আল জাজিরা

যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানের এফ–১৬ যুদ্ধবিমান বহরের জন্য উন্নত প্রযুক্তি ও আধুনিকায়ন সহায়তা অনুমোদন দিয়েছে। এই চুক্তির আর্থিক মূল্য প্রায় ৬৮ কোটি ৬০ লাখ মার্কিন ডলার। সাম্প্রতিক সময়ে দক্ষিণ এশিয়ায় উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে এই সিদ্ধান্ত বিশেষ গুরুত্ব পাচ্ছে।
চুক্তিটি এমন এক সময়ে হয়েছে, যখন পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে সম্পর্ক চরম উত্তেজনাপূর্ণ। চলতি বছরের মে মাসে ভারতশাসিত কাশ্মীরে এক সশস্ত্র হামলার পর দুই দেশ পাঁচ দিনব্যাপী সংঘাতে জড়িয়ে পড়ে। একই সময়ে যুক্তরাষ্ট্র ভারতকে আরও বেশি মার্কিন অস্ত্র কেনার জন্য চাপ দিচ্ছিল। এসব কারণে পাকিস্তানের সঙ্গে এফ-১৬ চুক্তি ভারতের প্রতি একটি কৌশলগত বার্তা কি না, সে প্রশ্ন উঠেছে।
যুক্তরাষ্ট্র ও পাকিস্তানের মধ্যে কী চুক্তি হয়েছে
ব্রাসেলসভিত্তিক বেসরকারি সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের জ্যেষ্ঠ বিশ্লেষক প্রভীন দোনথি আল জাজিরাকে জানান, এই অনুমোদন ২০২২ সালে স্বাক্ষরিত একটি রক্ষণাবেক্ষণ চুক্তিরই অংশ। ওই চুক্তির লক্ষ্য ছিল পাকিস্তানের এফ-১৬ বহর কার্যকর রাখা।
তিনি বলেন, এফ–১৬ চুক্তি যুক্তরাষ্ট্র ও পাকিস্তানের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের একটি গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তি। এ কারণেই প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন থেকে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প পর্যন্ত এই নীতিতে ধারাবাহিকতা দেখা গেছে।
সর্বশেষ চুক্তিটি মূলত প্রযুক্তি বিক্রি ও সহায়তা সংক্রান্ত। এর মাধ্যমে পাকিস্তানের বিদ্যমান এফ-১৬ বহর উন্নত করা হবে। এই প্যাকেজে প্রায় ৬৪ কোটি ৯০ লাখ ডলারের সহায়তার পাশাপাশি ৩ কোটি ৭০ লাখ ডলারের সামরিক সরঞ্জামও রয়েছে।
পাকিস্তানের কাছে বর্তমানে কার্যকর অবস্থায় আনুমানিক ৭০ থেকে ৮০টি এফ–১৬ যুদ্ধবিমান রয়েছে। এর মধ্যে কিছু পুরোনো হলেও উন্নত ব্লক–১৫ মডেল। কিছু বিমান জর্ডান থেকে পাওয়া। আবার কিছু তুলনামূলক নতুন ব্লক–৫২ প্লাস মডেল।
এফ–১৬ যুদ্ধবিমান কী
এফ–১৬ যুদ্ধবিমানকে ‘এফ–১৬ ফাইটিং ফ্যালকন’ বা ‘ভাইপার’ নামেও ডাকা হয়। এটি এক ইঞ্জিনবিশিষ্ট বহুমুখী যুদ্ধবিমান। আকাশযুদ্ধ এবং ভূমিতে আঘাত হানার উভয় ধরনের হামলাতেই ব্যবহৃত হয়।
বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা ও মহাকাশ প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান লকহিড মার্টিন এফ–১৬ তৈরি করছে। ১৯৯৫ সালে তারা উৎপাদনের দায়িত্ব নেয়। এর আগে জেনারেল ডাইনামিকস এই বিমান তৈরি করত।
ভিয়েতনাম যুদ্ধের শেষ পর্যায়ে এফ–১৬-এর উন্নয়ন শুরু হয়। সে সময় সোভিয়েত নির্মিত মিগ যুদ্ধবিমানের সঙ্গে প্রতিযোগিতার প্রয়োজন দেখা দেয়। এফ–১৬ প্রথম উড্ডয়ন করে ১৯৭৪ সালে।
বর্তমানে এটি বিশ্বের সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত যুদ্ধবিমানগুলোর একটি। লকহিড মার্টিনের তথ্য অনুযায়ী, ২৯টি দেশে এফ–১৬ ব্যবহৃত হচ্ছে। পাকিস্তান ছাড়াও ইউক্রেন, তুরস্ক, ইসরায়েল, মিসর, পোল্যান্ড, গ্রিস, তাইওয়ান, সিঙ্গাপুর, বেলজিয়াম, ডেনমার্ক ও নরওয়ের মতো দেশ এফ–১৬ বহর পরিচালনা করছে।
ভারত–পাকিস্তান সংঘাতে এফ–১৬ কী ভূমিকা রাখে
চলতি বছরের ২২ এপ্রিল ভারতশাসিত কাশ্মীরের পহেলগামে এক হামলায় ২৬ জন নিহত হন। হামলাটি পর্যটন এলাকায় ঘটে। ‘দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট’ নামের একটি গোষ্ঠী হামলার দায় স্বীকার করে। ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র এই গোষ্ঠীকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছে। ভারত দাবি করে, গোষ্ঠীটি পাকিস্তানভিত্তিক লস্কর-ই-তৈয়বার সঙ্গে যুক্ত। পাকিস্তান এই অভিযোগ অস্বীকার করে।
এই হামলার পর ভারত পাকিস্তানের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক কমিয়ে আনে। একই সঙ্গে সিন্ধু পানি চুক্তি স্থগিত করে।
৭ মে ভারত পাকিস্তান ও পাকিস্তানশাসিত কাশ্মীরের নয়টি স্থাপনায় ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়। পাকিস্তান জানায়, এতে বহু বেসামরিক মানুষ নিহত হন। পরবর্তী তিন দিন দুই দেশের মধ্যে তীব্র আকাশযুদ্ধ চলে। ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে সামরিক ঘাঁটিতে হামলা হয়।
এই সংঘাতে পাকিস্তান ৪২টি আধুনিক বিমান মোতায়েন করে। এর মধ্যে এফ–১৬ ছাড়াও চীনা নির্মিত জেএফ–১৭ ও জে–১০ যুদ্ধবিমান ছিল। শেষ পর্যন্ত ১০ মে একটি যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়।
যুক্তরাষ্ট্র কি ভারতের ওপর চাপ প্রয়োগ করছে?
বিশ্লেষকদের মতে, যুক্তরাষ্ট্র ভারতের ওপর কিছুটা চাপ প্রয়োগ করছে। এর পেছনে একাধিক কারণ রয়েছে।
পাকিস্তানের এফ–১৬ যুদ্ধবিমান উন্নয়নের অনুমোদন এমন এক সময়ে এসেছে, যখন ট্রাম্প প্রশাসন ভারতকে আরও বেশি মার্কিন অস্ত্র কেনার জন্য চাপ দিচ্ছে। এই প্রেক্ষাপট বিষয়টিকে তাৎপর্যপূর্ণ করে তুলেছে।
চলতি বছরের আগস্টে ভারত যুক্তরাষ্ট্র থেকে অস্ত্র ও বিমান কেনার পরিকল্পনা সাময়িকভাবে স্থগিত করে। রয়টার্স জানিয়েছে, বিষয়টি সম্পর্কে অবগত তিনজন ভারতীয় কর্মকর্তার বরাতে এই তথ্য জানা যায়।
এই সিদ্ধান্ত আসে এমন এক সময়ে, যখন ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংয়ের ওয়াশিংটন সফরের কথা ছিল। ওই সফরে কিছু অস্ত্র কেনার ঘোষণা দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু শেষ মুহূর্তে সেই সফর বাতিল করা হয়।
সাম্প্রতিক মাসগুলোতে ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কেও টানাপোড়েন দেখা গেছে।
৬ আগস্ট যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ভারতীয় পণ্যের ওপর অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেন। এর আগে ভারতীয় পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক কার্যকর ছিল। ফলে মোট শুল্কের হার দাঁড়ায় ৫০ শতাংশে।
এই শুল্ক আরোপের কারণ হিসেবে ট্রাম্প প্রশাসন উল্লেখ করে, রাশিয়া থেকে সস্তা অপরিশোধিত তেল কেনা। এক নির্বাহী আদেশে ট্রাম্প লেখেন, ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক অভিযান একটি ‘জাতীয় জরুরি অবস্থা’। সে কারণে রাশিয়ার তেল কেনা দেশগুলোর ওপর বাড়তি শুল্ক আরোপ করা ‘প্রয়োজনীয় ও যথাযথ’।
ওই আদেশে ট্রাম্প বলেন, ভারত সরকার সরাসরি বা পরোক্ষভাবে রাশিয়া থেকে তেল আমদানি করছে।
মার্কিন চাপের ফলে ভারত রাশিয়ার তেল কেনা কিছুটা কমিয়েছে। তবে নয়াদিল্লি মস্কো থেকে তেল আমদানি অব্যাহত রাখার পরিকল্পনা করেছে। বর্তমানে চীনের পর ভারতই রাশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম তেল ক্রেতা।
গত সপ্তাহে নয়াদিল্লিতে অনুষ্ঠিত বার্ষিক ভারত–রাশিয়া শীর্ষ বৈঠকে প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। সেখানে পুতিন বলেন, ভারতকে নিরবচ্ছিন্ন জ্বালানি সরবরাহে রাশিয়া প্রস্তুত।
এফ-১৬ চুক্তি নিয়ে ভারতের প্রতিক্রিয়া
পাকিস্তানের এফ–১৬ রক্ষণাবেক্ষণ ও উন্নয়ন চুক্তির ঘোষণা ভারত নেতিবাচকভাবে গ্রহণ করা হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বিশ্লেষক প্রভীন দোনথি বলেন, ভারত আগে থেকেই পাকিস্তান ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা সহযোগিতার বিরোধিতা করে আসছে। বিশেষ করে এফ–১৬ বহর রক্ষণাবেক্ষণ নিয়ে ভারতের আপত্তি রয়েছে। ভারতের দাবি, এসব যুদ্ধবিমান তাদের বিরুদ্ধেই ব্যবহার করা হয়।
দোনথির ভাষ্য অনুযায়ী, এবার যুক্তরাষ্ট্র আগেভাগেই স্পষ্ট করেছে যে এই বিক্রি ‘এই অঞ্চলের সামরিক ভারসাম্যে মৌলিক কোনো পরিবর্তন আনবে না’।
যুক্তরাষ্ট্রের কৌশল নিয়ে ভিন্নমত
ওয়াশিংটনভিত্তিক দক্ষিণ এশিয়া বিশ্লেষক মাইকেল কুগেলম্যান বলেন, বিষয়টিকে শুধু ভারতকেন্দ্রিকভাবে দেখা ঠিক হবে না। তার মতে, যুক্তরাষ্ট্র হয়তো এই চুক্তিকে ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য আলোচনায় কিছু ছাড় আদায়ের একটি চাপের উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করতে পারে।
তবে তিনি বলেন, এই চুক্তির নিজস্ব যুক্তি রয়েছে। এটি সরাসরি ভারতের সঙ্গে সম্পর্কিত নয়।
কুগেলম্যান ব্যাখ্যা করেন, এটি পাকিস্তানের মার্কিন নির্মিত বিমান সহায়তার দীর্ঘমেয়াদি কর্মসূচির অংশ। একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র ভারতের সঙ্গেও প্রতিরক্ষা সহযোগিতা চালিয়ে যাচ্ছে, যদিও তা তুলনামূলকভাবে সীমিত। ফলে এটি একক কোনো ভারতবিরোধী কৌশল নয়। বরং দুটি ভিন্ন নিরাপত্তা সম্পর্কের সমান্তরাল পথ।
পাকিস্তানের সামরিক সক্ষমতা কতটা বাড়ছে
কুগেলম্যানের মতে, এই সহায়তা প্যাকেজটি গুরুত্বপূর্ণ। প্রায় ৭০০ মিলিয়ন ডলারের নিরাপত্তা সহায়তা সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পাকিস্তানের জন্য সবচেয়ে বড়গুলোর একটি। তিনি বলেন, এই অঙ্ক মোটেও ছোট নয়।
এই চুক্তি যুক্তরাষ্ট্র–পাকিস্তান সম্পর্কের ক্ষেত্রেও তাৎপর্যপূর্ণ। এতে বোঝা যায়, ট্রাম্প প্রশাসন সন্ত্রাসবিরোধী সহযোগিতাকে কতটা গুরুত্ব দিচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্র–পাকিস্তান সম্পর্ক নিয়ে আলোচনায় খনিজ সম্পদ ও বাণিজ্যিক সম্ভাবনার বিষয়টি বেশি আলোচিত হয়েছে। তবে সীমিত পরিসরে হলেও সন্ত্রাসবিরোধী সহযোগিতা এই প্রশাসনের কাছে গুরুত্বপূর্ণ।
চীনের ভূমিকা ও পাকিস্তানের কৌশল
অন্যদিকে প্রভীন দোনথি মনে করিয়ে দেন, যুক্তরাষ্ট্রের এই সহায়তা পাকিস্তানের এফ–১৬ বহর ২০৪০ সাল পর্যন্ত সচল রাখতে সহায়ক হবে। তবে ২০২০ সালের পর থেকে পাকিস্তানের ৮০ শতাংশের বেশি অস্ত্র সরবরাহ করেছে চীন।
চলতি বছরে প্রকাশিত সুইডিশ গবেষণা সংস্থা সিপ্রির প্রতিবেদনে এই তথ্যের সমর্থন পাওয়া যায়।
দোনথি বলেন, মে মাসের সংঘাতে পাকিস্তান চীনা নির্মিত জে–১০ যুদ্ধবিমান ব্যবহার করেছে। পাকিস্তান একদিকে ওয়াশিংটন, অন্যদিকে বেইজিংয়ের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রেখে চলেছে। এতে দেশটি উভয় পক্ষ থেকেই সুবিধা নিচ্ছে।

যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানের এফ–১৬ যুদ্ধবিমান বহরের জন্য উন্নত প্রযুক্তি ও আধুনিকায়ন সহায়তা অনুমোদন দিয়েছে। এই চুক্তির আর্থিক মূল্য প্রায় ৬৮ কোটি ৬০ লাখ মার্কিন ডলার। সাম্প্রতিক সময়ে দক্ষিণ এশিয়ায় উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে এই সিদ্ধান্ত বিশেষ গুরুত্ব পাচ্ছে।
চুক্তিটি এমন এক সময়ে হয়েছে, যখন পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে সম্পর্ক চরম উত্তেজনাপূর্ণ। চলতি বছরের মে মাসে ভারতশাসিত কাশ্মীরে এক সশস্ত্র হামলার পর দুই দেশ পাঁচ দিনব্যাপী সংঘাতে জড়িয়ে পড়ে। একই সময়ে যুক্তরাষ্ট্র ভারতকে আরও বেশি মার্কিন অস্ত্র কেনার জন্য চাপ দিচ্ছিল। এসব কারণে পাকিস্তানের সঙ্গে এফ-১৬ চুক্তি ভারতের প্রতি একটি কৌশলগত বার্তা কি না, সে প্রশ্ন উঠেছে।
যুক্তরাষ্ট্র ও পাকিস্তানের মধ্যে কী চুক্তি হয়েছে
ব্রাসেলসভিত্তিক বেসরকারি সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের জ্যেষ্ঠ বিশ্লেষক প্রভীন দোনথি আল জাজিরাকে জানান, এই অনুমোদন ২০২২ সালে স্বাক্ষরিত একটি রক্ষণাবেক্ষণ চুক্তিরই অংশ। ওই চুক্তির লক্ষ্য ছিল পাকিস্তানের এফ-১৬ বহর কার্যকর রাখা।
তিনি বলেন, এফ–১৬ চুক্তি যুক্তরাষ্ট্র ও পাকিস্তানের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের একটি গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তি। এ কারণেই প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন থেকে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প পর্যন্ত এই নীতিতে ধারাবাহিকতা দেখা গেছে।
সর্বশেষ চুক্তিটি মূলত প্রযুক্তি বিক্রি ও সহায়তা সংক্রান্ত। এর মাধ্যমে পাকিস্তানের বিদ্যমান এফ-১৬ বহর উন্নত করা হবে। এই প্যাকেজে প্রায় ৬৪ কোটি ৯০ লাখ ডলারের সহায়তার পাশাপাশি ৩ কোটি ৭০ লাখ ডলারের সামরিক সরঞ্জামও রয়েছে।
পাকিস্তানের কাছে বর্তমানে কার্যকর অবস্থায় আনুমানিক ৭০ থেকে ৮০টি এফ–১৬ যুদ্ধবিমান রয়েছে। এর মধ্যে কিছু পুরোনো হলেও উন্নত ব্লক–১৫ মডেল। কিছু বিমান জর্ডান থেকে পাওয়া। আবার কিছু তুলনামূলক নতুন ব্লক–৫২ প্লাস মডেল।
এফ–১৬ যুদ্ধবিমান কী
এফ–১৬ যুদ্ধবিমানকে ‘এফ–১৬ ফাইটিং ফ্যালকন’ বা ‘ভাইপার’ নামেও ডাকা হয়। এটি এক ইঞ্জিনবিশিষ্ট বহুমুখী যুদ্ধবিমান। আকাশযুদ্ধ এবং ভূমিতে আঘাত হানার উভয় ধরনের হামলাতেই ব্যবহৃত হয়।
বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা ও মহাকাশ প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান লকহিড মার্টিন এফ–১৬ তৈরি করছে। ১৯৯৫ সালে তারা উৎপাদনের দায়িত্ব নেয়। এর আগে জেনারেল ডাইনামিকস এই বিমান তৈরি করত।
ভিয়েতনাম যুদ্ধের শেষ পর্যায়ে এফ–১৬-এর উন্নয়ন শুরু হয়। সে সময় সোভিয়েত নির্মিত মিগ যুদ্ধবিমানের সঙ্গে প্রতিযোগিতার প্রয়োজন দেখা দেয়। এফ–১৬ প্রথম উড্ডয়ন করে ১৯৭৪ সালে।
বর্তমানে এটি বিশ্বের সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত যুদ্ধবিমানগুলোর একটি। লকহিড মার্টিনের তথ্য অনুযায়ী, ২৯টি দেশে এফ–১৬ ব্যবহৃত হচ্ছে। পাকিস্তান ছাড়াও ইউক্রেন, তুরস্ক, ইসরায়েল, মিসর, পোল্যান্ড, গ্রিস, তাইওয়ান, সিঙ্গাপুর, বেলজিয়াম, ডেনমার্ক ও নরওয়ের মতো দেশ এফ–১৬ বহর পরিচালনা করছে।
ভারত–পাকিস্তান সংঘাতে এফ–১৬ কী ভূমিকা রাখে
চলতি বছরের ২২ এপ্রিল ভারতশাসিত কাশ্মীরের পহেলগামে এক হামলায় ২৬ জন নিহত হন। হামলাটি পর্যটন এলাকায় ঘটে। ‘দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট’ নামের একটি গোষ্ঠী হামলার দায় স্বীকার করে। ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র এই গোষ্ঠীকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছে। ভারত দাবি করে, গোষ্ঠীটি পাকিস্তানভিত্তিক লস্কর-ই-তৈয়বার সঙ্গে যুক্ত। পাকিস্তান এই অভিযোগ অস্বীকার করে।
এই হামলার পর ভারত পাকিস্তানের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক কমিয়ে আনে। একই সঙ্গে সিন্ধু পানি চুক্তি স্থগিত করে।
৭ মে ভারত পাকিস্তান ও পাকিস্তানশাসিত কাশ্মীরের নয়টি স্থাপনায় ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়। পাকিস্তান জানায়, এতে বহু বেসামরিক মানুষ নিহত হন। পরবর্তী তিন দিন দুই দেশের মধ্যে তীব্র আকাশযুদ্ধ চলে। ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে সামরিক ঘাঁটিতে হামলা হয়।
এই সংঘাতে পাকিস্তান ৪২টি আধুনিক বিমান মোতায়েন করে। এর মধ্যে এফ–১৬ ছাড়াও চীনা নির্মিত জেএফ–১৭ ও জে–১০ যুদ্ধবিমান ছিল। শেষ পর্যন্ত ১০ মে একটি যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়।
যুক্তরাষ্ট্র কি ভারতের ওপর চাপ প্রয়োগ করছে?
বিশ্লেষকদের মতে, যুক্তরাষ্ট্র ভারতের ওপর কিছুটা চাপ প্রয়োগ করছে। এর পেছনে একাধিক কারণ রয়েছে।
পাকিস্তানের এফ–১৬ যুদ্ধবিমান উন্নয়নের অনুমোদন এমন এক সময়ে এসেছে, যখন ট্রাম্প প্রশাসন ভারতকে আরও বেশি মার্কিন অস্ত্র কেনার জন্য চাপ দিচ্ছে। এই প্রেক্ষাপট বিষয়টিকে তাৎপর্যপূর্ণ করে তুলেছে।
চলতি বছরের আগস্টে ভারত যুক্তরাষ্ট্র থেকে অস্ত্র ও বিমান কেনার পরিকল্পনা সাময়িকভাবে স্থগিত করে। রয়টার্স জানিয়েছে, বিষয়টি সম্পর্কে অবগত তিনজন ভারতীয় কর্মকর্তার বরাতে এই তথ্য জানা যায়।
এই সিদ্ধান্ত আসে এমন এক সময়ে, যখন ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংয়ের ওয়াশিংটন সফরের কথা ছিল। ওই সফরে কিছু অস্ত্র কেনার ঘোষণা দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু শেষ মুহূর্তে সেই সফর বাতিল করা হয়।
সাম্প্রতিক মাসগুলোতে ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কেও টানাপোড়েন দেখা গেছে।
৬ আগস্ট যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ভারতীয় পণ্যের ওপর অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেন। এর আগে ভারতীয় পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক কার্যকর ছিল। ফলে মোট শুল্কের হার দাঁড়ায় ৫০ শতাংশে।
এই শুল্ক আরোপের কারণ হিসেবে ট্রাম্প প্রশাসন উল্লেখ করে, রাশিয়া থেকে সস্তা অপরিশোধিত তেল কেনা। এক নির্বাহী আদেশে ট্রাম্প লেখেন, ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক অভিযান একটি ‘জাতীয় জরুরি অবস্থা’। সে কারণে রাশিয়ার তেল কেনা দেশগুলোর ওপর বাড়তি শুল্ক আরোপ করা ‘প্রয়োজনীয় ও যথাযথ’।
ওই আদেশে ট্রাম্প বলেন, ভারত সরকার সরাসরি বা পরোক্ষভাবে রাশিয়া থেকে তেল আমদানি করছে।
মার্কিন চাপের ফলে ভারত রাশিয়ার তেল কেনা কিছুটা কমিয়েছে। তবে নয়াদিল্লি মস্কো থেকে তেল আমদানি অব্যাহত রাখার পরিকল্পনা করেছে। বর্তমানে চীনের পর ভারতই রাশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম তেল ক্রেতা।
গত সপ্তাহে নয়াদিল্লিতে অনুষ্ঠিত বার্ষিক ভারত–রাশিয়া শীর্ষ বৈঠকে প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। সেখানে পুতিন বলেন, ভারতকে নিরবচ্ছিন্ন জ্বালানি সরবরাহে রাশিয়া প্রস্তুত।
এফ-১৬ চুক্তি নিয়ে ভারতের প্রতিক্রিয়া
পাকিস্তানের এফ–১৬ রক্ষণাবেক্ষণ ও উন্নয়ন চুক্তির ঘোষণা ভারত নেতিবাচকভাবে গ্রহণ করা হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বিশ্লেষক প্রভীন দোনথি বলেন, ভারত আগে থেকেই পাকিস্তান ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা সহযোগিতার বিরোধিতা করে আসছে। বিশেষ করে এফ–১৬ বহর রক্ষণাবেক্ষণ নিয়ে ভারতের আপত্তি রয়েছে। ভারতের দাবি, এসব যুদ্ধবিমান তাদের বিরুদ্ধেই ব্যবহার করা হয়।
দোনথির ভাষ্য অনুযায়ী, এবার যুক্তরাষ্ট্র আগেভাগেই স্পষ্ট করেছে যে এই বিক্রি ‘এই অঞ্চলের সামরিক ভারসাম্যে মৌলিক কোনো পরিবর্তন আনবে না’।
যুক্তরাষ্ট্রের কৌশল নিয়ে ভিন্নমত
ওয়াশিংটনভিত্তিক দক্ষিণ এশিয়া বিশ্লেষক মাইকেল কুগেলম্যান বলেন, বিষয়টিকে শুধু ভারতকেন্দ্রিকভাবে দেখা ঠিক হবে না। তার মতে, যুক্তরাষ্ট্র হয়তো এই চুক্তিকে ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য আলোচনায় কিছু ছাড় আদায়ের একটি চাপের উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করতে পারে।
তবে তিনি বলেন, এই চুক্তির নিজস্ব যুক্তি রয়েছে। এটি সরাসরি ভারতের সঙ্গে সম্পর্কিত নয়।
কুগেলম্যান ব্যাখ্যা করেন, এটি পাকিস্তানের মার্কিন নির্মিত বিমান সহায়তার দীর্ঘমেয়াদি কর্মসূচির অংশ। একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র ভারতের সঙ্গেও প্রতিরক্ষা সহযোগিতা চালিয়ে যাচ্ছে, যদিও তা তুলনামূলকভাবে সীমিত। ফলে এটি একক কোনো ভারতবিরোধী কৌশল নয়। বরং দুটি ভিন্ন নিরাপত্তা সম্পর্কের সমান্তরাল পথ।
পাকিস্তানের সামরিক সক্ষমতা কতটা বাড়ছে
কুগেলম্যানের মতে, এই সহায়তা প্যাকেজটি গুরুত্বপূর্ণ। প্রায় ৭০০ মিলিয়ন ডলারের নিরাপত্তা সহায়তা সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পাকিস্তানের জন্য সবচেয়ে বড়গুলোর একটি। তিনি বলেন, এই অঙ্ক মোটেও ছোট নয়।
এই চুক্তি যুক্তরাষ্ট্র–পাকিস্তান সম্পর্কের ক্ষেত্রেও তাৎপর্যপূর্ণ। এতে বোঝা যায়, ট্রাম্প প্রশাসন সন্ত্রাসবিরোধী সহযোগিতাকে কতটা গুরুত্ব দিচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্র–পাকিস্তান সম্পর্ক নিয়ে আলোচনায় খনিজ সম্পদ ও বাণিজ্যিক সম্ভাবনার বিষয়টি বেশি আলোচিত হয়েছে। তবে সীমিত পরিসরে হলেও সন্ত্রাসবিরোধী সহযোগিতা এই প্রশাসনের কাছে গুরুত্বপূর্ণ।
চীনের ভূমিকা ও পাকিস্তানের কৌশল
অন্যদিকে প্রভীন দোনথি মনে করিয়ে দেন, যুক্তরাষ্ট্রের এই সহায়তা পাকিস্তানের এফ–১৬ বহর ২০৪০ সাল পর্যন্ত সচল রাখতে সহায়ক হবে। তবে ২০২০ সালের পর থেকে পাকিস্তানের ৮০ শতাংশের বেশি অস্ত্র সরবরাহ করেছে চীন।
চলতি বছরে প্রকাশিত সুইডিশ গবেষণা সংস্থা সিপ্রির প্রতিবেদনে এই তথ্যের সমর্থন পাওয়া যায়।
দোনথি বলেন, মে মাসের সংঘাতে পাকিস্তান চীনা নির্মিত জে–১০ যুদ্ধবিমান ব্যবহার করেছে। পাকিস্তান একদিকে ওয়াশিংটন, অন্যদিকে বেইজিংয়ের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রেখে চলেছে। এতে দেশটি উভয় পক্ষ থেকেই সুবিধা নিচ্ছে।

অস্ট্রেলিয়ার সিডনির বন্ডি সমুদ্র সৈকতে বন্দুক হামলায় ১২ জন নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে একজন হামলাকারীও আছেন। এ ছাড়া আহত হন আরও অন্তত ২৯ জন। নিহতদের মধ্যে একটি শিশুও আছে। হতাহতের সংখ্যা বাড়তে পারে।
৮ ঘণ্টা আগে
যুক্তরাষ্ট্রের রোড আইল্যান্ড অঙ্গরাজ্যের প্রভিডেন্স শহরে অবস্থিত ব্রাউন বিশ্ববিদ্যালয়ে এক বন্দুক হামলায় দুই শিক্ষার্থী নিহত এবং আরও নয়জন আহত হয়েছেন। ঘটনাটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বারাস ও হলি ইঞ্জিনিয়ারিং ভবনের ভেতরে ঘটে।
১৪ ঘণ্টা আগে
থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী অনুতিন চার্নভিরাকুল বলেছেন, যতক্ষণ পর্যন্ত আমাদের ভূমি এবং জনগণের প্রতি ক্ষতি ও হুমকি অনুভব করবো ততক্ষণ থাইল্যান্ড তার সামরিক কার্যক্রম চালিয়ে যাব।
২ দিন আগে
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আনুষ্ঠানিকভাবে প্যাক্স সিলিকা উদ্যোগ চালু করেছে। এ উদ্যোগের লক্ষ্য কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা-ভিত্তিক প্রযুক্তির বৈশ্বিক সরবরাহব্যবস্থাকে আধুনিক, শক্তিশালী এবং নিরাপদ করা। এই কর্মসূচির মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র মিত্র দেশগুলোর একটি জোট গঠন করেছে, যা গুরুত্বপূর্ণ খনিজ,
২ দিন আগে