leadT1ad

বংশগত হৃদরোগের ঝুঁকি জানাতে পারে রক্ত পরীক্ষা, বলছেন গবেষকরা

বিশ্বজুড়ে লাখ লাখ মানুষ ‘হাইপারট্রফিক কার্ডিওমায়োপ্যাথি’ বা ‘এইচসিএম’ নামের হৃৎপিণ্ডের বংশগত রোগে আক্রান্ত। এতদিন চিকিৎসকদের জন্য ঠিক কোন রোগীর মারাত্মক ঝুঁকি বেশি, তা নির্ভুলভাবে নির্ধারণ করা কঠিন ছিল। কিন্তু হার্ভার্ড ও অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা বলছেন, সাধারণ একটি রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে এখন হার্টের এই রোগের ঝুঁকি সম্পর্কে ধারণা পাওয়া সম্ভব।

স্ট্রিম ডেস্ক
স্ট্রিম ডেস্ক

প্রকাশ : ২৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৪: ৩০
বিশ্বজুড়ে লাখ লাখ মানুষ ‘হাইপারট্রফিক কার্ডিওমায়োপ্যাথি’ বা ‘এইচসিএম’ নামের হৃৎপিণ্ডের বংশগত এই রোগে আক্রান্ত। সংগৃহীত ছবি

সুস্থ হৃৎপিণ্ড (হার্ট) সবার কাম্য। এই অঙ্গের বেশিরভাগ রোগই নীরব ঘাতক। কারণ, কিছু রোগ আছে যার কোনো ধরণের লক্ষণ রোগীরা অনুভব করেন না। এমনই এক রোগের নাম ‘হাইপারট্রফিক কার্ডিওমায়োপ্যাথি’।

বিশ্বজুড়ে লাখ লাখ মানুষ ‘হাইপারট্রফিক কার্ডিওমায়োপ্যাথি’ বা ‘এইচসিএম’ নামের হৃৎপিণ্ডের বংশগত এই রোগে আক্রান্ত। এই রোগে আক্রান্ত অনেকেই বেশিরভাগ সময় সুস্থ বোধ করেন এবং তাঁদের শরীরে তেমন কোনো লক্ষণই দেখা যায় না। আবার একই রোগে আক্রান্ত অনেকের ক্ষেত্রে রোগটি মারাত্মক জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে। যেমন হার্ট ফেইলিউর বা হৃৎস্পন্দনের অস্বাভাবিকতা যা শেষ পর্যন্ত কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট বা আকষ্মিক মৃত্যুর দিকে নিয়ে যেতে পারে।

গবেষণা বলছে, এটি একটি বংশগত রোগ। এতদিন চিকিৎসকদের জন্য ঠিক কোন রোগীর মারাত্মক ঝুঁকি বেশি, তা নির্ভুলভাবে নির্ধারণ করা কঠিন ছিল। কারণ বাইরে থেকে দেখে বোঝার উপায় নেই কার এই রোগে মৃত্যুঝুঁকি আছে, আর কে নিরাপদ। কিন্তু হার্ভার্ড ও অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা বলছেন, সাধারণ একটি রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে এখন হার্টের গোপন এই রোগের ঝুঁকি সম্পর্কে ধারণা পাওয়া সম্ভব।

হাইপারট্রফিক কার্ডিওমায়োপ্যাথি। সংগৃহীত ছবি
হাইপারট্রফিক কার্ডিওমায়োপ্যাথি। সংগৃহীত ছবি

হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুল এবং অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা দীর্ঘদিন ধরে পরিচিত একটি প্রোটিন—এন-টার্মিনাল প্রো-ব্রেইন ন্যাট্রিইউরেটিক পেপটাইড—এই রোগে ঝুঁকি নির্ধারণে কার্যকর বলে প্রমাণ পেয়েছেন।

গবেষকরা এই প্রোটিনকে বলছেন হার্টের ‘ডিস্ট্রেস সিগন্যাল’ বা বিপদ সংকেত। বিষয়টি অনেকটা এমন, হার্টের পেশি যখনই চাপে পড়ে, শক্ত হয়ে যায় বা রক্ত পাম্প করতে কষ্ট হয়, তখনই হার্ট রক্তে এই প্রোটিনটি নিঃসরণ করে সাহায্যের জন্য ‘সিগন্যাল’ পাঠায়।

এই গবেষণায় দেখা গেছে, যাদের রক্তে এই এন-টার্মিনাল প্রো-ব্রেইন ন্যাট্রিইউরেটিক পেপটাইড প্রোটিনের মাত্রা বেশি, তাঁদের হার্টের পেশিতে ফাইব্রোসিস বা দাগের মতো পরিবর্তন দেখা গেছে। এদের হার্ট ফেইলিউর বা হঠাৎ মৃত্যুর ঝুঁকি অন্যদের চেয়ে অনেক বেশি। অন্যদিকে, যাদের রক্তে এই প্রোটিনের মাত্রা কম, তাঁরা তুলনামূলকভাবে অনেকটাই নিরাপদ। এই রোগ নিয়েও তাঁরা স্বাভাবিক জীবন কাটাতে পারেন।

এই রোগে মৃত্যুর ঝুঁকি থাকলে চিকিৎসকরা সাধারণত রোগীকে ‘আইসিডি’ (ইমপ্লান্টেবল কার্ডিওভার্টার ডিফিব্রিলেটর) বসিয়ে দেন। যাতে কোনো কারণে হার্ট কাজ করা বন্ধ করে দিলে এই যন্ত্রটি অটোমেটিক শক দিয়ে হার্ট চালু করতে পারে। কিন্তু সমস্যা হলো, আগে ডাক্তাররা নিশ্চিত হতে পারতেন না কার বুকে এই যন্ত্রটি বসানো দরকার। কারণ, অনেক সময় লক্ষণ বোঝা যেত না। এখন এই রক্ত পরীক্ষা ঝুঁকি নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ সহায়ক তথ্য দেবে।

এই যুগান্তকারী আবিষ্কারের পেছনে যে গবেষকরা কাজ করেছেন তাঁদের প্রধান, হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুলের অধ্যাপক ক্যারোলিন হো বলেন, ''রোগীরা এইচসিএম বা ‘হাইপারট্রফিক কার্ডিওমায়োপ্যাথি’ ডায়াগনসিস হওয়ার পর ভবিষ্যৎ নিয়ে শংকিত হয়ে পড়েন। এই সহজ রক্ত পরীক্ষাটি তাদের সেই উদ্বেগ কমাবে। যাদের এই রোগে ঝুঁকি তুলনামূলক কম, তাঁরা এখন থেকে নিশ্চিন্তে স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারবেন।”

তথ্যসূত্র: রয়টার্স

Ad 300x250

সম্পর্কিত