leadT1ad

ট্রাইব্যুনাল নিয়ে বিরূপ মন্তব্য: নিঃশর্ত ক্ষমা চাইলেন ফজলুর রহমান

স্ট্রিম প্রতিবেদক
স্ট্রিম প্রতিবেদক
ঢাকা

প্রকাশ : ০৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৩: ২২
ফজলুর রহমান (ছবি: সংগৃহীত)

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল নিয়ে বিরূপ মন্তব্যের জেরে আদালত অবমাননার অভিযোগ থেকে নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়ে অব্যাহতি পেয়েছেন বিএনপি নেতা ও জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ফজলুর রহমান। আজ সোমবার বেলা ১১টার দিকে ট্রাইব্যুনালে সশরীরে হাজির হয়ে তিনি ক্ষমা প্রার্থনা করেন।

শুনানি শেষে ট্রাইব্যুনাল-১-এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন বিচারিক প্যানেল তাঁকে সতর্ক করে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেন। এ সময় আদালত বলেন, ‘আপনার মতো ব্যক্তির কাছে এমন বক্তব্য আমরা আশা করি না।’

আজ বেলা ১১টার কিছু পরে জ্যেষ্ঠ আইনজীবীদের সঙ্গে নিয়ে ট্রাইব্যুনালে প্রবেশ করেন ফজলুর রহমান। শুনানিপর্বে নিজের মন্তব্যের জন্য অনুতপ্ত হয়ে তিনি আদালতকে বলেন, ‘আল্লাহর পরেই আপনাদের প্রতি আমার সম্মান আছে। আমার বয়স ৭৮ বছর। আমার জীবনেও এমন হয়নি। আমি এমন কথা বলতে চাই না। এটা আমার স্লিপ অব টাং (মুখ ফসকে বের হওয়া) হয়ে যেতে পারে। এর জন্য আমি ক্ষমা চাই।’

ফজলুর রহমানের পক্ষে শুনানিতে অংশ নেন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি জয়নুল আবেদীন ও ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল। এ সময় ব্যারিস্টার কায়সার কামালসহ বেশ কয়েকজন আইনজীবী উপস্থিত ছিলেন।

শুনানিতে জয়নুল আবেদীন বলেন, ‘টকশোতে অনেক সময় যা কিছু বলতে চাই না, তাও মুখ দিয়ে বের হয়ে যায়। আদালতকে হেয় করতে ফজলুর রহমান এমন উক্তি করবেন, এটা বিশ্বাস করার মতো না। ভবিষ্যতে এ ব্যাপারে তাঁর সতর্ক হওয়া উচিত। বিচার বিভাগ ঠিকমতো না চললে তো দেশ বর্বর হয়ে যাবে।’

উভয় পক্ষের শুনানি শেষে ট্রাইব্যুনাল ক্ষমা প্রার্থনা গ্রহণ করেন। আদেশে আদালত বলেন, ‘আপনারা বিজ্ঞ আইনজীবী, জুডিশিয়ারির ভালোমন্দ আপনারা দেখবেন। আদালত অবমাননার আইনটি বিচার বিভাগের সর্বশেষ অবলম্বন।’ ভবিষ্যতে এমন মন্তব্যের বিষয়ে সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়ে তাঁকে এক্সোনারেট (অব্যাহতি) দেওয়া হয়।

শুনানি শেষে চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, ‘চ্যানেল ২৪-এর টকশোতে অ্যাডভোকেট ফজলুর রহমান আদালত নিয়ে যেসব মন্তব্য করেছিলেন, তা কনটেম্পটাস (অবমাননাকর) মনে হওয়ায় প্রসিকিউশন আদালত অবমাননার পিটিশন করেছিল। আজ তিনি সশরীরে হাজির হয়ে নিজের ভুলের জন্য আদালতের কাছে অনুশোচনা (রিমোর্স) প্রকাশ করেছেন এবং ক্ষমা চেয়েছেন।’

তাজুল ইসলাম আরও বলেন, ‘আদালত পর্যবেক্ষণে বলেছেন, ফজলুর রহমান সুপ্রিম কোর্টের একজন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী, একজন মুক্তিযোদ্ধা এবং জ্যেষ্ঠ রাজনীতিবিদ। একজন রাজনীতিবিদ যদি সতর্কভাবে কথা না বলেন, তাহলে এই রাষ্ট্র ফাংশন করতে পারে না। তাই আদালতের ব্যাপারে মন্তব্য করার ক্ষেত্রে তাঁর অধিক সতর্ক হওয়া প্রয়োজন। যেহেতু তিনি নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়েছেন এবং স্বীকার করেছেন যে ওই কথাগুলো বলা ঠিক হয়নি, তাই আদালত তাঁর আবেদন মঞ্জুর করে তাঁকে অবমাননার দায় থেকে অব্যাহতি দিয়েছেন।’

এর আগে গত ৩ ডিসেম্বর ট্রাইব্যুনালকে নিয়ে বিরূপ মন্তব্যের জেরে লিখিতভাবে নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়েছিলেন ফজলুর রহমান।

গত ২৩ নভেম্বর একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলের (চ্যানেল ২৪) টকশোতে অংশ নিয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করেন ফজলুর রহমান। সেখানে তিনি বলেন, ‘আমি প্রথম দিন থেকেই বলছি, এই কোর্ট আমি মানি না।’ এ সময় উপস্থাপক বিষয়টি ‘মিডিয়া জানে কি না’ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সবাই জানে, জানবে না কেন? আমার ইউটিউব শোনেন। আমি এই কোর্ট মানি না। এই কোর্টের বিচার আমি মানি না। ইউটিউবে বলছি, টকশোতে বলছি। যদি না বলে থাকি এখন বললে আমার ভুল, আমি মাফ চাবো।’

এ ছাড়া ট্রাইব্যুনালের বিচারক ও পক্ষগুলোর মধ্যে যোগসাজশের ইঙ্গিত দিয়ে তিনি মন্তব্য করেন, ‘এই কোর্টের গঠন প্রক্রিয়া বলে—এই কোর্টে বিচার হইতে পারে না। এই কোর্টে যারা বিচার করতেছে, আমার ধারণা এদের মধ্যে ভেতরে একটা কথা আছে (ইন্টারনাল অ্যারেঞ্জমেন্ট)।

এ বক্তব্যের জেরে গত ২৬ নভেম্বর ট্রাইব্যুনালে তাঁর বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগ আনেন প্রসিকিউটর গাজী মোনাওয়ার হুসাইন তামীম।

অভিযোগ আমলে নিয়ে গত ৩০ নভেম্বর ট্রাইব্যুনাল ফজলুর রহমানকে সশরীরে হাজির হয়ে ব্যাখ্যার নির্দেশ দিয়েছিলেন। সেই নির্দেশ মোতাবেক আজ তিনি আদালতে হাজির হয়ে ক্ষমা চাইলেন।

Ad 300x250

সম্পর্কিত