ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদির শারীরিক অবস্থা এখনো ‘অত্যন্ত আশঙ্কাজনক’ বলে জানিয়েছে তাঁর চিকিৎসায় গঠিত মেডিকেল বোর্ড। তবে স্বস্তির খবর হল, হাদির কিডনির কার্যক্ষমতা ফিরে এসেছে। এছাড়া রক্ত জমাট বাঁধা ও রক্তক্ষরণজনিত সমস্যা (ডিআইসি) অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে এসেছে। তবে সার্বক্ষণিক মনিটরিং এবং প্রয়োজনীয় রক্ত সঞ্চালন অব্যাহত রয়েছে।
শনিবার (১৩ ডিসেম্বর) এভারকেয়ার হাসপাতালের মেডিকেল বোর্ডের পক্ষ থেকে এক আনুষ্ঠানিক বিবৃতিতে তাঁর সর্বশেষ শারীরিক অবস্থার কথা জানানো হয়। বর্তমানে তিনি রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) ভেন্টিলেটর সাপোর্টে রয়েছেন। তাঁর মস্তিষ্ক ও ফুসফুসে গুরুতর আঘাত রয়েছে।
এর আগে গতকাল শুক্রবার (১২ ডিসেম্বর) ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ওসমান হাদির অস্ত্রোপচার সম্পন্ন হয়। এরপর অপারেশন-পরবর্তী উন্নত চিকিৎসা ও নিবিড় পর্যবেক্ষণের জন্য তাঁকে এভারকেয়ার হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়।
হাদির মস্তিষ্ক মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানিয়েছে মেডিকেল বোর্ড। তাদের বক্তব্য অনুযায়ী, সার্জারির পর বর্তমানে তাঁকে ‘কনজারভেটিভ ম্যানেজমেন্টে’ রাখা হয়েছে এবং ব্রেন প্রোটেকশন প্রটোকল অনুযায়ী সব ধরনের সাপোর্ট দেওয়া হচ্ছে। অবস্থা কিছুটা স্থিতিশীল হলে পুনরায় সিটি স্ক্যান করা হবে।
এছাড়া ফুসফুসে ইনজুরি থাকায় চেস্ট ড্রেইন টিউব রাখা হয়েছে। সংক্রমণ ও এআরডিএস (এআরডিএস) প্রতিরোধের সতর্কতা হিসেবে তাঁকে ভেন্টিলেটর সাপোর্টে রাখা হয়েছে। ব্রেন স্টেম ইনজুরির কারণে রোগীর রক্তচাপ ও হৃদস্পন্দনে ওঠানামা পরিলক্ষিত হচ্ছে। হৃদস্পন্দন বিপৎসীমার নিচে নেমে গেলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা হিসেবে টেম্পোরারি পেসমেকার স্থাপনের প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে মেডিকেল টিম।
মেডিকেল বোর্ড জানিয়েছে, ওসমান হাদির চিকিৎসার বিষয়টি তাঁর পরিবারকে বিস্তারিত জানানো হয়েছে। রোগীর গোপনীয়তা রক্ষা এবং সংক্রমণের ঝুঁকি এড়াতে হাসপাতালে ভিড় না করার জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে। ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্রের দ্রুত আরোগ্যের জন্য মেডিকেল বোর্ড ও তাঁর পরিবারের পক্ষ থেকে দেশবাসীর কাছে দোয়া চাওয়া হয়েছে।
ডা. আলিউজ্জামান এবং ডা. মো. জাফর ইকবালের নেতৃত্বে বিভিন্ন বিভাগের ১২ জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সমন্বয়ে গঠিত মাল্টিডিসিপ্লিনারি মেডিকেল বোর্ড ওসমান হাদীর চিকিৎসা কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। মেডিকেল বোর্ডে নিউরোসার্জারি, কার্ডিওলজি, নেফ্রোলজি, রেসপিরেটরি মেডিসিন এবং অর্থোপেডিক্সসহ বিভিন্ন বিভাগের সিনিয়র কনসালটেন্টরা যুক্ত রয়েছেন।
উল্লেখ্য, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মতিঝিল, শাহজাহানপুর, পল্টন, রমনা ও শাহবাগ থানা এলাকা নিয়ে গঠিত ঢাকা–৮ আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার ঘোষণা দিয়েছিলেন হাদি। সে জন্য প্রতি শুক্রবার তিনি জনসংযোগ করেন। গতকাল দুপুরে মতিঝিলের একটি মসজিদে এ ধরনের একটি প্রচার শেষে সতীর্থদের সঙ্গে মধ্যাহ্নভোজের জন্য ব্যাটারি রিকশায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের দিকে যাচ্ছিলেন তিনি।
চলন্ত রিকশায় থাকা অবস্থাতেই দুপুরে রাজধানীর বিজয়নগরে বক্স কালভার্ট এলাকায় পানির ট্যাংকির সামনে মোটরসাইকেলের পেছনে বসা আততায়ী হাদিকে লক্ষ্য করে একটি গুলি ছোড়ে, যা তার মাথায় লাগে।
গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর হাদিকে প্রথমে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে মস্তিষ্কে একটি অস্ত্রোপচার শেষে তাঁকে এভারকেয়ার হাসপাতালে পাঠানো হয়। হাদির জীবন সংকটাপন্ন বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকেরা।