leadT1ad

তাইওয়ানের চারপাশে চীনের সামরিক মহড়া

স্ট্রিম ডেস্ক
স্ট্রিম ডেস্ক
ঢাকা

প্রকাশ : ২৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১: ১০
২০২২ সালে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসির সফরের পর তাইওয়ানকে ঘিরে ষষ্ঠবারের মতো বড় সামরিক মহড়া শুরু করেছে চীন। ছবি: সংগৃহীত।

তাইওয়ানের চারপাশে ব্যাপক সামরিক মহড়া শুরু করেছে চীন। সোমবার ‘জাস্টিস মিশন ২০২৫’ নামে এই মহড়ায় চীনের সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিমানবাহিনী ও আর্টিলারি ইউনিট মোতায়েন করা হয়। এদিকে তাইওয়ান সরকার জানিয়েছে, গণতন্ত্র ও স্বাধীনতা রক্ষায় তারা প্রস্তুত এবং সম্ভাব্য চীনা হামলা প্রতিহত করতে সেনা মহড়াও জোরদার করা হয়েছে।

চীনের ইস্টার্ন থিয়েটার কমান্ড এক বিবৃতিতে জানায়, মঙ্গলবার এই মহড়ার অংশ হিসেবে সরাসরি গোলাবর্ষণ করা হবে। তাইওয়ান ঘিরে পাঁচটি নির্দিষ্ট এলাকায় সমুদ্র ও আকাশপথে চলাচলে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। মঙ্গলবার সকাল ৮টা থেকে টানা ১০ ঘণ্টা এই নিষেধাজ্ঞা কার্যকর থাকবে।

২০২২ সালে যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি তাইওয়ান সফরের পর এটি চীনের ষষ্ঠ বড় সামরিক মহড়া। সাম্প্রতিক সময়ে জাপানের প্রধানমন্ত্রী সানায়ে তাকাইচি তাইওয়ানে সম্ভাব্য চীনা হামলার বিষয়ে মন্তব্য করার পর বেইজিংয়ের বক্তব্য আরও কঠোর হয়েছে।

এই মহড়া শুরু হয় তাইওয়ানের কাছে যুক্তরাষ্ট্রের ১১ দশমিক ১ বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র বিক্রির ঘোষণার ১১ দিন পর। এটি দ্বীপটির জন্য সবচেয়ে বড় অস্ত্র প্যাকেজ। এ সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানিয়ে চীনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় পাল্টা ‘কঠোর ব্যবস্থা’ নেওয়ার হুঁশিয়ারি দেয়।

চীনের সেনাবাহিনী জানিয়েছে, মহড়ায় যুদ্ধবিমান, বোমারু বিমান, ড্রোন ও দূরপাল্লার রকেট ব্যবহার করা হচ্ছে। একাধিক দিক থেকে সমন্বিত হামলার অনুশীলন এবং স্থলভিত্তিক চলমান লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানার কৌশলও চর্চা করা হচ্ছে।

ইস্টার্ন থিয়েটার কমান্ডের মুখপাত্র শি ই বলেন, এই মহড়া ‘তাইওয়ানের স্বাধীনতা’পন্থী শক্তি ও বিদেশি হস্তক্ষেপকারীদের জন্য একটি কঠোর সতর্কবার্তা।

তাইওয়ান সরকার চীনের এই মহড়ার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। দেশটির প্রেসিডেন্ট দপ্তরের এক মুখপাত্র চীনকে পরিস্থিতি ভুলভাবে না বোঝার আহ্বান জানিয়ে বলেন, এ ধরনের উসকানিমূলক কর্মকাণ্ড আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতাকে হুমকির মুখে ফেলছে।

তাইওয়ানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় দুটি চীনা সামরিক বিমান ও ১১টি যুদ্ধজাহাজ দ্বীপের আশপাশে অবস্থান করছিল। তাইওয়ানের সেনাবাহিনী সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় রয়েছে এবং ‘দ্রুত প্রতিক্রিয়া মহড়া’ চালানোর প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। হঠাৎ কোনো মহড়াকে আক্রমণে রূপ দেওয়া হলে দ্রুত সেনা মোতায়েন করাই এই অনুশীলনের লক্ষ্য।

প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়, সশস্ত্র বাহিনীর সব সদস্য সর্বোচ্চ সতর্ক থাকবে এবং গণতন্ত্র ও স্বাধীনতার মূল্যবোধ রক্ষায় কার্যকর পদক্ষেপ নেবে।

তাইওয়ানের এক জ্যেষ্ঠ নিরাপত্তা কর্মকর্তা জানান, সোমবার বহু চীনা সামরিক জাহাজ ও বিমান দ্বীপের কাছাকাছি তৎপরতা চালায়। এর মধ্যে কিছু যান ইচ্ছাকৃতভাবে তাইওয়ানের উপকূল থেকে ২৪ নটিক্যাল মাইলের মধ্যে অবস্থিত সংলগ্ন অঞ্চলের দিকে এগিয়ে আসে।

চীনা কোস্ট গার্ডের তৎপরতার জবাবে তাইওয়ানের উপকূলরক্ষী বাহিনী বড় জাহাজ মোতায়েন করেছে। একই সঙ্গে নৌপথ ও মাছ ধরার এলাকায় প্রভাব কমাতে সামরিক বাহিনীর সঙ্গে সমন্বয় করা হচ্ছে।

এই সামরিক উত্তেজনার মধ্যেও তাইওয়ানের শেয়ারবাজারে কোনো নেতিবাচক প্রভাব পড়েনি। বরং সোমবার সকালে বাজার ০ দশমিক ৬ শতাংশ বেড়ে নতুন রেকর্ড উচ্চতায় পৌঁছায়।

তাইপের ৩১ বছর বয়সী শিক্ষক লিন ওয়েই-মিং বলেন, এসব মহড়া মূলত ভয় দেখানোর কৌশল। তিনি বলেন, আগেও এমন ঘটনা ঘটেছে এবং রাজনৈতিকভাবে এর জবাব দেওয়ার দায়িত্ব বর্তমান সরকারের।

তাইওয়ান চীনের সার্বভৌমত্বের দাবি প্রত্যাখ্যান করে আসছে। দ্বীপটির ভবিষ্যৎ নির্ধারণের অধিকার কেবল তাইওয়ানের জনগণের—এ অবস্থানেই অনড় রয়েছে তাইপে।

তাইওয়ান ঘিরে সামরিক মহড়ার ঘোষণার পর আরও আক্রমণাত্মক ভাষায় প্রচার চালিয়েছে চীন। দেশটির সেনাবাহিনী ‘শিল্ডস অব জাস্টিস: স্ম্যাশিং ইল্যুশনস’ এবং ‘অ্যারোজ অব জাস্টিস: কন্ট্রোল অ্যান্ড ডিনায়াল’ শিরোনামে দুটি পোস্টার প্রকাশ করেছে। পাশাপাশি তৃতীয় একটি গ্রাফিকে তাইওয়ানের চারটি স্থানকে হামলার লক্ষ্যবস্তু হিসেবে লক করা অবস্থাও দেখানো হয়।

চীনের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন জানায়, এই মহড়ার মূল লক্ষ্য তাইওয়ানের উত্তরাঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ গভীর সমুদ্রবন্দর কিলুং এবং দক্ষিণাঞ্চলের কাওশিয়ুং বন্দর অবরোধের অনুশীলন। কাওশিয়ুং তাইওয়ানের সবচেয়ে বড় বন্দর নগরী।

গত বছর চীনা পিপলস লিবারেশন আর্মি (পিএলএ) তাইওয়ান ঘিরে মহড়ার সময় বন্দর অবরোধের অনুশীলন করেছিল। তবে এবারই প্রথম প্রকাশ্যে বলা হলো, এসব মহড়া বিদেশি সামরিক হস্তক্ষেপ ঠেকানোর জন্য ‘প্রতিরোধমূলক’ পদক্ষেপ।

জাপানের প্রধানমন্ত্রীর সাম্প্রতিক মন্তব্যের পর চীনের পক্ষ থেকে সার্বভৌমত্ব নিয়ে বক্তব্য আরও জোরালো হয়। চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং গত নভেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে বলেন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর তাইওয়ানের ‘চীনে প্রত্যাবর্তন’ বেইজিংয়ের বৈশ্বিক দৃষ্টিভঙ্গির একটি কেন্দ্রীয় বিষয়।

প্রকাশিত প্রথম পোস্টারে তাইওয়ান আক্রমণে সহায়তার জন্য চীন যে বেসামরিক জাহাজের বহর প্রস্তুত করছে, তার ইঙ্গিত পাওয়া যায়। খোলা ডেক ও র‌্যাম্পযুক্ত এসব জাহাজ দেখতে উভচর সামরিক অবতরণযানের মতো।

পোস্টারে লেখা হয়, ‘ন্যায়বিচারের ঢালে যে কোনো বিদেশি হস্তক্ষেপ ধ্বংস হবে।’

আরও বলা হয়, ‘যে কোনো বিচ্ছিন্নতাবাদী দুষ্কৃতকারী এই ঢালের মুখোমুখি হলে ধ্বংস হবে।’

দ্বিতীয় পোস্টারে আগুনে জ্বলতে থাকা তীর তাইওয়ানের দিকে নিক্ষেপ করতে দেখা যায়। তীরগুলো সবুজ রঙের কার্টুন পোকাকে বিদ্ধ করছে। বেইজিং নিয়মিতভাবে তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট লাই চিং-তেকে ‘পরজীবী’ বলে আক্রমণ করে থাকে। এপ্রিলের মহড়ায় বিচ্ছিন্নতাবাদী শক্তির প্রতীক হিসেবে এই সবুজ পোকা কার্টুন ব্যবহার শুরু হয়।

তাইপের ৫৬ বছর বয়সী ইন্টেরিয়র ডিজাইনার স্টেফানি হুয়াং বলেন, চীনের লক্ষ্য মানুষ নয়, দ্বীপটিই দখলে রাখা। তিনি বলেন, ‘তারা কেবল মুখ রক্ষা করতে চায়, তাইওয়ানকে নিজেদের অংশ বলে দাবি করে। কিন্তু তাইওয়ানের মানুষ বিষয়টি সেভাবে দেখে না।’

Ad 300x250

সম্পর্কিত