক রহমান আসছে, রাজপথ কাঁপছে’; ‘খালেদা, জিয়া’ প্রভৃতি স্লোগান দিচ্ছে দলটির নেতাকর্মীরা। এসময় সারা দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলার নাম ধরেও স্লোগান দিতে দেখা গেছে।

তারেক রহমানের আগমন উপলক্ষে আয়োজিত বিভিন্ন অনুষ্ঠানের বিষয়ে গতকাল বুধবার ব্রিফ করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ। রাজধানীর গুলশানে বিএনপির চেয়ারপার্সনের কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি জানান, জনদুর্ভোগ পরিহার করতে তারেক রহমান সরকারি ছুটির দিনকে তাঁর প্রত্যাবর্তনের দিন হিসেবে নির্ধারণ করেছেন।

সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘দেশে ফিরতে তিনি এমন একটি দিন নির্বাচন করেছেন, যার পরে পরপর দুইদিন সরকারি ছুটি। সব মিলিয়ে টানা তিন দিনের ছুটি। তাঁর নির্দেশনা প্রতিপালন করতে গিয়ে জনদুর্ভোগের বিষয় মাথায় রেখে আমরা রাজধানীর কেন্দ্রীয় কোনো স্থানে, যেমন সোহরাওয়ার্দী উদ্যান কিংবা মানিক মিয়া এভিনিউকে আমাদের কর্মসূচিতে অন্তর্ভুক্ত করিনি। রাজধানীর একপাশে অপেক্ষাকৃত কম জনাকীর্ণ, ৩০০ ফুট প্রশস্ত ৩৬ জুলাই মহাসড়কের শুধু একপাশের সার্ভিস লাইনকে অতি সংক্ষিপ্ত এক গণঅভ্যর্থনা হিসেবে নির্ধারণ করেছি।’

আগামীকাল বৃহস্পতিবারের এই অনুষ্ঠান কোনো জনসভা নয়, সংবর্ধনা অনুষ্ঠানও নয় বলেও জানান বিএনপির এই নেতা। তিনি বলেন, ‘এটি শুধু দেশবাসীর প্রতি তাঁর (তারেক রহমান) আন্তরিক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ ও দেশনেত্রীসহ (খালেদা জিয়া) দেশের সবার কল্যাণ কামনায় দোয়ার অনুরোধের অনুষ্ঠান। সেই আয়োজনে তিনি ছাড়া আর দ্বিতীয় কোনো বক্তা থাকছেন না।’

তারেক রহমানের দেশে ফেরার রোডম্যাপ

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের ‘স্পষ্ট নির্দেশনা’র কথা উল্লেখ করে সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘তিনি বিমানবন্দর থেকে সরাসরি তার চিকিৎসাধীন গুরুতর অসুস্থ মা, বাংলাদেশের অভিভাবক দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে দেখতে হাসপাতালে যাবেন। এরপর তিনি যেতে চান তাঁর পিতা মহান স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ জিয়ার কবর জিয়ারতে। যেতে চান ভাইয়ের (আরাফাত রহমান কোকো) কবরের পাশে।’

সালাহউদ্দিন আহমেদ জানান, তারেক রহমান বাংলাদেশ বিমানের এক নিয়মিত ফ্লাইটে লন্ডন থেকে বাংলাদেশ সময় মধ্যরাতে হিথ্রো বিমানবন্দর থেকে যাত্রা করে বৃহস্পতিবার সিলেটে যাত্রাবিরতির পর বেলা ১১টা ৫০ মিনিটে ঢাকায় অবতরণ করবেন। বিমানবন্দরে তাকে অনাড়ম্বর অভ্যর্থনা জানাবেন বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্যরা। বিমানবন্দর থেকে তিনি তাঁর মা, বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াকে দেখতে এভার কেয়ার হাসপাতালে যাবেন। পরে ৩৬ জুলাই এক্সপ্রেসওয়ে, যেটা ৩০০ ফিট বললে সবাই চেনেন, সেখানে যাবেন। পথিমধ্যে তিনি ‘অত্যন্ত সংক্ষিপ্ত’ অনুষ্ঠানে দেশবাসীর প্রতি ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করবেন এবং মহান আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া আদায় করবেন।

তিনি আরও জানান, প্রত্যাবর্তনের পরদিন শুক্রবার (২৬ ডিসেম্বর) বাদ জুমা জিয়াউর রহমানের মাজার ও সাভার স্মৃতিসৌধে যাবেন তারেক রহমান। শনিবার (২৭ ডিসেম্বর) নির্বাচন কমিশনে এনআইডি কার্যক্রম শেষ করে শহীদ ওসমান হাদির কবর জিয়ারত করবেন। পরে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আহতদের দেখতে পঙ্গু হাসপাতালে যাবেন তিনি।

৩০০ ফিট সড়কের অনুষ্ঠান দলীয়ভাবে ছোট পরিসরে রাখতে চাইলেও তা বড় আয়োজনে পরিণত হবে বলেও ইঙ্গিত দেন বিএনপির এই কেন্দ্রীয় নেতা। তিনি বলেন, ‘আমরা এই আয়োজনের কলেবর যত ছোটই রাখতে চাই না কেন, ১৭ বছর ধরে অপেক্ষমাণ দেশের সব প্রান্ত থেকে আসা নেতা-কর্মী-সমর্থকদের বাঁধভাঙ্গা রাজধানীমুখী স্রোত নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা আমাদের নেই। তারপরেও আমরা আমাদের নেতাকর্মী সমর্থকদের নির্দেশনা দিয়েছি, যাতে তাদের বেশিরভাগ (পূর্বাচলের) কাঞ্চন ব্রিজ ব্যবহার করে অনুষ্ঠানস্থলে আসেন।’

সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আগামীকাল (বৃহস্পতিবার) বাংলাদেশ তার ইতিহাসের বৃহত্তম জনসমাবেশ সাক্ষী হতে চলছে, সেই ইতিহাস দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। এই সুবিশাল আয়োজন নিশ্ছিদ্র বা ত্রুটিহীন করা আমাদের কর্মীদের পক্ষে, এমনকি দলের পক্ষেও সম্ভব নয়। তারপরেও আমাদের স্বনির্বন্ধ অনুরোধ থাকবে স্বতঃস্ফূর্ত নেতাকর্মী, সমর্থক ও শুভানুধ্যায়ীদের প্রতি— আপনারা সর্বোচ্চ ধৈর্য ও শৃঙ্খলা পরিচয় দিয়ে প্রমাণ করুন। আপনারা আমাদের প্রিয় নেতাকে কতটা গভীর ভালোবাসায় অভিষিক্ত করতে সক্ষম।’

থাকছে ২০টি মেডিকেল ক্যাম্প ও ছয় সজ্জার ফিল্ড হাসপাতাল

সালাহউদ্দিন আহমেদ জানান, ৩০০ ফিট সড়কে তারেক রহমানের জনসমাবেশ উপলক্ষে ২০টি মেডিকেল ক্যাম্প স্থাপন করছে বিএনপি। যেখানে সার্বক্ষণিক চিকিৎসকের পাশাপাশি প্যারামেডিক, ওষুধপত্র ও আইসিইউ সুবিধাসম্পন্ন অ্যাম্বুলেন্স প্রস্তুত থাকবে।

এছাড়াও মঞ্চের কাছাকাছি ছয় সজ্জার একটা ‘ফিল্ড হাসপাতালও’ থাকবে বলে জানান বিএনপির এই নেতা।

বিমানবন্দরের যাত্রী ও রোগীদের জন্য তিন হেল্পডেস্ক

বিমানবন্দরগামী ও বিদেশ ফেরত যাত্রী এবং রোগী বহনকারী অ্যাম্বুলেন্সের যাতায়াত নির্বিঘ্ন করতে বিমানবন্দর সড়কের কাকলি মোড়, আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের সামনে ও আব্দুল্লাহপুর; এই তিনটি স্থানে হেল্প ডেস্ক থাকবে। যাঁরা মোটরবাইক স্কটের মাধ্যমে যাত্রাপথকে নির্বিঘ্ন করতে আপ্রাণ চেষ্টা করবেন।

গাড়ি পার্কিংয়ের জন্য অভ্যর্থনা কেন্দ্র

রাজধানীতে সারা দেশ থেকে আসা নেতাকর্মীদের প্রবেশপথ ধরে যানবাহন অবস্থান ও অভ্যর্থনা কেন্দ্র নির্ধারণ করে দিয়েছে বিএনপি। সালাহউদ্দিন আহমেদ জানান, এসব অভ্যর্থনা কেন্দ্রগুলোর জন্য দলের পক্ষ থেকে এরইমধ্যে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এসব অভ্যর্থনা কেন্দ্রে মেডিকেল টিম ও স্বেচ্ছাসেবক থাকবেন। তাঁরা সারা দেশ থেকে আসা দলীয় নেতাকর্মীদের প্রয়োজনীয় দিক-নির্দেশনা দেবেন।

ঢাকা মহানগর দক্ষিণের বিভিন্ন পয়েন্টের কথা উল্লেখ করে সালাহউদ্দিন আহমেদ জানান, দলীয় আয়োজনে সায়েদাবাদ অভ্যর্থনা কেন্দ্রের তত্ত্বাবধানে ডেমরা স্টাফ কোয়ার্টার পয়েন্ট দিয়ে প্রবেশ করা গাড়ি সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালে পার্কিং করবে। একইভাবে শনির আখড়া ও যাত্রাবাড়ী পয়েন্টের গাড়িগুলো সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল ও মহাখালী বাস টার্মিনালে পার্কিং করবে। নয়াবাজার বাবুবাজার ব্রিজ পয়েন্টের গাড়িগুলো ফুলবাড়ীয়া গুলিস্থান বাস টার্মিনাল ও মহাখালী বাস টার্মিনালে পার্কিং করবে। এছাড়াও পোস্তগোলা ব্রিজের উপর, ধোলাইপার মোড়, কমলাপুর রেল স্টেশন ও সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে অভ্যর্থনা কেন্দ্র থাকবে।

আর ঢাকা মহানগর উত্তরের বিভিন্ন পয়েন্টের মধ্যে আব্দুল্লাহপুর অভ্যর্থনা কেন্দ্রের তত্ত্বাবধানে টঙ্গীর আব্দুল্লাহপুর এন্ট্রি পয়েন্টের গাড়ি তুরাগ মাঠে পার্কিং করা হবে। আর তিন শ ফিট সড়কের নীলা মার্কেট অভ্যর্থনা কেন্দ্রের তত্ত্বাবধানে কাঞ্চন ব্রিজ-তিন শ ফিট হয়ে এন্ট্রি পয়েন্টের গাড়িগুলো বাণিজ্য মেলার মাঠে পার্কিং করবে অথবা নীলা মার্কেটে গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা আছে, সেখানে করবে। যে দুই জায়গাতেই মেডিকেল টিমসহ অভ্যর্থনা কেন্দ্র এবং গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা থাকবে।

রাজধানীর মিরপুরে দিয়াবাড়ি অভ্যর্থনা কেন্দ্রের তত্ত্বাবধানে গাবতলী এন্ট্রি পয়েন্টের গাড়ি বেড়িবাঁধ হয়ে উত্তরা দিয়াবাড়ি গরুরহাট ১৭ নম্বর সেক্টরে পার্কিং করবে। আর চীনমৈত্রী হলের পাশে পুরাতন বাণিজ্য মেলার মাঠ অভ্যর্থনা কেন্দ্রের তত্ত্বাবধানে বসিলা মোহাম্মদপুর হয়ে আসা গাড়ি হলের পাশে বাণিজ্য মেলার মাঠে পার্কিং করা হবে। এছাড়াও মহাখালী বাস টার্মিনাল ও বিমানবন্দর রেল স্টেশন অভ্যর্থনা কেন্দ্র থাকছে বলেও জানান সালাহউদ্দিন আহমেদ।

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন, বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক ডা. মওদুদ আলমগীর পাভেল, তারেক রহমানের প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা শামছুল ইসলাম প্রমুখ।

Ad 300x250

সম্পর্কিত