আজ ১৮ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবস।
রাতুল আল আহমেদ

বর্তমান বিশ্বে, বিশেষ করে পশ্চিমের রাজনীতিতে অভিবাসী বা অভিবাসী বংশোদ্ভূতদের উত্থান এক যুগান্তকারী ঘটনা। যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা কিংবা সাম্প্রতিক সময়ে আলোচিত জোহরান মামদানিকে দেখুন। একইভাবে যুক্তরাজ্যের ঋষি সুনাক, টিউলিপ সিদ্দিক, রুশনারা আলী ও সাদিক খানের মতো নেতাদের নামও সামনে আসে। তাঁরা কিন্তু কেবল তাঁদের রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে পরিচিত হয়ে ওঠেননি।
এই নেতাদের পরিচয়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো তাঁদের অভিবাসী সত্তা। যদিও আভিধানিক অর্থে তাঁরা ‘অভিবাসী’ নন; তাঁরা সবাই দ্বিতীয় প্রজন্মের নাগরিক, অর্থাৎ ওই দেশেই তাঁদের জন্ম। বারাক ওবামা যুক্তরাষ্ট্রে (হাওয়াই) জন্মগ্রহণ করেছেন; ঋষি সুনাক, সাদিক খান, রুশনারা আলী এবং টিউলিপ সিদ্দিক—সবারই জন্ম যুক্তরাজ্যে। তারপরও তাঁরা অভিবাসনের পরম্পরা বহন করছেন, কারণ তাঁদের পূর্বপুরুষেরা ছিলেন অভিবাসী। পশ্চিমা সমাজে এই পরিচয় বিশেষ তাৎপর্য বহন করে এবং তাঁদের এই উত্থান পশ্চিমের বৃহত্তর সামাজিক রূপান্তরকে নির্দেশ করে। একই সঙ্গে এটি রাষ্ট্রের সঙ্গে নাগরিকের সম্পর্ক পরিবর্তনের এবং জাতীয় পরিচয় নতুন করে গঠনের দিকে ইঙ্গিত করে।
এখন প্রশ্ন উঠতে পারে, ঠিক কীভাবে এবং কেন অভিবাসীরা নতুন দেশে গিয়ে রাজনৈতিক ক্ষমতার কেন্দ্রে পৌঁছাতে চান ও সক্ষম হন? বিষয়টি বুঝতে হলে প্রথমেই তাকানো প্রয়োজন জাতিরাষ্ট্র ব্যবস্থার দিকে। আধুনিক জাতিরাষ্ট্র সুনির্দিষ্ট ভূখণ্ড, জনসংখ্যা ও প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণের ওপর দাঁড়িয়ে থাকে। কিন্তু নৃবিজ্ঞানী অর্জুন আপ্পাদুরাই তাঁর বিখ্যাত গবেষণাকর্ম মডার্নিটি অ্যাট লার্জ: কালচারাল ডাইমেনশনস অব গ্লোবালাইজেশন বইয়ে দেখিয়েছেন, বৈশ্বিক মিডিয়া এবং অভিবাসনের প্রবাহ বর্তমান জাতিরাষ্ট্রের জাতিভিত্তিক সীমানাকে ক্রমশ পোকায় কাটা বইয়ের মতো ছিদ্রযুক্ত করে ফেলছে।
মনে রাখতে হবে, অভিবাসন কেবল ভৌগোলিক স্থানান্তর নয়; বরং এটি সামাজিক সম্পর্ক, সাংস্কৃতিক চর্চা ও রাজনৈতিক মতাদর্শেরও স্থানান্তর। ফলে অভিবাসীরা যখন নতুন জাতিরাষ্ট্রে প্রবেশ করেন, তখন জাতি, নাগরিকত্ব ও অন্তর্ভুক্তির (ইনক্লুসিভিটি) প্রশ্নগুলো নতুন করে সেই রাষ্ট্র ও তার নাগরিকদের সামনে আসে। আর এই প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়েই রাজনীতি নতুন আকার ধারণ করে এবং অভিবাসীরা হয়ে ওঠেন সেই রাজনীতির সক্রিয় অংশীদার।
এ ছাড়া ক্ষমতাকাঠামো বোঝার ক্ষেত্রে সামাজিক–সাংস্কৃতিক নৃবিজ্ঞানের একটি মৌলিক বোঝাপড়া হলো, ক্ষমতা সবচেয়ে স্পষ্ট হয় সমাজের একদম নিচ থেকে। প্রখ্যাত নৃবিজ্ঞানী জেমস সি স্কট তাঁর কাজে দেখিয়েছেন যে রাষ্ট্র সাধারণত সমাজকে ওপর থেকে বা প্রশাসনিক দৃষ্টিভঙ্গিতে অর্থাৎ মানচিত্র, জনসংখ্যা ও কর ব্যবস্থার মাধ্যমে দেখে। অপরদিকে সাধারণ মানুষ রাষ্ট্রকে অনুভব করে তাঁদের প্রাত্যহিক অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে। অভিবাসীরা এই অভিজ্ঞতা আরও তীব্রভাবে অনুভব করেন। কারণ, তাঁরা নাগরিকত্ব, আইন ও রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণ—যেমন ইমিগ্রেশন বা সীমান্ত ব্যবস্থার সঙ্গে সরাসরি মুখোমুখি হন। এই অভিজ্ঞতা তাঁদের মধ্যে রাষ্ট্রের অস্তিত্ব সম্পর্কে একধরনের সচেতনতা তৈরি করে। এই সচেতনতাই যখন রাজনৈতিক ভাষায় রূপ নেয়, তখন তা হয়ে ওঠে শক্তিশালী ও বিকল্প এক রাজনৈতিক বয়ান।
অভিবাসী রাজনীতিকদের সফলতার পেছনে তাঁদের অর্জিত বিশেষ দক্ষতার ভূমিকা অনস্বীকার্য। পিয়েরে বুরদিউ তাঁর বিখ্যাত কাজ ডিসটিংশন: আ সোশ্যাল ক্রিটিক অব দ্য জাজমেন্ট অব টেস্ট–এ ‘সাংস্কৃতিক পুঁজি’ বা কালচারাল ক্যাপিটালকে এমন এক ক্ষমতা হিসেবে ব্যাখ্যা করেছেন, যা ব্যক্তির সামাজিক ও রাজনৈতিক ক্ষমতা অর্জনে সহায়তা করে। অভিবাসীদের বহুভাষিকতা, ভিন্ন ভিন্ন সামাজিক কোড বোঝার ক্ষমতা এবং বহুসাংস্কৃতিক অভিজ্ঞতা—এই সাংস্কৃতিক পুঁজিরই একটি গুরুত্বপূর্ণ রূপ। তাঁরা বিভিন্ন সামাজিক গোষ্ঠীর মধ্যে মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা পালন করতে পারেন এবং রাষ্ট্র ও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মধ্যে সেতু তৈরি করতে সক্ষম হন। আধুনিক গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে যেখানে ভোটব্যাংক এবং ভিন্নমতের সমন্বয়ের প্রয়োজন পড়ে, সেখানে এই দক্ষতা তাঁদের বিশেষ সুবিধা দেয়।
এ ছাড়া রবিন কোহেন তাঁর ডায়াসপোরাবিষয়ক গবেষণায় দেখিয়েছেন, অভিবাসীরা তাঁদের অতীত অভিজ্ঞতা, স্মৃতি ও ট্রমা এই নতুন সামাজিক পরিসরে বয়ে নিয়ে আসেন। উপনিবেশ, যুদ্ধ বা দমনপীড়নমূলক রাষ্ট্র থেকে আসা অভিবাসীরা প্রায়ই স্বাধীনতা, অধিকার ও ন্যায়বিচারের প্রশ্নে অনেক বেশি সংবেদনশীল হন। এই নৈতিক সংবেদনশীলতা নতুন রাষ্ট্রের রাজনীতিতে এমন এক শক্তিশালী ভাষা তৈরি করে, যা কেবল অর্থনৈতিক স্বার্থের মধ্যেই সীমাবদ্ধ না থেকে মর্যাদা, মানবিকতা ও সমতার মতো নৈতিক দাবি উত্থাপন করে।
অভিবাসন, পরিচয় ও বর্ণের ধারণা কীভাবে হাইব্রিড আইডেন্টিটি বা মিশ্র পরিচয় এবং রাজনৈতিক বোধ গড়ে তোলে, তার বাস্তব উদাহরণ হতে পারে ২০০৮ সালের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বারাক হোসেন ওবামার জয়লাভের ঘটনা। যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের মধ্যে পরিচয়ের ধারণা যে কেবল প্রতীকী নয়, বরং ক্ষমতাকাঠামোর সঙ্গে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে আছে, তা ফুটে ওঠে ওই নির্বাচনের ফলাফলে।
এক্সিট পোলের তথ্য অনুযায়ী, দেশটির কৃষ্ণাঙ্গ ভোটারদের মধ্যে ওবামা ৯৫ শতাংশ সমর্থন পেয়েছিলেন। এটি প্রমাণ করে, দেশটিতে কৃষ্ণাঙ্গ বর্ণের মানুষের ঐতিহাসিক বঞ্চনার বিপরীতে তাঁর প্রার্থিতা ছিল সমষ্টিগত রাজনৈতিক আকাঙ্ক্ষার প্রতীক। অন্যদিকে তরুণ ও প্রথমবার ভোট দেওয়া নাগরিকদের মধ্যে তাঁর বিপুল জনপ্রিয়তা প্রমাণ করে, তাঁর বহুসাংস্কৃতিক পরিচয় মার্কিন নাগরিকদের মধ্যে আধুনিক ও অন্তর্ভুক্তিমূলক ভবিষ্যতের ইঙ্গিত হিসেবে ধরা দিয়েছিল। এ ছাড়া কেবল কৃষ্ণাঙ্গরাই নন, উল্লেখযোগ্য সংখ্যক শ্বেতাঙ্গও (যদিও তা তাঁর রিপাবলিকান প্রতিদ্বন্দ্বীর চেয়ে কিছুটা কম) ওবামাকে তাঁদের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দেখতে চেয়েছিলেন। ওবামার এই সাফল্য দেখায় যে অভিবাসী পরিচয় কেবল একটি ক্যাটাগরি বা প্রতীক হয়ে না থেকে শক্তিশালী রাজনৈতিক পুঁজিতেও রূপান্তরিত হতে পারে।
অভিবাসী রাজনীতিকদের সবচেয়ে বড় অবদান হলো জাতীয় পরিচয়ের নতুন সংজ্ঞা তৈরি করা। বেনেডিক্ট অ্যান্ডারসনের ইমাজিনড কমিউনিটিজ বা কল্পিত সম্প্রদায়ের ব্যাখ্যা অনুযায়ী, জাতি কোনো প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্ট সত্তা নয়, বরং এটি একটি ‘কল্পিত সামাজিক নির্মাণ’। অভিবাসী রাজনীতিকরা এই কল্পনাকে নতুনভাবে সংজ্ঞায়িত করেন। তাঁরা জাতীয় পরিচয়কে রক্ত, বর্ণ বা ধর্মের সংকীর্ণ সীমানা থেকে বের করে এনে নাগরিক মূল্যবোধ ও অংশগ্রহণের ওপর ভিত্তি করে পুনর্গঠন করেন। এর ফলে জাতি হয়ে ওঠে আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক, যা আধুনিক বহুসাংস্কৃতিক রাষ্ট্রের বাস্তবতার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
অবশ্য অভিবাসী রাজনীতিকদের এই ক্রমবর্ধমান প্রভাব ও জাতীয় পরিচয়ের নতুন বয়ান বিশ্বজুড়ে এক প্রবল প্রতিক্রিয়ারও জন্ম দিয়েছে। অভিবাসীদের এই উত্থানকে অনেক রক্ষণশীল গোষ্ঠী তাদের ঐতিহ্যগত ‘সাংস্কৃতিক শুদ্ধতা’ থেকে শুরু করে জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি হিসেবে দেখছে। এর ফলে পশ্চিমে উগ্র ডানপন্থী জনতোষণবাদী রাজনীতির জোয়ার এসেছে, যা মূলত অভিবাসনবিরোধী আবেগকে পুঁজি করে গড়ে উঠেছে। ডোনাল্ড ট্রাম্পের ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতি কিংবা ইউরোপের বিভিন্ন দেশে কট্টর ডানপন্থী দলগুলোর জনপ্রিয়তা প্রমাণ করে যে অভিবাসীদের রাজনৈতিক অংশগ্রহণ একদিকে যেমন অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ গড়ছে, অন্যদিকে তা রক্ষণশীল জনমানসে অস্তিত্ব সংকটের ভয় ধরিয়ে দিচ্ছে। ফলে সমকালীন রাজনীতি এখন এক দ্বিধাবিভক্ত ময়দান; যেখানে একদিকে চলছে বহুসাংস্কৃতিক উদারবাদ, আর অন্যদিকে স্বজাত্যবোধ ও কঠোর সীমান্ত নিয়ন্ত্রণের লড়াই।
তবে আশার কথা, ডানপন্থী এই রক্ষণশীল বয়ানের বিপরীতে নতুন প্রজন্মের অভিবাসী রাজনীতিবিদরা রক্ষণাত্মক অবস্থান না নিয়ে বরং রাজনীতির সংজ্ঞাকে আমূল বদলে দিচ্ছেন। এর একটি সার্থক উদাহরণ হতে পারে নিউইয়র্কের রাজনীতিতে জোহরান মামদানির উত্থান। মামদানির এই উত্থান কেবল একজন অভিবাসী বংশোদ্ভূতের জয় নয়; বরং এটি জেমস সি স্কট যাকে ‘নিচুতলার অভিজ্ঞতা’ এবং বুরদিউ যাকে ‘সাংস্কৃতিক পুঁজি’ হিসেবে ব্যাখ্যা করেছেন, তারই মিশেল। মামদানি যখন তাঁর নির্বাচনী প্রচারণায় আবাসন সমস্যা, ভাড়াটেদের অধিকার কিংবা গণপরিবহনের ভাড়ার মতো মৌলিক নাগরিক সংকটের ওপর আলোকপাত করেন, তখন তিনি রাষ্ট্রের প্রশাসনিক বা ওপরের স্তরের পরিসংখ্যানের বদলে সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন অভিজ্ঞতার বয়ানকে সামনে আনেন। তাঁর এই রাজনীতি প্রথাগত ‘পরিচয়বাদ’ বা আইডেন্টিটি পলিটিকসকে ছাপিয়ে একধরনের ‘শ্রেণিভিত্তিক সংহতি’ তৈরি করে। তিনি প্রমাণ করেন যে একজন দক্ষিণ এশীয় মুসলিম অভিবাসীর লড়াই কেবল তাঁর সম্প্রদায়ের লড়াই নয়, বরং তা নিউইয়র্কের প্রতিটি শ্রমজীবী মানুষের অস্তিত্বের লড়াই। এই প্রক্রিয়ায় মামদানি রাষ্ট্রকে কেবল একটি নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠান হিসেবে নয়, বরং সামাজিক ন্যায়বিচারের এক সম্ভাব্য মাধ্যম হিসেবে নতুন করে সংজ্ঞায়িত করেন। ফলে তাঁর বিজয় কেবল একটি ভোটের অঙ্ক নয়, বরং অভিবাসীদের নেতৃত্বে গড়ে ওঠা এক নতুন ঘরানার রাজনীতি, যা রক্ষণশীলতার দেয়াল ভেঙে সমতা ও নাগরিক অধিকারের এক অন্তর্ভুক্তিমূলক ক্ষেত্র প্রস্তুত করে।
আজকের দুনিয়ায় অভিবাসী রাজনীতির এই উত্থান কোনো আকস্মিক ঘটনা নয়। বরং বলা চলে, আধুনিক জাতিরাষ্ট্র, বৈশ্বিক অভিবাসন ও বহুসাংস্কৃতিক সমাজের অন্তর্নিহিত গতিশীলতার সন্তান এই নতুন রাজনীতিবিদেরা। কারণ, এই অভিবাসীরা আধুনিক জাতিরাষ্ট্রের স্ববিরোধিতাগুলোকে সমাজের নিচুতলা থেকে পর্যবেক্ষণ করেন, তাঁদের বহুসাংস্কৃতিক পুঁজির ব্যবহার করেন এবং এর মাধ্যমেই জাতিরাষ্ট্রের জাতীয় পরিচয়কে নতুন করে ‘কল্পনা’ করতে শেখান। আর ঠিক এ কারণেই নতুন এই অভিবাসী রাজনীতিকেরা কেবল ক্ষমতাকাঠামোর অংশীদার মাত্র নন, বরং তাঁরা বর্তমান দুনিয়ার ক্ষমতার ভাষা ও কাঠামোকেই পুনরায় সংজ্ঞায়িত করছেন।

বর্তমান বিশ্বে, বিশেষ করে পশ্চিমের রাজনীতিতে অভিবাসী বা অভিবাসী বংশোদ্ভূতদের উত্থান এক যুগান্তকারী ঘটনা। যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা কিংবা সাম্প্রতিক সময়ে আলোচিত জোহরান মামদানিকে দেখুন। একইভাবে যুক্তরাজ্যের ঋষি সুনাক, টিউলিপ সিদ্দিক, রুশনারা আলী ও সাদিক খানের মতো নেতাদের নামও সামনে আসে। তাঁরা কিন্তু কেবল তাঁদের রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে পরিচিত হয়ে ওঠেননি।
এই নেতাদের পরিচয়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো তাঁদের অভিবাসী সত্তা। যদিও আভিধানিক অর্থে তাঁরা ‘অভিবাসী’ নন; তাঁরা সবাই দ্বিতীয় প্রজন্মের নাগরিক, অর্থাৎ ওই দেশেই তাঁদের জন্ম। বারাক ওবামা যুক্তরাষ্ট্রে (হাওয়াই) জন্মগ্রহণ করেছেন; ঋষি সুনাক, সাদিক খান, রুশনারা আলী এবং টিউলিপ সিদ্দিক—সবারই জন্ম যুক্তরাজ্যে। তারপরও তাঁরা অভিবাসনের পরম্পরা বহন করছেন, কারণ তাঁদের পূর্বপুরুষেরা ছিলেন অভিবাসী। পশ্চিমা সমাজে এই পরিচয় বিশেষ তাৎপর্য বহন করে এবং তাঁদের এই উত্থান পশ্চিমের বৃহত্তর সামাজিক রূপান্তরকে নির্দেশ করে। একই সঙ্গে এটি রাষ্ট্রের সঙ্গে নাগরিকের সম্পর্ক পরিবর্তনের এবং জাতীয় পরিচয় নতুন করে গঠনের দিকে ইঙ্গিত করে।
এখন প্রশ্ন উঠতে পারে, ঠিক কীভাবে এবং কেন অভিবাসীরা নতুন দেশে গিয়ে রাজনৈতিক ক্ষমতার কেন্দ্রে পৌঁছাতে চান ও সক্ষম হন? বিষয়টি বুঝতে হলে প্রথমেই তাকানো প্রয়োজন জাতিরাষ্ট্র ব্যবস্থার দিকে। আধুনিক জাতিরাষ্ট্র সুনির্দিষ্ট ভূখণ্ড, জনসংখ্যা ও প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণের ওপর দাঁড়িয়ে থাকে। কিন্তু নৃবিজ্ঞানী অর্জুন আপ্পাদুরাই তাঁর বিখ্যাত গবেষণাকর্ম মডার্নিটি অ্যাট লার্জ: কালচারাল ডাইমেনশনস অব গ্লোবালাইজেশন বইয়ে দেখিয়েছেন, বৈশ্বিক মিডিয়া এবং অভিবাসনের প্রবাহ বর্তমান জাতিরাষ্ট্রের জাতিভিত্তিক সীমানাকে ক্রমশ পোকায় কাটা বইয়ের মতো ছিদ্রযুক্ত করে ফেলছে।
মনে রাখতে হবে, অভিবাসন কেবল ভৌগোলিক স্থানান্তর নয়; বরং এটি সামাজিক সম্পর্ক, সাংস্কৃতিক চর্চা ও রাজনৈতিক মতাদর্শেরও স্থানান্তর। ফলে অভিবাসীরা যখন নতুন জাতিরাষ্ট্রে প্রবেশ করেন, তখন জাতি, নাগরিকত্ব ও অন্তর্ভুক্তির (ইনক্লুসিভিটি) প্রশ্নগুলো নতুন করে সেই রাষ্ট্র ও তার নাগরিকদের সামনে আসে। আর এই প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়েই রাজনীতি নতুন আকার ধারণ করে এবং অভিবাসীরা হয়ে ওঠেন সেই রাজনীতির সক্রিয় অংশীদার।
এ ছাড়া ক্ষমতাকাঠামো বোঝার ক্ষেত্রে সামাজিক–সাংস্কৃতিক নৃবিজ্ঞানের একটি মৌলিক বোঝাপড়া হলো, ক্ষমতা সবচেয়ে স্পষ্ট হয় সমাজের একদম নিচ থেকে। প্রখ্যাত নৃবিজ্ঞানী জেমস সি স্কট তাঁর কাজে দেখিয়েছেন যে রাষ্ট্র সাধারণত সমাজকে ওপর থেকে বা প্রশাসনিক দৃষ্টিভঙ্গিতে অর্থাৎ মানচিত্র, জনসংখ্যা ও কর ব্যবস্থার মাধ্যমে দেখে। অপরদিকে সাধারণ মানুষ রাষ্ট্রকে অনুভব করে তাঁদের প্রাত্যহিক অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে। অভিবাসীরা এই অভিজ্ঞতা আরও তীব্রভাবে অনুভব করেন। কারণ, তাঁরা নাগরিকত্ব, আইন ও রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণ—যেমন ইমিগ্রেশন বা সীমান্ত ব্যবস্থার সঙ্গে সরাসরি মুখোমুখি হন। এই অভিজ্ঞতা তাঁদের মধ্যে রাষ্ট্রের অস্তিত্ব সম্পর্কে একধরনের সচেতনতা তৈরি করে। এই সচেতনতাই যখন রাজনৈতিক ভাষায় রূপ নেয়, তখন তা হয়ে ওঠে শক্তিশালী ও বিকল্প এক রাজনৈতিক বয়ান।
অভিবাসী রাজনীতিকদের সফলতার পেছনে তাঁদের অর্জিত বিশেষ দক্ষতার ভূমিকা অনস্বীকার্য। পিয়েরে বুরদিউ তাঁর বিখ্যাত কাজ ডিসটিংশন: আ সোশ্যাল ক্রিটিক অব দ্য জাজমেন্ট অব টেস্ট–এ ‘সাংস্কৃতিক পুঁজি’ বা কালচারাল ক্যাপিটালকে এমন এক ক্ষমতা হিসেবে ব্যাখ্যা করেছেন, যা ব্যক্তির সামাজিক ও রাজনৈতিক ক্ষমতা অর্জনে সহায়তা করে। অভিবাসীদের বহুভাষিকতা, ভিন্ন ভিন্ন সামাজিক কোড বোঝার ক্ষমতা এবং বহুসাংস্কৃতিক অভিজ্ঞতা—এই সাংস্কৃতিক পুঁজিরই একটি গুরুত্বপূর্ণ রূপ। তাঁরা বিভিন্ন সামাজিক গোষ্ঠীর মধ্যে মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা পালন করতে পারেন এবং রাষ্ট্র ও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মধ্যে সেতু তৈরি করতে সক্ষম হন। আধুনিক গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে যেখানে ভোটব্যাংক এবং ভিন্নমতের সমন্বয়ের প্রয়োজন পড়ে, সেখানে এই দক্ষতা তাঁদের বিশেষ সুবিধা দেয়।
এ ছাড়া রবিন কোহেন তাঁর ডায়াসপোরাবিষয়ক গবেষণায় দেখিয়েছেন, অভিবাসীরা তাঁদের অতীত অভিজ্ঞতা, স্মৃতি ও ট্রমা এই নতুন সামাজিক পরিসরে বয়ে নিয়ে আসেন। উপনিবেশ, যুদ্ধ বা দমনপীড়নমূলক রাষ্ট্র থেকে আসা অভিবাসীরা প্রায়ই স্বাধীনতা, অধিকার ও ন্যায়বিচারের প্রশ্নে অনেক বেশি সংবেদনশীল হন। এই নৈতিক সংবেদনশীলতা নতুন রাষ্ট্রের রাজনীতিতে এমন এক শক্তিশালী ভাষা তৈরি করে, যা কেবল অর্থনৈতিক স্বার্থের মধ্যেই সীমাবদ্ধ না থেকে মর্যাদা, মানবিকতা ও সমতার মতো নৈতিক দাবি উত্থাপন করে।
অভিবাসন, পরিচয় ও বর্ণের ধারণা কীভাবে হাইব্রিড আইডেন্টিটি বা মিশ্র পরিচয় এবং রাজনৈতিক বোধ গড়ে তোলে, তার বাস্তব উদাহরণ হতে পারে ২০০৮ সালের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বারাক হোসেন ওবামার জয়লাভের ঘটনা। যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের মধ্যে পরিচয়ের ধারণা যে কেবল প্রতীকী নয়, বরং ক্ষমতাকাঠামোর সঙ্গে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে আছে, তা ফুটে ওঠে ওই নির্বাচনের ফলাফলে।
এক্সিট পোলের তথ্য অনুযায়ী, দেশটির কৃষ্ণাঙ্গ ভোটারদের মধ্যে ওবামা ৯৫ শতাংশ সমর্থন পেয়েছিলেন। এটি প্রমাণ করে, দেশটিতে কৃষ্ণাঙ্গ বর্ণের মানুষের ঐতিহাসিক বঞ্চনার বিপরীতে তাঁর প্রার্থিতা ছিল সমষ্টিগত রাজনৈতিক আকাঙ্ক্ষার প্রতীক। অন্যদিকে তরুণ ও প্রথমবার ভোট দেওয়া নাগরিকদের মধ্যে তাঁর বিপুল জনপ্রিয়তা প্রমাণ করে, তাঁর বহুসাংস্কৃতিক পরিচয় মার্কিন নাগরিকদের মধ্যে আধুনিক ও অন্তর্ভুক্তিমূলক ভবিষ্যতের ইঙ্গিত হিসেবে ধরা দিয়েছিল। এ ছাড়া কেবল কৃষ্ণাঙ্গরাই নন, উল্লেখযোগ্য সংখ্যক শ্বেতাঙ্গও (যদিও তা তাঁর রিপাবলিকান প্রতিদ্বন্দ্বীর চেয়ে কিছুটা কম) ওবামাকে তাঁদের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দেখতে চেয়েছিলেন। ওবামার এই সাফল্য দেখায় যে অভিবাসী পরিচয় কেবল একটি ক্যাটাগরি বা প্রতীক হয়ে না থেকে শক্তিশালী রাজনৈতিক পুঁজিতেও রূপান্তরিত হতে পারে।
অভিবাসী রাজনীতিকদের সবচেয়ে বড় অবদান হলো জাতীয় পরিচয়ের নতুন সংজ্ঞা তৈরি করা। বেনেডিক্ট অ্যান্ডারসনের ইমাজিনড কমিউনিটিজ বা কল্পিত সম্প্রদায়ের ব্যাখ্যা অনুযায়ী, জাতি কোনো প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্ট সত্তা নয়, বরং এটি একটি ‘কল্পিত সামাজিক নির্মাণ’। অভিবাসী রাজনীতিকরা এই কল্পনাকে নতুনভাবে সংজ্ঞায়িত করেন। তাঁরা জাতীয় পরিচয়কে রক্ত, বর্ণ বা ধর্মের সংকীর্ণ সীমানা থেকে বের করে এনে নাগরিক মূল্যবোধ ও অংশগ্রহণের ওপর ভিত্তি করে পুনর্গঠন করেন। এর ফলে জাতি হয়ে ওঠে আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক, যা আধুনিক বহুসাংস্কৃতিক রাষ্ট্রের বাস্তবতার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
অবশ্য অভিবাসী রাজনীতিকদের এই ক্রমবর্ধমান প্রভাব ও জাতীয় পরিচয়ের নতুন বয়ান বিশ্বজুড়ে এক প্রবল প্রতিক্রিয়ারও জন্ম দিয়েছে। অভিবাসীদের এই উত্থানকে অনেক রক্ষণশীল গোষ্ঠী তাদের ঐতিহ্যগত ‘সাংস্কৃতিক শুদ্ধতা’ থেকে শুরু করে জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি হিসেবে দেখছে। এর ফলে পশ্চিমে উগ্র ডানপন্থী জনতোষণবাদী রাজনীতির জোয়ার এসেছে, যা মূলত অভিবাসনবিরোধী আবেগকে পুঁজি করে গড়ে উঠেছে। ডোনাল্ড ট্রাম্পের ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতি কিংবা ইউরোপের বিভিন্ন দেশে কট্টর ডানপন্থী দলগুলোর জনপ্রিয়তা প্রমাণ করে যে অভিবাসীদের রাজনৈতিক অংশগ্রহণ একদিকে যেমন অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ গড়ছে, অন্যদিকে তা রক্ষণশীল জনমানসে অস্তিত্ব সংকটের ভয় ধরিয়ে দিচ্ছে। ফলে সমকালীন রাজনীতি এখন এক দ্বিধাবিভক্ত ময়দান; যেখানে একদিকে চলছে বহুসাংস্কৃতিক উদারবাদ, আর অন্যদিকে স্বজাত্যবোধ ও কঠোর সীমান্ত নিয়ন্ত্রণের লড়াই।
তবে আশার কথা, ডানপন্থী এই রক্ষণশীল বয়ানের বিপরীতে নতুন প্রজন্মের অভিবাসী রাজনীতিবিদরা রক্ষণাত্মক অবস্থান না নিয়ে বরং রাজনীতির সংজ্ঞাকে আমূল বদলে দিচ্ছেন। এর একটি সার্থক উদাহরণ হতে পারে নিউইয়র্কের রাজনীতিতে জোহরান মামদানির উত্থান। মামদানির এই উত্থান কেবল একজন অভিবাসী বংশোদ্ভূতের জয় নয়; বরং এটি জেমস সি স্কট যাকে ‘নিচুতলার অভিজ্ঞতা’ এবং বুরদিউ যাকে ‘সাংস্কৃতিক পুঁজি’ হিসেবে ব্যাখ্যা করেছেন, তারই মিশেল। মামদানি যখন তাঁর নির্বাচনী প্রচারণায় আবাসন সমস্যা, ভাড়াটেদের অধিকার কিংবা গণপরিবহনের ভাড়ার মতো মৌলিক নাগরিক সংকটের ওপর আলোকপাত করেন, তখন তিনি রাষ্ট্রের প্রশাসনিক বা ওপরের স্তরের পরিসংখ্যানের বদলে সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন অভিজ্ঞতার বয়ানকে সামনে আনেন। তাঁর এই রাজনীতি প্রথাগত ‘পরিচয়বাদ’ বা আইডেন্টিটি পলিটিকসকে ছাপিয়ে একধরনের ‘শ্রেণিভিত্তিক সংহতি’ তৈরি করে। তিনি প্রমাণ করেন যে একজন দক্ষিণ এশীয় মুসলিম অভিবাসীর লড়াই কেবল তাঁর সম্প্রদায়ের লড়াই নয়, বরং তা নিউইয়র্কের প্রতিটি শ্রমজীবী মানুষের অস্তিত্বের লড়াই। এই প্রক্রিয়ায় মামদানি রাষ্ট্রকে কেবল একটি নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠান হিসেবে নয়, বরং সামাজিক ন্যায়বিচারের এক সম্ভাব্য মাধ্যম হিসেবে নতুন করে সংজ্ঞায়িত করেন। ফলে তাঁর বিজয় কেবল একটি ভোটের অঙ্ক নয়, বরং অভিবাসীদের নেতৃত্বে গড়ে ওঠা এক নতুন ঘরানার রাজনীতি, যা রক্ষণশীলতার দেয়াল ভেঙে সমতা ও নাগরিক অধিকারের এক অন্তর্ভুক্তিমূলক ক্ষেত্র প্রস্তুত করে।
আজকের দুনিয়ায় অভিবাসী রাজনীতির এই উত্থান কোনো আকস্মিক ঘটনা নয়। বরং বলা চলে, আধুনিক জাতিরাষ্ট্র, বৈশ্বিক অভিবাসন ও বহুসাংস্কৃতিক সমাজের অন্তর্নিহিত গতিশীলতার সন্তান এই নতুন রাজনীতিবিদেরা। কারণ, এই অভিবাসীরা আধুনিক জাতিরাষ্ট্রের স্ববিরোধিতাগুলোকে সমাজের নিচুতলা থেকে পর্যবেক্ষণ করেন, তাঁদের বহুসাংস্কৃতিক পুঁজির ব্যবহার করেন এবং এর মাধ্যমেই জাতিরাষ্ট্রের জাতীয় পরিচয়কে নতুন করে ‘কল্পনা’ করতে শেখান। আর ঠিক এ কারণেই নতুন এই অভিবাসী রাজনীতিকেরা কেবল ক্ষমতাকাঠামোর অংশীদার মাত্র নন, বরং তাঁরা বর্তমান দুনিয়ার ক্ষমতার ভাষা ও কাঠামোকেই পুনরায় সংজ্ঞায়িত করছেন।

১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধ শুধু বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের লড়াই ছিল না। এটি ছিল সামরিক কৌশল প্রয়োগের একটি গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা। এই যুদ্ধে মিত্রবাহিনী গঠিত হয়েছিল ভারতীয় সেনাবাহিনী ও বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে।
১ দিন আগে
অস্ট্রেলিয়ার সিডনির বন্ডি সমুদ্র সৈকতে রবিবার এক ভয়াবহ বন্দুক হামলার ঘটনা ঘটে। এই ঘটনায় এক পথচারী সাহসিকতার সঙ্গে হামলাকারীদের একজনকে নিরস্ত্র করেন। ঘটনার ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।
১ দিন আগে
সদ্য মুক্তি পাওয়া একটি বলিউডি গোয়েন্দা সিনেমা ভারত ও পাকিস্তানে প্রশংসা যেমন কুড়াচ্ছে, তেমনি বিতর্কও সৃষ্টি করছে। দক্ষিণ এশিয়ার এই দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যকার দীর্ঘদিনের তিক্ত উত্তেজনাকে নতুনভাবে উপস্থাপন করায় সিনেমাটি আলোচনায় উঠে এসেছে।
২ দিন আগে
আমাদের স্বাধীনতাযুদ্ধ কি কনভেনশনাল যুদ্ধ নাকি ইনসারজেন্সি অপারেশন? অনেকেরই এই বিষয়ে ধারণা পরিষ্কার নয়। তবে এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পেতে হলে শুরুতেই জানতে হবে ইনসারজেন্সি এবং কাউন্টার ইনসারজেন্সি অপারেশন কী?
৩ দিন আগে