leadT1ad

প্রাথমিকের ‘মেধা যাচাই’ পরীক্ষা এক মাসের জন্য স্থগিত

স্ট্রিম প্রতিবেদক
স্ট্রিম প্রতিবেদক
ঢাকা

প্রকাশ : ১৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ২১: ৪২
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। সংগৃহীত ছবি

প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষার নাম বদলে রাখা হয়েছিল ‘সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষার্থী মেধা যাচাই’। কিন্তু প্রশাসনিক এই কৌশলেও শেষ রক্ষা হলো না প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য আয়োজিত বিতর্কিত এই পরীক্ষার কার্যক্রম এক মাসের জন্য স্থগিত করেছেন হাইকোর্ট। ফলে আগামী ২১, ২২, ২৩ ও ২৪ ডিসেম্বর নির্ধারিত এই পরীক্ষাটি আর অনুষ্ঠিত হচ্ছে না।

গত রোববার (১৪ ডিসেম্বর) বিচারপতি ফাহমিদা কাদের ও বিচারপতি মো. আসিফ হাসানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ রুলসহ এই স্থগিতাদেশ দেন। আদালতে রিট আবেদনকারীদের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী নিয়াজ মোর্শেদ।

আইনজীবীদের অভিযোগ, আদালতের আগের রায় পাশ কাটাতে এবং বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের প্রক্রিয়ার বাইরে রাখতেই ‘মেধা যাচাই’ নামের এই প্রশাসনিক চতুরতার আশ্রয় নেওয়া হয়েছিল।

ঘটনার সূত্রপাত চলতি বছরের ১৭ জুলাই। ওই দিন প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর এক স্মারকে জানিয়েছিল, ২০২৫ সালের প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষায় শুধু সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরাই অংশ নিতে পারবে। এই সিদ্ধান্তের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে কেরানীগঞ্জ পাবলিক ল্যাবরেটরি স্কুলের পরিচালক মো. ফারুক হোসেনসহ শিক্ষক ও অভিভাবক প্রতিনিধিদের মোট ৪২ জন হাইকোর্টে রিট দায়ের করেন।

এই রিট পিটিশনের প্রাথমিক শুনানি শেষে গত ২ সেপ্টেম্বর হাইকোর্ট একটি রুল জারি করেন। রুলে আদালত জানতে চান, শুধু সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের সুযোগ দিয়ে জারি করা ১৭ জুলাইয়ের ওই সার্কুলার কেন আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না। একই সঙ্গে, ২০০৮ সালের ‘প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষা নীতিমালা’ অনুসারে পরীক্ষা গ্রহণের নির্দেশনা কেন দেওয়া হবে না, সে বিষয়েও ব্যাখ্যা চাওয়া হয়। প্রাথমিক শুনানিতেই আদালত ওই সার্কুলারের কার্যকারিতা স্থগিত করে দিয়েছিলেন।

পররে দীর্ঘ শুনানি শেষে গত ৩ নভেম্বর (সোমবার) হাইকোর্ট রুলটিকে চূড়ান্তভাবে যথাযথ ঘোষণা করে রায় দেন। রায়ে বলা হয়, সরকারির পাশাপাশি বেসরকারি নিম্নমাধ্যমিক, রেজিস্ট্রার্ড কিন্ডারগার্টেন, কমিউনিটি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও অন্যান্য অনুমোদিত বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও ২১-২৪ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিতব্য বৃত্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবে। রায়ের নির্দেশনা বাস্তবায়নে মন্ত্রণালয়কে ১৫ দিনের সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়।

সে সময় আদালতে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের পক্ষে যুক্তি উপস্থাপন করেন আইনজীবী মুনতাসির উদ্দিন আহমেদ এবং রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সৈয়দ ইজাজ কবির।

হাইকোর্টের ওই রায় স্থগিত চেয়ে গত ২৪ নভেম্বর রাষ্ট্রপক্ষ আপিল বিভাগে ‘লিভ টু আপিল’ (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) করে, যা এখনো শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে।

কিন্তু এদিকে আপিল বিভাগের চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের অপেক্ষা না করেই অধিদপ্তর ভিন্ন পথে হাঁটে। গত ১১ নভেম্বর তারিখ দেখিয়ে (কার্যত ১৯ নভেম্বর স্বাক্ষরিত) প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর নতুন একটি স্মারক জারি করে। এতে আগের নির্ধারিত তারিখ (২১-২৪ ডিসেম্বর) ঠিক রেখেই পরীক্ষার নাম দেওয়া হয় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়-শিক্ষার্থী মেধা যাচাই-২০২৫।

এই নতুন সিদ্ধান্তের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে কেরানীগঞ্জ পাবলিক ল্যাবরেটরি স্কুলের পরিচালক মো. ফারুক হোসেন ও দুজন অভিভাবক গত ১০ ডিসেম্বর হাইকোর্টে নতুন একটি রিট দায়ের করেন।

শুনানি শেষে হাইকোর্ট বিষয়টি আমলে নিয়ে ১১ নভেম্বরের ওই স্মারকের কার্যক্রম এক মাসের জন্য স্থগিত করেছেন। আদালতের এই আদেশের ফলে ২১ ডিসেম্বর থেকে অনুষ্ঠেয় পরীক্ষাটি আপাতত অনুষ্ঠিত হচ্ছে না।

Ad 300x250
সর্বাধিক পঠিত

সম্পর্কিত