সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে ঠিকাদার প্রথা বিলুপ্ত করে আউটসোর্সিং, দৈনিক মজুরিভিত্তিক ও প্রকল্পে কর্মরতদের চাকরির নিশ্চয়তার দাবি জানিয়ে মহাসমাবেশ করেছে বাংলাদেশ আউটসোর্সিং কর্মচারী ঐক্য পরিষদ। সমাবেশে বক্তারা বলেছে, সচিব-আমলাদের আত্মীয়স্বজন দিয়ে চলা ঠিকাদারি প্রথা বাতিল করতে হবে। আউটসোর্সিং প্রথা জারি করে শ্রম আইন ভঙ্গ করছে সরকার।

আজ শনিবার (৩০ আগস্ট) সকাল ১০টায় রাজধানীর শাহবাগে এই সমাবেশ শুরু হয়। এর আগে সকাল থেকেই সারা দেশ থেকে আসা আউটসোর্সিং কর্মীরা শাহবাগে জড়ো হতে থাকে।

সমাবেশে ব্যাটারি রিকশা-ভ্যান ও ইজিবাইক সংগ্রাম পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির আহ্বায়ক খালেকুজ্জামান লিপন বলেন, ‘স্থায়ী কাজে কোনোভাবেই অস্থায়ী শ্রমিক নিয়োগ করা যাবে না। আমি জানি, ৩ বছর থেকে শুরু করে ২১ বছর ধরে কাজ করা কর্মচারী এখানে আছেন। তার মানে আপনি একটি স্থায়ী কাজ করছেন। তাহলে আপনার নিয়োগটা কী হবে? আপনার নিয়োগটা স্থায়ী হতে হবে। এটা আমাদের আইনের ভাষা। তাহলে এই সরকার আইন লঙ্ঘন করছে।’

খালেকুজ্জামান আরও বলেন, ‘আমরা দীর্ঘদিন আন্দোলন সংগ্রাম করে আসছিলাম যে আমাদের আউটসোর্সিং প্রথা বাতিল কর, স্থায়ী কাজে স্থায়ী শ্রমিক নিয়োগ কর। তারপর আমরা বলেছিলাম যে ঠিক আছে, আপনাদের এই নিয়োগ প্রক্রিয়ায় স্থায়ী করতে যদি একটু লম্বা সময় লাগে, আপনারা তাহলে এই মাঝখান কমিশন প্রথা বাতিল করেন।’

খালেকুজ্জামান আরও বলেন, ‘যখন দুই বছর পর পর রি-টেন্ডারিং হয়, তখন বলা হয়, আপনার নাম তালিকায় থাকবে কিনা জানি না। এটা বলে টোপ দেয়, মানে আপনি থাকবেন না। তখন আপনার ঘুষ দিতে হয়। আমরা হিসাব করে দেখেছি, এখানে যদি গড়ে এক লাখ টাকা করেও আপনার কাছ থেকে ঘুষ নেয়, প্রায় ছয় হাজার কোটি টাকার এখানে ঘুষ-বাণিজ্য হয় শুধুমাত্র এই আউটসোর্সিংয়ের নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ে, রি-টেন্ডারিং প্রক্রিয়া নিয়ে।’

শ্রমিক-কর্মচারী ঐক্য পরিষদের (স্কপ) কেন্দ্রীয় যুগ্ম সমন্বয়ক আবদুল কাদের হাওলাদার বলেন, ‘আজকে যদি প্রধান উপদেষ্টার কাছে বলি যে তিন দিন আমার সিটি করপোরেশনের লোকেরা ঝাড়ু দেবে না, রাস্তা পরিষ্কার করবে না। তাহলে কি আপনি বসবাস করতে পারবেন যমুনায়?’

আবদুল কাদের হাওলাদার আরও বলেন, ‘আমাদের হারাবার কিছু নাই। আমাদের হারাবার একটি জিনিস আছে, সেটা হইছে ঐক্যবদ্ধতা। আজকে যদি আপনারা ঐক্যবদ্ধ থাকেন, আমি বিশ্বাস করি, আমরা দাবি আদায় করতে পারব। আপনারা কেউ কারও কথায় বিভ্রান্ত না হয়ে, আপনাদের নেতাদের প্রতি আস্থা রাখেন। আমরা তাদের সঙ্গে আছি।’

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক, উন্নয়ন অর্থনীতিবিষয়ক গবেষক মাহা মির্জা বলেন, ‘আপনারা স্থায়ী কাজ করছেন, সরকারের গুরুত্বপূর্ণ সার্ভিস প্রদান করছেন জনগণকে। কিন্তু আপনাদেরকে সরকার নিজে নিয়োগ দিচ্ছে না। আপনাদেরকে সরকার একটা অদ্ভুত ঠিকাদারি সিস্টেমের মাধ্যমে নিয়োগ দিচ্ছে।’

মাহা আরও বলেন, ‘আমরা শুধু বলতে চাই, সরকারি স্থায়ী কাজের ক্ষেত্রে কোনো কোম্পানির মাধ্যমে নিয়োগ দেওয়া কোনোভাবেই যৌক্তিক না। এটা শ্রম আইনের বরখেলাপ এবং সরকার নিজেই শ্রম আইনের বরখেলাপ করে একটা অন্যায় করছে।’

আউটসোর্সিং কর্মীদের ৫ দাবি

১. আউটসোর্সিং, দৈনিক মজুরি ও প্রকল্পভিত্তিক কর্মী নিয়োগে ঠিকাদার প্রথা বাতিল করে চাকরির নিশ্চয়তা।

২. একই কাজে দু’রকম সুবিধা থাকা যাবে না। সমান সুযোগ-সুবিধা দিতে হবে।

৩. সব বকেয়া বেতন-ভাতা দ্রুত পরিশোধ করতে হবে এবং প্রতিমাসের পাওনাদি পরবর্তী মাসের ৭ তারিখের মধ্যে পরিশোধের বাধ্যবাধকতা থাকতে হবে।

৪. অন্যায়ভাবে চাকরিচ্যুতদের পুনর্বহাল করতে হবে এবং কর্ম ঘণ্টার পর (ছুটির দিনসহ) কাজ করালে অতিরিক্ত পারিশ্রমিক দেওয়ার জন্য নীতিমালায় স্পষ্টভাবে উল্লেখ করতে হবে।

৫. শ্রমজীবী মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় শ্রম সংস্কার কমিশনের সুপারিশ দ্রুত বাস্তবায়ন করতে হবে।