leadT1ad

তুরস্কে প্লেন দুর্ঘটনায় লিবিয়ার সেনাপ্রধান নিহত, তিন দিনের রাষ্ট্রীয় শোক

স্ট্রিম ডেস্ক
স্ট্রিম ডেস্ক

লিবিয়ার সেনাপ্রধান মুহাম্মদ আলী আহমেদ আল-হাদ্দাদ। সংগৃহীত ছবি

তুরস্কের রাজধানী আঙ্কারার অদূরে একটি প্রাইভেট জেট প্লেন দুর্ঘটনায় লিবিয়ার সেনাবাহিনীর চিফ অব স্টাফ মুহাম্মদ আলী আহমেদ আল-হাদ্দাদ নিহত হয়েছেন। মঙ্গলবার (২৩ ডিসেম্বর) আঙ্কারা থেকে উড্ডয়নের পরপরই বিমানটি বিধ্বস্ত হয়। দুর্ঘটনায় বিমানে থাকা সবাই প্রাণ হারান। নিহতদের মধ্যে আল-হাদ্দাদ ছাড়াও লিবিয়ার চারজন ঊর্ধ্বতন সামরিক কর্মকর্তা এবং তিনজন ক্রু সদস্য ছিলেন। তুরস্কের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, প্রাথমিক তদন্তে নাশকতার প্রমাণ মেলেনি; বরং কারিগরি ত্রুটিকেই দুর্ঘটনার কারণ হিসেবে ধারণা করা হচ্ছে। খবর আল জাজিরা।

লিবিয়ার প্রধানমন্ত্রী আবদুল হামিদ দবেইবা ফেসবুকে এক বিবৃতিতে আল-হাদ্দাদের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, ‘এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনাটি ঘটেছে যখন প্রতিনিধি দলটি দেশে ফিরছিল। এই বড় ট্র্যাজেডি দেশ, সামরিক প্রতিষ্ঠান এবং জনগণের জন্য অপূরণীয় ক্ষতি। আমরা এমন মানুষদের হারালাম, যাঁরা নিষ্ঠা ও দায়িত্ববোধের সঙ্গে দেশের সেবা করেছেন।’

আল-হাদ্দাদ দীর্ঘদিন ধরে লিবিয়ার সেনাবাহিনীতে কর্মরত ছিলেন এবং পশ্চিম লিবিয়ায় তিনি একজন জনপ্রিয় শীর্ষ সামরিক কমান্ডার হিসেবে পরিচিত। ক্ষমতাচ্যুত নেতা মুয়াম্মার গাদ্দাফিবিরোধী বিদ্রোহে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। তিনি ২০১১ সালে ন্যাটো-সমর্থিত বিদ্রোহের পর বিভক্ত লিবিয়াকে ঐক্যবদ্ধ করার লক্ষ্যে জাতিসংঘ-সমর্থিত প্রচেষ্টায় তিনি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করছিলেন।

২০২০ সালের আগস্ট থেকে তিনি সেনাবাহিনীর চিফ অব জেনারেল স্টাফ হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। সাবেক প্রধানমন্ত্রী ফায়েজ আল-সারাজের আমলে এই পদে নিয়োগ পান।

২০১১ সালে গাদ্দাফির পতনের পর লিবিয়া গৃহযুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে। ২০১৪ সাল থেকে দেশটিতে সমান্তরালে দুটি সরকার কার্যকর রয়েছে। এর মধ্যে ত্রিপোলিভিত্তিক প্রধানমন্ত্রী আবদুল হামিদ দবেইবার সরকারকে জাতিসংঘ স্বীকৃতি দিয়েছে। এই সরকারের সঙ্গে আঙ্কারার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে এবং তুরস্ক দীর্ঘদিন ধরেই তাদের অর্থনৈতিক ও সামরিক সহায়তা দিয়ে আসছে। এই দুর্ঘটনাটি এমন এক সময়ে ঘটল, যার ঠিক আগের দিন লিবিয়ায় মোতায়েন তুর্কি সেনাদের অবস্থানের মেয়াদ আরও দুই বছর বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে তুরস্কের পার্লামেন্ট।

মঙ্গলবার তুরস্কের আঙ্কারায় আলোচনাকালে লিবিয়ার চিফ অব জেনারেল স্টাফ জেনারেল মোহাম্মদ আলী আহমেদ এল হাদ্দাদ। সংগৃহীত ছবি
মঙ্গলবার তুরস্কের আঙ্কারায় আলোচনাকালে লিবিয়ার চিফ অব জেনারেল স্টাফ জেনারেল মোহাম্মদ আলী আহমেদ এল হাদ্দাদ। সংগৃহীত ছবি

দুর্ঘটনায় নিহত অন্য চার কর্মকর্তা হলেন, লিবিয়ার স্থলবাহিনীর প্রধান জেনারেল আল-ফিতুরি ঘারিবিল, মিলিটারি ম্যানুফ্যাকচারিং অথরিটির প্রধান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাহমুদ আল-কাতাওয়ি, চিফ অব স্টাফের উপদেষ্টা মুহাম্মদ আল-আসাওয়ি দিয়াব এবং চিফ অব স্টাফের দপ্তরের সামরিক আলোকচিত্রী মুহাম্মদ ওমর আহমেদ মাহজুব।

তুরস্কের কর্মকর্তাদের মতে, লিবীয় প্রতিনিধি দলটি দুই দেশের মধ্যে সামরিক সহযোগিতা জোরদারের লক্ষ্যে উচ্চপর্যায়ের প্রতিরক্ষা আলোচনায় অংশ নিতে আঙ্কারায় এসেছিল।

দুর্ঘটনার আগে তুরস্কের জাতীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছিল, আঙ্কারা সফরে এসে আল-হাদ্দাদ তুরস্কের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়াশার গুলের, তাঁর সামরিক সমকক্ষ সেলচুক বাইরাকতারোগলু এবং অন্য সামরিক কমান্ডারদের সঙ্গে বৈঠক করেন।

তদন্ত শুরু করেছে তুরস্কের আইনশৃঙ্খলাবাহিনী

তুরস্কের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আলি ইয়েরলিকায়া এক্সে জানান, বিমানটি স্থানীয় সময় রাত ৮টা ১০ মিনিটে আঙ্কারার এসেনবোগা বিমানবন্দর থেকে ত্রিপোলির উদ্দেশে যাত্রা করে। প্রায় ৪০ মিনিট পর রেডিও যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। পরে আঙ্কারার হাইমানা জেলার কেসিক্কাভাক গ্রামের কাছে বিধ্বস্ত বিমানের ধ্বংসাবশেষ উদ্ধার করা হয়।

তিনি জানান, দাসোঁ ফ্যালকন ৫০ ধরনের জেটটি হাইমানার আকাশে থাকা অবস্থায় জরুরি অবতরণের অনুরোধ করেছিল। তুরস্কের প্রেসিডেন্সিয়াল কমিউনিকেশনস দপ্তরের প্রধান বুরহানেত্তিন দুরান বলেন, বিমানটি বৈদ্যুতিক ত্রুটির কথা জানিয়ে জরুরি অবতরণের অনুরোধ করেছিল এবং এসেনবোগায় ফিরে আসার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছিল। তবে অবতরণের সময় বিমানটি রাডার থেকে হারিয়ে যায়।

দুর্ঘটনার তদন্তে কাজ করছে তুরস্কের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ছবি: সংগৃহীত
দুর্ঘটনার তদন্তে কাজ করছে তুরস্কের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ছবি: সংগৃহীত

স্থানীয় টেলিভিশনে প্রচারিত নিরাপত্তা ক্যামেরার ফুটেজে হাইমানার আকাশে হঠাৎ বিস্ফোরণের মতো আলো দেখা যায়। তুরস্কের বিচারমন্ত্রী ইলমাজ তুনচ জানান, আঙ্কারার প্রধান প্রসিকিউটরের কার্যালয় দুর্ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে।

এক তুর্কি কর্মকর্তা আল জাজিরাকে বলেন, ‘প্রাথমিক প্রতিবেদনে নাশকতার কোনো প্রমাণ নেই।’ তাঁর ভাষ্য অনুযায়ী, দুর্ঘটনার প্রাথমিক কারণ কারিগরি ত্রুটি।

জিএনইউ জানিয়েছে, তদন্তে তুরস্কের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করতে লিবিয়া আঙ্কারায় একটি প্রতিনিধি দল পাঠাবে।

লিবিয়া-জুড়ে তিন দিনের শোক

আল-হাদ্দাদের মৃত্যুর পর জাতিসংঘ-স্বীকৃত ত্রিপোলিভিত্তিক সরকার গভর্নমেন্ট অব ন্যাশনাল ইউনিটি (জিএনইউ) সারা দেশে তিন দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করেছে। এ সময় সব সরকারি প্রতিষ্ঠানে অর্ধনমিত পতাকা উত্তোলন এবং সব ধরনের আনুষ্ঠানিক অনুষ্ঠান স্থগিত থাকবে।

জিএনইউর রাজনৈতিক ও যোগাযোগবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ওয়ালিদ এল্লাফি বলেন, তদন্ত প্রতিবেদন কবে পাওয়া যাবে, তা এখনো স্পষ্ট নয়। তিনি জানান, দুর্ঘটনাকবলিত জেটটি মাল্টার একটি লিজ নেওয়া বিমান ছিল এবং এর মালিকানা বা কারিগরি ইতিহাস সম্পর্কে পর্যাপ্ত তথ্য নেই।

ত্রিপোলি থেকে আল জাজিরার সংবাদদাতা মালিক ত্রাইনা বলেন, আল-হাদ্দাদের মৃত্যু লিবীয় সেনাবাহিনীর জন্য ‘বিশাল ক্ষতি’। তাঁর মতে, পশ্চিম ও পূর্ব—উভয় অংশ থেকেই শোকবার্তা এসেছে। পূর্ব লিবিয়ার কমান্ডার খলিফা হাফতার গভীর শোক প্রকাশ করেছেন এবং বেনগাজিভিত্তিক প্রতিনিধি পরিষদ নিহতদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছে।

Ad 300x250

সম্পর্কিত