বর্তমান বিশ্বে আমাদের শত্রুতা ও টিকে থাকার লড়াই ঠিক কোথায় এসে মিলিত হয়? এমন কোনো একক বিন্দু কি আছে, যা এই সার্বজনীন সংকট স্পষ্ট করে? এসব প্রশ্নের উত্তরে আপনি হয়তো ভাবছেন, গাজা, ইউক্রেন, সুদান কিংবা মিয়ানমারের উত্তরাঞ্চলের স্ক্যাম সেন্টারের কথা। কিন্তু উত্তর হলো তেহরান।
স্লাভয় জিজেক

বর্তমান বিশ্বে আমাদের শত্রুতা ও টিকে থাকার লড়াই ঠিক কোথায় এসে মিলিত হয়? এমন কোনো একক বিন্দু কি আছে, যা এই সার্বজনীন সংকট স্পষ্ট করে? এসব প্রশ্নের উত্তরে আপনি হয়তো ভাবছেন, গাজা, ইউক্রেন, সুদান কিংবা মিয়ানমারের উত্তরাঞ্চলের স্ক্যাম সেন্টারের কথা। কিন্তু উত্তর হলো তেহরান।
ইরানের রাজধানী এখন ‘ডে জিরো’ বা ‘শূন্য দিবসের’ প্রহর গুণছে। আক্ষরিক অর্থেই এই শহরের পানি ফুরিয়ে যাবে। তেহরান একা নয়। ইরানের বেশির ভাগ অংশই দ্রুতগতিতে চরম পানি সংকটের (ওয়াটার ব্যাংক্রাপ্টসি) দিকে ধাবিত হচ্ছে। অর্থাৎ এমন এক অবস্থা যখন পানির চাহিদা স্থায়ীভাবে প্রাকৃতিক সরবরাহের চেয়ে বেশি হয়ে যাবে। ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসউদ পেজেশকিয়ান এখন রাজধানী স্থানান্তর এবং প্রায় এক কোটি মানুষকে বাধ্যতামূলকভাবে সরিয়ে নেওয়ার (ইভাকুয়েশন) কথা ভাবছেন।
এই সংকটের পেছনে বেশ কিছু কারণ রয়েছে। তাৎক্ষণিক কারণ হলো, গত ছয় বছর ধরে চলা তীব্র খরা। এমনকি বর্ষাকালেও ইরানে তেমন বৃষ্টি হয়নি। তার ওপর, প্রচুর পানি লাগে এমন কৃষিকাজ এবং পানি ও জ্বালানিতে ভর্তুকি দেওয়ার ফলে ভূগর্ভস্থ জলাধার (অ্যাকুইফার) থেকে অতিরিক্ত পানি তোলা হয়েছে। ফলে সঞ্চিত ভূগর্ভস্থ পানির ভাণ্ডার নিঃশেষ হয়ে গেছে।
এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে তেহরানের মতো প্রধান প্রধান শহরে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড ও কর্মসংস্থানের কেন্দ্রীভূতকরণ। ফলে পানির সম্পদের ওপর আরো চাপ সৃষ্টি হচ্ছে। ভূগর্ভস্থ পানির ক্ষয় এতটাই তীব্র হয়েছে যে তেহরান মালভূমির কিছু অংশ দেবে যাচ্ছে। যদি বৃষ্টি ফিরেও আসে, অতীতে যতটা পানি মাটির নিচে জমা হতো, এখন আর ততটা হবে না। কারণ পানি জমার সেই ভৌত জায়গা সংকুচিত হয়ে গেছে।
ভূমি দেবে যাওয়া সব জায়গায় সমানভাবে ঘটছে না। তাই তেহরানের পুরো পানি ও পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা ভেঙে পড়ছে। মাটির নিচের ভাঙা চ্যানেল বা নালিপথ থেকে গ্যাস লিক হয়ে খোলা বাতাসে ছড়িয়ে পড়ছে।
ইরানের নেতারা দশকের পর দশক ধরে এই সমস্যার কথা জানতেন। কিন্তু কখনো মোকাবিলায় জোরালো উদ্যোগ নেননি। পরিবর্তে, শাসকগোষ্ঠী তাদের সম্পদ বরাদ্দ করেছে পারমাণবিক কর্মসূচি, হামাস, হুথি ও হিজবুল্লাহর মতো বিদেশি প্রক্সি বাহিনী এবং সামরিক উৎপাদনে। তারা সশস্ত্র বাহিনীকে সুসজ্জিত রেখেছে ও ড্রোন তৈরি করেছে, যা রাশিয়া ব্যবহার করছে ইউক্রেনীয় শহরগুলোতে বোমা হামলায়।
পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে। কারণ সংকট যখন চরমে, তখন ইরানের রেভ্যুলিউশনারি গার্ড কর্পস (আইআরজিসি) একটি ‘পানি মাফিয়া’ তৈরি করেছে। পানি সরবরাহ করার জন্য হাজার হাজার বছর ধরে টিকে থাকা হ্রদ ও নদী শুকিয়ে ফেলা হচ্ছে। এই পানি যাচ্ছে শুধু তাদের কাছেই যারা আর্থিকভাবে এই পানি কিনতে সক্ষম।
তেহরানের গড়পড়তা পরিবারগুলো তাদের আয়ের ১০ শতাংশ এখন পানির পেছনে ব্যয় করছে এবং অনেক মানুষ গোসল ও অন্যান্য মৌলিক পরিচ্ছন্নতা ছাড়াই দিন কাটাচ্ছে। দুঃখজনকভাবে শাসকগোষ্ঠী এই সংকট থেকেও সরাসরি মুনাফা লুটছে। কিন্তু এই পুরোনো ও চলমান সমস্যা হঠাৎ কেন বিশ্বজুড়ে খবরের শিরোনাম হলো? পশ্চিমারা কি আরেকটি ইসরায়েলি/মার্কিন হামলার ক্ষেত্র প্রস্তুত করতে চাইছে? (এবার হয়তো মানবিক হস্তক্ষেপের আড়ালে)। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ইতোমধ্যে নির্লজ্জভাবে এই পরিস্থিতির সুযোগ নিয়েছেন। তিনি ইরানীদের বলেছেন, তারা যদি বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায়, তবে ইসরায়েল পানি সংকট সমাধানে বিশেষজ্ঞ পাঠাবে।
বৃষ্টির জন্য গণপ্রার্থনার আয়োজন করা ছাড়াও ইরানের শাসকগোষ্ঠী বাতাসে প্রচুর পরিমাণে রাসায়নিক লবণ ছিটানোর মতো বিতর্কিত কৌশল নিয়েছে। কিন্তু এই ‘ক্লাউড সিডিং’ বা কৃত্রিম মেঘ তৈরির প্রক্রিয়া নিশ্চিতভাবে বৃষ্টি নামানোর বদলে গাছপালা ধ্বংস করছে ও মানুষের শ্বাসকষ্ট বাড়িয়ে দিচ্ছে। মানুষ এখন ঘরবন্দি থাকতে বাধ্য হচ্ছে ও ইরানি সমাজ ব্যবস্থা ভেঙে পড়তে শুরু করেছে।
রাজধানী স্থানান্তরের পরিকল্পনা নিয়েও পেজেশকিয়ানের বক্তব্য বেশ অস্পষ্ট। তিনি কি বিপুল জনসংখ্যার কথা বলছেন, নাকি কেবল সরকারি প্রশাসনের কথা? যদি দ্বিতীয়টি হয়, তবে পেছনে পড়ে থাকা কোটি কোটি মানুষের কী হবে? আর যদি প্রথমটি হয়, তবে এই প্রচেষ্টায় বহু বছর সময় লাগবে ও রাষ্ট্রের ওপর এক অসহনীয় আর্থিক বোঝা চাপবে।
স্বাভাবিকভাবেই, তেহরানের হাজার হাজার মানুষ আতঙ্কিত হতে শুরু করেছে। শহরের উত্তরের মহাসড়কগুলোতে এখনো কিছুটা পানি অবশিষ্ট থাকা কাস্পিয়ান সাগর অঞ্চলের দিকে যেতে চাওয়া গাড়ির জট লাগে। কিন্তু এই হাজার হাজার ঘরছাড়া মানুষ যদি লাখে পরিণত হয়, তখন কী হবে? তুরস্কই হবে তাদের সুস্পষ্ট প্রথম গন্তব্য, এরপর ইউরোপ। কিন্তু উপসাগরীয় অঞ্চলের ধনী আরব রাষ্ট্রগুলোর কী ভূমিকা হবে? ইরানের নিকটতম প্রতিবেশীদের কাছ থেকে কেন আরও সাহায্যের আশা করা হচ্ছে না?
যদিও এই পানি সংকট প্রাকৃতিক কারণ ও ভুল নীতির এক নির্দিষ্ট মিশ্রণের ফল। তবু ইরান একা নয়। উদাহরণস্বরূপ, প্রতিবেশী আফগানিস্তানে তীব্র পানি সংকট দেখা দেওয়ায় কাবুল শহরের পানি সরবরাহ বাড়ানোর জন্য বড় বড় সেচ প্রকল্প নেওয়া হচ্ছে। এই প্রকল্পগুলো বিতর্কমুক্ত নয়। কারণ এর প্রভাব সীমান্তের ওপারে অন্য জায়গার পানি সরবরাহেও পড়তে পারে। ঠিক এই কারণেই মিসর তার পার্শ্ববর্তী দেশ ইথিওপিয়ার বাঁধ প্রকল্পগুলোর তীব্র বিরোধিতা করে আসছে।
তাহলে করণীয় কী? আমার কাছে কোনো সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব না থাকলেও, সাধারণ সমাধান স্পষ্ট মনে হচ্ছে: বিশ্বের এখন এক ধরনের ‘কমিউনিজম’ বা সাম্যবাদ প্রয়োজন। আমি বিংশ শতাব্দীর ‘বাস্তবে বিদ্যমান সমাজতন্ত্রের’ কথা বলছি না, বরং আরও স্পষ্ট ও প্রাথমিক কিছু বোঝাচ্ছি।
স্বৈরাচারী রাষ্ট্র, বহুদলীয় গণতন্ত্র কিংবা তৃণমূল পর্যায়ের সসংগঠন– কারও পক্ষেই ইরানের পানি সংকট মোকাবিলা করা সম্ভব নয়। যখন আমরা সভ্য সমাজ হিসেবে আমাদের অস্তিত্বের ওপর হুমকি মোকাবিলা করছি, তখন একমাত্র উপায় হলো বড় আকারের জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা, যার অর্থ কার্যত যুদ্ধাবস্থা। তবে এই যুদ্ধ অন্য কোনো রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে নয়, বরং নিজের দেশের ভেতরে যারা এই সংকটের জন্য দায়ী, তাদের বিরুদ্ধে।
এই জরুরি অবস্থা বাজার ব্যবস্থাকে বিলুপ্ত করবে না বা সবকিছু জাতীয়করণ করবে না। তবে সামাজিক জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রগুলোর ওপর কঠোর জননিয়ন্ত্রণ ও তদারকি আরোপ করবে। ইরানের প্রেক্ষাপটে এই বিভিন্ন ক্ষেত্রের অর্থ হলো পানি বিতরণ নিয়ন্ত্রণ করা। ইরানে ‘পানি মাফিয়া’কে তাৎক্ষণিকভাবে গুঁড়িয়ে দেওয়া।
রাষ্ট্রীয় শক্তিকে (যা সবচেয়ে দ্রুত কাজ করতে পারে) স্থানীয়ভাবে সংগঠিত কর্মকাণ্ড এবং অনেক বেশি শক্তিশালী আন্তর্জাতিক সহযোগিতার মাধ্যমে পরিপূরক হতে হবে। এটা কি ইউটোপিয়া বা অলীক কল্পনা? একদমই না। বরং আসল ইউটোপিয়া বা অলীক কল্পনা হলো এটা বিশ্বাস করা যে, এই ধরনের কঠোর পদক্ষেপ ছাড়াই আমরা টিকে থাকতে পারব।
প্রজেক্ট সিন্ডিকেট থেকে ভাষান্তর করেছেন তুফায়েল আহমদ

বর্তমান বিশ্বে আমাদের শত্রুতা ও টিকে থাকার লড়াই ঠিক কোথায় এসে মিলিত হয়? এমন কোনো একক বিন্দু কি আছে, যা এই সার্বজনীন সংকট স্পষ্ট করে? এসব প্রশ্নের উত্তরে আপনি হয়তো ভাবছেন, গাজা, ইউক্রেন, সুদান কিংবা মিয়ানমারের উত্তরাঞ্চলের স্ক্যাম সেন্টারের কথা। কিন্তু উত্তর হলো তেহরান।
ইরানের রাজধানী এখন ‘ডে জিরো’ বা ‘শূন্য দিবসের’ প্রহর গুণছে। আক্ষরিক অর্থেই এই শহরের পানি ফুরিয়ে যাবে। তেহরান একা নয়। ইরানের বেশির ভাগ অংশই দ্রুতগতিতে চরম পানি সংকটের (ওয়াটার ব্যাংক্রাপ্টসি) দিকে ধাবিত হচ্ছে। অর্থাৎ এমন এক অবস্থা যখন পানির চাহিদা স্থায়ীভাবে প্রাকৃতিক সরবরাহের চেয়ে বেশি হয়ে যাবে। ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসউদ পেজেশকিয়ান এখন রাজধানী স্থানান্তর এবং প্রায় এক কোটি মানুষকে বাধ্যতামূলকভাবে সরিয়ে নেওয়ার (ইভাকুয়েশন) কথা ভাবছেন।
এই সংকটের পেছনে বেশ কিছু কারণ রয়েছে। তাৎক্ষণিক কারণ হলো, গত ছয় বছর ধরে চলা তীব্র খরা। এমনকি বর্ষাকালেও ইরানে তেমন বৃষ্টি হয়নি। তার ওপর, প্রচুর পানি লাগে এমন কৃষিকাজ এবং পানি ও জ্বালানিতে ভর্তুকি দেওয়ার ফলে ভূগর্ভস্থ জলাধার (অ্যাকুইফার) থেকে অতিরিক্ত পানি তোলা হয়েছে। ফলে সঞ্চিত ভূগর্ভস্থ পানির ভাণ্ডার নিঃশেষ হয়ে গেছে।
এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে তেহরানের মতো প্রধান প্রধান শহরে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড ও কর্মসংস্থানের কেন্দ্রীভূতকরণ। ফলে পানির সম্পদের ওপর আরো চাপ সৃষ্টি হচ্ছে। ভূগর্ভস্থ পানির ক্ষয় এতটাই তীব্র হয়েছে যে তেহরান মালভূমির কিছু অংশ দেবে যাচ্ছে। যদি বৃষ্টি ফিরেও আসে, অতীতে যতটা পানি মাটির নিচে জমা হতো, এখন আর ততটা হবে না। কারণ পানি জমার সেই ভৌত জায়গা সংকুচিত হয়ে গেছে।
ভূমি দেবে যাওয়া সব জায়গায় সমানভাবে ঘটছে না। তাই তেহরানের পুরো পানি ও পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা ভেঙে পড়ছে। মাটির নিচের ভাঙা চ্যানেল বা নালিপথ থেকে গ্যাস লিক হয়ে খোলা বাতাসে ছড়িয়ে পড়ছে।
ইরানের নেতারা দশকের পর দশক ধরে এই সমস্যার কথা জানতেন। কিন্তু কখনো মোকাবিলায় জোরালো উদ্যোগ নেননি। পরিবর্তে, শাসকগোষ্ঠী তাদের সম্পদ বরাদ্দ করেছে পারমাণবিক কর্মসূচি, হামাস, হুথি ও হিজবুল্লাহর মতো বিদেশি প্রক্সি বাহিনী এবং সামরিক উৎপাদনে। তারা সশস্ত্র বাহিনীকে সুসজ্জিত রেখেছে ও ড্রোন তৈরি করেছে, যা রাশিয়া ব্যবহার করছে ইউক্রেনীয় শহরগুলোতে বোমা হামলায়।
পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে। কারণ সংকট যখন চরমে, তখন ইরানের রেভ্যুলিউশনারি গার্ড কর্পস (আইআরজিসি) একটি ‘পানি মাফিয়া’ তৈরি করেছে। পানি সরবরাহ করার জন্য হাজার হাজার বছর ধরে টিকে থাকা হ্রদ ও নদী শুকিয়ে ফেলা হচ্ছে। এই পানি যাচ্ছে শুধু তাদের কাছেই যারা আর্থিকভাবে এই পানি কিনতে সক্ষম।
তেহরানের গড়পড়তা পরিবারগুলো তাদের আয়ের ১০ শতাংশ এখন পানির পেছনে ব্যয় করছে এবং অনেক মানুষ গোসল ও অন্যান্য মৌলিক পরিচ্ছন্নতা ছাড়াই দিন কাটাচ্ছে। দুঃখজনকভাবে শাসকগোষ্ঠী এই সংকট থেকেও সরাসরি মুনাফা লুটছে। কিন্তু এই পুরোনো ও চলমান সমস্যা হঠাৎ কেন বিশ্বজুড়ে খবরের শিরোনাম হলো? পশ্চিমারা কি আরেকটি ইসরায়েলি/মার্কিন হামলার ক্ষেত্র প্রস্তুত করতে চাইছে? (এবার হয়তো মানবিক হস্তক্ষেপের আড়ালে)। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ইতোমধ্যে নির্লজ্জভাবে এই পরিস্থিতির সুযোগ নিয়েছেন। তিনি ইরানীদের বলেছেন, তারা যদি বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায়, তবে ইসরায়েল পানি সংকট সমাধানে বিশেষজ্ঞ পাঠাবে।
বৃষ্টির জন্য গণপ্রার্থনার আয়োজন করা ছাড়াও ইরানের শাসকগোষ্ঠী বাতাসে প্রচুর পরিমাণে রাসায়নিক লবণ ছিটানোর মতো বিতর্কিত কৌশল নিয়েছে। কিন্তু এই ‘ক্লাউড সিডিং’ বা কৃত্রিম মেঘ তৈরির প্রক্রিয়া নিশ্চিতভাবে বৃষ্টি নামানোর বদলে গাছপালা ধ্বংস করছে ও মানুষের শ্বাসকষ্ট বাড়িয়ে দিচ্ছে। মানুষ এখন ঘরবন্দি থাকতে বাধ্য হচ্ছে ও ইরানি সমাজ ব্যবস্থা ভেঙে পড়তে শুরু করেছে।
রাজধানী স্থানান্তরের পরিকল্পনা নিয়েও পেজেশকিয়ানের বক্তব্য বেশ অস্পষ্ট। তিনি কি বিপুল জনসংখ্যার কথা বলছেন, নাকি কেবল সরকারি প্রশাসনের কথা? যদি দ্বিতীয়টি হয়, তবে পেছনে পড়ে থাকা কোটি কোটি মানুষের কী হবে? আর যদি প্রথমটি হয়, তবে এই প্রচেষ্টায় বহু বছর সময় লাগবে ও রাষ্ট্রের ওপর এক অসহনীয় আর্থিক বোঝা চাপবে।
স্বাভাবিকভাবেই, তেহরানের হাজার হাজার মানুষ আতঙ্কিত হতে শুরু করেছে। শহরের উত্তরের মহাসড়কগুলোতে এখনো কিছুটা পানি অবশিষ্ট থাকা কাস্পিয়ান সাগর অঞ্চলের দিকে যেতে চাওয়া গাড়ির জট লাগে। কিন্তু এই হাজার হাজার ঘরছাড়া মানুষ যদি লাখে পরিণত হয়, তখন কী হবে? তুরস্কই হবে তাদের সুস্পষ্ট প্রথম গন্তব্য, এরপর ইউরোপ। কিন্তু উপসাগরীয় অঞ্চলের ধনী আরব রাষ্ট্রগুলোর কী ভূমিকা হবে? ইরানের নিকটতম প্রতিবেশীদের কাছ থেকে কেন আরও সাহায্যের আশা করা হচ্ছে না?
যদিও এই পানি সংকট প্রাকৃতিক কারণ ও ভুল নীতির এক নির্দিষ্ট মিশ্রণের ফল। তবু ইরান একা নয়। উদাহরণস্বরূপ, প্রতিবেশী আফগানিস্তানে তীব্র পানি সংকট দেখা দেওয়ায় কাবুল শহরের পানি সরবরাহ বাড়ানোর জন্য বড় বড় সেচ প্রকল্প নেওয়া হচ্ছে। এই প্রকল্পগুলো বিতর্কমুক্ত নয়। কারণ এর প্রভাব সীমান্তের ওপারে অন্য জায়গার পানি সরবরাহেও পড়তে পারে। ঠিক এই কারণেই মিসর তার পার্শ্ববর্তী দেশ ইথিওপিয়ার বাঁধ প্রকল্পগুলোর তীব্র বিরোধিতা করে আসছে।
তাহলে করণীয় কী? আমার কাছে কোনো সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব না থাকলেও, সাধারণ সমাধান স্পষ্ট মনে হচ্ছে: বিশ্বের এখন এক ধরনের ‘কমিউনিজম’ বা সাম্যবাদ প্রয়োজন। আমি বিংশ শতাব্দীর ‘বাস্তবে বিদ্যমান সমাজতন্ত্রের’ কথা বলছি না, বরং আরও স্পষ্ট ও প্রাথমিক কিছু বোঝাচ্ছি।
স্বৈরাচারী রাষ্ট্র, বহুদলীয় গণতন্ত্র কিংবা তৃণমূল পর্যায়ের সসংগঠন– কারও পক্ষেই ইরানের পানি সংকট মোকাবিলা করা সম্ভব নয়। যখন আমরা সভ্য সমাজ হিসেবে আমাদের অস্তিত্বের ওপর হুমকি মোকাবিলা করছি, তখন একমাত্র উপায় হলো বড় আকারের জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা, যার অর্থ কার্যত যুদ্ধাবস্থা। তবে এই যুদ্ধ অন্য কোনো রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে নয়, বরং নিজের দেশের ভেতরে যারা এই সংকটের জন্য দায়ী, তাদের বিরুদ্ধে।
এই জরুরি অবস্থা বাজার ব্যবস্থাকে বিলুপ্ত করবে না বা সবকিছু জাতীয়করণ করবে না। তবে সামাজিক জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রগুলোর ওপর কঠোর জননিয়ন্ত্রণ ও তদারকি আরোপ করবে। ইরানের প্রেক্ষাপটে এই বিভিন্ন ক্ষেত্রের অর্থ হলো পানি বিতরণ নিয়ন্ত্রণ করা। ইরানে ‘পানি মাফিয়া’কে তাৎক্ষণিকভাবে গুঁড়িয়ে দেওয়া।
রাষ্ট্রীয় শক্তিকে (যা সবচেয়ে দ্রুত কাজ করতে পারে) স্থানীয়ভাবে সংগঠিত কর্মকাণ্ড এবং অনেক বেশি শক্তিশালী আন্তর্জাতিক সহযোগিতার মাধ্যমে পরিপূরক হতে হবে। এটা কি ইউটোপিয়া বা অলীক কল্পনা? একদমই না। বরং আসল ইউটোপিয়া বা অলীক কল্পনা হলো এটা বিশ্বাস করা যে, এই ধরনের কঠোর পদক্ষেপ ছাড়াই আমরা টিকে থাকতে পারব।
প্রজেক্ট সিন্ডিকেট থেকে ভাষান্তর করেছেন তুফায়েল আহমদ

পৌষের শুরুতেই দেশের উত্তরাঞ্চলে শীতের তীব্রতা অনুভূত হতে শুরু করেছে। সোমবার (১৫ ডিসেম্বর) সর্বনিম্ন তাপমাত্রা এক অঙ্কের ঘরে নেমে এসেছে। পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় সকাল ৬টা পর্যন্ত দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
১৩ ঘণ্টা আগে
দেশজুড়ে নির্বিচারে পাখি শিকার এখন জীববৈচিত্র্যের জন্য মহাবিপর্যয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর প্রতিবাদে শুক্রবার (১২ ডিসেম্বর) ঢাকার কলাতিয়া সংলগ্ন এলাকায় ফটোওয়াক ও সচেতনতামূলক কর্মসূচি পালন করেছেন ওয়াইল্ডলাইফ ফটোগ্রাফার, বার্ডওয়াচার ও পরিবেশবাদীরা।
৪ দিন আগে
সারা দেশের কোথাও কোথাও ভোরের দিকে হালকা কুয়াশা পড়তে পারে। একই সঙ্গে রাত এবং দিনের তাপমাত্রা ১ থেকে ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস কমতে পারে। আজ শুক্রবার মৌসুমি পূর্বাভাসে এমনটাই জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
১১ দিন আগে
পরিবেশ অধিদপ্তর সারা দেশে বায়ুদূষণকারী অবৈধ ইটভাটা, নিষিদ্ধ পলিথিন এবং পরিবেশদূষণকারী শিল্পকারখানার বিরুদ্ধে আজ বৃহস্পতিবার মোবাইল কোর্ট অভিযান পরিচালনা করেছে। বিভিন্ন আইন ও বিধিমালা অনুযায়ী পরিচালিত এসব অভিযানে মোট ৩৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা জরিমানা আদায়সহ একাধিক প্রতিষ্ঠান ও স্থাপনার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা
১২ দিন আগে