leadT1ad

স্ট্রিম এক্সপ্লেইনার/পারমাণবিক শক্তি নিয়ে কীভাবে ভাবছে ভারত, মোদীর ‘শান্তি বিলে’ কী আছে

ভারতের জ্বালানি নীতিতে এক যুগান্তকারী মোড় এসেছে। দীর্ঘদিন রাষ্ট্রের একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণে থাকা পারমাণবিক খাত এখন বড় পরিবর্তনের মুখে। লোকসভায় পাস হওয়া ‘শান্তি বিল, ২০২৫’ শুধু একটি নতুন আইন নয়; এটি ভারতের শক্তি নিরাপত্তা, অর্থনৈতিক উচ্চাকাঙ্ক্ষা এবং বৈশ্বিক কৌশলগত অবস্থান নতুনভাবে নির্ধারণের চেষ্টা। এই বিলের মাধ্যমে সরকার একদিকে বেসরকারি ও বিদেশি বিনিয়োগের দরজা খুলছে, অন্যদিকে নিরাপত্তা ও দায়বদ্ধতা নিয়ে নতুন বিতর্কও তৈরি হচ্ছে। প্রশ্ন উঠছে—‘শান্তি বিল’ কি ভারতের ভবিষ্যৎ জ্বালানি সংকটের সমাধান, নাকি এটি নতুন ঝুঁকির সূচনা?

স্ট্রিম ডেস্ক
স্ট্রিম ডেস্ক
ঢাকা

প্রকাশ : ১৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৬: ১৭
পারমাণবিক বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়াতে পারমাণবিক শক্তি খাতে বেসরকারিকরন করছে ভারত। স্ট্রিম গ্রাফিক

পারমাণবিক শক্তি নিয়ে ভারতের পার্লামেন্ট লোকসভায় একটি নতুন বিল পাশ হয়েছে। বিলটির শিরোনাম ‘সাস্টেইনেবল হার্নেসিং অ্যান্ড এডভান্সমেন্ট অফ নিউক্লিয়ার এনার্জি ফর ট্রান্সফর্মিং ইন্ডিয়া (শান্তি) বিল, ২০২৫’ । এই বিল ভারতের জ্বালানি নীতিতে বড় পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছে। ১৯৯১ সালের অর্থনৈতিক সংস্কারের পর এটিই সবচেয়ে বড় কাঠামোগত রূপান্তর।

দীর্ঘদিন ধরে ভারতের পারমাণবিক খাত পুরোপুরি রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণে ছিল। বেসরকারি বিনিয়োগ সেখানে প্রবেশাধিকার পায়নি। ‘শান্তি বিল’ সেই কাঠামো ভেঙে দেওয়ার প্রস্তাব করেছে। ১৭ ডিসেম্বর লোকসভায় বিলটি পাস হয়। বিরোধী দল এর বিরোধিতা করে পার্লামেন্ট থেকে ওয়াকআউট করে। বিলটি এখন রাজ্যসভায় আলোচনার ও অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে।

এই বিলের মাধ্যমে ১৯৬২ সালের পারমাণবিক শক্তি আইন এবং ২০১০ সালের পারমাণবিক ক্ষতিপূরণ আইন বাতিল করে নতুন আইন আনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। মূল লক্ষ্য হলো পারমাণবিক বিদ্যুৎ উৎপাদন দ্রুত বাড়ানো। বর্তমানে উৎপাদন সক্ষমতা ৮ দশমিক ২ গিগাওয়াট। ভারত সরকার ২০৪৭ সালের মধ্যে তা ১০০ গিগাওয়াটে নিতে চায়। ভারতের ২০৭০ সালের মধ্য নেট জিরো লক্ষ্যমাত্রা অর্জন এবং পাশাপাশি ৫ ট্রিলিয়ন ডলারের অর্থনীতি গড়ার সঙ্গেও এটি সম্পর্কযুক্ত।

বিলটির কৌশলগত প্রেক্ষাপট ও প্রয়োজনীয়তা

ভারতের জ্বালানি খাত বর্তমানে তিনটি বড় চ্যালেঞ্জের মুখে। একদিকে বাড়তে থাকা জনসংখ্যার জন্য শক্তির নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। অন্যদিকে শিল্পের জন্য বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী রাখতে হবে। একই সঙ্গে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় টেকসই জ্বালানি ব্যবহারের লক্ষ্য পূরণ করতে হবে।

নবায়নযোগ্য শক্তিতে ভারত অগ্রগতি করেছে। তবে সৌর ও বায়ু শক্তি নিরবচ্ছিন্ন নয়। চাহিদা বাড়তে থাকায় কয়লার বিকল্প প্রয়োজন। এই প্রেক্ষাপটে পারমাণবিক শক্তি কম কার্বনযুক্ত এবং ২৪ ঘণ্টা বিদ্যুৎ সরবরাহের সক্ষম উৎস হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।

শান্তি বিল ২০৪৭ সালের ‘উন্নত ভারত’ লক্ষ্য অর্জনের সঙ্গে যুক্ত। উন্নত অর্থনীতির জন্য মাথাপিছু জ্বালানি ব্যবহার বর্তমানের তুলনায় অনেক বেশি প্রয়োজন। এর জন্য পারমাণবিক সক্ষমতা ১০০ গিগাওয়াটে নিতে বিপুল বিনিয়োগ প্রয়োজন।

কিন্তু রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার পক্ষে এককভাবে এই অর্থ জোগান দেওয়া সম্ভব নয়। সরকারি বাজেটের সীমাবদ্ধতাও রয়েছে। তাই শান্তি বিলের মাধ্যমে বেসরকারি ও বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণের পথ খোলা হচ্ছে। দায়বদ্ধতার আইন সংস্কার করে বিনিয়োগযোগ্য পরিবেশ তৈরিই এই বিলের মূল উদ্দেশ্য।

এখন ভারতীয় বেসরকারি কোম্পানি ও যৌথ উদ্যোগ প্রতিষ্ঠান পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ ও পরিচালনার লাইসেন্স পেতে পারবে। তবে বিদেশি কোম্পানি সরাসরি নিয়ন্ত্রণ নিতে পারবে না। সর্বোচ্চ ৪৯ শতাংশ বিদেশি বিনিয়োগের সুযোগ রাখা হয়েছে।

ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট

ভারতের পারমাণবিক খাত দীর্ঘদিন ধরে বিচ্ছিন্ন ও সম্পূর্ণ রাষ্ট্রনিয়ন্ত্রিত ছিল। ১৯৬২ সালের পারমাণবিক শক্তি আইনের আওতায় ভারতের পারমাণবিক কর্মসূচি একটি বন্ধ ব্যবস্থায় পরিচালিত হয়। হোমি ভাভার তিন ধাপের কর্মসূচির লক্ষ্য ছিল শুধু দেশের থোরিয়াম সম্পদ ব্যবহার করা।

ফলে ১৯৭৪ সালের পোখরান পরীক্ষার পর আন্তর্জাতিক ইউরেনিয়াম বাজার থেকে ভারত কার্যত বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। নিরাপত্তার কারণে বেসরকারি খাতকে সম্পূর্ণভাবে বাইরে রাখা হয়। তবে এতে বেসামরিক বিদ্যুৎ উৎপাদনে অদক্ষতা বাড়ে। প্রযুক্তি ও পুঁজি না থাকায় পারমাণবিক বিদ্যুৎ উৎপাদন দীর্ঘদিন স্থবির থাকে।

২০০৮ সালের ভারত-যুক্তরাষ্ট্র বেসামরিক পারমাণবিক চুক্তির মাধ্যমে এই বিচ্ছিন্নতা ভাঙে। এরপর ভারত আন্তর্জাতিক জ্বালানি ও প্রযুক্তি বাজারে প্রবেশাধিকার পায়। কিন্তু ২০১০ সালের পারমাণবিক ক্ষতিপূরণ আইন নতুন সংকট তৈরি করে। এই আইনে সরবরাহকারীদের ওপর অতিরিক্ত দায় চাপানো হয়। দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে ক্ষতিপূরণ সীমাহীন হয়ে ওঠে।

ফলে আন্তর্জাতিক কোম্পানিগুলো চুক্তিতে আগ্রহ হারায়। বেসরকারি দেশীয় বিনিয়োগকারীরাও পিছিয়ে যায়। প্রায় ১৫ বছরেও কোনো বিদেশি রিয়্যাক্টরের বাণিজ্যিক চুক্তি হয়নি। শান্তি বিল এই আইনি অচলাবস্থা দূর করার জন্য নতুনভাবে নীতি পুনর্গঠনের উদ্যোগ।

বিলে কী আছে

শান্তি বিল বিনিয়োগ আকর্ষণ ও কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে ভারসাম্য রাখার চেষ্টা করেছে।

বেসরকারি খাতের প্রবেশ

এই বিল রাষ্ট্রায়ত্ত নিউক্লিয়ার পাওয়ার করপোরেশন অব ইন্ডিয়া লিমিটেডের একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণের অবসান ঘটাবে।

এখন ভারতীয় বেসরকারি কোম্পানি ও যৌথ উদ্যোগ প্রতিষ্ঠান পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ ও পরিচালনার লাইসেন্স পেতে পারবে। তবে বিদেশি কোম্পানি সরাসরি নিয়ন্ত্রণ নিতে পারবে না। সর্বোচ্চ ৪৯ শতাংশ বিদেশি বিনিয়োগের সুযোগ রাখা হয়েছে।

নিরাপত্তার স্বার্থে কিছু কৌশলগত ও সংবেদনশীল কার্যক্রম পুরোপুরি সরকারের হাতে রাখা হয়েছে। যেমন ইউরেনিয়াম খনন, জ্বালানি সমৃদ্ধকরণ ও ব্যবহৃত জ্বালানি পুনঃপ্রক্রিয়াকরণ এবং ভারী জল উৎপাদন সরকারের হাতেই থাকছে।

প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোতেও বড় পরিবর্তন আনা হয়েছে। পারমাণবিক শক্তি নিয়ন্ত্রণ বোর্ডকে পূর্ণ আইনি ক্ষমতা দেওয়া হচ্ছে, যাতে এটি স্বাধীনভাবে তদারকি করতে পারে।

ভারত পশ্চিমা পারমাণবিক মানদণ্ডের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে বৈশ্বিক সরবরাহ ব্যবস্থায় যুক্ত হতে চায়। এর মাধ্যমে ভবিষ্যতে চীন ও রাশিয়ার বিকল্প হিসেবে নিজেকে তুলে ধরার কৌশল নেওয়া হয়েছে।

দায়বদ্ধতার আইন কেন বদলানো হলো

২০০৮ সালের ভারত–যুক্তরাষ্ট্র পারমাণবিক চুক্তির পরও প্রকৃত অগ্রগতি হয়নি। প্রধান কারণ ছিল ২০১০ সালের ক্ষতিপূরণ আইন। ওই আইনে সরবরাহকারীদের ওপর অতিরিক্ত দায় চাপানো হয়েছিল। এতে আন্তর্জাতিক কোম্পানিগুলো বিনিয়োগে আগ্রহ হারায়।

শান্তি বিলে সেই কাঠামো বদলানো হয়েছে। দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে মূল দায় থাকবে বিদ্যুৎকেন্দ্র পরিচালকের ওপর। সরবরাহকারীর দায় কেবল চুক্তির শর্ত বা ইচ্ছাকৃত ক্ষতির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে। ক্ষতিপূরণের সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে। নির্ধারিত সীমার বেশি ক্ষতির দায় নেবে সরকার।

পররাষ্ট্রনীতি ও আঞ্চলিক রাজনীতিতে কী প্রভাব পড়বে

শান্তি বিল কেবল একটি জ্বালানি আইন নয়, এটি ভারতের পররাষ্ট্রনীতি ও কৌশলগত অংশীদারত্বের সঙ্গেও যুক্ত। এই বিল ২০০৮ সালের ভারত-যুক্তরাষ্ট্র পারমাণবিক চুক্তিকে বাস্তব রূপ দিতে সহায়ক হতে পারে। এতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য ও প্রযুক্তি সহযোগিতা জোরদার হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

ভারত পশ্চিমা পারমাণবিক মানদণ্ডের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে বৈশ্বিক সরবরাহ ব্যবস্থায় যুক্ত হতে চায়। এর মাধ্যমে ভবিষ্যতে চীন ও রাশিয়ার বিকল্প হিসেবে নিজেকে তুলে ধরার কৌশল নেওয়া হয়েছে। একইভাবে, ফ্রান্সের সঙ্গে মহারাষ্ট্রের জাইতাপুর প্রকল্পও নতুন গতি পেতে পারে। দায়বদ্ধতার সীমা নির্ধারণ করায় এই বৃহৎ প্রকল্প বাস্তবায়নের পথ সহজ হচ্ছে।

পারমাণবিক শক্তি নিয়ে ভারতের দৃষ্টিভঙ্গি কী

ভারত পারমাণবিক শক্তিকে জ্বালানি নিরাপত্তার একটি গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ হিসেবে দেখে। বর্তমানে ভারতে ২৫টি পারমাণবিক রিয়্যাক্টর চালু রয়েছে। মোট উৎপাদন সক্ষমতা প্রায় ৮ দশমিক ৮৮ গিগাওয়াট। এটি দেশের মোট বিদ্যুৎ উৎপাদনের প্রায় ৩ শতাংশ।

সরকার ভবিষ্যতের জন্য উচ্চাভিলাষী লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে। ২০৩১-৩২ সালের মধ্যে উৎপাদন সক্ষমতা ২২ গিগাওয়াটে নেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। ২০৪৭ সালের মধ্যে তা ১০০ গিগাওয়াটে উন্নীত করার লক্ষ্য নেওয়া হয়েছে। শিল্পখাত, ডেটা সেন্টার, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, বৈদ্যুতিক যান এবং নগরায়ণের ফলে বিদ্যুতের চাহিদা দ্রুত বাড়ছে। কয়লার ওপর নির্ভরতা কমানো এবং কার্বনমুক্ত শক্তি উৎপাদন নিশ্চিত করাও এই লক্ষ্যের অংশ।

২০০৮ সালের ভারত-যুক্তরাষ্ট্র পারমাণবিক চুক্তির মাধ্যমে আন্তর্জাতিক সহযোগিতার দরজা খুললেও অগ্রগতি ছিল ধীর। দায়বদ্ধতা সংক্রান্ত আইনি জটিলতা এতে বড় বাধা ছিল। শান্তি বিল সেই অবস্থান থেকে নীতিগত পরিবর্তনের ইঙ্গিত দেয়। এতে বেসরকারি পুঁজি ও প্রযুক্তিকে স্বাগত জানানো হয়েছে। তবে কৌশলগত নিয়ন্ত্রণ রাষ্ট্রের হাতেই রাখা হয়েছে।

এই নীতি নবায়নযোগ্য শক্তির পরিপূরক হিসেবে পারমাণবিক শক্তিকে গ্রিডের স্থিতিশীলতার কেন্দ্রে আনতে চায়। এই লক্ষ্য পূরণে ২০ হাজার কোটি রুপির পারমাণবিক শক্তি মিশন চালু করা হয়েছে। এর আওতায় ২০৩৩ সালের মধ্যে অন্তত পাঁচটি দেশীয় ছোট মডুলার রিয়্যাক্টর চালু করার পরিকল্পনা রয়েছে।

তবে বিরোধী দল ও সমালোচকদের উদ্বেগও কম নয়। তাঁদের মতে, সরবরাহকারীর দায় কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। এতে ত্রুটিপূর্ণ যন্ত্রপাতির দায় এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ তৈরি হতে পারে। ভোপাল গ্যাস দুর্ঘটনার অভিজ্ঞতা এই আশঙ্কা বাড়ায়। দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে আর্থিক ঝুঁকি শেষ পর্যন্ত অপারেটর বা করদাতার ওপর পড়তে পারে।

বিলটি নিয়ে কেন বিতর্ক, কী প্রভাব পড়তে পারে

শান্তি বিল আইন হলে ভারতের জ্বালানি ব্যবস্থায় বড় পরিবর্তন আসতে পারে। তবে তা বিতর্কের বাইরে নয়।

সরকার ও সমর্থকদের মতে, এই বিল বিপুল বিনিয়োগ আকর্ষণ করবে। ১০০ গিগাওয়াট সক্ষমতা গড়তে বিপুল অর্থের প্রয়োজন। বেসরকারি খাতের দক্ষতা ও উদ্ভাবনের মাধ্যমে দ্রুত বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়ানো সম্ভব হবে। দায়বদ্ধতা সংস্কারের ফলে বিদেশি প্রযুক্তি আসার পথ সহজ হবে। এতে কর্মসংস্থান বাড়বে। দেশীয় উৎপাদন শক্তিশালী হবে। শক্তি নিরাপত্তাও জোরদার হবে। ডেটা সেন্টার ও শিল্পখাতে নিরবচ্ছিন্ন পরিষ্কার বিদ্যুৎ সরবরাহ সম্ভব হবে।

তবে বিরোধী দল ও সমালোচকদের উদ্বেগও কম নয়। তাঁদের মতে, সরবরাহকারীর দায় কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। এতে ত্রুটিপূর্ণ যন্ত্রপাতির দায় এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ তৈরি হতে পারে। ভোপাল গ্যাস দুর্ঘটনার অভিজ্ঞতা এই আশঙ্কা বাড়ায়। দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে আর্থিক ঝুঁকি শেষ পর্যন্ত অপারেটর বা করদাতার ওপর পড়তে পারে।

বেসরকারিকরণের ফলে নিরাপত্তা ঝুঁকি বাড়তে পারে বলেও অভিযোগ রয়েছে। বিরোধী দল বলছে, উচ্চঝুঁকিপূর্ণ খাতে মুনাফাকে নিরাপত্তার ওপরে স্থান দেওয়া হয়েছে। বিলটি সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে পাঠানো হয়নি বলেও তারা আপত্তি তুলেছে। নিয়ন্ত্রক সংস্থার স্বাধীনতা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। বেসরকারি সংস্থাগুলোর অভিজ্ঞতা রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানের মতো গভীর নাও হতে পারে—এমন আশঙ্কাও করা হচ্ছে।

লোকসভায় বিলটি পাস হয় বিরোধীদের ওয়াকআউটের মধ্য দিয়ে। তারা একে ‘ঝুঁকিপূর্ণ আইন’ বলে আখ্যা দিয়েছে এবং ত্রুটিপূর্ণ ধারার কথা বলেছে।

সব মিলিয়ে, শান্তি বিল একটি সাহসী নীতিগত মোড়। এটি রাষ্ট্র ও বেসরকারি খাতের যৌথ পারমাণবিক ব্যবস্থার পথে ভারতকে এগিয়ে নিতে পারে। তবে এর সাফল্য নির্ভর করবে কার্যকর বাস্তবায়ন, কঠোর নিরাপত্তা তদারকি এবং রাজ্যসভার অনুমোদনের ওপর। এই বিল ভারতের বদলে যাওয়া দৃষ্টিভঙ্গিই তুলে ধরে—উন্নত ও টেকসই ভবিষ্যতের জন্য পারমাণবিক শক্তি অপরিহার্য।

তথ্যসূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া, ইন্ডিয়া টুডে, এনডিটিভি, ট্রিবিউন ইন্ডিয়া, রয়টার্স, আউটলুক ইন্ডিয়া

Ad 300x250

সম্পর্কিত