leadT1ad

সব মানুষের জন্য অন্তর্ভুক্তিমূলক ও পরিবেশবান্ধব নগরের দাবিতে ‘বাসযোগ্য ঢাকা চাই’ কর্মসূচি

স্ট্রিম প্রতিবেদক
স্ট্রিম প্রতিবেদক
ঢাকা

প্রকাশ : ২৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৮: ৪৯
ছবি: সংগৃহীত

রাজধানীর ধানমন্ডিতে ‘বাসযোগ্য ঢাকা চাই’ শিরোনামে প্রতিবাদ সভা ও মিছিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার (২৩ ডিসেম্বর) বিকেলে ‘বাসযোগ্য বাংলাদেশ চাই’ এলায়েন্সের উদ্যোগে ধানমন্ডি ৫/এ সড়কের লেক সংলগ্ন এলাকায় এই কর্মসূচি পালন করা হয়।

আয়োজকেরা জানান, এটি তাঁদের দেশব্যাপী আন্দোলনের প্রথম ধাপ। একটি শহর তখনই বাসযোগ্য হয়, যখন সেখানে সবচেয়ে প্রান্তিক মানুষটিও নিরাপদ বোধ করে এবং প্রকৃতিকে সহযাত্রী হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এই লক্ষ্যেই ঢাকাকে সূচনাবিন্দু হিসেবে বেছে নিয়েছে এলায়েন্সটি।

প্রতিবাদ সভায় প্রধান বক্তা ও ট্রান্স অধিকারকর্মী জয়া শিকদার বলেন, ‘আমরা এমন এক ঢাকার স্বপ্ন দেখি যেখানে উন্নয়ন ও নিরাপত্তার নামে কোনো জনগোষ্ঠীকে অদৃশ্য করে রাখা হবে না। রাষ্ট্র ও সমাজের কাছে আমাদের দাবিগুলো কেবল আনুষ্ঠানিকতা নয়, এটি একটি অধিকার আদায়ের লড়াই।’

সভায় বক্তারা ঢাকার প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণের ওপর জোর দিয়ে বলেন, ঢাকা বর্তমানে বায়ো-ইকোলজিক্যাল দিক থেকে সংকুচিত একটি শহরে পরিণত হয়েছে। এখানে উন্নয়নের নামে বৃক্ষনিধন ও বস্তি উচ্ছেদ চললেও নাগরিক সুবিধার ন্যূনতম ব্যবস্থা নেই। এই সংকট মোকাবিলায় কর্পোরেট স্বার্থ নয়, বরং সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণমূলক পরিকল্পনা প্রয়োজন।

এলায়েন্সের পক্ষ থেকে নৃবিজ্ঞানী নাসরিন সিরাজ সাত দফা সংবলিত একটি ঘোষণাপত্র পাঠ করেন। উল্লেখযোগ্য দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে:

১. অন্তর্ভুক্তিমূলক পরিকল্পনা: প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণ, বস্তি এলাকায় নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করা এবং হিজড়া, যৌনকর্মী ও সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর আবাসনের নিরাপত্তা প্রদান।

২. মানবিক নগর শাসন: যৌনকর্মীদের শ্রমিক হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া, বিনা মূল্যে সরকারি চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করা এবং ট্রান্স মানুষের বিশেষ চিকিৎসা উপকরণের সহজলভ্যতা।

৩. নিরাপদ যাতায়াত: ব্যক্তিগত গাড়ি কমিয়ে গণপরিবহন ও সাইকেলবান্ধব সড়ক তৈরি করা। ফুটপাত ও জেব্রা ক্রসিং প্রতিবন্ধীবান্ধব করা।

৪. পরিবেশগত ন্যায়বিচার: নদী-খাল রক্ষা, বিদেশি গাছের বদলে দেশি গাছ লাগানো এবং দূষণকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া।

৫. গণতান্ত্রিক শাসন: শহর পরিকল্পনায় জনমত নেওয়া এবং নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য পর্যাপ্ত গণশৌচাগার ও আবাসন নিশ্চিত করা।

অধিকারকর্মী মারজিয়া প্রভার সঞ্চালনায় সভায় আরও বক্তব্য রাখেন মেহেনাজ তাবাসসুম, শানু আপা, রিনা আপা, নির্ণয় ইসলাম প্রমুখ। সংহতি প্রকাশ করেন সাংবাদিক সায়দিয়া গুলরুখ, সেক্স ওয়ার্কার্স নেটওয়ার্কের প্রেসিডেন্ট নুরুন্নাহার রানু এবং বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীসহ বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক সংগঠনের প্রতিনিধিরা।

বক্তারা বলেন, ‘বাসযোগ্য বাংলাদেশ চাই’ এলায়েন্স বাংলাদেশকে কেবল একটি প্রশাসনিক একক মনে করে না, বরং এটিকে মানুষ, প্রাণ ও প্রকৃতির একটি আন্তঃসংযুক্ত জীবন্ত ব্যবস্থা হিসেবে ধারণা করে। জেন্ডার ও পরিবেশগত ন্যায়বিচার নিশ্চিত করাই এই আন্দোলনের মূল লক্ষ্য।

প্রতিবাদ সভা শেষে ধানমন্ডি ৫/এ সড়ক থেকে একটি র‍্যালি বের করা হয়। র‍্যালিটি ধানমন্ডির বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে আবাহনী মাঠে গিয়ে শেষ হয়। এতে সমমনা রাজনৈতিক সংগঠন, নারী অধিকারকর্মী, ছাত্র সংগঠন এবং শ্রমজীবী মানুষ অংশ নেন।

Ad 300x250

সম্পর্কিত