leadT1ad

যুক্তরাষ্ট্রের অবরোধে সহায়তাকারীদের কঠোর শাস্তির আইন পাস ভেনেজুয়েলায়

স্ট্রিম ডেস্ক
স্ট্রিম ডেস্ক
ঢাকা

প্রকাশ : ২৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৫: ৩০
২৫ নভেম্বর কারাকাসে বেসামরিক-সামরিক পদযাত্রার সময় ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরো (বামে) ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী ভ্লাদিমির পাদ্রিনো লোপেজ (ডানে) কথা বলছেন। ছবি: সংগৃহীত।

ভেনেজুয়েলার জাতীয় পরিষদ একটি নতুন আইন পাস করেছে। এই আইনে যুক্তরাষ্ট্রের আরোপিত অবরোধে সহায়তা বা অর্থায়নকারীদের জন্য কঠোর শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে। আইন অনুযায়ী, এমন কর্মকাণ্ডে জড়িত ব্যক্তিদের সর্বোচ্চ ২০ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড দেওয়া হতে পারে।

মঙ্গলবার এই আইনটি পাস হয়। এর ঠিক আগে যুক্তরাষ্ট্র ভেনেজুয়েলার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কয়েকটি তেলবাহী ট্যাংকার জব্দ করে। প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর সরকার এসব ঘটনাকে বেআইনি এবং জলদস্যুতার শামিল বলে নিন্দা জানিয়েছে।

আইনটি জাতীয় পরিষদে উপস্থাপন করেন সংসদ সদস্য জিউসেপ্পে আলেসান্দ্রেলো। জাতীয় পরিষদ বর্তমানে মাদুরোর শাসক দলের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। তিনি বলেন, এই আইন দেশের জাতীয় অর্থনীতি রক্ষার জন্য করা হয়েছে। একই সঙ্গে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার মানের অবনতি ঠেকানোই এর মূল উদ্দেশ্য।

গত কয়েক মাসে যুক্তরাষ্ট্র ভেনেজুয়েলার বিরুদ্ধে একের পর এক কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে। তারা লাতিন আমেরিকায় বড় আকারের সামরিক শক্তি মোতায়েন করেছে। আন্তর্জাতিক জলসীমায় তেলবাহী জাহাজ জব্দ করেছে। মাদক পাচারের অভিযোগে জাহাজে সামরিক হামলা চালিয়েছে। এসব হামলায় বহু মানুষের মৃত্যু হয়েছে। এমনকি ভেনেজুয়েলায় স্থল হামলার হুমকিও দেওয়া হয়েছে।

এই পদক্ষেপগুলোর আইনি বৈধতা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। বিশেষ করে আন্তর্জাতিক জলসীমায় তেলবাহী জাহাজ জব্দ করার ঘটনাকে অনেকেই আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন বলে মনে করছেন। মাদক পাচারের অভিযোগে চালানো সামরিক হামলাগুলোও ব্যাপকভাবে অবৈধ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের এক বৈঠকে ভেনেজুয়েলার প্রতিনিধি স্যামুয়েল মোনকাদা এসব বিষয়ে বক্তব্য দেন। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র আন্তর্জাতিক আইনের বাইরে গিয়ে কাজ করছে। তিনি অভিযোগ করেন, যুক্তরাষ্ট্র ভেনেজুয়েলার জনগণকে দেশ ছাড়তে বাধ্য করতে এবং দেশটি দখল করে নিতে চাইছে। তিনি আরও বলেন, ভেনেজুয়েলা কোনো হুমকি নয়। প্রকৃত হুমকি হলো যুক্তরাষ্ট্র সরকার।

চীন-রাশিয়াও যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপের সমালোচনা করেছে। জাতিসংঘে রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত ভাসিলি নেবেনজিয়া বলেন, ট্রাম্প প্রশাসন এমন একটি দৃষ্টান্ত তৈরি করছে, যা ভবিষ্যতে অন্য লাতিন আমেরিকান দেশগুলোর বিরুদ্ধেও ব্যবহৃত হতে পারে।

আল-জাজিরার জাতিসংঘ প্রতিনিধি গ্যাব্রিয়েল এলিজন্দো জানান, রাশিয়া ও চীনের পাশাপাশি কলম্বিয়াও ভেনেজুয়েলার পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। কিছু অন্যান্য দেশও যুক্তরাষ্ট্রকে আন্তর্জাতিক আইন মেনে চলার আহ্বান জানিয়েছে এবং উত্তেজনা কমানোর কথা বলেছে। তবে আর্জেন্টিনা, পানামা ও চিলির মতো কয়েকটি ডানপন্থী সরকার পরিচালিত দেশ যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষেই অবস্থান নিয়েছে।

এলিজন্দো আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্র এই পরিস্থিতির শেষ পরিণতি কী হতে পারে, সে বিষয়ে এখনো স্পষ্ট কোনো ধারণা দেয়নি।

মঙ্গলবার ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল এক প্রতিবেদনে জানায়, যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনী ক্যারিবীয় অঞ্চলে বিশেষ অভিযান পরিচালনাকারী বিমান এবং সেনাসহ পরিবহন বিমান পাঠিয়েছে। সোমবার সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, দক্ষিণ আমেরিকায় যুক্তরাষ্ট্র ইতিহাসের সবচেয়ে বড় নৌবহর মোতায়েন করেছে।

প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরো অভিযোগ করেছেন, যুক্তরাষ্ট্র তার সরকার উৎখাত করতে চায়। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ভেনেজুয়েলার বিশাল তেলসম্পদের নিয়ন্ত্রণ নিতে আগ্রহী। ট্রাম্প প্রশাসনের কিছু সদস্য দাবি করেছেন, এই তেল যুক্তরাষ্ট্রের প্রাপ্য, যা ভেনেজুয়েলা সরকার সম্পূর্ণভাবে অস্বীকার করেছে। ট্রাম্প নিজেই বলেছেন, জব্দ করা তেল ও ট্যাংকার যুক্তরাষ্ট্র নিজেদের কাছেই রাখবে।

জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে বক্তব্য রাখতে গিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত মাইক ওয়াল্টজ বলেন, তেল বিক্রি মাদুরো সরকারের প্রধান অর্থনৈতিক ভরসা। তিনি মাদুরো সরকারকে অবৈধ বলে উল্লেখ করেন এবং প্রমাণহীনভাবে দাবি করেন যে মাদুরো একটি বড় অপরাধচক্র পরিচালনা করছেন, যা যুক্তরাষ্ট্রে মাদক পাচার করে।

ওয়াল্টজ আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ও পুরো পশ্চিম গোলার্ধের জন্য সবচেয়ে বড় হুমকি হলো সীমান্ত পেরিয়ে কাজ করা সন্ত্রাসী ও অপরাধী গোষ্ঠীগুলো।

এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের এই চাপ ভেনেজুয়েলার সরকারের জন্য ভেতরের বিরোধীদের দমন করার একটি অজুহাতে পরিণত হয়েছে। মানবাধিকার সংগঠনগুলো জানিয়েছে, ২০২৪ সালের জুলাইয়ের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের পর থেকে মাদুরো সরকার আরও দমনমূলক হয়ে উঠেছে। ওই নির্বাচনে মাদুরো বিজয় দাবি করলেও ফলাফলের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে ব্যাপক সন্দেহ রয়েছে। বিরোধী দল নিজেদের প্রকৃত বিজয়ী বলে দাবি করছে। এখনো খুব কম দেশই মাদুরোর বিজয়কে স্বীকৃতি দিয়েছে।

সূত্র: আল-জাজিরা

Ad 300x250

সম্পর্কিত