leadT1ad

প্রশান্ত মহাসাগরে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন হামলা, নিহত ৪ জন

স্ট্রিম ডেস্ক
স্ট্রিম ডেস্ক
ঢাকা

প্রকাশ : ১৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৩: ২৯
প্রশান্তও মহাসাগরে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন হামলায় ভেনেজুয়ালার সঙ্গে উত্তেজনা বাড়ছে। ছবি: সংগৃহীত।

প্রশান্ত মহাসাগরের পূর্বাঞ্চলে সর্বশেষ এক হামলায় চারজন নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনী। এই হামলার ঘোষণা আসে এমন এক সময়ে, যখন মার্কিন পার্লামেন্টে কংগ্রেসে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ভেনেজুয়েলা নীতির বিরুদ্ধে আনা প্রস্তাবগুলো বাতিল হয়ে যায়।

লাতিন আমেরিকা অঞ্চলে চলমান ‘সাউদার্ন স্পিয়ার’ নামের সামরিক অভিযানের নেতৃত্ব দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের সাউদার্ন কমান্ড (সাউথকম)। সংস্থাটি জানায়, বুধবার একটি নৌযানে হামলা চালানো হয়। এতে চারজনকে ‘মাদক-সন্ত্রাসী’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। তবে ওই নৌযানটি মাদক পাচারে জড়িত ছিল—এমন কোনো প্রমাণ প্রকাশ করা হয়নি।

সাউথকমের দাবি, নৌযানটি প্রশান্ত মহাসাগরের একটি পরিচিত মাদক পাচার রুটে চলাচল করছিল। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশিত এক ভিডিওতে দ্রুতগতির নৌযানটি ধ্বংস হতে দেখা যায়।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথের নির্দেশে এই হামলা চালানো হয়। সেপ্টেম্বর থেকে এখন পর্যন্ত প্রশান্ত মহাসাগর ও ক্যারিবীয় অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের হামলায় প্রায় ১০০ জন নিহত হয়েছেন। এসব হামলায় অন্তত ২৬টি নৌযান ধ্বংস করা হয়েছে বলে ওয়াশিংটন স্বীকার করেছে।

আইন বিশেষজ্ঞদের একটি অংশ বলছে, আন্তর্জাতিক জলসীমায় এসব হামলা বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শামিল। তবে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এসব হামলাকে বৈধ বলে দাবি করেছেন। তাঁর মতে, যুক্তরাষ্ট্রে মাদক প্রবেশ ঠেকাতে এ ধরনের পদক্ষেপ জরুরি। বিশেষ করে ভেনেজুয়েলাভিত্তিক মাদকচক্রকে তিনি এর জন্য দায়ী করেছেন।

কংগ্রেসে প্রস্তাব বাতিল

বুধবার যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি পরিষদে দুটি গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাব ভোটে বাতিল হয়। প্রথম প্রস্তাবে কংগ্রেসের অনুমোদন ছাড়া ভেনেজুয়েলার বিরুদ্ধে সামরিক তৎপরতা বন্ধের আহ্বান জানানো হয়। ভোটের ফল হয় ২১৩–২১১। দ্বিতীয় প্রস্তাবে পশ্চিম গোলার্ধে যেকোনো ‘সন্ত্রাসী সংগঠনের’ বিরুদ্ধে সামরিক অভিযানে কংগ্রেসের অনুমোদন বাধ্যতামূলক করার কথা বলা হয়। সেটিও অল্প ব্যবধানে নাকচ হয়ে যায়।

এই সিদ্ধান্তের মধ্যেই লাতিন আমেরিকায় যুক্তরাষ্ট্রের বড় ধরনের সামরিক মোতায়েন চলছে। এতে হাজার হাজার সেনা, একটি বিমানবাহী রণতরী এবং একটি পারমাণবিক শক্তিচালিত সাবমেরিন রয়েছে। একই সময়ে ট্রাম্প ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর সরকার উৎখাতের হুমকিও দিচ্ছেন।

ভেনেজুয়েলার বিরুদ্ধে নৌ অবরোধ

মঙ্গলবার প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ভেনেজুয়েলার বন্দরে যাতায়াতকারী তেলবাহী ট্যাংকারের ওপর নৌ অবরোধের নির্দেশ দেন। এসব ট্যাংকার যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার আওতায় রয়েছে। মাদুরো সরকার এই পদক্ষেপকে ‘বিকৃত হুমকি’ বলে আখ্যা দিয়েছে। তাদের দাবি, ভেনেজুয়েলার প্রাকৃতিক সম্পদ দখলের উদ্দেশ্যেই এই অবরোধ।

গত সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রের সেনারা ভেনেজুয়েলার উপকূলের কাছে ‘স্কিপার’ নামের একটি তেলবাহী জাহাজ দখল করে। পরে সেটিকে যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস অঙ্গরাজ্যে নিয়ে যাওয়া হয় বলে জানা গেছে।

নিউইয়র্ক টাইমস জানিয়েছে, অবরোধ ঘোষণার পর ভেনেজুয়েলার নৌবাহিনী তেলবাহী জাহাজগুলোকে পাহারা দেওয়া শুরু করেছে। মঙ্গলবার রাত ও বুধবার সকালে পূর্ব উপকূল থেকে কয়েকটি জাহাজ নৌবাহিনীর নিরাপত্তায় রওনা দেয়।

আন্তর্জাতিক উদ্বেগ

যুক্তরাষ্ট্র ও ভেনেজুয়েলার মধ্যে উত্তেজনা বাড়তে থাকায় লাতিন আমেরিকার বিভিন্ন দেশের নেতা এবং জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। যুদ্ধের আশঙ্কা ক্রমেই বাড়ছে বলে তাঁদের মন্তব্যে উঠে এসেছে।

মেক্সিকোর প্রেসিডেন্ট ক্লাউদিয়া শেইনবাউম জাতিসংঘকে সক্রিয় ভূমিকা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ভেনেজুয়েলায় রক্তপাত ঠেকাতে জাতিসংঘকে দায়িত্ব নিতে হবে। মেক্সিকো বরাবরের মতোই বিদেশি হস্তক্ষেপের বিরোধিতা করছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিও লুলা দা সিলভা যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, লাতিন আমেরিকার প্রতি ট্রাম্পের মনোভাব ও হুমকি চিন্তার কারণ। লুলা জানান, চলতি মাসের শুরুতে ট্রাম্পের সঙ্গে ফোনালাপে তিনি সংলাপের আহ্বান জানিয়েছেন।

লুলা বলেন, কথার শক্তি অস্ত্রের শক্তির চেয়েও বেশি হতে পারে। তিনি ট্রাম্পকে ধৈর্য ধরতে এবং আলোচনার পথ বেছে নিতে অনুরোধ করেছেন।

মাদুরোর প্রতিক্রিয়া

ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরো জাতিসংঘ মহাসচিব গুতেরেসের সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন বলে জানা গেছে। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের নৌ অবরোধের কড়া সমালোচনা করেছেন।

ভেনেজুয়েলার রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থার তথ্যমতে, মাদুরো যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক পদক্ষেপকে ‘ঔপনিবেশিক হুমকির নতুন রূপ’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। তিনি মার্কিন কর্মকর্তাদের বক্তব্যকে ‘বর্বর কূটনীতি’ বলে আখ্যা দেন। মার্কিন কর্মকর্তারা ভেনেজুয়েলার প্রাকৃতিক সম্পদে যুক্তরাষ্ট্রের অধিকার রয়েছে বলে মন্তব্য করেন।

এই পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্র-ভেনেজুয়েলা সম্পর্ক আরও সংকটময় হয়ে উঠছে বলে আন্তর্জাতিক মহল আশঙ্কা করছে।

সূত্র: আল-জাজিরা

Ad 300x250

সম্পর্কিত