leadT1ad

৩১ ডিসেম্বর এলেই হঠাৎ কেন এত মোটিভেশন আসে

বছর শেষ হতে আর মাত্র কয়েক ঘণ্টা বাকি। অদ্ভুত এক মানসিক তাড়না কাজ করছে অনেকের মধ্যে। ৩১ ডিসেম্বর রাত ১২টার আগেই যেন সব হিসাব মেলাতে হবে। একেই বলা হচ্ছে ‘ওয়ান লাস্ট টাইম’ সাইকোলজি। কিন্তু বছর পাল্টালেই তো জীবন বদলাবে না। তবে কেন এই মানসিক অস্থিরতা?

প্রকাশ : ৩১ ডিসেম্বর ২০২৫, ২১: ৪২
পুরোনো আমি বনাম নতুন আমি: বছরের শেষদিনে মাথার ভেতর কী চলছে। এআই নির্মিত ছবি

বছর শেষ হতে আর মাত্র কয়েক ঘণ্টা বাকি। অদ্ভুত এক মানসিক তাড়না কাজ করছে অনেকের মধ্যে। ৩১ ডিসেম্বর রাত ১২টার আগেই যেন সব হিসাব মেলাতে হবে। একেই বলা হচ্ছে ‘ওয়ান লাস্ট টাইম’ সাইকোলজি। কিন্তু বছর পাল্টালেই তো জীবন বদলাবে না। তবে কেন এই মানসিক অস্থিরতা? বিজ্ঞান বলছে, এর পেছনে কাজ করছে কিছু মনস্তাত্ত্বিক কারণ।

‘পুরোনো আমি’ থেকে ‘নতুন আমি’

ইউনিভার্সিটি অফ পেনসিলভানিয়ার গবেষক ক্যাথরিন মিলকম্যান-এর মতে, মানুষের মস্তিষ্ক জীবনের সময়কালকে ছোট ছোট অধ্যায়ে ভাগ করে দেখতে পছন্দ করে। একে বলা হয় ‘টেম্পোরাল ল্যান্ডমার্ক’ বা সময়ের সীমানির্দেশক।

আমাদের মস্তিষ্ক ৩১ ডিসেম্বর এবং ১ জানুয়ারির মধ্যে একটি কাল্পনিক দেয়াল তুলে দেয়। আমরা মনে করি, ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত আমি হলাম ‘পুরোনো আমি’ আর ১ জানুয়ারি থেকে আমি হব ‘নতুন আমি’। আমরা চাই না পুরোনো বছরের ব্যর্থতা বা অসম্পূর্ণ কাজ নতুন বছরে বয়ে নিয়ে যেতে। তাই ‘ক্লিন স্টার্ট’ বা একদম নতুন করে শুরু করার আকাঙ্ক্ষা থেকেই আমাদের অনেকের মস্তিষ্ক ৩১ ডিসেম্বরের আগে সব ঝামেলা চুকিয়ে ফেলতে চাই।

কাজটা বাকি আছে!

রাশিয়ান মনোবিজ্ঞানী ব্লুমা জাইগারনিক এই তত্ত্বটি আবিষ্কার করেন। এই তত্ত্বে বলা হচ্ছে, মানুষের মস্তিষ্ক সম্পূর্ণ কাজের চেয়ে অসম্পূর্ণ কাজগুলো বেশি মনে রাখে এবং তা নিয়ে অবচেতন মনে অস্বস্তিতে ভোগে।

বিজ্ঞানীরা বলছেন, কাজ শেষ করার সাথে আমাদের মস্তিষ্কের হ্যাপি হরমোন বা ‘ডোপামিন’-এর সম্পর্ক আছে। যখন আমরা কোনো চেক-লিস্টের পাশে টিক চিহ্ন দিই বা কোনো কাজ সম্পন্ন করি, তখন মস্তিষ্কে ডোপামিন নি:সরণ হয়।

কোনো কাজ অর্ধেক হয়ে পড়ে থাকলে মস্তিষ্কে এক ধরণের ‘কগনিটিভ টেনশন’ বা মানসিক চাপ তৈরি হয়। মস্তিষ্ক বারবার আপনাকে মনে করিয়ে দেয়, কাজটা বাকি আছে! বছরের শেষে এসে এই মানসিক চাপ বা বোঝা নামিয়ে ফেলার জন্যই মানুষ মরিয়া হয়ে ওঠে। তারা ‘ক্লোজার’ বা সমাপ্তি চায়, যাতে নতুন বছরে মস্তিষ্ক ভারমুক্ত থাকতে পারে।

‘ফিনিশ লাইন’

১৯৩০-এর দশকে মনোবিজ্ঞানী ক্লার্ক হাল ইঁদুরের ওপর গবেষণা করে দেখিয়েছিলেন যে, লক্ষ্য যত কাছে আসে, প্রাণীর দৌড়ানোর গতি তত বেড়ে যায়। মানুষের ক্ষেত্রেও তাই ঘটে।

সারা বছর হয়তো যে কাজটি করার মোটিভেশন পাননি, ৩১ ডিসেম্বর তারিখটি যখন ‘ফিনিশ লাইন’-এর মতো চোখের সামনে চলে আসে, তখন মস্তিষ্ক হঠাৎ করে বাড়তি শক্তি পায়। এই সময়সীমা বা ডেডলাইন আমাদের আলসেমি কাটিয়ে দ্রুত অসম্পূর্ণ কাজ শেষ করতে বাধ্য করে।

হ্যাপি হরমোন বা ডোপামিন নিঃসরণ

বিজ্ঞানীরা বলছেন, কাজ শেষ করার সাথে আমাদের মস্তিষ্কের হ্যাপি হরমোন বা ‘ডোপামিন’-এর সম্পর্ক আছে। যখন আমরা কোনো চেক-লিস্টের পাশে টিক চিহ্ন দিই বা কোনো কাজ সম্পন্ন করি, তখন মস্তিষ্কে ডোপামিন নি:সরণ হয়। এতে আমাদের নিজেকে বিজয়ী মনে হয়। বছর শেষ হওয়ার আগে তাড়াহুড়ো করে কাজ শেষ করার মাধ্যমে আমরা আসলে সেই ‘তাৎক্ষণিক তৃপ্তি’ বা ডোপামিনের খোঁজ করি। আমরা নিজেকে বোঝাতে চাই, ‘যাক, অন্তত এ বছরটা বিফলে যায়নি।’

অনুশোচনা থেকে মুক্তি

সারা বছর ডায়েট করা হয়নি, বই পড়া হয়নি কিংবা প্রিয়জনকে সময় দেওয়া হয়নি; বছরের শেষে এই বিষয়গুলো আমাদের অনেকের মধ্যে অপরাধবোধ বা ‘গিল্ট’ তৈরি করে। বছরের শেষদিন আমরা হিসাবনিকাশ মেলাতে শুরু করি, এ বছর কী পেলাম আর কী হারালাম।

আমাদের মস্তিষ্ক ৩১ ডিসেম্বর এবং ১ জানুয়ারির মধ্যে একটি কাল্পনিক দেয়াল তুলে দেয়। আমরা মনে করি, ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত আমি হলাম ‘পুরোনো আমি’ আর ১ জানুয়ারি থেকে আমি হব ‘নতুন আমি’।

মানুষের মস্তিষ্ক নেতিবাচক আবেগ বা অনুশোচনা বেশিক্ষণ ধরে রাখতে চায় না। তাই শেষ মুহূর্তে কাজগুলো করে আমরা মূলত নিজের বিবেকের কাছে পরিষ্কার হতে চাই। আমরা শেষ মুহূর্তে সারা বছরের গ্লানি কিছুটা হলেও মুছতে চাই।

‘ওয়ান লাস্ট টাইম’ বা শেষবারের মতো চেষ্টা করার এই প্রবণতা আসলে মানুষের আশাবাদী মনেরই পরিচয়। বিজ্ঞান বলছে, এই তাড়াহুড়ো খারাপ কিছু নয়। এটি আমাদের ঝিমিয়ে পড়া জীবনে গতির সঞ্চার করে এবং মানসিক প্রশান্তি দেয়। তবে মনে রাখা জরুরি, ক্যালেন্ডারের পাতা বদলালেই জীবন বদলে যায় না। ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে সব শেষ করতে না পারলেও হতাশ হওয়ার কিছু নেই কারণ ১ জানুয়ারি অর্থাৎ নতুন বছরও আপনার জন্য নতুন সম্ভাবনা নিয়ে অপেক্ষা করছে।

Ad 300x250
সর্বাধিক পঠিত

সম্পর্কিত